নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রুদ্রাক্ষ

তোমায় গান শোনাবো,তাইতো আমায় জাগিয়ে রাখো... ওগো ঘুমভাঙানিয়া,ওগো দুখজাগানিয়া ...

ব্যবচ্ছেদ

একাকী আমি লিখছি জীবনের গলিতে গলিতে যে জীবন-গল্পের শেষ নেই... অন্তহীন !

ব্যবচ্ছেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“সত্যান্বেষী” ঃ জীবনের সত্যান্বেষণ

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৪৫

আমি আর কতদিন বাঁচব ? জানি না । তবে এইটুকু নিশ্চিত জানি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বেঁচে থাকার জীবনটায় আর কোনওদিন ঋতুপর্ণের মুখোমুখি হতে পারব না । ঋতুপর্ণ বেঁচে নেই। চিরঘুমের এক অদেখা,অনুভূতিহীন সময়ের যাপনকে বেছে নিয়েছেন । অথচ এই মানুষটার সাথে আমার দেখা করার খুব ইচ্ছা ছিল । যদি কোনদিন কলকাতায় যেতে পারি তাহলে অতি অবশ্যি তাঁর সাথে দেখা করব ভেবে রেখেছিলাম । কলকাতা আমার আজন্ম সাধের সাধণা এখনও ,কিন্তু ঋতুহীন কলকাতা,ঋতুহীন সময় কিংবা প্রকৃতির মতই বৈচিত্র্যহীন বিবর্ণ । কোন বস্তু বা স্মৃতিকে ভাবের প্রতীক বানাবার ইচ্ছা আমার নাই সত্যি কিন্তু কখনো কখনো কিছু বিশেষ স্মৃতি ভাববাদের চরমে পৌঁছে যায়,হয়তো অচেতনভাবেই !



আজকে ঋতুপর্ণ ঘোষের “সত্যান্বেষী” ছবিটা দেখলাম । শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের “ব্যোমকেশ বক্সীর” সর্বশেষ গল্পটা আমি পড়িনি,কারণ এই গল্পটা পূর্ণতা পাবার আগেই প্রকৃতিতে শরদিন্দুর জায়গাটা শূন্য হয়ে গেছে । কত যে অভিমান হয়েছিল ! তাই আর পড়লাম না । ভেবেছিলাম ঋতুর পরিচালিত এই শেষ ছবিটাকেও ছোঁব না ! কারণ “সত্যান্বষীকে” পরিপূর্ণতা দেবার অনেক আগেই ঋতুও প্রকৃতির ইশারায় শূন্যে মিলিয়ে গেছেন! কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, দেখা গেল অভিমানের সমাপ্তিতে অক্ষম আফসোসেরই অনিবার্যতা !



আমার জীবনে মনে রাখবার মত ঘটনার সবগুলোই কাকতালীয় ! এই ঘটনাগুলো আমার জন্য বিশেষ অর্থ বহন করে । আমার উপলব্ধির দ্বারগুলোতে দড়াম দড়াম কশাঘাত করে । ভাবায় যে,স্বাভাবিকতা বা নিত্যতার বাইরে দুঃসাহসিক ব্যতিক্রমীতা দূর্বার বিস্ময় নিয়ে চিরজাগ্রত,চিরদন্ডায়মান । প্রকৃতির অনিবার্যতাকে কাঁচকলা দেখিয়ে লৈঙ্গিক রূপান্তরের মাধ্যমে নবজৈবনিক আত্মোপলব্ধি কম দুঃসাহসিক যজ্ঞের কথা নয় । মানুষ কতটা ডেসপারেট হলে এমন রূপান্তরের কথা ভাবতে পারে ? মানুষ কতটা অসুখী হলে পরিবার-সমাজ এবং দৈশিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ,অনুশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে ? জানতে খুব ইচ্ছে করে । কেমন হবে সেই সময়ের অনুভূতিগুলো ? কেমন হবে সেই সময়ের অনুভূতির উপলব্ধিগুলো ?



হায় ! লিখতে বসেছিলাম “সত্যান্বেষী” নিয়ে,লিখে ফেললাম স্বত্যান্বেষী স্রষ্টার ইতিবৃত্ত ! যাই হোক,একটা কাকতাল ঘটনার কথা বলে “সত্যান্বেষণ” শুরু করি । ব্যোমকেশ বক্সী আমার খুব প্রিয় একজন গোয়েন্দা চরিত্র আর ঋতুপর্ণ ঘোষ খুব প্রিয় একজন চলচ্চিত্র পরিচালক । “সত্যান্বেষী” ছবিটার মাধ্যমে একজন কল্পনার মানুষ আর একজন বাস্তবের মানুষের মিলন আমাকে খুশী না করে পারে না ! যেখানে এমন কাকতাল কল্পনাতেও ছিল না ! কারণ ঋতুপর্ণ সামাজিক মানুষের সাম্পর্কিক চক্রের বোধ,বোধের বিকাশ এবং বোধের টানাপোড়েনগুলোই তুলে ধরেন তাঁর ছবিতে,সাধারণত । সম্পর্কের গূঢ়রহস্যই যার ছবির অন্তর্নিহিত গূহ্যকথা তাঁর কাছে গোয়েন্দা গল্পের রোমাঞ্চও যে উপভোগ্য হতে পারে সেটা আমার ভাবনাতেও ছিল না ।



শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের “চোরাবালি” গল্প অবলম্বনে “সত্যান্বেষী” ছবিটা । “সত্যান্বেষী” নামে ব্যোমকেশ সমগ্রে আলাদা একটা গল্প ছিল যেটা দিয়েই কিনা ব্যোমকেশের উত্থানযাত্রা এবং পাঠকের সাথে ব্যোমকেশের পরিচয়পর্ব ।

“চোরাবালি” গল্পটাকে খোলনলচে বদলে ফেলেছেন ঋতুপর্ণ “সত্যান্বেষীর” চিত্রনাট্যে । ঋতুপর্ণের এই একটা ব্যাপার উল্লেখ করবার মত । ঋতুপর্ণ কোন ছবিরই মূল কাহিনিপ্রধাণ চিত্রনাট্য করেন না,বরং সেটা নিয়ে নিজের মত করেই নিরীক্ষা করে চিত্রনাট্য দাঁড় করান । এই নিরীক্ষা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসগুলোও বাদ যায় নি ! এক দুঃসাহসই বলা যায় !



‘চোরাবালি” গল্পটা যেহেতু পড়া আছে তাই ভেবেছিলাম “সত্যান্বেষী” ছবিটা ততটা উপভোগ্য নাও হতে পারে । কিন্তু ছবিটা শেষের ২৫ মিনিট আগে পর্যন্তও আমি বুঝতে পারিনি মূল কাহিনি রদবদলের মারপ্যাঁচগুলো । ঋতুপর্ণের ছবিগুলোর অভিনয় নিয়ে কোন ধরণের প্রশ্নই তোলা সম্ভব নয় তা তিনি যত বড় অভিনয় বোদ্ধাই হোন না কেন । কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি “সত্যান্বেষী” ছবিটার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ে একটা আড়ষ্টভাব লক্ষ্য করা যায় । পুরো ছবির ডাবিংটাও চোখে লাগে ।

ব্যোমকেশের চরিত্রে বলিউডি হিন্দি ছবি “কাহানির” পরিচালক সুজয় ঘোষকে চমৎকার মানিয়েছে ।

টালিউডে ব্যোমকেশকে নিয়ে ঋতুপর্ণের আগেও গায়ক অঞ্জন দত্ত,আবীর চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে “ব্যোমকেশ বক্সী” বানিয়েছেন । কিন্তু সুজয় ঘোষ ব্যোমকেশ হিসেবে অধিকতর ধীরস্থির,তবে তাঁর চরিত্র আর বেশভূষার সাথে সেটা শতভাগ সাযুজ্যপূর্ণ । “সত্যান্বেষীর” সেট,সাজসজ্জা ও আবহসংগীত অসাধারণ । সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি মোতাবেক আবহসঙ্গীতের মেলবন্ধন এক কথায় চমৎকার ।



শুরুতে ইচ্ছে ছিল “সত্যান্বেষী” কোনদিন দেখব না,দেখার পরে ভেবেছিলাম “সত্যান্বেষীকে” ব্যবচ্ছেদও করব না,কিন্তু কোন ইচ্ছেই,কোন ভাবনাই আমাকে,আমার সংযমকে রক্ষা করতে পারেনি । শেষ পর্যন্ত কলম উঠাতেই হয়েছে এবং চরম বেরসিকের মতই অনুপস্থিত ঋতুর “সত্যান্বেষী” ও জীবনের সত্যান্বেষণকে ভাবনাযন্ত্রের নিচে কুটিকুটি করে কাটতে হয়েছে !

কোথায় ভেবেছিলাম ঋতুপর্ণের অন্তিম এই কর্মটাকে কোনদিনই দর্শন না করেই তাঁর কর্মকে ভাবনায় জিইয়ে রাখব,কিন্তু তা আর হল কই ? কারণ নিজের কাছ থেকেই নিজের সততার,সংযমের সনদ লাভের সৌভাগ্য সকলের থাকে না । আর এই মুহূর্তে আমার তো নাই-ই !







চরম মেধাবী মানুষগুলো নাকি খুব বেশি ক্ষ্যাপাটে হয় ! ক্ষণজন্মা ঋতুপর্ণ কিসের প্রতি ক্ষ্যাপাটে ছিলেন ? ঈশ্বরের প্রতি? প্রকৃতির প্রতি ? নাকি নিজের প্রতি ? প্রশ্নগুলোর উত্তর মিমাংসারহিত,কারণ উত্তরদাতা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছেন ।



অনুপস্থিত ঋতুপর্ণ তবুও বেঁচে থাকুন তাঁর কর্মে,বেঁচে থাকুন আমার এই ভগ্নপ্রায় জরাজীর্ণ লিখনভাবনায় !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.