নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অরণ্য সাদেকুর রহমান

I am something to everybody but everything to somebody

অরণ্য সাদেকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবকিছুই কেমন ধোয়াটে

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯

আরিফের ঘুম ভাঙ্গলো প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে । জানালা খোলা, সকালের রোদ এসে সারা ঘর ঝকঝক করছে । ফ্যান অফ করা, ঘামে গলা ভিজে গেছে । এটা ওর মায়ের কাজ, প্রতিদিন সকালে ওকে দুয়েকবার ডাক দিয়ে জানালা খুলে দিবে আর ফ্যান অফ করে দিবে । আরিফ অনেকবার বলেছে এই কাজ যেন তার মা না করে, কোন লাভ হয় নি, তারপরও প্রতিদিনই তার মা একই কাজ করে । খুব মেজাজ খারাপ হয় তার । সে আজ খুব সিরিয়াস । টুথব্রাশ নিয়ে গদগদ করে বলছে, এখন থেকে হলে থাকব । বাসার এই যন্ত্রনা আর সহ্য করা যায় না । ওর ছোট বোন মৌ খুব মজা পায় কথাটায়, তিন বছর ধরে একই কথা শুনে আসছে । বাসা চরপাড়ায় হওয়ায়, বাসা থেকেই ক্লাস করে আরিফ । মাঝে মাঝে হলে থাকে, বিশেষ করে পরীক্ষার সময় ।

অটো দিয়ে আসার সময়ও বিরক্তিতে বারবার উফ উফ করতেছে মনে মনে । আর ভাল লাগে না । তার পাশে মাঝবয়সী একজন বসে সিগারেট খাচ্ছে । আরিফ নিজেও সিগারেট খায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় কিন্তু অন্য সময় সিগারেটের গন্ধ কেন জানি তার সহ্য হয় না । যাক, বাঁচা গেল, লোকটা নেমে গেছে ।

ভার্সিটির ভিতর ঢোকার পরই একটা ঠান্ডা পরিবেশ । আরিফ প্রতিদিনই যাওয়া আসার সময় এই জিনিসটা উপভোগ করে । অন্যরাও হয়তো করে, কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় নি । আজ সুলতানাকে জিজ্ঞেস করবে, যদিও ও জানে, উত্তর হবে একটাই, কি জানি খেয়াল করিনি । তারপরও তাকে জিজ্ঞেস করবে, ওর সাথে কথা বলতে আরিফের অন্যরকম ভাল লাগে । সুলতানা ওর ইয়ারেই, তাপসী রাবেয়া হলে থাকে । সুলতানার গায়ের রঙ শ্যামলা । চেহারা গোলগালও নয় আবার লম্বাও নয়, মাঝামাঝি । চোখ মোহনীয়, নৌকার মত, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় কিছু একটা বলতে চাইছে । কিন্তু বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যায় না, গভীরতা অনেক বেশি, সাগরের মত, তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে । দুই চোখ আর নাকে তিল আছে, চুল রেশমি । হাসিখুশি না থাকলেও মায়া মায়া একটা ভাব, দেখলেই আরিফের মায়া লেগে যায় মেয়েটার উপর ।

সুলতানা, কেয়া আর রুপা কেআরে যাচ্ছে দেখতে পেয়ে আরিফ অটো থেকে নামল । কি রে কেমন আছিস ?
হ্যা, ভাল । তুই কেমন আছিস ?
ভাল । আচ্ছা থাক, আমি যাই ।

বলে হন হন করে আরিফ চলে গেল । তার হার্টবিট বেড়ে গেছে । আর কিছু বলতে পারবে না । সে মাঝে মাঝে ভাবে, ও কি মেয়েটার প্রতি কিছুটা দূর্বল । অন্য কারো সাথে কথা বলতে সে আনইজি ফিল করে না, শুধু ওর ক্ষেত্রেই কেন ঘটবে ? সুলতানাও আরিফের সাথে সামনাসামনি কথা বলতে আনইজি ফিল করে । ছেলেটা কেমন যেন । এই যে এখানে তারা তিনজন ছিল, শুধু তাকেই কেন জিজ্ঞেস করবে কেমন আছে ! কেয়া, রুপা কি মনে করবে ! মানুষের উলটাপালটা ভাবতে তো সময় লাগে না । এই জিনিসটা আরিফ বুঝতে চায় না ।


এই ঘটনার ঠিক তিনমাস পরে এক রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছে । আরিফ একা নদীর পাড়ের গার্ডের রুমে বসে সুলতানার সাথে কথা বলছিল । বৃষ্টির শব্দে তার কথাগুলো ঠিকমত শোনা যাচ্ছে না । বিজলির আলোয় চেহারাটা নজরে আসলে, কথাগুলো যে আবেগে ভরপুর, তা বোঝা যাচ্ছিল । সুলতানার কথায় সে বিচলিত । সুলতানা বলছিল বয়ফ্রেন্ড আছে, ঢাবি থেকে পাশ করে একটা জব করছে । বাসায় জানে ব্যাপারটা । বছর খানেকের মধ্যে ওরা বিয়ে করে ফেলবে । এই কথাগুলো আরিফের কানে বারবার আঘাত করছিল । সুলতানা আগে কখনও বলেনি ওকে কথাগুলো । সে সুলতানাকে বন্ধুই ভাবত, কিন্তু কথাগুলো শোনার পর মনে হচ্ছিল ওকে হারিয়ে ফেলছে । তাই বারবার ওকে বলতেছিল, আমরা তো বন্ধুই থাকতে পারি । সুলতানার এক কথা, কি দরকার অযথা মায়া বাড়িয়ে ?

