![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফকির লালনের গানের আসল গভীর অর্থ:
অনেকে লালনকে সহজেই মানবতাবাদী বলে চিনে ফেলে। ফলে মানবতাবাদের গুমোর পর্দা সরিয়ে দেখে বিচার কাজ শুরু করব। তা নাহলে লালনের "অধরা" পর্যন্ত পৌছান যাবে না।
মানবতাবাদের গোড়াটা কোথায়?:
দার্শনিক ইতিহাসের গুরু, জর্মন দার্শনিক হেগেলের (১৭৭০-১৮৩১) বরাতে জেনেছিলাম, সবাই ঈশ্বরের সন্তান, সে গুণে সবাই, সব মানুষ সমান। মানুষের সাম্য। হেগেল বলছেন, "খ্রিষ্ট ধর্মই হচ্ছে চূড়ান্ত স্বাধীনতার ধর্ম, একমাত্র খ্রিষ্টান দুনিয়াতেই মানুষ তার অসীম ও সার্বজনীন (universal) সত্তা হিসাবে স্বীকৃত"। আবার বলছেন, "জর্মন জাতি খ্রিষ্ট ধর্মের প্রভাবে সেই চৈতন্য লাভ করতে সক্ষম হল যে মানুষ মানুষ হিসাবে মুক্ত। চৈতন্যের স্বাধীনতাই তাঁর স্বভাব গঠন করে। এই চেতনা প্রথমে খ্রিষ্ট ধর্মেই আসে"। অর্থাৎ হেগেলের কথা থেকে আমরা যা বুঝলাম: ১. সবাই আমরা ঈশ্বরের সন্তান, সে গুণে মানুষের সাথে মানুষের সাম্য - খ্রিষ্টীয় এই ধর্মতাত্ত্বিক বয়ান হেগেলের হাতে পড়ে দার্শনিক ও নতুন মানে দাঁড়াচ্ছে - নিজের দিব্যতা (divinity) সম্পর্কে জ্ঞান; আর চিন্তা (চৈতন্য বা স্পিরিট) হিসাবে মানুষের অস্তিত্ত্বের নিঃশর্ত স্বাধীনতা, সীমিত হয়েও অসীমকে ধারণ করার ক্ষমতা - এই দুইটা গুরুত্ত্বপূর্ণ কথায়। মানুষের চিন্তা নিঃশর্তভাবে স্বাধীন ও সীমিত হয়েও অসীমকে চিন্তায় ধারণ করার সক্ষম; এটাই এর মূল কথা। তবে, এখানে মানুষ মানে এক সার্বজনীন (universal) সত্ত্বা। ২. আল্লার মধ্যে প্রকৃতির গুণ বা লোকসমাজের গুণ বা শক্তির ধারণা বা আরোপ অথবা উল্টা করে প্রাকৃতিক সত্ত্বাকে ঈশ্বর গণ্য করে ভাববার মধ্য দিয়ে - মানুষের চিন্তার যে ধর্মতাত্ত্বিক পর্যায় চলে আসছিল তা, ছাড়িয়ে মানুষ নিজের মধ্যেই ঈশ্বরের দিব্য উপস্হিতি টের পেতে ও প্রকাশিত হবার ইতিহাস হেগেল অনুধাবন করছেন। হেগেল দাবি করছেন একমাত্র পশ্চিমে ও খ্রিষ্টান ধর্মেই এটা ঘটেছে, চিন্তার এরকম জায়গায় পৌছানোর সুযোগ হয়েছে। (হেগেলের এ'দাবি কতটা বর্ণবাদী বা এতে পরিণতিতে পশ্চিমের লাভ না ক্ষতি হয়েছে সে আলোচনায় এখানে যাব না।) । উপরে ইটালিক করেছি আমার কথার সারমর্মটা দেখানোর জন্য।
কথা শুরু করেছিলাম মানবতাবাদ নিয়ে সেখানে ফিরে যাব। হেগেল শিখিয়েছিলেন, চৈতন্যের স্বাধীনতাই মানুষের স্বভাব গঠন করে, মানুষ অসীম ও সার্বজনীন সত্ত্বা। এই স্বাধীন চিন্তার ও মানুষের সার্বজনীন ধারণার উপর ভর করে মানবতাবাদের "মানুষ" ধারণার দাড়িয়ে আছে; মানবতার "মানুষ" সার্বজনীন (universal)।
সার্বজনীন মানে? মানে "মানুষ" যেই হোক যেই দেশ, যেই সময়ে দাঁড়িয়ে হোক আর ধর্ম বর্ণ গোত্র ভিন্নতা ইত্যাদি ভেদ ও গুণে যেই হোক - জন্মসূত্রে (by born) সে ঈশ্বরের সন্তান বা দুনিয়ার সন্তান বলে মনে করে এই "মানুষ" ধারণা। রাম, রহিম, জন, জেনি বা বড়ুয়া ইত্যাদি নামে আমাদের দেখা বিশেষ মানুষগুলোর থেকে "মানুষ" সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা বের করে আনতে চাইলে যা দাঁড়াবে সেই সাধারণ (generalised) ধারণার নাম সার্বজনীন (universal) "মানুষ", মানবতাবাদের
"মানুষ", সাম্যের "মানুষ" । এই "মানুষ" এরই অধিকার, মানবাধিকার, মানবতা, জাতিসংঘকে দিয়ে ইউনিভার্সাল হিউম্যান রাইটস' চার্টার ঘোষণা রক্ষা ইত্যাদি। (এর সাথে অর্থাৎ হিউম্যানিটি বা মানবতার সাথে মানবিকতা একটা মস্তবড় ফারাক আছে, আপাতত সেখানেও যাব না)। সাম্যের "মানুষ" এর এই সাধারণীকৃত (generalised) করে পাওয়া ধারণাকে লালনের বলতেন, "সামান্য" ধারণা। সামান্য মানে তুচ্ছ নয়। সাম্য বা সমান জ্ঞানে সাধারণীকৃত (generalised) করে পাওয়া, মানে "সামান্য" ধারণা। যেমন লালন বলছেন, "সামান্যে কি পাবে তাঁরে দেখা"। অতএব লালনের ভাষায় বললে, মানবতাবাদ একটা সামান্য ধারণা।
