![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একাকী আমি লিখছি জীবনের গলিতে গলিতে যে জীবন-গল্পের শেষ নেই... অন্তহীন !
প্রিয় রবিবাবু ,
তোমাকে যদি কখনো পেতাম তাহলে তোমার এক চিলতে সাদা দাঁড়ি টেনে ধরে বলতাম, “তুমি কি হে ! আমার ভেতরে,খুব ভেতরে ঢুকে আমাকে নিরঙ্কুশ অধিকার করবার মতন এমন সর্বনেশে বিদ্যা তুমি কোথায় শিখলে বল ?” আশ্চর্য একটা মানুষ তুমি ! তোমাকে নিয়ে ভাবতে গেলে আমি কোন কূল পাইনা । মনে হয় এই পৃথিবী গ্রহটিতে আমিই একমাত্র প্রাণী,চিরবিরহী এবং তুমিই একমাত্র আশ্রয় ! কেন এমন হয় বলতো ? গত কয়েকদিন ধরে তোমার দুটো গান শুনছি, “আমায় বোলো না গাহিতে”, “হার মানা হার পড়াবো তোমার গলে।”
আচ্ছা আমার মত তুমিও এক মানুষ,তোমার ভেতরের কোথায় এত মায়া,এত প্রেম,এত অনুরাগ,এত ভক্তি,এত করুণা লুকিয়ে ছিল ? কিভাবে,কেমন করে পেরেছ তুমি ? অনুভূতির এবং চেতনার এমন আত্মিক গভীরতার কোন স্তরে গেলে মানুষ রবিঠাকুর হয়ে উঠে ? অথচ মানুষ তুমিও,সংসারধর্ম তোমারও ছিল,দীনতা ছিল,হীনতা ছিল,ভুল ছিল,পরাজয় ছিল,লজ্জাও ছিল...ছিল চরম আর্থিক অনটনও,তবুও কোন প্রেরণার বলে, কোন শক্তির জোরে মানুষ হয়েও তুমি ভাবের পর্বত হয়ে উঠলে ?
জান,মাঝে মাঝে আমার মনে হয় এই বাংলায় জন্মানোটা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি । বাকি জীবনটাতে যতই প্রাপ্তিযোগ ঘটুক না কেন,কোন প্রাপ্তিই আমাকে এতটা মহিমাময়,বীর্যবান করে তুলবে না । এই কি ভাগ্য ? এই পরম ভাগ্যের নিয়ন্তা যদি কেউ থেকেই থাকে তাহলে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমি তাঁর কাছে বশ্যতা স্বীকার করছি ।
সাংসারিক অবগুণ্ঠন খুলে তোমার সৃষ্টিতে অবগাহন করলে আমার আর ফিরতে ইচ্ছে করে না । মনে হয় তলিয়েই যাই,তলিয়েই যাই অন্তহীনভাবে । শেষ সীমায় পৌঁছে দেখি কোনখানে,কোথায় “সীমার মাঝে অসীম তুমি” । আমার নিজেকে কখনো একা মনে হয় না , মনে হয় না কারণ আমি জানি যার ভেতরে আস্ত একটা রবীন্দ্রনাথ আছে,তাঁর কোন কিছুকেই ভয় পাবার দরকার নেই । সে তো জানেই মূলমন্ত্রটা, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে” । পৃথিবীতে খুব সম্ভবত শক্তিশালী বিশ্বাস হল এটাই বিশ্বাস করা যে, আমার সত্তার ভেতরে কিছু একটা আছে যা অবিশ্রাম আমাকে গান শোনাতে থাকে,আমার একান্ত ভেতরের ঘুমজাগানিয়া আমাকে জাগিয়ে তুলবে,ভেতরের দুখজাগানিয়া সদাই আমাকে জাগ্রত রাখবে । এই অপরাক্রমশালী বিশ্বাসের প্রাচুর্যতা আমাকে কখনোই দারিদ্যপীড়িত করে না । এই বিশ্বাসের জোরেই আমি ধনী ।
