নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রুদ্রাক্ষ

তোমায় গান শোনাবো,তাইতো আমায় জাগিয়ে রাখো... ওগো ঘুমভাঙানিয়া,ওগো দুখজাগানিয়া ...

ব্যবচ্ছেদ

একাকী আমি লিখছি জীবনের গলিতে গলিতে যে জীবন-গল্পের শেষ নেই... অন্তহীন !

ব্যবচ্ছেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রেষ্ঠত্ব? ঢাবি বনাম এনএসইউ

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৩৬

আদিম যুগের মানুষ কিংবা কোন ফেরেল মানবের কাছে যদি একুশ শতকের সভ্যতায় সিদ্ধ আচরণ প্রত্যাশা করা হয় তাহলে সেটা নিছক বাতুলতা হিসেবেই প্রতিভাত হবে। একজন মানুষের আচরণ,কথা-বার্তা তথা সামগ্রিক মানসিকতা নির্ধারণে তাঁর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রবীন্দ্রনাথের পরিবার,প্রতিবেশ বিশুদ্ধ সংস্কৃতিময় ছিল বলেই তিনি আজকের কবিগুরু হতে পেরেছেন । কাজী নজরুলের ক্ষেত্রেও তাঁর পরিবেশের প্রভাব খাটে । ব্রিটিশ শাসকদের অন্যায়-অত্যাচারময় শোষণতোষণ নিজের চোখে দেখেছেন বলেই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছে “বিদ্রোহীর” মত ঝাঁঝালো কবিতা লিখার। তাই একজন মানুষের চিন্তাধারা,প্রকাশিত আচরণ এবং কর্ম মূল্যায়নে তাঁর পরিবেশকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই ।



সম্প্রতি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় (NSU) কতৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালির প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বেতাল তান্ডব শুরু হয়েছে । সবাই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে আপোষহীন । এতে কার কি লাভ হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না । কে শ্রেষ্ঠ কে নয় সেটা নিয়ে বিরাট বিতর্কে যাবার আগে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান কারিকুলাম এবং শিক্ষার পরিবেশ ও মান নিয়ে আলোচনা করা জরুরি । একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ২-৩টা সেমিস্টারে(বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে) পড়ানো হয়ে থাকে ।প্রতি সেমিস্টারে ফি প্রায় ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা । যদি দুইটা সেমিস্টারও ধরি(৫০ হাজার টাকার) তবে বছরে তাঁদের ব্যয় হয় ১লাখ টাকা । খাওয়া-দাওয়া এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি আপাতত বাদ দিয়েই । বিপরীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচ খুবই কম ।এখানেই মূল পার্থক্যটা ।এবং এটাই পাবলিক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিকতার পার্থক্য ।খোলা আর উন্মুক্ত ক্যাম্পাস একজন শিক্ষার্থীর আত্মার বিকাশকে খুব বেশি প্রভাবিত করে । প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্ত ক্যাম্পাসের সীমাবদ্ধতা অত্যন্ত প্রকট ।এর প্রভাব তাই তাঁদের মানসিকতায় লক্ষণীয়( ব্যতিক্রম অবশ্যি আছে) । উচ্চমূল্যে পড়ালেখা আর সংকীর্ণ গন্ডিবদ্ধতা তাঁদেরকে একঘরে করে রেখেছে । আমার এক বন্ধুর কথা বলি ।অনেক আগে একবার বৃষ্টির দিনে ওদের বাসায় গিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছিলাম । খড়ের চাল ফুটো হয়ে বেয়ে বেয়ে পড়া পানির হাত থেকে বাঁচবার জন্য অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়েছিল । সে এখন ধানমন্ডির একটা নামজাদা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ।এখন তাঁর বেশভুষা দেখার মত। মাথার চুলগুলো সাপের ফণার দাঁড়িয়ে থাকে । হাতে ঢাউস অ্যানড্রয়েড মুঠোফোন,ঠোঁটের মাঝে দামি সিগারেট,বাহারি রঙা জিন্স প্যান্ট,চাপা শার্ট,রঙিন জুতা আর কথায় কথায় ইংরেজি বুলি আওড়ানোটাই এখন ওর ফ্যাশন,সময়োপযোগী আধুনিকতা। খোলনলচে ওর বদল দেখে আমার মনেই হচ্ছিল না সে ছিল এককালের গোবেচারা!



