নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রুদ্রাক্ষ

তোমায় গান শোনাবো,তাইতো আমায় জাগিয়ে রাখো... ওগো ঘুমভাঙানিয়া,ওগো দুখজাগানিয়া ...

ব্যবচ্ছেদ

একাকী আমি লিখছি জীবনের গলিতে গলিতে যে জীবন-গল্পের শেষ নেই... অন্তহীন !

ব্যবচ্ছেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তসলিমা নাসরিনঃ অনাচারের গোলকধাঁধা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪

শুরুতেই একটা প্রশ্ন,তসলিমা নাসরিন ডাক্তার থেকে কেন বিতর্কিত তসলিমা নাসরিন হয়ে ঊঠলেন?



মানুষের প্রতিটা সৃষ্টি,চিন্তা,কর্মের পেছনে একটা প্রেক্ষিত আছে-প্রকট বা প্রচ্ছন্ন,প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ। তসলিমা এই বাংলাদেশের মাটি মেখে,পানি খেয়ে,বায়ু নিয়ে বেড়ে উঠেছেন,তাই তাঁর “বিতর্কিত” খেতাবের পেছনে এই দেশের,এই সমাজের কি কোন ভূমিকাই ছিল না ? একজন লেখক/লেখিকা দু”চোখ যা প্রত্যক্ষ করেন কলমের আগা দিয়ে সেটাই প্রকাশ করেন,সেটা শতভাগ বিশুদ্ধ নাও হতে পারে কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যাশ্রয়ী হতে হবে ।“বিতর্কিত লেখিকা” পরিচয়টির আগে তসলিমা একজন মানুষ,স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক ।এই রাষ্ট্র তাঁকে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার প্রদান করেছে । একজন লেখিকা হিসেবে তাঁর যেমন স্বাধীনভাবে মতামত চর্চা করার অধিকার আছে তেমনি পাঠক হিসেবে ভালো না লাগার কারণে তাঁকে বর্জনের অধিকারও আমাদের আছে । কিন্তু তাই বলে মতামত প্রকাশের অধিকারের অপব্যবহার,ধর্মবিরোধী লেখনীর অভিযোগ তুলে জন্য নিজের নাড়িপোতা দেশ, মা-বাবা, ভাই-বোন,আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে একজন মানুষকে চিরজীবনের জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এ ধরণের বর্জন,এ ধরণের কঠিন তিরস্কার আদতেই গ্রহণযোগ্য নয় । কারণ একজন মানুষের কৃত খারাপ কাজের জন্য একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত ঘৃণা-বর্জনই সেই মানুষের অবধারিত শাস্তি । তাঁকে দেশত্যাগে বাধ্য করাটা তাই শাস্তি নয়,তাঁর প্রতি ঘোরতর অন্যায় । যা ভাল,সত্য,সুন্দর,পবিত্র ও শাশ্বত আমরা সেটাই গ্রহণ করব, এবং যেটা আমাদের নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক সেটার চর্চা থেকে বিরত থাকতে হবে আমাদেরই কল্যাণের তাগিদেই । কিন্তু আমাদের এইসকল শুভবোধের প্রকাশের জন্য অন্য কারো মৌলিক অধিকার খর্ব করার স্বাধীনতা আমাদের নিশ্চয়ই কারোরই নেই । দেশ থেকে উৎখাত করে তসলিমার প্রতি কি সুবিচার করা হয়েছে ?

এটা কি তাঁর প্রতি সঠিক বিচার নাকি বিচারের নামে বর্বরতা ! “ধর্মপ্রাণ’, “আত্মসম্মানসম্পন্ন” মানুষদের/পাঠকদের ঘৃণাই তো তাঁর সাজা ছিল,আলাদাভাবে দেশত্যাগে বাধ্য করার মত হৃদয়হীন সাজা না হলেও চলত ।এই ব্যাপারটা শুধু আমাদের বাংলাদেশেই নয়,পাশের দেশ ভারত থেকে একই অভিযোগে সালমান রুশদিকেও তাড়ানো হয়েছে ।তাতে কি তাঁরা থেমে গেছেন নাকি দমে গেছেন?