লালনের "মানুষ" এর এই সামান্য ধারণা মানেন না। লালনের "মানুষ" একই সঙ্গে সামান্য ও বিশেষ; অধরা মানুষ ও রক্তমাংসের মানুষ। অধরা মানুষ দেশকালপাত্রের অতীত, নিরাকার, অরূপ, অনন্ত সম্ভাবনাময়। এই অধরা আবার এক ও অদ্বিতীয় ফলে "পরম"। বিশেষ মানুষ সাথে সামান্য (এই সামান্য মানুষ মানে বিমূর্ত, সার্বজনীন বা universal ধারণায় পাওয়া মানবতাবাদের মানুষ নয় ) বা অধরা মানুষের সম্পর্ক দিয়ে মানুষ কী তা বুঝতে হবে। সম্পর্কের ভিতর দিয়ে বুঝতে হবে এজন্য যে সামান্য বা অধরা মানুষ তো দেশকালপাত্রের অতীত, নিরাকার, অরূপ, অনন্ত সম্ভাবনাময়। একদিকে মূর্ত না হলে তাহলে ধরতে বা বুঝতে পারব না আবার মূর্ত বলে ধরতে গেলে সে তো আর দেশকালপাত্রের অতীত, নিরাকার, অরূপ, অনন্ত সম্ভাবনাময় থাকল না - ওকে একটা সীমায় আবদ্ধ করে ফেললাম বা মনে করলাম। বিশেষ মানুষের কাছে এই হোল "অধরা"কে ধরার সমস্যা। অধরা শেষ বিচারে অচিন পাখি হয়ে থেকে যাবে।
এবার পপুলার অচিন পাখি গানটার মানে ধরা গেলেও যেতে পারে,
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়
তারে ধরতে পারলে মনবেড়ী দিতাম পাখির পায়।
পাঠক চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
ফলে মানুষ ধারণা লাভের একমাত্র পথ ১. বিশেষ আর সামান্যের সম্পর্কের মধ্যে রেখে ওকে ধরতে বা বুঝতে হবে। ২. একমাত্র বিশেষ দেশকালপাত্রে গুণসম্পন্ন রক্তমাংসের মানুষে মধ্যে যতটুকু তাঁকে সাকার, যে রূপ, যে প্রান্ত টেনে সম্ভাবনা হয়ে আবির্ভাব বা হাজির করানো সম্ভব হবে তাই দিয়েই ওর নিরাকার, অরূপ, অনন্ত সম্ভাবনাময় বিষয়ে ধারণা করতে হবে। ফলে বিশেষ ও সামান্যের সম্পর্কের ভিতর দিয়ে আমরা মানুষের একটা ধারণা লাভ করব ঠিকই তবু অধরা অনন্ত সম্ভাবনাময় হয়ে অধরাই থেকে যাবে।
আবার মানুষের বাইরে বা মানুষের আগে পরে বলে সামান্য বা অধরার কোন রূপ নাই।
অনম্ত রূপ সৃষ্টি করলেন সাই
বুঝি মানুষের উত্তর কিছুই নাই
মানুষের উত্তর বা উত্তরকালে মানে পরে আর কিছু নাই। সসীম, রূপ ও আকার সম্পন্ন জগতের এটাই শেষ প্রান্ত। রূপ আর অরূপ, প্রান্ত ও অনন্ত অথবা আকার ও নিরাকার এখানে মানুষে মধ্যে এসে একাকার হয়েছে। মনুষ্য দেহে প্রকৃতি ও পুরুষ (মানুষ) একাকার হয়ে আছে; দেহ ও ভাব একাকার হয়ে আছে। এই সম্পর্কটা উপলব্দি ও চর্চা করতেই সাধকের মানুষ হবার যাবতীয় সাধনা ।
মানুষ তাই সাকার ও রূপসম্পন্ন ঠিকই, কিন্তু নিরাকার অনন্ত ও অসীম হওয়ার সম্ভাবনা তার মধ্যে রয়ে গিয়েছে - এটাই তার "স্বরূপ"। নিরন্তর রূপ থাকে অরূপে, আকার থেকে নিরাকারে, সীমা থেকে অসীমে যাবার পিপাসাই তাঁর ধর্ম।
একএকটা বিশেষ দেশকালপাত্রে গুণসম্পন্ন হয়ে রক্তমাংসের মানুষে মধ্যে মানুষ যতটুকু তাঁকে সাকার, যে রূপ, যে প্রান্ত টেনে সম্ভাবনা হয়ে আবির্ভাব বা হাজির করানো সম্ভব হবে তাই দিয়েই ওর নিরাকার, অরূপ, অনন্ত সম্ভাবনাময় দিকের আরও একটা স্বরূপ হাজির হবে। এই দিয়ে মানুষের জীবনের সাফল্য বা অর্জন বিচার করা হবে। ওখানে রক্তমাংসের মানুষের দেহে নিরাকার সাকার হয়ে একাকার হয় ঠিকই নতুন মানুষের সম্ভাবনা কিন্তু শেষ হয়না। নিরাকার দেশকালপাত্রের অতীত অরূপ তো নিরন্ত, অন্তন্থীন। আবার একবার অন্য কোন দেশকালপাত্রে সাকার হয়ে উঠতে পারার সম্ভাবনায় সে অসীম। মানুষের মধ্যে নিরাকারের আকার, অরূপের রূপ লাভ ঘটে চলে নিরন্তর। মানুষ বস্তুময়, সাকার - এই রূপের মধ্যে ।
সেকারণে দেখা গেছে, দেবতারাও মানুষ রূপে জন্ম নেবার জন্য কামনা করে গেছে বলে আমরা শুনতে পাই। ফকির লালন বলছেন,
দেব দেবতাগণ করে আরাধনা জন্ম নিতে মানবে
মন যা করো ত্বরায় করো এই ভবে।
এবার ফকির লালনের এখানকার গানে ফিরে আসি।
লালন তাঁর সাধনায় রত থাকতে তাঁর ভাব আমাদের জানাচ্ছেন।