আরিফই সুলতানাকে ফোন দিত, কিন্তু সুলতানা বেশি আগ্রহ দেখাত না, তারপরও কথা বলত । এক রাতের কথা আরিফ কিছুতেই ভুলতে পারছে না । সেই রাতে সুলতানা কি মনে করে আরিফকে ফোন দেয় । তার কিছু ভাল লাগছে না, আরিফের সাথে সে কথা বলতে থাকে সারারাত । সারা আকাশ জুড়ে ঝকমকে তারার মেলা । দুজন মিলে তারা গুনতে গুনতে তুই সম্পর্কটা কখন যে তুমি হয়ে যায় খেয়াল করেনি কেউ । একটু পরে তারা মিলতে থাকে, হলদে একটা চাঁদ ওঠে আকাশে । তারও অনেক পরে সূর্য উঠলে দুজনের কথা শেষ হয় । সুলতানার নাম ততক্ষনে সুতা, লতা, তানা হয়ে গেছে । আরিফের নাম কি কি দিয়েছিল তা জানা যায় নি । পুরোটা সময় জুড়ে দুজন দুই হলের ছাদে ছিল । কিন্তু সাথে ছিল একই আকাশ, একই তারা, একই জোৎস্না আর হাজার হাজার স্বপ্ন ।
ওই রাতের পর সুলতানা অনেকদিন আরিফের সাথে যোগাযোগ করেনি । আরিফ তাকে জিজ্ঞেস করলে সে শুধু বলেছে, সে জানে না কেন করেছিল, তার উত্তর তার কাছে নাই । আর আজ সে বলছে তার বয়ফ্রেন্ড আছে । সবকিছুই কেমন ধোয়াটে লাগছে তার । প্রেম ভাললাগা ভালবাসা সম্পর্কের এ টানাপোরেন সে বুঝতে পারে না । নিজেকে ছোট মনে হতে থাকে । খারাপ লাগত প্রথম প্রথম, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায় একদিন । আবার আগের মত চলতে থাকে সব ।


আরো কয়েক মাস কেটে যায় । আকাশে শরতের সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে । আরিফ আবারো নদীর পাড়ে । ঐ সময় সুলতানা ওকে ফোন করে কিছু কথা বলে, যেটা শুনে আরিফকে বেশ বড় একটি ডিসিশন নিতে হয় । সুলতানার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করেছে, প্যারিস প্রবাসী ব্যবসায়ী মৃদুলের সাথে । মৃদুল বিয়ে করে বউসহ চলে যাবে । তবে এও বলেছে, যদি সে কোন ছেলেকে পছন্দ করে থাকে, তাহলে যেন আগামীকালের মাঝে তার সাথে দেখা করে । "আরিফ আমি কি তোমার কথা বাবাকে বলব, তুমি এক ঘন্টার মাঝে আমাকে জানাও" । আরিফ একের পর এক সিগারেট খেতে থাকে । সারা শরীর ভারী ভারী লাগছে তার । হাটতে পারছে না । এক ঘন্টা কেটে যায় । সুলতানা বারবার ওকে ফোন দিতে থাকে, আরিফ ফোন ধরে না । এরই মাঝে মৌয়ের সাথে কথা হয় আরিফের । মৌয়ের কাছ থেকে সাহস পেয়ে হাতে পনেরশ টাকা নিয়ে চট্টগ্রামের বাসে ওঠে । সুলতানাকে ফোন দেয়, সে চট্টগ্রাম আস্তেছে । আরিফ ভাবতে থাকে সে অবশেষে সুলতানাকে পেতে যাচ্ছে, হাজার স্বপ্নের রানী সুলতানা, তার হবে । মাথা থেকে যন্ত্রনা দূর হয়ে একটা প্রশান্তি নেমে আসে । সে ঘুমিয়ে পরে বাসের সিটে মাথা রেখে ।


আরিফের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে দুইদিন পরে মৃদুলের সাথেই সুলতানার বিয়ে হয়ে যায় । মৃদুল তাকে নিয়ে প্যারিস চলে যায় । পাওয়া, না পাওয়া সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেয় সে । একা একা ঘরে বসে অনলাইনে প্রথম আলো পড়তে গিয়ে ফেনী ব্রিজের কাছে একটি বাস দুর্ঘটনার সংবাদে তার চোখ আটকে যায়, চোখ থেকে পানি আপনাতেই বেরিয়ে পড়ে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.