"সব চরিত্রই কাল্পনিক"

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:০০

ঋতুপর্ণ ঘোষের “বাড়িওয়ালি”, “দোসর”, “শুভ মহরৎ” ছবিগুলো যতবারই দেখি ততবারই ভাল লাগে,পুনরায় দেখতে ইচ্ছে করে । দেখতে দেখতে এমন হয়েছে যে,ছবিগুলোর সংলাপ পর্যন্ত মাথা থেকে ঠোঁটে উঠে এসেছে । প্রতিবার নতুনত্ব কিছু পাই । চরিত্রগুলোকে ভাবনাযন্ত্রের নিচে ফেলে ব্যবচ্ছেদ করতে পারি । ওঁদের অসুখ-সুখ,শুভ-অশুভ ভাবনাগুলোকে তুলে আনতে পারি ডুবুরিদের মত,ওঁদের ভেতরটার খুব গভীরে ঢুকে । বুঝতে পারি ঋতুপর্ণের ভাবনাদর্শন আর সৃজনকৌশল । অসাধারণ একটা প্রতিভাবান মানুষ (প্রতিভাবতী বলে কোন শব্দ নেই!) ঋতুপর্ণ ।

ঋতুপর্ণের সবচেয়ে বেশিবার দেখেছি “সব চরিত্রই কাল্পনিক” ছবিটা ।যতই বলি,ততই কম বলা হবে মনে হয় । দুটো মানুষ একই ছাদের নিচেই,একই বিছানায় শুয়েই,ঘুমালেই হয়না কিংবা একে অপরকে নিত্যই ভালবাসার সাগরে চোবালেও দাম্পত্য সুখকর হয়না । সবকিছুর প্রয়োজন আছে জীবনে । সাগরে নিত্য চোবানোর ভালবাসা যেমন প্রয়োজন,মাটিতে পা ফেলে হাঁটাহাঁটি করার মত বাস্তবতাও তেমনি প্রয়োজন ।মনের খোঁড়াক মেটানোর জন্য উদাসীন নির্লিপ্ততা যেমন প্রয়োজন,তেমনি সংসার চালানোর মত পার্থিব,সাংসারিক ভাবনা ভাবাও তেমনি প্রয়োজন । মনের খাদ্যই সব নয়,দেহের খাদ্যও তো পরোক্ষভাবে মনেরই খাদ্য। অসামঞ্জ্যতা নিয়ে আর যাই চলুক সংসারজীবন চলে না । এখানে দীর্ঘ আপোষও চালানো যায় না । হয়তো তখন কেউ বিনা নোটিশে অকস্মাৎ সংসারক্ষেত্র থেকে ইস্তফা দিয়ে বসলেন,তখন? তখন বেঁচে থাকতে হবে এক হাত,এক পা নিয়ে,খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে,জীবনকে ঠেলে ঠেলে,সময়কেও,নিজেকেও ...

মানুষের সাম্পর্কিক জটিলতাগুলো ঋতুপর্ণের মত গভীরভাবে,এত নিখুঁতভাবে কেউ-ই তুলে আনতে পারেননি । এইখানেই সফল ঋতুপর্ণ ।



মানুষটা মরে গেছে,আমার এখনো বিশ্বাস হতে চায় না । মনে হয় কোনদিন ঘুম থেকে উঠে শুনবো ঋতুপর্ণ রবীন্দ্রনাথের কোন গল্প-উপন্যাস বা নাটক নিয়ে আবারও সিনেমা বানাচ্ছেন। আবারও প্রসেনজিত কিংবা যীশু সেনগুপ্ত,আবারও চিরচেনা সেই মুনমুনদুহিতা রাইমা সেন ...

আবারও প্রতীক্ষা থাকবে কখন শ্যূটিং শেষ হবে,কবে রিলিজ হবে,কবে হাতে পাব ছবিটা,সবভুলে দেখতে বসব,বারবার দেখব !

একসময় খেয়ালের বশে পাগলামির ছলে দু’কলম লিখতে বসব,ল্যাপটপে টাইপ করব আর মানুষকে বিরক্ত করব “খেয়ালের বশে পাগলামির ছলে দু’কলম লিখা” লেখা পড়তে !

০ টি +০/-০