নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
কলাম লিখছে সমানে! ফিসার, ভ্রমণকাহিনী, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে উপসম্পাদকীয়, সবই লিখছে তারা। তারা কয়েক হাজার ফেসবুকার আর ব্লগার! তৈরী হচ্ছে হাজারো লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক। অনেকেই উঠে আসছে একেবারে তলা থেকে। বিদ্যুৎবিহীন, যোগাযোগ বিছিন্ন গ্রাম থেকেও দিব্যি চলে আসছে আলোঝলমলে ট্রাফিক জ্যামের শহরে। খাতির জমিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে করছে মেধাশ্রমের কাজ। প্রতিদিন, প্রতি পত্রিকায়! প্রতিদিন প্রতি টেলিভিশনের টকশোতে!প্রতিদিন প্রতি রেডিও’র আলোচনাতে! প্রতিদিন অসংখ্য আলোচনা, পর্যালোচনা, গোলটেবিল, মিটিং, প্রতিবাদ, বিক্ষোভে!এদের জন্যই অনলাইন পত্রিকার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ব্লগ আর ফেসবুক তো আছেই।তরুণ এই মেধাশ্রমিকদের সংখ্যার সাথে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন সংখ্যা।
প্রতিটা দৈনিক পত্রিকায় খোলা হয়েছে নতুন বিভাগ!ফেসবুকার-ব্লগারদের বিষয়ভিত্তিক মতামত বিভাগ।বেসরকারী টেলিভিশন-রেডিওতে ফেসবুকার-ব্লগারদের নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে নতুন নতুন অনুষ্ঠানের। থাকছে ফেসবুকার-ব্লগারদের মতামত বিশ্লেষণও।টকশোগুলোতে অনেকটা অলিখিত কোটা প্রথা চালু করা হয়েছে। দুজন রাজনীতিবিদ ডাকলে একজন ফেসবুকার বা ব্লগার আমন্ত্রণ করা!রেডিও ওয়ালারাও বসে নেই। বিবিসি থেকে এবিসি রেডিও সবাই ডাকছে পেশাদার ফেসবুকার আর ব্লগারদের।অনেক পত্রিকাই পেশাদার ফেসবুকার-ব্লগারদের আগ্রহভরেই নিয়োগ দিচ্ছেন, মেধার ব্যবহার করছেন সর্বোচ্চ।
ফেসবুকিং ও ব্লগিং এখন পরিণত হয়েছে মর্যাদাশীল পেশায়।তরুণ প্রজন্ম খুবই সাচ্ছ্যন্দে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে ফেসবুকার-ব্লগার হিসাবে।মেয়ের বাবারাও ফেসবুকার-ব্লগার পেশাজীবীদের মেয়ে দিতে পিছপা হচ্ছে না।এমনকি ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট চালানো বিকৃত মানসিকতার অপদার্থগুলোও এখন ফেসবুকার-ব্লগারদের খুজছে।তারা নিশ্চিত বুঝে গিয়েছে যে,প্রগতিশীল ধারার মেধাবী কিছু ফেসবুকার-ব্লগারদের তাদের পক্ষে আনতে পারলেই কেবল ধর্মব্যবসাটা আরো কিছুদিন চালিয়ে নেয়া যাবে!ফেসবুকার-ব্লগারদের কুসংস্কার মুক্ত,মানবিক ও প্রগতিশীল মতামতের ঢেউ শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত লক্ষ কোটি মানুষের ধর্মীয় চিন্তায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ইতিমধ্যে।মানুষ তোতা পাখির মতো বস্তাপঁচা বুলি না আউড়ে প্রশ্ন করতে শিখেছে এখন। নিজের চোখে জগত দেখার মন্ত্র শিখে গিয়েছে তারা। ধর্মব্যবসায়ীদের তাই এখন ত্রাহি অবস্থা!
রাজনৈতিক দলগুলোতেও তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে ফেসবুকার-ব্লগারদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার।অরাজনৈতিক মাথামোটাদের সরিয়ে মেধাবী ফেসবুকার-ব্লগারদের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে।অনেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী, সুপরিচিত দুর্নীতিবাজ আমলা আর লুটেরা ব্যবসায়ীদের এমপি টিকিট ক্যানসেল করে এমপি নির্বাচনের টিকিট ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে টগবগে তরুণ,দুরন্ত মেধাবী এইসব ফেসবুকার-ব্লগারদের হাতে।
ফলে বেরিয়ে আসছে একদল তরুণ প্রতিভাধর লেখকশ্রেণী, সাহিত্যিক শ্রেণী। দলবাজ,বুদ্ধি ব্যবসায়ী দালালদের স্থান দখল করছে নিরপেক্ষ সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী শ্রেণী। বেরিয়ে আসছে দেশপ্রেমিক জনদরদী রাজনীতিবিদ, বেরিয়ে আসছে জনগণের সেবক দুর্নীতিবিরোধী আমলা শ্রেণী। এদের রুচি, মননশীলতা,ধৈর্য্য, দেশপ্রেম,মানুষের প্রতি ভালবাসা আর নিজেদের মেধা কাজে লাগিয়ে বের করা নতুন নতুন ধারণা! এসবই আকৃষ্ট করছে শহুরে দালাল বুদ্ধিজীবী থেকে গ্রামীণ বুদ্ধিজীবী,গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে কৃষি শ্রমিক সবাইকে।বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ! আর এই দেশ বদলানোর মহতি কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ফেসবুকার-ব্লগার শ্রেণী।
..... এমন যদি হতো???
বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ফেসবুকার-ব্লগারদের এরকম একটি সু-সময়ের কল্পনা করাও কঠিন। তবে আশা করতে তো আর দোষ নেই! আমার মনে হয় অদুর ভবিষতে বাংলাদেশে এরকম পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়। ফেসবুকার-ব্লগারদের মধ্যে অসংখ্য প্রতিভাধর তরুণ (তরুণ বলতে নারী এবং পুরুষ উভয়কেই বুঝাচ্ছি)আছে যারা রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে অনেক বেশি যোগ্য।কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের সেই যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ একেবারেই সীমিত।একদিকে দেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য প্রতিভা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সুযোগ লুফে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিভাধর বা অনেক ক্ষেত্রে অপদার্থ ও নির্বোধের দল।এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরী।
অসংখ্য ফেসবুকার-ব্লগার সংবাদপত্রের সাথে এবং টেলিভিশন-রেডিওর সাথে যুক্ত আছেন। অনেক গুণী ও জনপ্রিয় সাংবাদিকও ফেসবুক-ব্লগে নিয়মিত লেখেন,মন্তব্য করেন, করেন সংবাদের বিশ্লেষণও।সেই সমস্ত সাংবাদিক বন্ধুরা যদি নিজের দায়িত্বেই একটু উদ্যোগ গ্রহণ করেন, একটু চেষ্টা করেন তার সংবাদপত্রে, টিভিতে, রেডিওতে- ফেসবুকার-ব্লগারদের জন্য একটু আলাদা কিছু করার। যার যতটুকু সামর্থ তিনি ততটুকুই করুন। আমার মনে হয় যদি একবার কোন প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক উদ্যোগ গ্রহণ করে, যদি ফেসবুক-ব্লগারদের মতামত বা লেখা কোন নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট নামে ছাপানো শুরু করে, তাহলে এর ধারাবাহিকতা দ্রুত সম্প্রসারিত হবে।দৈনিক পত্রিকাগুলোতে যদি ফেসবুক-ব্লগারদের হাজারো লেখা থেকে প্রতিদিন একটা লেখাও প্রকাশিত হয়-অনেক কিছুই বদলে যাবার সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে।
আমরা জানি, আইনজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মতো সংবাদ কর্মীদের বড় অংশও জোট-মহাজোটে বিভক্ত।হোক না? আপনি কোন পক্ষের বা নিরপেক্ষা, প্রগতিশীল যাই হোন না কেন! আপনার পক্ষের, আপনার রুচিসম্মত, আপনার বিবেচনায় মানসম্মত লেখারও তো অভাব নেই ফেসবুক-ব্লগে।তাছাড়া যেখানে দেশজুড়ে প্রকাশিত দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত অসংখ্য অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের লেখা ছাপা হচ্ছে।সেখানে ফেসবুকার-ব্লগারদের একটু সুযোগ দিতে বাঁধা কোথায়? আপনি আপনার পক্ষের, আপনার রুচিসম্মত, আপনার বিবেচনায় মানসম্মত লেখক খুঁজে নিয়ে, তাদেরকেই কাজে লাগান।
ফেসবুক-ব্লগারদের মতামত এখন মূলত একটা গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ।দেশের পঁচানব্বই ভাগ মানুষই যেখানে ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে সেখানে ফেসবুক-ব্লগারদের লেখা পড়া তো দুরের কথা, ফেসবুক-ব্লগেও যে হাজারো মানসম্মত লেখা থাকতে পারে সেটাই তো বেশিরভাগ মানুষের অজানা।কিন্তু পত্রিকা,টিভি এবং রেডিও’র প্রভাব একেবারে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেই শ্রমজীবী মানুষ পর্যন্ত বিস্তৃত।তাই ফেসবুক-ব্লগারদের চিন্তাকে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পত্রিকা, টিভি ও রেডিওর সহায়তা খুবই জরুরী।
ফেসবুক-ব্লগারদের কাছে আমার অনুরোধ, দয়া করে প্রত্যেকে এবিষয়ে মাঝে মধ্যে স্ট্যাটাস দিয়ে পত্রিকা, টিভি ও রেডিও কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করুন।নিশ্চয়ই মেধাবী ফেসবুকার-ব্লগারদের সুদিন আসবে!
পাঠক লাল গোলদার
১৩ জানুয়ারী ২০১৪
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৩৪
খেয়া ঘাট বলেছেন: ভালো লিখেছেন।