বলছেন, নূহ্ নামে এক নবীর কথা জানা যায় যে দুনিয়াকে প্লাবনে থেকে রক্ষা করেছিল। নইলে দুনিয়া শেষ হয়ে যেতো। নূহ নবীর বিশেষ দেশকালে মানুষের কী সম্ভাবনা, কী তাঁর করণ-কর্তব্য তা জানতে নিজেকে তৈরি করে রেখেছিলেন ও পেরেছিলেন। অকূল পাথারে কিনারা খুঁজেছিলেন ও পেয়েছিলেন। নিজ কর্তব্য সম্পন্ন করেছিলেন। নিজ কর্তব্য মানে? এই কর্তব্য মানে, একই সঙ্গে বিশেষ ও সামান্য মানুষের কর্তব্য। একইসঙ্গে জীব ও পরম - এই দুইয়ের কর্তব্য। নিজের সঙ্গে "স্রষ্টার"ও কর্তব্য। প্রাণের সংগ্রহ ও রক্ষার মধ্য দিয়ে নূহ নবী পরমের ভূমিকাও পালন করেছেন। অন্য কোন জীবের মধ্যে কিন্তু এই ধর্ম নাই। অথচ মানুষের মধ্যে এই গুণ আছে এবং কর্তব্যবোধও জাগতে পারে। সত্যিই এক আশরাফুল মুখলুকাত। আর আমাদের নূহ নবী।
নিজাম যার পেশা ছিল ডাকাতি, কিন্তু দেহচর্চা ও করণ গুণে সে বুঝে যায় এই জীবনের লক্ষ্য কী। যে অন্যের শরীর সর্বস্ব হরণ করত সে বুঝে যায় তাঁর পরমের কর্তব্য কী, ফলে সে পরমের পায়ে নিজেকে দান করে দেয়। তার সুমতি হয়, আউলিয়া নাম হয়ে যায়।
নবী মানে না যারা অর্থাৎ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কাজটা কী যারা বুঝে না, মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য কী, কী তার করণ কাজ - মানুষ ভজনা করে মানুষ হবার কাজ তাঁরা মানে না। তারা নিশ্চয় দোজখে যাবার কাজই করছে। আবার বুঝার চেষ্টার জন্য নিজেকে তৈরি করলে, কর্তব্য-করণ করলে কিন্তু তাদের মাফ পাবার উপায় আছে সম্ভাবনাও আছে। কারণ তাদের কাজ দুনিয়ার মানুষের কাছে স্বাক্ষ্য হয়ে থাকবে। পরবর্তীতে যার বিচার হবে।
লালন এবার নিজেকে নিয়ে ভাবছেন। তিনি কী তার যা সাধনা কর্তব্য-করণ করার ছিল তা কী তিনি ঠিক ঠিক করতে পারছেন? তার বেলায় কী হয় এনিয়ে তিনি ভয়ে ভয়ে আছেন, ভাবছেন!
পাদটিকা: এবার আমি ভাবছি, একজন বিপ্লবীর ক্ষেত্রও কী তাই হয় না? দুনিয়ায় এসে সে বিচার করতে বসে সে কে? দুনিয়ায় তার ভূমিকা কী? দেহের জায়গায় সমাজ-দেহে তাঁর অবস্হান ও কর্তব্য সে নির্ধারণ করে। দেহ ও ভাব একাকার করে নিজে ভাবতে বসে। এই সাধনাতেই নিজের জীবন ব্যয় উৎসর্গ করে দেয়। বিপ্লবী নিজের জীবের জীবন পরমের লক্ষ্যে যতটুকু উৎসর্গ করতে সক্ষম হয় ততটুকুই তাঁর সাফল্য। বাংলার ভাবের জায়গায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জীব/পরমের ভেদ বিচারের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বিপ্লব ও বিপ্লবীকে বুঝার সম্ভবত একটা কর্তব্য আমাদের রয়ে গিয়েছে।
লালনের মত এসব প্রশ্ন আমারও মনে।
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৬
ভূপর্যটক বলেছেন: মগ্ন হয়ে কাজে লাগান।
ধন্যবাদ।
লালনকে না বুঝলে দারভীশের অস্হির সময়কে জানা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:৩৩
চিপা রংবাজ বলেছেন: কত আতলামি করেরে। হেগেল কেডা ভাইজান? গান্জা খাইয়া লালন শুনলে বহুত ভাব আসে?
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৭
ভূপর্যটক বলেছেন: আপনি ভুল জায়গায় এসে পড়েছেন, মনে হচ্ছে। রং নাম্বার!
৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:০৯
রাযহান বলেছেন: সোজা প্রিয় তালিকায়
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৯
ভূপর্যটক বলেছেন: শুধু প্রিয় তালিকায় ফেলে রাখলে হবে না, কাজে লাগাতে হবে।
আর কী কাজে লাগলো জানাতে ভুলবেন না।
ধন্যবাদ।
৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০২
আন্দালিব পান্থ বলেছেন: আপনার ভাবের সাথে একমত..........লালনকে বুঝতে হলে অবশীই আত্মা এবং পরমাত্মার বিষয়টি কে মূল ধরতে হবে........পরমাত্মার সাথে লীন হওয়াই তার দর্শনের মূল......এবং এটা অবশ্যই লাভ করতে হবে প্রায়োগিকতার মাধ্যমে.....যা ছাড়া লালনের দর্শন অর্ধেক....শুধু ত্বত্ত্ব দিয়ে তাকে বুঝতে যাওয়া অন্ধের হাতি দেখার মতো হবে.....লালনকে পুরোপুরি বুঝতে হলে অবশ্যই ত্বত্ত্ব ও প্রশিক্ষণ একসাথে আলোচনা করতে হবে......আপনার কাছে আশা করছি লালনের সাধন প্রণালী নিয়ে আলোচনা করবেন.................ভালো থাকুন...