মাঝে মাঝে তোমাকে স্বশরীরে দেখতে খুব...খুব ইচ্ছে করে । কল্পনা করার চেষ্টা করি তোমার যাপিত জীবনের দিনগুলোকে । কেমন করে লিখতে তুমি, “তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী”, কেমন ছিল তোমার কন্ঠস্বর,কেমন ছিল তোমার পুরুষোত্তম রূপমাধুর্য ।
শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বারবার করে ঘুরে দেখেছি,কল্পনায় ধরতে চেষ্টা করেছি ঠিক এই জায়গাতেই বসে তুমি লিখতে ...লিখতে লিখতে ক্লান্তিদোষ পেয়ে বসলে ওই কার্নিশের দিকে চেয়ে থাকতে ,অথবা বারান্দার রেলিঙ ধরে তাকিয়ে থাকতে নদীটির দিকে । খুব কি বিষণ্ণ ছিল সময়গুলো নাকি উচ্ছ্বল,সৃষ্টিময় ? আমি কোনওদিন জানতে পারবো না,আমি জানতে পারবো না আমার প্রাণের মানুষটার দেবতার মতন শরীরটা ওই কৃষ্ণকায় খাটটার কোন পাশ ফিরে ঘুমোতো ! সে কি স্বপ্ন দেখত ? বুক-মুখ শুকিয়ে যাওয়া কোন দুঃস্বপ্ন নাকি আতিশয্যভরা কোন সুখস্বপ্ন ? মাঝে মাঝে তুমি কার দেখা পেতে ঠাকুর ,প্রাণের ঠাকুর ? কোনদিন তা জানা যাবে না ! এক হিসেবে বোধ হয় এই-ই ঠিক । কিছু আকাঙ্ক্ষাকে কখনোই পূর্ণতা দিতে হয়না,তাহলে কৌতুহল মিটে যায় । আর যেখানে কৌতুহল মিটে যায় সেখানে কোন কল্পনা থাকে না,কোন ভাবালুতা থাকে না,সৌন্দর্যতো থাকেই না । তোমাকে দেখতে না পারার এই দুঃখটাই তাই আমার সুখ,পরম সুখ,নিখাদ সুখ,অটুট সুখ । তোমার স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোই তাই আমার ভাবের তীর্থ,সারাজীবনের আবিষ্কার-অন্বেষণ নেশা । পৃথিবীর আর কোন কিছুই আমাকে এতটা ভাবায় না,যতটা ভাবায় তোমার গান,কবিতা,গল্প,উপন্যাস এবং সর্বোপরি তুমি ।
মোটে একটা মাত্র মানুষ তুমি,কেমন করে পেরেছ নিজেকে এমন বিচিত্রভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করতে ? কেমন করে পেরেছ চিন্তার গতিময়তাকে স্বতঃস্ফূর্ত রাখতে ? কোন আশ্চর্য প্রাণের অধিকারি ছিলে নাথ ?
