নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্ফিয়াসের মায়ার ভুবনে স্বাগতম

অর্ফিয়াস

[email protected]

অর্ফিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

অষ্টগ্রামে ক্যাম্পিং ট্যুর

৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:১৮



আর মাত্র কদিন। এরপরই শুরু হচ্ছে বর্ষাকাল। আমরা সাধারনত বর্ষাকালকে বেড়াবার জন্য উপযুক্ত মনে করিনা। তবে বর্ষাকালও কিন্তু বেড়াবার জন্য পারফেক্ট একটি সিজন যদি আপনি সঠিক লোকেশন খুজে নিতে পারেন। এমনি একটি স্থান হলে কিশোরেগঞ্জ এর অষ্টগ্রাম। অষ্টগ্রাম উপজেলা একটি হাওড় বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপজেলা। এর চারদিকেই পানি। এমনকি শীতের সময়েও এখানে যেতে হলে নৌপথের সাহায্য নিতে হয়। এমন একটি স্থানে বর্ষাকাল কতোটা সুন্দর আর উপভোগ্য হয় নিজে গিয়ে সেটা দেখে নিন।
তবে শধু বর্ষায় নয় অষ্টগ্রাম যাওয়া যায় যে কোন সময়। গত বর্ষায় আমরা গিয়েছিলাম।

এবার বর্ষা শুরুর আগে অষ্টগ্রামের রুপ কেমন হয় সেটা দেখতে মনটা ছটফট করছিলো। একটা ক্যাম্পিং ট্যুর দেবার চিন্তা করলাম। আমাদের বেড়াই বাংলাদেশ গ্রুপে পোষ্ট দিলাম আমার উদ্দেশ্য জানিয়ে। অমনি ১৬ জন জুটে গেলো। তো এক শুক্রবার সকালে গুলিস্তান থেকে বিআরটিসির বাসে রওনা দিলাম কুলিয়ারচর এর উদ্দেশ্যে। ঘন্টা আড়াই পরে কুলিয়ারচর পৌছালাম। পৌছে আগে থেকে রিজার্ভ করা নৌকায় উঠলাম। আমাদের বড় নৌকাটি মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ছোট নদী আর হাওড় পেড়িয়ে যেতে লাগলো। দুপাশে চর, লোকালয় মাঝে ছোট্ট নদী বেয়ে আমাদের নৌকা এগুতে লাগলো। আমরা সবাই নৌকার ছাদের উঠে প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। নৌকা চারপাশে একটু পরপর পাখির সমারোহ। সবার ক্যামেরা ব্যস্ত হয়ে পড়লা পাখি আর প্রকৃতির ছবি তোলায়। কেউবা নৌকার ছাদে গোল হয়ে বসে গান শুরু করলো। একটু পর পর ছোট্ট একেকটা দ্বিপের মতো। সেখানে অনেক বাড়িঘর। সেগুলো আবার বেশ শক্তপোক্ত এবং কালারফুল। বোঝা যায় এখানকার লোকজন বেশ অবস্থা সম্পন্ন । এসব দ্বীপে যাবার একমাত্র উপায় হলো নৌকা বা ট্রলার।

কয়েকটিতে দেখলাম সাইক্লোন/বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর অষ্টগ্রাম পৌছালাম। চারদিকে হাওড় বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপজেলা অষ্টগ্রামে আয়তন ৩৩৫ বর্গ কি:মি:। জানা যায় অষ্টগ্রাম,আসিয়া, দুবাই ভাটেরা,নরসিংহ পূর্ববাদ, খাসাল, বীরগাঁও, বত্রিশ গাঁও এবং বারেচর এই ৮ টি মৌজা নিয়ে গঠিত হওয়ায় এই জনপদের নাম অষ্টগ্রাম।

অষ্টগ্রাম পৌছেই চমকে গেলাম এর পরিবর্তন দেখে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্বাচনি এলাকা হওয়াতে এখানে তিনি বিশেষ নজড় দ্যান। যোগাযোগ বিচ্ছিন এ দ্বিপে তিনি দারুন সব রাস্তা ঘাট আর ব্রিজ করেছেন। চেনাই যায়না গত দু বছর আগের অষ্টগ্রামকে। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত পুরো লোকালয়। আমরা নৌকা থেকে নেমে প্রথমে গেলাম থানায় রিপোর্ট করতে। আমরা যেহেতু ক্যাম্পিং করবো সেহেতু পুলিশকে আগেই জানিয়ে রাখলাম যাতে বিপদে সাহায্য নেয়া যায়। এসি সাহেব আমরা ঢাকা থেকে ঘুরতে এসেছি শুনে অবাক হলেন এবং অনুমতি দিলেন ক্যাম্পিং করার।

