"একমুঠো শাহবাগের গল্প"

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৫

টিএসসি’তে প্লাস্টিকের বালতি ভরে গোলাপ ফুল বিক্রি করে সজীব । নামে যেমন সজীব,প্রাণেও তেমনি । হরতাল ছাড়া মুখ সবসময়ই হাসিখুশি । দেখা পেলে দৌড়ে ছুটে এসে “ভাইয়া,ভাইয়া” বলে অস্থির করে দেয় আর জিজ্ঞেস করে “বাপ্পি ভাইয়া( আসলে বাপ্পা) কই,তুহিন ভাইয়া(বাপ্পা,তুহিন আমার বন্ধু) কই?” ওই মুহূর্তে ওঁদের খবর জানি না বলে জানাই ওকে।

একদিন রাতের বেলা টিএসসি’তে মুখতার মামার দোকানে বসে চা খাচ্ছি ।সাথে বাপ্পা দা আর তুহিন । সজীবও ছিল । হঠাৎ দেখলাম আমার মাথার ক্যাপ খুলে কোঁকড়া কোঁকড়া চুল ভর্তি মাথায় জাতীয় পতাকা পড়িয়ে দিচ্ছে সজীব-বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক লাল-সবুজের একটা পতাকা ।



আর ওদিকে টিএসসি থেকে একটু দূরে শাহবাগে চলছে প্রাণের মেলা । হাজারো প্রাণ সমস্বরে স্লোগান তুলছে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে। এদিকে আমার হৃদপিণ্ডের সঞ্চালন দ্রুততর হচ্ছে,রক্তে রক্তে নাচন,উত্তেজনায় দপদপ করছে মাথার দুপাশের শিরা,সমস্ত শরীর,সকল অন্তঃকরণে দানবীয় শক্তি । একাত্তরের কসাইদের গলায় কামড় দিয়ে রক্ত শুষে নেবার হিংস্র ক্রোধ, কুম্ভকর্ণের ঘুমে ঘুমায়িত জাতির বিবেকে প্রকাণ্ড চপেটাঘাতের লাগামছাড়া,বিরামহীন বেয়াড়া আক্রোশ ...।



আজ শাহবাগ নেই,সাহারায় পরিণত । কোন প্রাণ নেই,প্রাচুর্য নেই...শুধু রাত জেগে জেগে গলা ফাটানো চিৎকার আর স্লোগানগুলো পড়ে আছে । প্রজন্ম চত্বর নেই,সজীবেরও দেখা হয় কালে ভদ্রে। বাপ্পা দা,তুহিন সবাই ব্যস্ত জীবনের চাহিদা মেটাতে,আমিও ...। কিন্তু হাতড়ালে এখনো খুঁজে পাই একটা পতাকা,ছোট্ট যে পতাকাটা আমার দেহমনে শিহরণ জাগিয়েছিল,অভাগা পোড়ার এই দেশটাকে ভালোবাসিয়েছিল...সজীব কি জানে,তার এতোটুকুন প্রাণের সজীবতায় আজ আমি সজীব,দেশের প্রতি প্রচণ্ড মায়া অনুভব করা এক উদাসীন সজীবতা আমার প্রাণের প্রতি পড়তে পড়তে ...?



সবকিছুর শুরু যেমন আছে শেষও তার অনিবার্য পরিণতি ।কিন্তু যে শুরুর-শুরু হবার আগেই সমাপ্তিঘন্টা বেজে যায়,সেখানে অভিমান জন্মে,কষ্টও হয় কদাচিৎ ।

প্রাণের বেলুনগুলোতে পিন ফুটিয়ে সকল শ্বাস বের করে আনা বজ্জাদরা নিপাত যাক ।



“জয় বাংলা”

০ টি +০/-০