নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা টু মেলবোর্ন

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬

দুটো শহরের বাসিন্দা আমি। ঢাকাতেও থাকি আবার মেলবোর্নেও। বিশ্বের বাসযোগ্য নগরের তালিকায় ১৪০টা শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৯ তম। আর মেলবোর্নের স্থান বরাবরের মতো এবারও এক নম্বরে। দীর্ঘ পনের বছর ঢাকার ম্যাস জীবনের পর তিন বছর মেলবোর্নে।

দুটি শহরের মধ্যে পার্থক্যটা একেবারে আসমান-জমিন না হলেও অনেক! ঢাকার লোকসংখ্যার ঘনত্বের কাছে মেলেবোর্ন নস্বি। পুরো অষ্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা আর ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় সমান। নাগরিক সুবিধার পার্থকও সুবিশাল। ট্রেন, ট্রাম আর বাস! এই তিন গণপরিবহণে ভ্রমণ করা যায় খুবই সাচ্ছন্দে। যদিও ভাড়া অনেক বেশি। প্রতি দুই ঘন্টার ভ্রমণে সাড়ে তিন ডলার। তবে দুই বার ভাড়া দিলে তারপর ফ্রি। ২৪ ঘন্টায় আপনার আর ভাড়া লাগবে না, তাই আপনি মেলবোর্নের যে গণপরিবহনে যেখানেই যান না কেন। ট্রেন, ট্রাম ও বাসে একই টিকিট প্রযোজ্য! নাম তার মাইকি। ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মতো এই কার্ডে টাকা ঢুকিয়ে আপনি যেথা খুশি সেথা যেতে পারেন। না! ট্রাফিক জ্যাম নেই বললেই চলে। মানুষ ঘড়ির কাটা মেপে বাসা থেকে বেরোয় এবং যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর নিশ্চয়তাও আছে এখানে।

প্রশাসনে দূর্নীতি এখানে শুন্যের কোঠায়। তাই অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যাটাও খুবই কম।

মেলবোর্নের প্রতিটা বাড়ীর সামনে ফুলবাগান আর পিছনে সবজি ক্ষেত। বাড়ীর সামনে ও পিছনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে সিটি কাউন্সিলের ছাড়পত্র জুটবে না আপনার। ঢাকার মতো মেলবোর্নেও গভীর নলকুপ বসানো নিষেধ। মেলবোর্নের মানুষ সমুদ্রের পানি পান করে। আমার এক বাংলাদেশী বন্ধু যিনি এখানে পিএইচডি করতে এসেছেন তার ভাষ্যমতে, শুধু মেলবোর্ন শহরের মানুষকে খাবার পানি যোগান দিতে অষ্ট্রেলিয়া সরকার প্রশান্ত মহাসাগরে যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট গড়ে তুলেছে তার বাতসরিক ব্যয় বাংলাদেশের বাতসরিক বাজেটের চেয়েও বেশি।



মেলবোর্নের পরিবেশ খুবই স্বাস্থ্যকর। বাতাসে ধুলার পরিমাণ খুবই কম। তাই জামাকাপড়ও সহজে ময়লা হয় না। সহজে রোগ-বালাইও হয়না। তবে শীতকালটা বেশ কষ্টের। ঠান্ডায় বেশ কষ্ট হয় আমার।

আর একটা কারণে মেলবোর্ন আমার খুব পছন্দ! সেটা হচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ার সব চেয়ে বেশি প্রগতিশীল মানুষের বাস এখানে। গ্রীন পার্টির এমপি সিট এখানেই। পরিবেশবাদী ও বামপন্থীদের ঘাটিও মেলবোর্ন। এখানে প্রায় সব রাস্তার পাশ দিয়ে রয়েছে সাইকেল চালানোর জন্য সবুজ রংয়ের নির্ধারিত বাইক ট্রাক। যারা সাইকেল চালায় তাদেরকে বলা হয় গ্রীন পার্সোন। পরিবেশবাদীরা পরিবেশের কথা চিন্তা করে গাড়ী ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। তাই এখানে হাজারো মানুষ যাতায়াতের বাহন হিসাবে সাইকেল ব্যবহার করে। নিরামিশভোজীর সংখ্যাও এখানে অনেক। পরিবেশবাদীরা বেশিরভাগই নিরামিশভোজী। তাই মেলবোর্ন শহরের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভেজিটেরীয়ান রেস্টুরেন্ট।