মেয়েবেলায় ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলো নিয়েই তসলিমা লিখেছেন-সেখানকার অশ্লীল,অপ্রিয়,অসভ্য ব্যাপারগুলোতো আমাদের চিরচেনা,এই সমাজেরই ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রতিচ্ছবি । সেটাই যদি কলমের মাধ্যমে বইয়ে প্রকাশ পায় তাতে দোষের কোথায়? তিনি তো একটা দুর্নীতিমুক্ত,বৈষম্যমুক্ত,অন্যায়মুক্ত কোন স্বর্গরাজ্যের কথা বলেননি,বলেছেন আমাদের এই ছোট্ট বাংলাদেশেই নিত্য ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা-তাতে যদি কারো দাঁড়ি-টুপি,পায়জামা-পাঞ্জাবি,ঈমান কিংবা দেশপ্রেমে আঘাত লাগে,তাঁরা ওইসকল “বিতর্কিত” বইপড়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন,নিজের চৌদ্দগুষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখুন কিন্তু তাই বলে ধর্মের প্রতি আঘাতের অজুহাত তুলে তাঁকে দেশছাড়া করা হবে কেন ? অথচ সেই পাকিস্তানি নরকবাসি প্রেতাত্মারা যখন জীবনকালে এদেশীয় চ্যালাচামুন্ডাদের সহযোগিতায় শুধুমাত্র ধর্ম রক্ষার নামে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে,যখন সেই চ্যালারাই ধর্মের লেবাস পড়ে জঙ্গিবাদ লালন করে সারাদেশে একযোগে বোমা ফাটিয়ে নিরীহ মানুষকে আতঙ্কিত করে রাখে,তখন ধর্মপ্রাণ মানুষরা কিছু বলেন না কেন,তাঁদের মুখে কথা ফুটে না কেন তখন ? কেন মানবতার বিপক্ষে জঘন্য অপরাধের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ফতোয়া,হুলিয়া জারি করা হয় না ? “৭১-এ মা-বোনদের সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা করা এদেশীয় দোসরদের কেন তাঁরা বিতাড়িত করে পাকিস্তানে পাঠান না ? ওঁদের ঘাঁটাতে এত কিসের ভয়? ভয় ভীরুতাকে,ভয় কাপুরুষতাকে ।



তসলিমা নাসরিনকে বিতারণ করে এই দেশটা উদ্ধার হয়ে যায় নি,শতভাগ,নিরবচ্ছিন্ন ইসলামী রাষ্ট্রও হয়ে যায়নি এই দেশ । মানুষের ঈমান ও দেশপ্রেমও জোরালো হয়ে উঠেনি- তাই-ই হলে হয়ত ওই বিশ্বজিতকে মরতে হত না বা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে প্রহসনের অভিযোগ আসত না ।



আমার ক্ষুদ্র বিদ্যা-বুদ্ধিতে বুঝে উঠতে পারছি না ইসলাম ধর্ম কি এতই দুর্বল,এতই ঠুনকো যে মোটে একজন নগণ্য তসলিমা নাসরিনের কলমের তোড়ে তা উবে যাবে,নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ? নিশ্চয়ই তা নয় । আর ওদিকে পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী গোলাম আযমকে এদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে নায়েবে আমীর বানানো হয়, নিজামি-মুজাহিদদের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন করে তাঁদের গাড়িতে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়, তাতে কি ওই সকল মানুষের ঈমানের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে –তাঁরা কি বেহেশতের টিকিট পেয়ে গেছেন নাকি তসলিমা-রুশদিরা উচ্ছন্নে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে, পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২০

প্লাবণ ইমদাদ বলেছেন: ধন্যবাদ অসাধারন বিশ্লেষনের জন্য।

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩০

ব্যবচ্ছেদ বলেছেন: ধন্যবাদ । B:-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.