আমরা থানার কাছেই একটি চর এ ঘাসের গালিচায় ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা প্রথমেই সবাই নিজেদের তাবু পিচ করে নিলাম। মোট ৫ টা তাবু, ১০ জন থাকা যাবে। বাকী ৬ জন টেন্ট আনেনি তাদের থাকার ব্যবস্থা হলো ডাক বাংলোতে। এলাকার লোকজন হয়তো এমন টেন্ট আগে দেথেনি। তারা আমাদের দেখতে লাগলো অনেকে হাত লাগালো কাজে। থাকার ব্যবস্থাতো হল এবার দুপুরে খাবার পালা। এ বেলা রেষ্টুরেন্ট এ খেতে হবে। আমি আগেই অষ্টগ্রাম বাজারের দোকানদার বাবুলকে ফোন করে অর্ডার করেছিলাম খাবারে। সে আমাদের জন্য আলাদাভাবে স্থানীয় চাল দিয়ে ভাত, ভাজি, আইড় মাছ, আলু ভর্তা আর ডাল। বাবুলের রান্না ছিলো অসাধারন, আমাদের পেটে ছিলো ক্ষুধা। আর তাই সবাই পেট ভরে খেলাম ।

খাবার পর খাটি গরুর দুধের চা খাবার পালা। অষ্ট্রগ্রামে প্রচুর দুধ পাওয়া যায়। এখানকার পনিরও বিখ্যাত। চা খেতে খেতে আর আড্ডা দিতে দিতে প্রায় ৪ টা বেজে গেলো। আমরা একদল ছুটলাম কুতুব শাহ মসজিদ দেখতে। মুনতাসিম ভাই আর সাইফুল রয়ে গেলো রাতের খাবারের এন্তেজাম করতে। আমরা কয়েকটি রিক্সা নিয়ে এলাম কুতুব শাহ মসজিদ। অতি পুরোনো মসজিদ এ কুতুব শাহ। শারনা করা হয় ১৬ শতকের শেষদিকে বা ১৭ শতকের প্রথম দিকে এখঅনকার একজন বুজুর্গ কুতুব শাহ এ মসজিদটি তৈরী করেন। ৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির কাুরকাজ অসাধারন। এতবছর পরেও মসজিদটি মোটামুটি ভালো অবস্থাতেই আছে। আমরা সেখানে আছর এর নামাজ আদায় করলাম। সেদিন আবার ছিলো ওরশ। হাজার হাজার মাুনষের সমাগম কুতুব শাহ (র:) এর মাজারে। পাশেই বসেছে মেলা। দোকান আর মানুষে হাটা চলাই মুষ্কিল হয়ে পড়লো।

সেখানে আর না দাড়িয়ে চলে গেলাম রিক্সা নিয়ে নদী তীরে একটি ছোট বাজারে। এল শেপ কিছু দোকানপাঠ আর ছোট একটা মাঠ। দারুন আড্ডার জায়গা এটি। আমরা একটি দোকানে সিংগারা ভাজার অর্ডার দিয়ে হাওড় এর বাতাসে আড্ডায় মেতে উঠলাম। মাঝে একজন আবার পনির ওয়ালাকে খবর দিলো। একটু পরেই টাটকা পনির নিয়ে হাজির হলো। প্রতি কেজি ৫০০ টাকা করে কয়েকজন অর্ডার করলো পরদিনের জন্য। এরপর ফিরে এলাম ক্যাম্প এ।

এসেই দেখি এলাহি কারবার। মুনতাসিম ভাই রান্নি নিয়ে দজ্ঞযজ্ঞ শুরু করেছেন। গ্রাম থেকে ৩ টি হাস যোগার করেছেন, চুলায় সেঘুলো বুনা হচ্ছে। অন্যদিকে সাইফুল বার বি কিউর আয়োজন করেছে। তাক চুলা জ্বালাতে সাহায্য করেছে আশ্রাফ ভাই আর শাহিনুর ভাই। ঘন্টখানেক এর মধ্যে বার বিকউ রেডি। আামি কিছু পরাটা ভাজিয়ে আনলাম। বিলিয়ন ডলারে ষ্টার এর নীচে বসে সে বারবিকিউ চিকেন যে কি মজা নিয়ে খেলাম সেটা এখন লিখে বোঝাতে পারবো না। একটু পরই অন্য খাবারো রেডি হয়ে গেলো। হাস বুনা, সাদা ভাত আর ডাল। সে অন্যরকম এক স্বাদ।

খাবার পর আড্ডা আর গানের আয়োজন। আমরা রাত ১১ টার দিকে বের হয়ে চলে গেলাম মেলায়। এখন মানুষ আরো বেড়েছে। পা রাখার জায়গা নেই পরো এলাকায়। পুরো এলাকা আলোয় আলোকিত। আমরা মেলায় কিছু গ্রামীন রাইডে চড়লাম। সাড়ে ১২ টার দিকে ফিরে টেন্ট এ ঘুম। সাড়ে ৬ টার দিকে পাখির ডাকে ঘুম ভাংলো। অন্যরা সবাই ঘুমে। আমি আর আশ্রাফ ভই নদীতে চলে গেলাম মাছ ধরা দেখতে।