এখানে আর একটা ব্যাপার খুবই লক্ষ্যণীয় সেটা হচ্ছে বইয়ের প্রতি মানুষের ভালবাসা। উন্নত বিশ্বের অন্যান্য শহরের মতো বই পড়া এবং বই কেনায় এরা খুবই অগ্রগামী। ট্রেনে, বাসে বা ট্রামে যেখানেই যান না কেন দেখবেন অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে-বসে বই পড়ছে। এদের যে কারো ব্যাগ খুজলে দুই-একটা বই পাবেন ই পাবেন। আর এই কারণেই বাংলাদেশের মুদি দোকানের মতো এখানে ছড়ানো-ছিটানো অসংখ্য নতুন-পুরাতন বইয়ের দোকান। বই কেনার জন্য বেশিরভাগ পরিবারের একটা নির্দিষ্ট বাজেটও থাকে, যেরকম বাজেট থাকে খাবার কেনার জন্য।

এত কিছুর পরেও ঢাকার জন্য, গ্রামের জন্য প্রায়ই মন কাঁদে আমার। ঢাকার কোলাহলমুখর জীবন ছেড়ে এখানের জীবন যেন কেমন ছন্নছাড়া মনে হয়। আত্মীয়তা-বন্ধুত্বকে এরা ভিন্ন ভাবে বিবেচনা করে। মানুষ অনেক বেশি স্বাধীন এখানে এবং অনেক বেশি স্বার্থপরও। নিজের বাইরে এরা কারো কথাই তেমন চিন্তা করে না। হোক সে বাবা-মা, হোক সে কোন বন্ধু-বান্ধব। যার মতো সেই চলে।

এখানেও অনেক বন্ধু-বান্ধব আমার। কিন্তু ঢাকার বন্ধু আর মেলবোর্নের বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য যোজন যোজন। বাংলাদেশী সেই আন্তরিকতা, সেই ভালবাসার অভাব বোধ করি সব সময়। আর সস্তায় জীবন-যাপন? আমি অন্তত দ্বিতীয় কোন শহরের নাম জানি না যেখানে ঢাকার মতো সস্তায় থাকা-খাওয়া সম্ভব। হ্যা! এই দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতির মধ্যেও। বাংলাদেশের চেয়েও অপেক্ষাকৃত গরীব দেশে গিয়েও দেখেছি আমি। জীবনযাত্রার মান একই রকম হলেও জীবনযাত্রার ব্যয় ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি। কলম্বো বা কাঠমুন্ডু গেছেন অনেকেই। নিশ্চয়ই বুঝবেন জীবনযাত্রার ব্যয় ঢাকার চেয়ে কত বেশি সেখানে।

আমার এখনও মনে পড়ছে ইত্তেফাক মোড়ের সেই নুরু মিঞার আল-সালাদিয়া ঢাকা হোটেলের কথা, বা সোনালী ব্যাংকের পিছনের ভাতের হোটেলের ছোট মাছের চচ্চড়ি! দুনিয়ার কোথাও এত সস্তায় এত ভাল খাবার মিলবে না!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১০

শেরশাহ০০৭ বলেছেন: আমার এখনও মনে পড়ছে ইত্তেফাক মোড়ের সেই নুরু মিঞার আল-সালাদিয়া ঢাকা হোটেলের কথা, বা সোনালী ব্যাংকের পিছনের ভাতের হোটেলের ছোট মাছের চচ্চড়ি! দুনিয়ার কোথাও এত সস্তায় এত ভাল খাবার মিলবে না!................... :D :D ভাল

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮

বদরুল খান বলেছেন: সেইরকম লিখেছেন পাঠক লাল গোলদার ভাই :)

আসলে প্রত্যেকটা মানুষেরেই যেখানেই থাকুক....দেশের প্রতি আন্তরিকতা ভালবাসাটাই অন্যরকম ।

ভাল থাকবেন ।

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০

িটউব লাইট বলেছেন: ঢাকা আমার ঢাকা

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:০৫

ডি মুন বলেছেন: :) :) :)

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:১২

গাজী খায়রুল হাসান বলেছেন: ভালো লাগলো অনেক লেখাটা। :D :D

৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১৫

এক্সপেরিয়া বলেছেন: যত কিছুই বলেন না কেন ঢাকাতে কষ্ট করে থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে.... আমি মেলবোর্নে গেলেও টিকতে পারতাম না.... কারন তাদের রোবটিক জীবনযাত্রা....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.