ডিজলেক্সিয়াঃ অবহেলা নয়,প্রয়োজন পরিচর্যা

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪০

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একই সাথে দুই হাত ব্যবহার করে লিখতে পারতেন ।সব্যসাচী-দুই হাত যার সমান চলে । তাঁর হাত থাকে যা কিছু বের হয়েছে পৃথিবীর শিল্পকলার ভান্ডার তাতে সমৃদ্ধ না হয়ে উপায় নেই । তাঁর একেকটা কাজ শতাব্দীর এক একটা আরাধ্য শিল্পকর্ম । ভিঞ্চির মত এমন প্রতিভাবান আর রহস্যময় শিল্পী সেই শতাব্দীতে খুব কম মানুষই ছিলেন । তাঁর ছবিগুলোতে উদ্ঘাটিত রহস্যের চেয়ে অনুদ্ঘাটিত রহস্য এখনো শিল্পবোদ্ধাদের গবেষণার বিষয় ।

যাই হোক,আমাদের এই লিওনার্দোর একটা সমস্যা ছিল তিনি ছোটবেলায় ঠিকমত পড়তে-লিখতে পারতেন না । চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যেটাকে “ডিসলেক্সিয়া” বলা হচ্ছে । ডিসলেক্সিয়া মানুষরা শুদ্ধভাবে লিখতে-পড়তে পারেন না । অক্ষর বা বর্ণকে তাঁরা উল্টাভাবে পারসিভ করেন । ২০০৭ সালে বলিউডে আমির খানের “তারে জামিন পার” নামে একটা মুক্তি পেয়েছিল যেখানে ৮বছরের একটা ছেলের এই সমস্যা থাকে । ছবিতে বাচ্চাটাকে দেখা যায় কিছু কিছু অক্ষর সে উল্টাভাবে লিখছে ।তাঁকে বারবার করে দেখিয়ে দেবার পরও একই ভুল করছে। তাতে তার বাবা-মা ভাবে সে ইচ্ছা করেই বদমাশি করছে । কিন্তু ব্যাপারটা তা নয় । তাঁর মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট কিছু অক্ষর বা বর্ণকে ঠিকভাবে আয়ত্ব করতে পারে না । পড়ে একজন শিক্ষক তার এই অক্ষমতাকে ধরতে পারেন ।সঠিকভাবে গাইড করেন এবং একসময় সে আর আট-দশটা সমবয়সীদের মতই লিখতে-পড়তে শুরু করল ।



পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক বিখ্যাত কিছু মানুষ আছেন যারা এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন । বিখ্যাত চিত্রকর এবং ভুবনখ্যাত ভাস্কর্য পাবলো পিকাসো, কার্টুন দুনিয়ার বাদশা ওয়াল্ট ডিজনি,প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন,বিদ্যুতের জনক টমাস আলভা এডিসন,বলিউড অভিনেতা অভিষেক বচ্চন ।



যখন আমি ডিজলেক্সিয়া সম্পর্কে প্রথম জানতে পারলাম তখন আবিষ্কার করলাম যে একসময় আমিও ডিজলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ছিলাম ! M এবং W, b এবং d, 6 এবং 9- এগুলোকে আমি গুলিয়ে ফেলতাম । ওদের চেহেরা একই বলে বারবার ভুল করতাম । ইংরেজি N কে উল্টাভাবে লিখতাম এবং এই ভুল আমার এখনো হয় !



ডিজলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের প্রতি কঠোর হবেন না। মানুষকে ভালোভাবে বোঝালে জগতে এমন কিছু নাই যেটা সে বুঝতে পারবে না । ধৈর্য ধরে চর্চা করালে অবশ্যই সে শুধরে নিতে পারবে । আপনার সহযোগীতা আর সহমর্মিতাই ওদের পাথেয় ।

২ টি +০/-০