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:১৫
ভূপর্যটক বলেছেন: আপনার মন্তব্যটা পড়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম। আমার মনে করি, একটু সাবধান হবার দরকার আছ। কারণ, আপনার পাঠটা সুফিবাদী পাঠ। আত্মা-পরমাত্মা ধারণাটা লালনের নয়। ফলে পরমাত্মায় লীন হওয়ার কোন ধারণা তাতে নাই।
জীব-পরম হিসাবে বুঝতে পারেন, যেখানে পরমে লীন হওয়ার ব্যাপার নাই। তবে সাবধানতার জন্য বলছি - মানুষের বিশেষ ও সামান্য রূপ ও সম্পর্কের দিয়ে মানুষ বুঝা, "অধরা" ধারণাটা বুঝা জরুরী। এখানে রক্তমাংসের মানুষ হলো কেন্দ্রীয় বিষয়, ইন্দ্রিয়ের অতীত অর্থে স্পিরিচুয়াল ভাববাদের গায়েবি মানুষের সাথে যার কোন সম্পর্ক নাই।
তবে, আবার বলতে হয়, "প্রশিক্ষণ" ও "প্রয়োগে"র যে কথা আপনি তুলেছেন তাতে একদিকে মনে হচ্ছে আপনি আবার সুফিবাদের খপ্পড় থেকে বের হবার কথা ভাবছেন। আবার একই সাথে মনে হচ্ছে আর ভয় পাচ্ছি এই ভেবে, কোন কাল্ট (cult) চর্চা হিসাবে লালনকে খাড়া করে ফেলবেন কী না!
মূলকথা হলো, এটা ধর্ম বা ধর্মতাত্ত্বিক দেহসাধনা বলে বুঝবেন না।
আমার পরামর্শ থাকবে, আপনি আবার একটু পড়ুন, তবে এবার কোন আগাম-ধারণা মাথায় না নিয়ে। লক্ষ্য হবে "অধরা" ধারণাটা গ্রেফতার করতে পারেন কী না।
আবার লিখে জানাবেন আশা করি। আমারও বুঝার দরকার আছে, আপনার ভুলপাঠের উৎসটা কোথায়।
৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:০০
আন্দালিব পান্থ বলেছেন: আমিও কনফিউসড...........লালন কি ধর্মহীন?......আমি লালনের গান যা শুনেছি এবং বাউলদের নিকট যে ধারণা পেয়েছি , তাতে লালন পুরোপুর একটা ধর্মদর্শন.....ইশ্বরকে(তাকে যাই বলুন না কেন, আত্মা, আল্লা...) পাওয়ার ধারণা....এবং সাধণ পক্রিয়া........
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:২১
ভূপর্যটক বলেছেন: আপনি কেন কনফিউসড আমি জানি না (কিছু জানলেও সবটা জানা হয় নাই) । তবে আমি কনফি্উজড নই। কনফি্উজড হবার প্রশ্নও নাই।
লালন কি ধর্মহীন?...... ইত্যাদি আপনি যা বলেছেন এর উত্তর খুবই সহজ।
ধর্ম কী - এই প্রশ্নের উত্তর আপনি কীভাবে দিবেন এর উপর নির্ভর করছে আপনার কাছে লালন কিভাবে ধরা দিবে।
মনে রাখতে হবে, লালন সবসময়ই প্রচলিত ধর্ম ও ধর্মতত্ত্বের মধ্যে নিজেকে ভাসিয়ে রেখে ভিতর থেকে অর্থের রূপান্তর ঘটিয়েছেন, যাতে ওর অন্তর্নিহিত ভাব পরিচ্ছন্ন করে তোলার মাধ্যমে নিজে বের হয়ে যাওয়া যায়। মানুষের প্রচলিত বা বদ্ধমূল ধ্যানধারণার সঙ্গে বাইরে দাড়িয়ে বিরোধীতা, সংঘাত সংঘর্ষ রাজনৈতিক দিক থেকে ইতিবাচক ফল বয়ে আনে না - এই অনুমানের উপর দাঁড়িয়ে তাঁর চর্চা।
৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:০২
আন্দালিব পান্থ বলেছেন: আর একটা বিষয়.....লালনের দর্শন হলো সম্পূর্ণরুপে সুফীবাদের উত্তরসুরী......
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৩২
ভূপর্যটক বলেছেন: সুফীবাদ আপনাকে ছাড়ছে না দেখছি।
সুফীবাদ ধর্মতত্ত্বের পরিসীমা ছাড়ে না, এজন্য সুফীবাদ ধরে থাকলে ফকির লালন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন না।
ধর্ম কী - পোষ্ট টা আবার পড়ে দেখতে পারেন। আমার মূল কথাটা কী।
৭| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৫
আন্দালিব পান্থ বলেছেন: আমি আপনার মতো জ্ঞাণী নই, আমার জানার সীমানা দিয়ে এইটুকু বুঝি যে, লালন কোন ধর্ম সমন্বয়ক নন, প্রচলিত ধর্মমত গুলোর বিভিন্ন ধারণা তিনি ব্যবহার করেছেনে নিজের প্রয়োজনে.........।
আর আমি ধর্ম বলতে অনুশাসন বুঝায়নি........ধর্ম বলতে বুঝিয়েছি নিজেকে জানার সাধনা, আর লালনের মূল বক্তব্য এটাই। নিজেকে জানার জন্য বুঝতে হবে রুপ, রুপ থেকে স্বরুপ আর স্বরুপ থেকে অরুপ কে বুঝা সম্ভব। লালনের "মানুষ" কোন সীমিত মানুষ নন, তিনি অসীমের যাত্রী এবং প্রতিমুহূর্তে নিজেকে ছাড়িয়ে যান।
আর সুফীবাদ নিয়ে যেটা বলেছি সেটা হলো হঠা করে তো লালন তার দশর্ন নিয়ে হাজির হননি....বহুকালের বহুমতের পরিপ্রেক্ষিতে তার জন্ম.......আর কোন কিছু ধরে থাকলে সেই জায়গাতেই পড়ে থাকতে হয়....তবে কোন একটা জায়গা থেকে অবশ্যই শুরু করতে হয়....
আর যেটা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলতে চায়, তা হলো লাললকে শুধু গানের মধ্যে খুঁজতে যাওয়া হলো অর্ধেক খেঁাজা। পুরাটা জানার জন্য অবশ্যই সাধন প্রক্রিয়ার বিষয়টা উল্লেখ করতে হবে। লাললের গানের অর্থ এভাবেই পুরোপুরি বুঝা সম্ভব।
আমার কোন জায়গাই কমতি থাকলে সেটা ধরিয়ে দেয়া জরুরী, আমি জানার জন্যই আপনাকে প্রশ্ন কারছি.......