যাই হোক,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী/শিক্ষকের গৌরবময়য় কীর্তির জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় যেমন গৌরবান্বিত হয় ঠিক তেমনি একজন শিক্ষার্থী/শিক্ষকের অপরিণামদর্শী আচরণের কারণেও প্রশাসনসহ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কেই দায়ী থাকতে হয় । মনে রাখা দরকার যে একজন শিক্ষার্থী বা শিক্ষক তাঁর গোটা প্রতিষ্ঠানকেই প্রতিনিধিত্ব করেন । তাই তাঁদের প্রতিটি আচরণই প্রাসঙ্গিক,যৌক্তিক হওয়া বাঞ্ছনীয় । যাতে করে সেটা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখে ।



সম্মান করলেই কেবল সম্মান পাওয়া যায়।এটা মানুষে-মানুষে সাম্পর্কিক বলয়ের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনি সত্য কোন গোত্র,প্রতিষ্ঠান তথা সামাজিক বিভিন্ন মিথস্ক্রিয়তার ক্ষেত্রেও । সম্মান বা মর্যাদা কোন জাদুর প্রদীপ নয় যে খানিকক্ষণ ঘষামাজা কিংবা ডলাডলি করলেই তা পাওয়া যাবে । সম্মান অর্জন করার বিষয় এবং সেটা করতে হয় কথা দিয়ে নয়,কাজ দিয়ে । কাউকে ছোট/হেলা করে কেউ কখনো বড় হয়নি ।



কালের একটা আশ্চর্য ধর্ম হল যার যা প্রাপ্য তাঁকে সেটা সে দেবেই-আজ হোক বা ১০০ বছর পরেই হোক । নজরুল কীর্তন লিখেছিলেন বলে মুসলমানদের একটা অংশ তাঁকে ধর্মবিদ্বেষী আখ্যায়িত করেছিল অথচ সেই নজরুলেরই লিখা অজস্র হামত-নাতসহ “রমযানের ওই রোযার শেষে এল খুশির ঈদ”ই আমাদের ইসলাম চর্চাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে । “মেঘে ঢাকা তাঁরা” ছাড়া ঋত্বিক ঘটকের কোন ছবিই ব্যবসাসফল হয়নি,এমনকি হলেও চলেনি । সেই ঋত্বিক ঘটকের ছবিগুলো আজ বিশদ গবেষণার দাবি করে। কালের বিবর্তনে যেটা সতত সুন্দর,কল্যাণকর,মঙ্গলময়,মর্যাদাকর সেটাই টিকে থাকবে । NSU-র গালাগালি করাতে ওঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়নি,ওঁরা এমআইটি-ও(MIT) হয়ে যায়নি,হবেও না ।তাই ওঁদের ইটের আঘাতে সেটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাটকেল ছুঁড়লেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষয়িষ্ণু মর্যাদা রাতারাতি অতীতের “প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে” উন্নীত হবে না ।

হেমায়েতপুরের এক পাগল যদি আপনাকে পাগল পাগল বলে ডাকতে থাকে আর আপনি পাগল নন প্রমাণ করতে আদাজল খেয়ে লেগে যান,মাথা খুঁড়তে থাকেন তাতেও কিন্তু ওই পাগল সুস্থ্য হয়ে উঠবে না আর আপনিও পাগল হয়ে যাবেন না । আপনি পাগল নন,দিব্যি সুস্থ্য মানুষ সেটা আপনার চিন্তা-ভাবনা,মূল্যবোধ আর কর্মেই প্রতীয়মান হবে ।



“আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা,আমি বাঁধি তাঁর ঘর” এহেন নিঃশর্ত মহানুভবতা প্রত্যাশিত না হলেও অন্ততপক্ষে সহনশীলতা দরকার । একটা মুক্তচিন্তা,মুক্তবুদ্ধিক্ষেত্রের শিক্ষার্থী হিসেবে এই সহনশীল মানসিক উদারতার চর্চা করার আজ খুবই প্রয়োজন ।

তবে সহনশীলতার কথা বলে NSU-র কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেবার কোন প্রয়াস আমার নেই । একজন ঢাবি শিক্ষার্থী হিসেবে অন্য আরেকজন শিক্ষার্থীর অপমান আমারও অপমান । কিন্তু কি কারণে এই অপমান? জগতে এমন কিছু কি ঘটে যেটার কোন কারণ বা পরিপ্রেক্ষিত থাকে না ? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি ।

বেলাইনে চলে যাওয়া আমাদের বিদ্যমান ছাত্র রাজনীতি,শিক্ষক রাজনীতি,টেন্ডারবাজি,হল দখল,১/২ টাকার জন্য বাসের লোকদের সাথে বিতন্ডা,বাস ভাংচুরসহ এই রকম অনেক বিষয় আমাদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে । আর এই প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানই অন্যদের কাছে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে ।

আমার ধারণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি বদলে যায় তাহলে সমগ্র দেশটাই বদলে যাবে । এটা শুধু আমার ধারনাই নয়,বিশ্বাসও ।

সমালোচনা সহ্য করার মত মানসিকতা আমাদের থাকা দরকার ।এটা পরমতসহিষ্ণুতা এবং বস্তুনিষ্ঠ অবস্থানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে । অন্যের দোষ ধরার আগে নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো সংশোধন করতে হবে। নিজেকে বদলাতে হবে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে।ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গালাগালি বা হেয় করে নয় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.