১১ টার দিকে সবাই নাস্তা করে সবাই বিদায়ের প্রস্তিত নিলাম। যেতে ইচ্ছে করছে না তবু ঢাকা সবারই কাজ আছে। তাই টেন্ট প‌্যাক আপ করে সাড়ে ১২ টায় নৌকায় উঠলাম। বিদায় অষ্ট্রগাম। আবার দেখা হবে এবার বর্ষায়।
যেভাবে যাবেন : সবচে ভালো হলো ট্রেনে যাওয়া। প্রতিদিন সকাল ৭ টায় এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগন্জের উদ্দ্যেশ্যে। এতে উঠে কুলিয়ারচর নেমে পরুন। ভাড়া ১২০ টাকা। এছাড়া গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে বিআরটিসি বাসে করেও কুলিয়ারচর যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা। যারা ভৈরব হয়ে যেতে চান তারা ভৈরব নেমে সিএনজিতে করে কুলিয়ারচর যাবেন। শেয়ারে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০ টাকা।

কুলিয়ারচর নেমে একটা রিক্সা নিয়ে চলে যান লঞ্চঘাট। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৬ টা, ৮ টা, ৯ টা, ১১ টা এমনি করে ৩ টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে যায় অষ্টগ্রাম। ভাড়া ১০০ টাকা। সময় লাগবে সাড়ে ৩ ঘন্টা।

গ্রুপ ট্যুরে গেলে আগে থেকে জানালে ট্রলার নিয়ে হাজির হবে। আমি নাম্বার দিয়ে দিলাম ০১৭৬-১৮৫১৪৪১ (খোকন)। এটি ১৫-২০ জন গ্রুপের বড় নৌকা ২ দিনের জন্য নিতে পারে ৪-৬ হাজার টাকা।

কোথায় থাকবেন : থাকার বেশ কটি অপশন আছে। নিজেরা টেন্ট নিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারেন। আছে জেলা পরিষদ ডাক বাংলো। কেয়ারটেকার এর নম্বর দিলাম ০১৯১৪-৯৭৫৩৮৯। আগে কথা বলে বুকিং দিতে পারেন। ভাড়া ৩০০-১৫০০ টাকা (রুম ভেদে) । এছাড়া বাজারে দুটি সাধারন মানের হোটেল আছে ভাড়া ১০০-২০০ টাকা।

















মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪

ইফতেখার রনি বলেছেন: চমৎকার

২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: লেখার মাঝে পিকগুলো দিলে ভালো লাগতো আরও বেশি।
অস্টগ্রামে ঘুরতে যেতে হচ্ছে :P

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২২

আরাফআহনাফ বলেছেন: অস্টগ্রামে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
+++

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫

পুলহ বলেছেন: খাবার দাবারের বর্ণনা গুলি অসাধারণ ! সব মিলে খুবই আকর্ষণীয় একটা ট্যুর মনে হোল।
শুভকামনা রইলো ভাই !

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২

আমিই মিসির আলী বলেছেন: রাষ্ট্রপতির নজরে অষ্ট্রগ্রাম নিশ্চয়ই ছবির মতো সুন্দর অবস্থায় আছে।

আরো কিছু ছবি থাকলে ভালো হইতো।

৬| ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:০৪

মির্জা রাসেল বলেছেন: ভাল লেগেছে।

৭| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



ভাল লাগলো।

৮| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

আসল পাগল বলেছেন: বেড়াই বাংলাদেশ গ্রুপটির কার্যক্রম বছর দুইয়ের যাবত ফেসবুকে দেখে যাচ্ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। ইচ্ছে আছে তাদের সাথে ট্যুর দেয়ার । ধন্যবাদ সুন্দর লেখনীর জন্য।

৯| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১৭

সাজিদ ঢাকা বলেছেন: এবার অষ্টগ্রাম যাওয়ার ইচ্ছে আছে বেড়াই এর সাথে :)

১০| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: শুধু দারুণ না ভাই, অসাধারণ ! যদি কখনো সুযোগ হয়, আপনার সাথে ট্যুর করব ইনশাআল্লাহ ! :D

১১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:০১

শরতের ছবি বলেছেন: ব্লগ পড়ে ভাল লেগেছে ।কিছুদিন আগে আমি ও গিয়েছিলাম ওখানে ।বেড়ানোর জন্য চমৎকার জায়গা এগুলো ।আমি অবশ্য ভাটির ই মানুষ । ঢাকায় থাকি বলে ঐ সব স্থানের প্রতি গভীর মায়া অনুভব করি ।

১২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৫:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমাদের মনের মাঝে আছেন আপনি

১৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৯

জাহিদ হাসান বলেছেন: ভালো মানের আবাসিক হোটেল গড়ে উঠা প্রয়োজন!

১৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ২:২৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: দারুণ তো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.