০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৫০
ভূপর্যটক বলেছেন: "নিজেকে জানার জন্য বুঝতে হবে রুপ, রুপ থেকে স্বরুপ আর স্বরুপ থেকে অরুপ কে বুঝা সম্ভব। লালনের "মানুষ" কোন সীমিত মানুষ নন, তিনি অসীমের যাত্রী এবং প্রতিমুহূর্তে নিজেকে ছাড়িয়ে যান"।
আপনার এই সারমর্মমূলক বাক্যটা ভালো। কেবল একটু যদি সংযোজন করতে দেন তাহলে বলব "স্বরূপ থেকে অরূপ কে বুঝা সম্ভব" শুধু তাই নয়, আরও কিছু। স্বরুপের ভিতর দিয়েই একমাত্র অরুপ প্রকাশ পেতে পারে। এছাড়া প্রকাশের আর কোন উপায় নাই। অরূপ রক্তমাংসের দেহ অর্থাৎ আপনার "স্বরূপ" ছাড়া আর কোনভাবে অস্তিত্ত্বলব্ধ নয়। এই প্রকাশ সম্ভাবনার আবার সীমাপরিসীমা নাই। ফলে রক্তমাংসের দেহ অনন্ত সম্ভাবনাময়। অরূপ আবার তারপরেও সবসময় "অধরা"ও থেকে যাবে। কারণ সে অনন্ত।
আমাদের কাজ হলো স্বরূপের ভিতর দিয়ে প্রকাশিত অরূপ ও স্বরূপ মানে, নিজেকে ধরার চেষ্টা করা - এটা কী, কী এর সম্ভাবনা অভিমুখ উদ্দেশ্য। নিজের রক্তমাংসের দেহের অনন্ত সম্ভাবনার অন্তত একটা সম্ভবনাকে বাস্তব করে দেখানো। জীব ও পরমের লক্ষ্যে একত্রে কাজ করা। এটাই দেহসাধনা। দেহসাধনার দেহতত্ত্ব। দেহতত্ত্বের আর কোন মানে বের করতে গেলে এটা "জিকির আসগার" পীর ফকিরের কান্ড বা "তান্ত্রিক ভর" উঠার ভাবে আটকে যাবে।
আপনি, "অর্ধেক খোঁজা" বা "পুরাটা জানার জন্য অবশ্যই সাধন প্রক্রিয়া" জানতে হবে বলছেন - এটাতেই আমার একটা আশঙ্কা, উপরে যেভাবে বলেছি সেখানে না আটকে যায়।
তবে এমনিতে লালনের "করণ" বলে যে ধারণা আছে ওটা মানেই তো চর্চা, করে দেখানো, জীবন যাপন। ঠিক রাজনৈতিক বিপ্লবীর কর্তব্যের মত, প্রাক্সিস।
আবার কমিউনিষ্টদের মত, ভাববাদ অথবা বস্তুবাদের খপ্পরে যেন না পরে যাই সেই সতর্কটার জন্য বলা হয়, দেহ ও ভাব একাকার করতে হবে।
আপনার "সাধন প্রক্রিয়া" বলতে ভাবের ঘোরে ও ঘরে যেন সব আটকে না যায় এই অর্থে লালনের ধারা অবশ্যই রক্তমাংসের দেহের ব্যাপার, একেবারেই বস্তুগত। এখানে গায়েবি কিছু নাই। আবার ভাবনার দিক থেকে দেহ ও ভাব একাকার মেনেই সে ভাবে।
জানি না কতটা স্পষ্ট হলো। লিখে জানাবেন সে আশায় থাকলাম।
৮| ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৪:২১
কথেবিডি বলেছেন: আপনার ব্লগের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ( কোনভাবেই নঞর্থক ভাবে গ্রহণ করবেন না) আমাদের জন্য অনেক লাভজনক।
লালনকে বুঝতে, বাংলা অঞ্চলকে বুঝতে আপনার লেখাগুলো গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করবে।
শুভ নববর্ষ - কথেবিডি টিম।
০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৮
ভূপর্যটক বলেছেন: আপনাদের যে "লাভজনক" বা লাভ হচ্ছে এর একটা প্রকাশ থাকতে হবে। নইলে কারও লাভ হচ্ছে না, কেউ আগ্রহী নয় বলে আমার মনে হতে পারে। হতাশার ছায়া পড়তে পারে।
যাই হোক, টিম শুনে মনে হচ্ছে আপনারা অনেকে আছেন। ভাল লাগল আপনাদের ভাল লাগছে শুনে। তবে আপনারা কী বুঝছেন এর প্রকাশ থাকলে আরও ভাল বোধ করতাম।
আমার একটা কৌতুহল: কথেবিডি টিমটা কী? যদি জানানো সম্ভব হয় জানাতে পারেন। ইচ্ছা করলে উপরের ঠিকানায় মেল করতে পারেন।
আপনাদের সবাইকে শুভ নববর্ষ।
৯| ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:০৩
আন্দালিব পান্থ বলেছেন: এখানে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলাম......আপনি বলেছেন "দেহ ও ভাব একাকার করতে হবে।"........আমিও এই এই ব্যাপার টা বিশ্বাস করি................এখন আমি যদি বলি, বস্ত ( matter) এবং চেতনার (consciousness) একত্রীকরণ করতে হবে, আপনি কি একমত হবেন?
