![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোস্ট চেইন বিক্রিয়ায় কোষের মাইটোকন্ড্রিয়াতে শক্তি উৎপন্ন হয়৷ এজন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে বলে শক্তিঘর৷ আমরা যে খাদ্যগ্রহণ করি তা থেকেই শক্তি উৎপন্ন হয়৷ আমাদের দৈনিক ২৫০০-২৭০০ ক্যালরি খাদ্য দরকার৷ এক ক্যালরি ৪.২ জুলের সমান৷ এক লিটার বা এক কেজি পানিকে এক ডিগ্রি গরম করতে যে তাপ লাগে তা এক ক্যালরি৷ একটি যন্ত্র যেভাবে কাজ করে মানুষের শরীরও একইভাবে কাজ করে৷
আইনস্টাইনের সূত্র E=mc^2 থেকে সব কিছুরই শক্তি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। এই সূত্র থেকে বলতে পারি আমার ভরকে আলোর বেগের বর্গ দ্বারা গুণ করলে আমার শক্তিটা পাওয়া যাবে। ভর আছে এমন সকল সাধারণ বস্তুই আসলে একেকটা জমাটবদ্ধ সুবিশাল শক্তির আধার। আমার মতো সবকিছুই আদিতে ছিল হাইড্রোজেন!
একটি প্রোটন দ্বারা একটি লিথিয়াম পরমাণুকে আঘাত করালে কি ঘটবে? এর ফলে পরমাণু দুটির নিউক্লিয়াস একে অপরের সাথে মিলে গিয়ে হিলিয়ামের দুটি নিউক্লিয়াস গঠন করবে। হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস দুটির ভর পরিমাপ করলে দেখা যাবে এদের সম্মিলিত ভর— প্রোটন ও লিথিয়াম পরমাণুর ভরের তুলনায় সামান্য কম। কোথায় গেল ওই সামান্য ভর? আমরা জানি ভর বা শক্তি অবিনশ্বর। বাস্তবিক এই হারানো ভর হিলিয়াম নিউক্লিয়াস দুটিকে গতিশক্তি প্রদানে ব্যয় হয়েছে। সূর্যের তাপকেন্দ্রিন বিক্রিয়ার মূল কাঁচামাল হচ্ছে হাইড্রোজেন। এই প্রক্রিয়ায় দুটি নিউট্রন ও দুটি প্রোটন মিলিত হয়ে হিলিয়াম উৎপন্ন হয়। সূর্যের ভেতরে যেটা ঘটে সেটাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া। এই বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পরমাণুর নিউক্লিয়াসগুলো পরস্পরের সাথে জুড়ে গিয়ে নতুন পরমাণু উৎপন্ন করে। এ ধরণের আরো একটি প্রক্রিয়া আছে যেটাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া। এক্ষেত্রে একটি কণা দ্বারা অপর একটি পরমাণুর (আইসোটোপ) নিউক্লিয়াসকে বিদীর্ণ করা হয়। এখানেও কিছুটা ভর, শক্তি হিসেবে বের হয়ে যায়। কিন্তু সেই কিছুটা ভরকে যদি আলোর বেগের বর্গ দ্বারা গুণ করা হয় তবে সেই শক্তির পরিমাণ হয় ব্যাপক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যে ধ্বংসলীলা সাধিত হয়েছে তার কারণও এই শক্তি। হিরোশিমাতে যে বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়েছিলো সেটাতে ব্যবহার করা হয়েছে ইউরেনিয়াম ২৩৫ আইসোটপ এবং নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত বোমায় ছিলো প্লুটোনিয়াম ২৩৯ আইসোটপ। ইউরেনিয়াম ২৩৫ আইসোটপকে আঘাত করা হয় একটি নিউট্রন দ্বারা। এতে দুটি নতুন পরমাণু ও তিনটি নিউট্রন উৎপন্ন হয়। নতুন পরমাণুর মোট ভর ইউরেনিয়ামের থেকে কম থাকে। এ সময় দুটি নিউট্রন অকেজো হয়ে যায় বা ইউরেনিয়াম ২৩৮ আইসোটপ দ্বারা গৃহীত হয়। বাকি যে নিউট্রনটি থাকে সেটা আবার ইউরেনিয়াম ২৩৫ আইসোটপকে আঘাত করে আরো শক্তি উৎপন্ন করতে থাকে। এভাবে রিয়্যাকশন চলতেই থাকে। সেজন্য এই ধরনের বিক্রিয়াকে চেইন রিয়্যাকশনও বলা হয়। এই মহা শক্তি ডেকে এনেছিল মহাধ্বংস।
১ কেজি ভরের কোন বস্তুতে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ ৯০০০০০০০০০০০০০০০০ জুল। এই অবিশ্বাস্য পরিমাণ শক্তি আমেরিকার মত একটি দেশের দিনের বৈদ্যুতিক শক্তির যোগান দিতে পারে! আমার ভর ৭২ কেজি দিয়ে তাহলে সারা পৃথিবীর বৈদ্যুতিক শক্তির যোগান দেয়া সম্ভব। ভর থেকে শক্তি পাওয়া যায় এবং শক্তি থেকেও ভর পাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ শক্তি এবং ভর পরস্পর সমতুল্য।
মহাবিশ্ব যখন তৈরি হয় তখন একটা মৌলই ছিল— হাইড্রোজেন৷ আজ ১১৮ মৌলিক পদার্থ আমরা পর্যায় সারণিতে দেখি৷ এরমধ্যে ৯৪টি প্রকৃতিতে নিজে থেকেই তৈরি হয়েছে৷ বাকিগুলো বিজ্ঞানীরা বানিয়েছে পরীক্ষাগারে৷ একটা থেকে কিভাবে ৯৪টা হল সেটাও বিজ্ঞানীরা জেনেছে৷ আমরা সূর্যে দেখছি কিভাবে হাইড্রোজেন থেকে নিউক্লিয়ার ফিউশনে হিলিয়াম হচ্ছে৷ সেটা থেকেই আসছে আলো/তাপ৷ প্রকৃতিতে এভাবে নিজে নিজেই একটা থেকে আরেকটা মৌল হয়েছে৷ এই যে হাইড্রোজেন থেকে ৯৪টি মৌলিক পদার্থ হল তাতে কোন অলৌকিক শক্তি দরকার পড়েনি৷ মানুষের শরীরে ৪০/৫০ ধরনের মৌলিক পদার্থ রয়েছে৷ প্রকৃতিতে ১টি থেকে ৯৪ টা মৌল গঠন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই৷ সেটাও এক বিশাল কান্ড৷ লোহা বা সোনার একই আদি উপাদান হাইড্রোজেন! সেটা যেমন বুঝতে পারা সহজ তেমনি আমরা বুঝতে পারি আদি কোষ থেকেই আজ মানুষ ও তেলাপোকা জন্ম নিয়েছে৷ সে আরেক বিস্ময়কর ধারা!
----মুজিব রহমান--
©somewhere in net ltd.