নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেহেস্তে মতি ড্রাইভার

২৭ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:০৪

বিশিষ্ট মাওলানা! অনেক ভাল কাজ করেছেন। নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাতের পাশাপাশি দান-ধ্যানও করেছেন প্রচুর। তাই বেহেস্তে যেতে চার বিশেষ বিবেচনার কোন প্রয়োজন পড়েনি। মৃত্যুর পর সরাসরি চলে গেছেন বেহেস্তে। পেয়েছেন একটা মাঝারি গোছের বালাখানাও। সাথে হুরও বাহাত্তরটা। বেহেস্তী সুখে জীবন তার গদোগদো।

একদিন মাওলানা সাহেব পথিমধ্যে একটি লোক দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন। প্রথমে মনে করছিলেন- না না, তিনি ভুল দেখছেন। কিন্তু তারই পাশ দিয়ে যখন হেটে গেলো তখন মাওলানা সাহেবের চিনতে একটুও কষ্ট হলো না। আরে এই ব্যাটাইতো ঢাকাতে তার বাড়ীর ভাড়াটিয়া ছিল। এ তো বেহেস্তে আসার কথা না। কোন ভাবেই এই গুনাগার ড্রাইভার বেটা বেহেস্তে আসতে পারে না। কিন্তু সে তো এসেই পড়েছে এবং তার সামনে দিয়েই মাস্তানী ভাব নিয়ে হেটেও গেলো। মাওলানা সাহেব খুবই গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। নিশ্চয়ই হিসাবে কোন গরমিল হয়েছে। ফেরেস্তাগুলা যে কি... ঠিকমতো হিসাবও করতে পারে না। দোজখে জায়গা হওয়াই যার পক্ষে কঠিন তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বেহেস্তে!!! মনে মনে গদ গদ করতে থাকেন মাওলানা। আবার চিন্তা করেন- সালার ব্যাটা থাকে কই সেটা আগে দেখা দরকার। চুপিসারে ড্রাইভারের পিছু নেন মওলানা। বেশ খানিকটা দুরত্ব বজায় রেখেই হাটতে থাকেন। কিছুদুর গিয়ে তো মাওলানা আরো অবাক!! আরে! ঐতো একটা বড় বালাখানায় ঢুকছে ড্রাইভারটা। ব্যাটা তো দেখছি সবচেয়ে বড়মাপের বালাখানাই বরাদ্দ পেয়েছে। আমার বালাখানার চেয়েও অনেক বড়। হুরও পেয়েছে নিশ্চয়ই বেশি। ড্রাইভারের বালাখানা দেখে মাওলানার মাথায় আবার অন্য চিন্তা ঘুর ঘুর করছে। আরে..!! এইখানেও বাংলাদেশের মতো ফেরেস্তারা ঘুষ খায় না তো!! ধুরন্ধর ড্রাইভার নিশ্চয়ই কোন দুই নম্বরী পথে বেহেস্তে চলে এসেছে। হায়.. হায়.. হায়...। দুর্নীতি এখানেও বাসা বেঁধেছে!!!

মনটা একেরাবেই খারাপ হয়ে গেলো মাওলানার। না! কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ খবর পৃথিবীতে পৌঁছালে বিশেষ করে বাংলাদেশে পৌঁছালে তো সর্বনাশ!! কেউই আর ভাল কাজ করবে না, নামাজ-রোজার ধার ধারবে না। সব শাহাবাগী নাস্তিকদের দলে যোগ দিবে। আর মরার পরে দুই নম্বরী পথে বেহেস্তে চলে আসবে!! ছি.. ছি.. ছি...! বেহেস্তের একি অবস্থা। কোন খারাপ কাজটা করেনি এই ড্রাইভারটা। মদ খাওয়া তো ওর নিত্যদিনের ব্যাপার ছিলো। খারাপ পাড়ায়ও যাতায়াত ছিলো নিয়মিত। জুয়ার আড্ডা থেকে ফিরতো গভীর রাত্রে মাতাল হয়ে। বাড়ীওয়ালা হিসাবে এসবতো সে ভালভাবেই জানে। শেষ কয়েক মাসের ঘর ভাড়াটাও মেরে দিয়েছিলো হারামজাদা। আর আজ বেহেস্তে এসে আমার উপর টেক্কা মারছে। নিজের বালাখানায় ফেরার সময় চিন্তা করছিল মাওলানা।

বালাখানায় ফিরেই মাওলানা চিন্তা করলো- না! আজকেই সরাসরি আল্লার কাছে এব্যাপারে একটা কমপ্লেন করতে হবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। আরবীতে খুব পরিস্কারভাবে ড্রাইভারের কাহিনী লিখে পাঠিয়ে দিলো সরাসরি আল্লার আরসে।