০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:০৩
ভূপর্যটক বলেছেন: আপনার প্রতিক্রিয়া দেখে খুব ভাল লাগছে। আমার লেখায় এই রাজনৈতিক ইঙ্গিতটাই ছিল। আপনি ওটা উঠিয়ে নিয়েছেন।
প্রশ্ন করেছেন, - বস্তু ( matter) এবং চেতনার (consciousness) একত্রীকরণ করতে হবে, আপনি কি একমত হবেন -- এটা একমত না হবার কিছু নাই। আমাদের চিন্তা এতে একমত না হলেও ওর কিছু আসে যায় না। কারণ ওটা একমত হয়েই বিরাজ করছে।
তবে একটা কারেকশন আছে। আমাদের চিন্তা আগেই গোলে পড়ে ওটাকে একত্র নয় ভেবে বসেছিল, বস্তু ( matter) এবং চেতনার (consciousness) বলে দুটো ভাগে। ফলে এখন এটাকে আবার
"একত্রীকরণ" বলতে হচ্ছে।
এখানে গন্ডগোলটা লাগানোর পিছনে তথাকথিত বিজ্ঞানের (natural science) এর অবদান আছে। আর এরও পিছনে গোড়ায় গেলে সমস্যাটা হলো, বুঝাবুঝির ব্যাপারটা কী বুদ্ধির না ইন্দ্রিয়চর্চার বিষয় নাকী দুটোই। প্রথমটা হলো পাশ্চাত্ত্বের reason, বুদ্ধির বুঝাবুঝি। আর দ্বিতীয়টা হলো, "সহজ" ভাবে বুঝা, শরীরের বুদ্ধিসহ আর সব ইন্দ্রিয়বৃত্তিকে ব্যবহার করে বুঝা।
সহজ মানে সহ-জাত থেকে, যা প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিকভাবে আমার শরীরে জন্মগতভাবেই আছে সেই প্রাকৃতিকতার চর্চা। সেটাই সহজ যা শারিরীক বা প্রকৃতিগতভাবে আমার মধ্যে আছে - আমাদের মাঝে বিরাজ করে একই সঙ্গে শরীর ও ভাব হয়ে। দেহের সঙ্গে বাইরের সম্পর্ক "সহজ"করতে পারলে বাইরের কোন "বিষয়" দেহের ভিতর থেকেই বাহির অনুধাবন করা যাবে ও করতে হবে। যা আছে ব্রক্ষ্মান্ডে তাই আছে ভান্ডে, মানে দেহে। রক্তমাংসের দেহে প্রকৃতি ও পুরুষ (মানুষ) একাকার হয়েছে।
এতক্ষণ লালনের "সহজ" ধারণা দিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করছিলাম। মার্কসও মধ্যেও একই ধারণা - মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক, মানুষ ও মানুষের সম্পর্ক - এককথায় উৎপাদন, পুনরুৎপাদন সম্পর্কের ধারণাও একই।
তবে, সমস্যা হলো মার্কসের "মানুষ ও প্রকৃতি" মার্কসবাদে (অর্থাৎ মার্কসের চিন্তা চর্চা করতে গিয়ে) এসে পরে আর ঠিক থাকেনি। মার্কস
"মানুষ ও প্রকৃতি" থেকেই ভাষা (language) জিনিষটা কী - এটা ব্যাখ্যা করতে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে "জীবন ও চৈতন্য" এভাবে একটা কথা তুলেছিলেন, কিন্তু "বস্তু ও চৈতন্য" কখনই নয়। এটাই পরে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। মার্কসের কথা বলে "বস্তু ও চেতনা" বা "ডায়লেকটিক বস্তুবাদ" নামে চালু হয়ে যায়। মার্কসের "জর্মান ভাবাদর্শ" বইয়ে এসব প্রসঙ্গ আছে। ঐ বইয়ে ফয়েবাখের কী সমালোচনা মার্কস করছেন তা মার্কসের বস্তুবাদ বুঝার জন্য খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।
আপনি যে প্রকরণ (terminology) ব্যবহার করেছেন, "বস্তু ও চৈতন্য" এগুলো সেই মার্কস থেকে লাইনচ্যুতির চিহ্ন, মার্কসবাদে আমরা যা বয়ে বেড়াচ্ছি।
বস্তু বলে কোন প্রকরণ ব্যবহার করে "বস্তু ( matter) এবং চেতনার (consciousness) একত্রীকরণ" - লালন বা মার্কসের কথা দিয়ে অসম্ভব। লালন বা মার্কসের কাছে বস্তু বলে কোন প্রকরণ, ধারণা নাই।
আমি আপনার আকাঙ্খা বুঝেছি বলে বলেছি, বস্ত ( matter) এবং চেতনার (consciousness) একত্রীকরণে একমত না হবার কিছু নাই। কাজেই এখন প্রকরণ ও ধারণাগত আপত্তি বা কারেকশনটা নিশ্চয় এবং অবশ্য অবশ্যই সাথে নিয়ে নিবেন।
১০| ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:১৪
আন্দালিব পান্থ বলেছেন: great we are in the same line...............এতদিন খুব নিঃসঙ্গ মনে হতো, যে আমার চিন্তার জগতে আমি একা.........কিন্তু আজ দেখলাম এমন ভাবনা অনেকেই বের করতে পারেন...........আমি আনন্দিত............
মাক্স পড়তে যেয়ে মনে হয়েছে যে, উনার মানুষ বড়ো বেশী যান্ত্রিক, যা প্রকৃত মানুষ নয়। কিন্তু বিরোধ টা ধরতে পারেনি। আর এখানে আমাকে দিক দেখিয়েছে রাশিয়ার কম্যুনিজমের ব্যার্থতা......
আর একটা জিনিস পরিস্কার করে নেয় আমি খুব কম জানি...........প্রকরণগত সমস্যা আমার লেখায় প্রকট হবে, আর এ কারণেই আমি লিখি না। পড়ার চেয়ে নিজ ভাবনা হতেই এগুলো বের করেছি...................ডায়ালেকটিক বস্তুবাদ যে অসম্পূর্ণ আর তা আমরা জানি............আর এ থেকে মতাদর্শিক পথটাও জানা.......আশা করি আপনি তা প্রকাশ করতে পারবেন..........
