নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রুদ্রাক্ষ

তোমায় গান শোনাবো,তাইতো আমায় জাগিয়ে রাখো... ওগো ঘুমভাঙানিয়া,ওগো দুখজাগানিয়া ...

ব্যবচ্ছেদ

একাকী আমি লিখছি জীবনের গলিতে গলিতে যে জীবন-গল্পের শেষ নেই... অন্তহীন !

ব্যবচ্ছেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উধাওঃ একটি শিকড়ের আত্মপরিচয়ের গল্প

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪

একটি আয়তাকার কংক্রিটের ভারের সাথে বিশালকার শিকল বিযুক্ত করে একজন মানুষের কাঁধের দুইপাশে লাগিয়ে সেই শিকলের দুই মাথায় একটা তালা দেওয়া । নিরুপায় মানুষটার ভাবলেশহীন কিন্তু আতঙ্কিত তেরচা চাহনি । এই হল অমিত আশরাফ পরিচালিত “উধাও” ছবির একটা পোষ্টার । অমিত একাধারে ছবিটির কাহিনি,চিত্রনাট্য,এবং সংলাপ রচয়িতাও । ছবিটির কাহিনিতে নতুনত্ব আছে । বাংলাদেশে এর আগে এমন ড্রামাথ্রিলার ঘরানার ছবি দেখা যায়নি ।



একটা উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন ঘটাতে পরিণতি বিবেচনা না করেই একজন মানুষের বেশুমার,বেপরোয়া হঠকারী মনস্তত্তের চলচ্চিত্রায়ণ এই প্রথম ।অমিতের কৃতিত্ব মূলত এখানেই । কি আছে এই গল্পে সেটা জানতে হলে কৌতূহলী দর্শকদের অবশ্যই হলে গিয়ে ছবিটি দেখতে হবে ।৯০ মিনিটের ছবিটাকে মাত্র কয়েক লাইনে ব্যাখ্যা করা হয়তো সম্ভব কিন্তু তারপরও দুইটা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ও ছবির শেষ অবধি তাঁদের মানসিক বিকাশের প্রক্রিয়াগুলোর পরিণতি ব্যাখ্যা অনেক বড় কলেবর দাবি রাখে । সমাজের উঁচু তলায় আসীন একজন মানুষকে আরেকজন প্রান্তিক মানুষ হঠাৎ করে “উধাও” ( অপহরণ) করে ফেলে । অপহৃত হওয়া মানুষটা একটা সময় নিজের শেকড় তথা স্ত্রী,পুত্র-কন্যা ফেলে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায় । তার এই আকস্মিক উধাও হবার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে নিরন্তর বাড়তে থাকা নিষ্ঠুর দারিদ্রতা,দরিদ্র সংসারের ঘানি,সাংসারিক সমুদ্রে অবিশ্রাম ডুবসাঁতার,সর্বোপরি সংসারধর্ম ত্যাগ করে জুয়ার আড্ডায় লাগামহীন সংশ্লিষ্টতা । একসময় রাতের গভীর অন্ধকারে ঘুমন্ত স্ত্রী-সন্তান ফেলে দীর্ঘদিনের যাপিত জীবনের খোলস ভেঙে বেরিয়ে পরে অজানা জীবনের হাতছানিতে । অনিশ্চিত নিয়তির পাকচক্রে ঘরছাড়া এই মানুষটা একসময় রাজনীতিবিদ আকবর হয়ে উঠে । শেকড়বিচ্ছিন্ন আকবরকে তার শেকড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য শেকল-তালা পড়িয়ে নিচু তলার একজন মানুষের অপহরণ করার চিন্তাটা অনাবশ্যক অতিরঞ্জিতই বটে । তবুও আমরা তাই-ই ঘটতে দেখি ।



ছবির শুরুতে ব্যাখ্যাহীন এই অপহরণটা দর্শকদের মনে কৌতূহল জাগাবে । একজন নিছক দূষিত, জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদকে সাধারণ মানুষের নিত্য-নৈমিত্তিক আটপৌরে জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই যদি এই অপহরণের উদ্দেশ্য বলে কেউ ভেবে থাকেন,তাহলেও কিন্তু এই ভাবনায় খুব বেশি অতিরঞ্জন হয়না বরং ব্যাপারটা দাঁড়ায় এক ঢিলে দুই পাখির এক পাখি মারার মতন । একপর্যায়ে মানুষদুটো একটা নির্মম,অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ায় । একে অপরকে সঠিকভাবে চিনতে পারে । শুধু তাই নয় বহুদিনের অপরিচিত কিন্তু খুব আপন কিছু মানুষকে নতুন করে চিনতে পারার বা আপন ভেবে মেনে নেবার এই সিদ্ধান্তিক মানসিক দ্বন্দ্বটাই ছবিটাকে অনন্য করে রেখেছে । এটাই হল ছবির অন্তর্নিহিত গূহ্যকথা ।



ছবিটার শক্তিশালী কাহিনির তুলনায় সেটার উপস্থাপন মোটামুটি দুর্বলই বলা চলে । বিশেষ করে উধাওকরণের পুরো প্রক্রিয়াটা খুব বেশি ছেলেমানুষি খেলা হয়ে গেছে । আকর্ণ দুর্নীতিতে নিমজ্জমান একজন রাজনীতিবিদকে এত সহজে অপহরণ করার ব্যাপারটা হাস্যকর ঠেকে । একে আরেকটু নাটকীয়তায় নিয়ে যাওয়া যেত । তবে কাহিনিকারের বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায় ছবির একদম শেষে । ছবির শুরুটা খুব বেশি গোলমেলে আর বিরক্তি উদ্রেক করলেও শেষটার গুণে পুরো ছবিটাকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেওয়া যায় ।



কথায় আছে “শেষ ভালো যার,সব ভালো তার”। এই মানসিকতায় ছবিটাকে উপভোগ করলে সেটা অবশ্যি উপভোগ্য হতে বাধ্য ।কাহিনি,অভিনয়,নাটকীয়তা প্রভৃতি মিলে এই ছবিটা ঢাকাইয়া এফডিসির ফর্মুলাকেন্দ্রিক ছবি থেকে অনেক উপরে । তাই “উধাও” বাংলাদেশের ছবি হলেও চিরাচরিত বাংলা ছবি নয় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.