আল্লার কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার জন্য ছটফট করছিল মাওলানা। এত শক্ত একটা অভিযোগ তারপরও উত্তর আসতে এত দেরি। এটাও কি বাংলাদেশের দুদক বা সরকারী তদন্ত কমিটির মতো হয়ে গেলো না কি!! মেজাজ ক্রমান্বয়ে বিগড়ে যাচ্ছে মাওলানার। সপ্তাহখানেক পরে উত্তর হাতে পেলো মাওলানা। না মতি ড্রাইভারের সমস্ত কর্মফল যোগ-বিয়োগ করে সোয়াব-গুনাহর যে হিসাব বার করা হয়েছে তাতে ড্রাইভারের পাপের চেয়ে পূণ্যের পরিমাণ অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। উত্তর পাওয়ার পর মাওলানার মেজাজ একেবারে সপ্তমে উঠলো। না, এই হিসাব মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত!!! বাংলাদেশের এমপিদের সম্পত্তির হিসাব বা নির্বাচনী ব্যয় দেখানোর মতো করে এই হিসাব দেখানো হয়েছে। সত্য নিশ্চয়ই প্রমাণ করে ছাড়বো- আর এই মতি ড্রাইভারটাকে দোযখে পাঠিয়ে ছাড়বো- মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে মাওলানা।

বেহেস্তের হেফাজতকারী প্রধান ফেরেস্তার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিল মাওলানা। নিশ্চয়ই ফেরেস্তা প্রধান মতি ড্রাইভারের পাপ-পূণ্যের হিসাবটা একটু দেখলেই দুর্নীতিটা ধরা খাইবে। আল্লা তো ফেরেস্তাদের দেওয়া হিসাবটাই জবাব হিসাবে পাঠাইছে আমার কাছে। এতকিছু দেখার সুযোগ কই তার। আবার চিন্তা করে- ওই প্রধান ফেরেস্তা ব্যাটারও যদি বাংলাদেশে দুদকে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে.. তাইলে!! না আগে গিয়েই দেখি না।

নির্ধৃারিত সময়েই প্রধান ফেরেস্তার দপ্তরে হাজির হয় মাওলানা। মতি ড্রাইভারের ঘটনা সবিস্তারে বর্ণৃনা করে প্রধান ফেরেস্তার বরাবর। বিনয়ের সাথে বলে- দেখেন আপনি!! এটা নিশ্চয় ভুল হিসাব। ওই ব্যাটা তো সরাসরি দোযখে যাওয়ার কথা।

ফেরেস্তা একটু মুচকি হাসেন... বলেন- আচ্ছা, আপনি তো বিখ্যাত মাওলানা ছিলেন। তেতুল তত্বের চেয়েও অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত তত্ত্ব প্রসব করেছেন আপনি। কিন্তু আপনার কথায় খুব কম মানুষই আল্লার নাম স্মরণ করেছে। আপনিই বলেন- প্রতি দিন গড়ে কত লোক আপনার কথায় আল্লার নাম নিয়েছে?

মাওলানা বিনীতভাবে বললেন, এর হিসাব তো আপনার কাছেই আছে। আপনিই ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু ওই মতি ড্রাইভার কি করলো?? ওর কথা তো ওর বউও শুনতো না। আর ওর কথায় মানুষ আল্লার নাম নিছে কিভাবে??

ওইখানেই তো খোদার মহিমা। হিসাবের খাতা মওলানার সামনে মেলে ধরলেন প্রধান ফেরেস্তা। দেখেন মতি ড্রাইভার কি করেছে। মতি ড্রাইভার তো দুরপাল্লার নাইট বাস চালাতো। প্রতিদিনই সে প্রচুর মদ খেতো একথা সত্য। কিন্তু বাসে উঠে মাতাল অবস্থায় যখন সে বাস ড্রাইভ করতো, এত জোরে সে বাস চালাতো যে.... বাসের যাত্রীরা সব আল্লা আল্লা করতো। ঘুম ছুটে যেতো অসংখ্য মানুষের... রব উঠতো আল্লা আল্লা ধ্বনিতে। সে এত মানুষকে আল্লার নাম স্মরণ করতে সাহায্য করেছে.... সেই মতি ড্রাইভার কেন বেহেস্তে আসবে না!!

মাওলানা ক্ষুব্ধ মনে বেরিয়ে আসলেন... না, না! এটা বাংলাদেশের নিন্ম আদালতের বিচার হলে মানতাম!! আল্লার বিচার এরকম!!! কিছুতেই মানা যায় না!! নিশ্চয়ই ব্যাটারা বাংলাদেশ সরকারের আমলা ছিলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.