ভাবের জগতে ঢুকে রহস্যময় গভীরতার সৌন্দর্যের সাথে সখ্যতা সম্ভব হয়েছে তোমারই কারণে । এই জন্যই বোধ হয় আমার অন্তঃকরণ এতটাই টুইটম্বুর,এই জন্যই বোধ হয় আমার মুখটা কক্ষনোই বিস্বাদ অথবা তেঁতো হয় না । এই জন্যই বোধ হয় সংবেদনশীলতার জ্ঞান এতটাই টনটনে,চৈতন্য বোধ হয় এই জন্যই জাগ্রত ।
আচ্ছা,পুনর্জীবন বলতে কি কিছু আছে অথবা দ্বিতীয় জীবন,নয়তো নতুন জীবন ? যদি থেকেই থাকে তাহলে কেমন রকম সেই জীবন ? আগের জীবনের স্মৃতিগুলোই কি নতুন জীবনের স্মৃতি নাকি স্মৃতিগুলোও নতুন জীবনের মতই নতুন ? আমার খুব কষ্ট হয় ঠাকুর,তুমি জানলে না,জেনে গেলে না,আর কোনওদিন জানবে না,যে পৃথিবীতে তুমি দীর্ঘ দিবস-রজনী বাস করে গেছ,সেই পৃথিবীতেই একটা পাগল আছে ! যার কাছে তুমিই সত্য,সত্যই তুমি,তুমিই ভবজলধিরত্নম । একে কি অবসেশন বলা যাবে ? বৈকল্য ? অন্ধত্ব ? হোক সেটা রোগ বা মানসিক বৈকল্য,হোক সেটা দৃষ্টিহীনতা,এই নিয়েই আমি । আমার সবচেয়ে বড় সত্যি এটাই ।
আমি তো গোটা পৃথিবীকেই আপন করে নিয়েছি,গোটা পৃথিবীটাই তো আমার বাস,কেন একটা ক্ষুদ্র বিন্দুতে আঁটকে থেকে সংকীর্ণমনা হব বল ? কিসের অভাব আমার ? চিরবাস্তবিক চাহিদার সংকট বিহ্বলতাই কি জীবনের শেষ কথা,বেঁচে থাকার অনিবার্য সিদ্ধান্ত ? এর বিকল্প নিরাভরণ বলতে কি কিছুই থাকবে না ?
যাই হোক,এরকম জটিল সমীকরণে মগ্নতা মুলতবীই থাক আপাতত । এখন প্রয়োজন বিশ্রাম,শয়ান,নিদ্রামগ্নতা...ঘুমজাগানিয়ারা,দুখজাগানিয়ারা ঠিক সময়ে এসেই গান শোনাবে... ঘুম ভাঙাবে ।
তুমি তো একজন মানবদেবতা । কি বলে তোমাকে আশীর্বাদ করা যায় বলতো ? তবুও তুমি মানুষই হও আর দেবতাই হও,কোন এক দুর্বল মুহূর্তে যখন অবসন্ন প্রাণে শ্বাসের কষ্ট হবে তখন আমার আশীর্বাদ তোমার কাছে পৌঁছবে । ভয় কোরো না,ঠাকুর । ভয়কে জয় করাই তোমার ধর্ম । আমরা পাশাপাশিই আছি এর চেয়ে বড় সত্য আর কি হতে পারে ? সত্যই শক্তি ।
হৃদয়ে হৃদয় আসি মিলে যায় যেথা
হে বন্ধু আমার,
সে পুণ্যতীর্থের যিনি জাগ্রত দেবতা
তারে নমস্কার ।।
.
.
.
.
পথযাত্রী জীবনের দুঃখে সুখে ভরি
অজানা উদ্দেশপানে চলে কালতরী
ক্লান্তি তার দূর করি করিছেন পার
তারে নমস্কার ।।
১০ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১১
ব্যবচ্ছেদ বলেছেন: ধন্যবাদ । রবিঠাকুর এমনই একটি মুগ্ধতার নাম,যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না ।
ধন্যবাদ,এই লাগামছাড়া মুগ্ধতাকে স্বীকৃতি দেবার জন্য ।
২| ১০ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:০২
গোঁফওয়ালা বলেছেন: ভয়ানক সুন্দর লাগলো লেখাটা। সুন্দর! সুন্দর! সুন্দর!
১০ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১২
ব্যবচ্ছেদ বলেছেন: ধন্যবাদ,ধন্যবাদ .।.।.। ধন্যবাদ
আপনার মন্তব্যে ভয়ানক আনন্দিত হলাম
৩| ১০ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
আমিনুর রহমান বলেছেন:
ভালো লাগলো রবিঠাকুরের প্রতি আপনার ভাবনা।
১০ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৩
ব্যবচ্ছেদ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ, এই ভাবনায় শামিল হওয়ার জন্য ।
ভালো থাকবেন ।
৪| ১৩ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩২
শায়মা বলেছেন: প্রিয়তে রেখে দিলাম ভাইয়া।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৩১
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
দারুন লিখেছেন, রবি ঠাকুরকে নিয়ে এমন ভাবনায় মুগ্ধ হলাম বেশ।