০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:২৭
ভূপর্যটক বলেছেন: আপনি "মাক্স পড়তে" বলতে মার্কসের মূল কোন রচনা না, সেকেন্ডারি মার্কসবাদের নামে লেখা বই বুঝিয়েছেন - জানি না। কথা হলো, মার্কসকে ফেলে দেবার সময় আসেনি। তবে কোথায় কোথায় তাঁর চিন্তার মৌলিক অবদানগুলো তিনি আরও বিকশিত না করে যেতে পারার কারণে, এর সুযোগে পরবর্তীকালে জন্ম নেয়া মার্কসবাদের অনেক কিছুই বে-লাইনে চলে গেছে - তা আগে চিহ্নিত করতে জানতে হবে। আবার মার্কসের মৌলিক ও ষ্পষ্ট কিছু চিন্তা মার্কসবাদে আসেইনি, না এসেই মার্কসবাদ চর্চা হয়েছে - তা জানতে হবে।
তাই, প্রথমত পরিস্কার স্পষ্ট করে জানা দরকার, মার্কস থেকে মার্কসবাদে মৌলিক কী কী বিষয় আসেনি। দ্বিতীয়ত, মার্কসের হাতে যে বিষয়গুলো বিকশিত হয় নাই বলছি সেগুলো কী? কীভাবে এগুলো পড়তে হবে? - এগুলো জানার আগে মার্কস অথবা মার্কসবাদ ফেলে দেওয়া, সীমাবদ্ধতা বা অসম্পূর্ণতার কথা তোলা পোলাপানি-সুলভ চপলতা হবে।
কারও লেখায় ব্যবহৃত প্রকরণ দেখে তাঁর চিন্তার গতিপথ, অভিমুখ আন্দাজ করা সম্ভব। কারণ প্রকরণগুলো এক একটা সময়ে, ইতিহাসে চিন্তার স্বাক্ষর-চিহ্ন ও তা বিশেষ অর্থ বহন করে। আপনার ব্যবহৃত প্রকরণ দেখে আমি সেটাই অনুসরণ করেছি মাত্র। তবে, প্রকরণগত সমস্যার উৎস প্রকরণে না, চিন্তায়। চিন্তার সমস্যার সমাধান জানা হয়ে গেলে প্রকরণগত সমস্যাও আর লেখায় তৈরি হবে না।
আপনাদের সহযোগিতা পেলে সব কিছুই করা সম্ভব।
১১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:০৭
আন্দালিব পান্থ বলেছেন: "আবার মার্কসের মৌলিক ও ষ্পষ্ট কিছু চিন্তা মার্কসবাদে আসেইনি, না এসেই মার্কসবাদ চর্চা হয়েছে - তা জানতে হবে।"- --সেটা কি মার্কস তার জীবিত সময়েও বলে যেতে পারেননি। যাই হোক এ বিষয় নিয়ে বিতর্কের কোন লাভ নেই।
সামনে যেতে গেলে অতীতে মুখ না ফিরিয়ে বাস্তবতার দিকে তাকাতে হবে।
"এগুলো জানার আগে মার্কস অথবা মার্কসবাদ ফেলে দেওয়া, সীমাবদ্ধতা বা অসম্পূর্ণতার কথা তোলা পোলাপানি-সুলভ চপলতা হবে। "-----কোন কিছু কি কখনো ফেলে দেয়া যায়? আইনস্টাইন কি নিউটনকে ফেলে দিয়েছেন?
"তাঁর চিন্তার মৌলিক অবদানগুলো তিনি আরও বিকশিত না করে যেতে পারার কারণে, এর সুযোগে পরবর্তীকালে জন্ম নেয়া মার্কসবাদের অনেক কিছুই বে-লাইনে চলে গেছে - তা আগে চিহ্নিত করতে জানতে হবে"----চিন্তা কেউ একা করতে পারেন, কিন্তু তার ফলাফল সবসময় সেই দেশ-কালের এবং কারো পক্ষে দেশ-কালের সামাবদ্ধতা অতিক্রম করা সম্ভব না। তাই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সর্বোচ্চ বিকাশ আমরা দেখে ফেলেছি। এর পক্ষে নতুন কিছু দেওয়া আর সম্ভব নয়, যদি না এর মৌলিক সিদ্ধান্ত বদলানো হয়।
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সংকট এবং এই সংকট থেকে উত্তোরণের উপায় নিয়ে লেখার ইচ্ছা রইলো।(আদৌও লিখতে পারবো কি না জানি না.....)
আর আপনার সাথে আলোচনা করে আমার ভালো লেগেছে। বিতর্ক নয়, আলোচনাই সমাধানের পথ দেখায়---আর বিতর্ক সংকট তৈরী করে।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:০৭
ভূপর্যটক বলেছেন: আপনার প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝলাম, আমি আপনার কাছে নিজেকে পরিস্কার করতে পারিনি, ভুল বুঝা রয়ে গেছে।
আমি বলেছি, "মার্কসের মৌলিক ও ষ্পষ্ট কিছু চিন্তা মার্কসবাদে আসেইনি" - এর মানে হলো মার্কসের লেখাতেই অর্থাৎ তাঁর জীবৎকালেই ইস্যুগুলোর স্পষ্ট উত্তর ছিল। মানুষ-প্রকৃতি ও প্রকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্ক তিনি কীভাবে দেখেন একে ব্যাখ্যা করতেই তাঁর ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ধারণার জন্ম। অথচ এটা সারা মার্কসবাদ নাই।
মার্কসের মৃত্যুর পরবর্তীকালে তাঁর এই ধারণা কিভাবে পাঠ করা ও বুঝা হয়েছে - রাজনীতিতে ব্যবহার হয়ে যে চর্চারূপ দাড়িয়েছে -যাকে আমরা মার্কসবাদ বলছি - এই মার্কসবাদে লক্ষ্য করবেন, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ শুধু ধারণাতেই বদল হয়ে যায়নি; এটার নাম বা ডাকনাম, বিষয় ফলে প্রকরণ সবই বদল হয়ে গেছে। মার্কসবাদ এর নাম বদল করে নিয়েছে "ডায়লেকটিক বা দ্বান্দ্বিক বস্তবাদে"। "মানুষ-প্রকৃতি ও প্রকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্ক" এই বিষয় ফলে প্রকরণ বদল ঘটে গিয়ে হয়েছে "বস্তু ও চেতনা"।
এবার আরও স্পষ্ট করে বলছি, - "ডায়লেকটিক বা দ্বান্দ্বিক বস্তবাদে" ও "বস্তু ও চেতনা" - এটা মার্কসের কোন ধারণা নয়। এই চিন্তা বা এর দায় মার্কসের নয়। অথচ এটাই মার্কসের চিন্তা বলে মনে করে, তাঁর নামেই চর্চারূপ ধারণ করেছে - মার্কসবাদে।
মার্কস পুঁজি বই (১৮৬৭) এর লেখক হিসাবেই মশহুর। এই বই লেখার আগে অর্থশাস্ত্র (political economy) বলে নতুন ধারণা, প্রকরণ দাঁড় করাতে বিস্তর সময় ব্যয় করতে হয়েছে তাঁকে। ১৮৪৪ সাল থেকে শুরু হলেও ১৮৫৭ সালে এসে এরই গুছানো প্রস্তুতিমূলক বই "ভিত্তি" বা গ্রুন্ডিসা (Grundrisse)। অর্থশাস্ত্র - যেখানে দর্শনকে কেবল দর্শনের জায়গায় নয় এর ব্যবহারিক -প্রয়োগ-প্রামাণিক জায়গায় টেনে নামিয়ে এনেছেন তিনি। এই নতুন শাস্ত্রে এসে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একাকার।
কিন্তু আমি বলছি মার্কসের হাতে অর্থশাস্ত্র ধারণা জন্ম হওয়ারও আগের কথা, এরও প্রাক-প্রস্তুতির কথা। বলা যায় এটা একটা মার্কসের দার্শনিক প্রস্তুতি পর্ব। "জর্মান ভাবাদর্শ" বইয়ে, ১৮৪৫ সালে তিনি প্রথম ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ধারণা আনছেন, উৎপাদন সম্পর্ক (Relations of Production) শব্দ তখনও তিনি ব্যবহার শুরু করেননি। সমসাময়িক জর্মান দার্শনিক চিন্তাধারার মধ্যে হেগেলের প্রভাব, ইয়ং হেগেলিয়ান ও বিশেষত ফয়েরবাখের বিরুদ্ধে দার্শনিক মোকাবিলা করে নিজের দার্শনিক অবস্হান তৈরি করেছেন তিনি তখন ওখানে।
এটা একটা পর্যালোচনামূলক রচনা এবং ১৯৩০ সালের পর (মার্কসের মৃত্যুর ৪৫ বছর পর) অসমাপ্ত পান্ডুলিপি আকারেই প্রথম জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়।
পর্যালোচনামূলক গ্রন্হ বলে এই "জর্মন ভাবাদর্শ" রচনাতে প্রথম কয়েক অধ্যায় তিনি ব্যয় করেছেন হেগেল ও হেগেল-উত্তর জর্মান দার্শনিক সমাজের অবস্হানের সমালোচনায়। এরপর তিনি তাঁর "ঐতিহাসিক বস্তুবাদ" ও ইতিহাস বলতে তিনি কী বুঝতে বলেন আর, ইতিহাসে সম্পত্তির রূপের বদলগুলো - আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।
সমস্যা বেঁধেছে, আমরা সবাই আগ্রহী হয়েছি তাঁর বস্তুবাদ জানতে তাও আবার ডায়লেকটিক, যার সাথে মার্কসের কোন সস্পর্ক নাই। আর মার্কস ওখানে কী দার্শনিক বিতর্ক তুলছিলেন, বিতর্কের বিষয় কী - এগুলো নিয়ে কোন আগ্রহ আমাদের মার্কসবাদ করে নাই। কেবল একটা শিরোনামে জেনেছি - মার্কস ওখানে ভাববাদকে উড়িয়ে দিয়েছেন, হেগেলকে নাকি উল্টে নিয়েছেন, ফয়েরবাখ নিয়ে কী জানি থিসিস আছে - এতটুকুই।
কাজেই এটা "মার্কস তার জীবিত সময়েও বলে যেতে পারেননি" - জাতীয় সমস্যা নয়।
আমরা পোষ্ট প্রসঙ্গের অনেক বাইরে এসে পড়েছে, তাই এবার থামতে হচ্ছে। অন্য সময়ে, অন্যখানে এনিয়ে আরও বিস্তর কথা বলতে হবে।
আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
গুরু চরণ ভরসা।
১২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৬
আন্দালিব পান্থ বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো.......মাকর্স সারাজীবন ধরে যা বলেছেন তা কেউ বুঝতে পারেননি.....এমনকি এন্গ্লেসও না..........মার্কস এতটাই ব্যার্থ যে তিনি তার ভাষা কাউকে বুঝাতে পারেননি.......আর জার্মান আইডোলজি হলো এন্গেলস আর মার্কসের যৌথ রচনা......
১৩| ১২ ই জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৪
আকাশ অম্বর বলেছেন:
মনোযোগ দিয়ে পড়া হলো আপনার দুটো পোষ্ট এবং তৎসংলগ্ন কথোপকথন।
শুভকামনা।
১৩ ই জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৪
ভূপর্যটক বলেছেন: পড়েছেন শুনে ভাল লাগল।
১৪| ২০ শে মে, ২০১০ রাত ১১:৩৭
মোহাম্মদ আরজু বলেছেন: অবশেষে আমি ইহাকে পাইলাম !
০২ রা আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:২২
ভূপর্যটক বলেছেন: অবশেষে আপনি ইহাকে পাইলেন না ইহা আপনাকে পাইলো সে মীমাংসা কে করিবেক?
১৫| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৫:৪১
স্তব্ধতা' বলেছেন: জার্মান আইডোলজি পড়া শুরু করলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:০৮
শাহাদাৎ তৈয়ব বলেছেন: হেগেলের 'মানুষ', পশ্চিমের মানবতাবাদের হাকীকত লালনের সাথে সম্পর্কিত করে আলোচনা করায় আবারো বিষয়টা চিন্তা করার সুযোগ করে দিলেন। ভাইজান এই গভীর রাতে এমন লেখা আমাকে আরো বেশী মগ্ন করে তুললো। আপনার খবর কী? নিশ্চয়ই ভালো থাকবেন।
লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
পূর্বের পর্বটি আমার পড়া নাই। পড়ে মন্তব্য করা যাবে।
তবে একটি নগদ উপকার করলেন, সেটা হলো- দারভীশকে বুঝার ক্ষেত্রে পশ্চিমের মানবতাবাদের বিষয়টি কাজে লাগবে।