নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংযম?? শুভঙ্করের ফাঁকি!! কথার কথা!! বাস্তবতা বিপরীত।

৩১ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:২৩

আমার নিজের জীবনের একটা বাস্তব ঘটনা দিয়ে শুরু করি।
একবার পুলিশ কিয়ারেন্সের বিষয়ে কথা বলতে শান্তিনগর থানায় যেতে হয়েছিলো। পুলিশ কিয়ারেন্স যারা নিয়েছেন আমার মনে হয় সবার অভিজ্ঞতাই কমবেশি একই রকম। যতদুর মনে পড়ে এসবি-এর এক অফিসার আমার আবেদনটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তখন ছিলো রমজান মাস। আমি পকেটে টাকা নিয়েই গিয়েছিলাম, জানতাম ঘুষ ছাড়া পুলিশ কিয়ারেন্স দেয়না। কিন্তু যখন অফিসারটির সাথে সাক্ষাত করলাম, লম্বা আধাপাকা দাঁড়ি, মাথায় নামাজি টুপি আর কপালে নামাজি কালো স্পট দেখে মনে মনে বেশ আশ্বস্ত হলাম, যাক মনে হয় আজকে আর ঘুষ দেয়া লাগবে না। সব পুলিশ ঘুষ খায় না কথাটা বেশ বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছিলো। আমার হিন্দু নাম দেখে উনি আমাকে বাবু বলেই সম্মোধন করলেন। বেশ ভাল লাগলো আমার। আর যখন উনি শুরুতেই বললেন যে, সময় কম, একটু দ্রুত কথা শেষ করতে হবে বাবু! তারাবীতে যাবো! আমি তো মনে মনে মহাখুশি! গদবাঁধা কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, নাম, বাবার নাম, দেশের বাড়ী, ঢাকার ঠিকানা ইত্যাদি। তারপর বললেন, চলেন বাইরে গিয়ে চায়ের দোকানে বসে কাজ সারি। ঐ যে দেখেন ক্যামেরা লাগাইছে। আঙ্গুল না উঁচিয়েই চোখের ইশারায় আমাকে সিসিটিভি দেখালেন। তার কিছুদিন আগেই মাত্র সরকার থানায় থানায় সিসিটিভি লাগিয়েছে বলে পত্রিকায় পড়েছিলাম। ধর্মভীরু অফিসারটি এবার হাসতে হাসতেই বললেন, ট্যাকা-টুকা আনছেন তো বেশি করে? রোজার মাস, কম হইলে কিন্তু কাজ হইবো না! আমার মুখে তখন আমাবস্যার অন্ধকার। আস্তে করেই বললাম, হ্যা! আনছি তো! চায়ের দোকানের সামনে গিয়েই বললেন, দ্যান। পাঁচের কম কিন্তু দিয়েন না! আমি পাঁচশত টাকার একটা নোট বের করে ওনার হাতে দিলাম। উনি তো পুরাই আগুন! আরে মশাই এইটা কি ফাজলামী করতাছেন? পাঁচ হাজার দেন! অনেক অনুনয়-বিনয় করে দুই হাজারে তাকে রস্ত করতে সমর্থ হয়েছিলাম। টাকা পকেটে রেখে শেষমেশ বললেন, শুধু রোজার মাস বলে নিলাম, তা না হইলে...!

রমজান মাস সংযমের মাস। রোজা রাখার উদ্দেশ্য মূলত দুইটি- সারাদিন না খেতে পেলে একজন মানুষের কত কষ্ট হয়, সারাদিন রোজা থেকে সেটা অনুভব করা এবং পুরো মাসের সংযমের মধ্যমে (খাবারের পয়সা বাঁচিয়ে) বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে গরীব মানুষকে সহায়তা করা। কিন্তু এখন সংযমের মাধ্যমে পয়সা বাঁচিয়ে গরীবকে সহায়তার পরিবর্তে নিজেরাই ব্যস্ত থাকে ভুরিভোজ নিয়ে। বেগম রোকেয়া রমজান মাসের সংযম নিয়ে ‘রসনা বিলাস’ প্রবন্ধে এরকমটাই লিখেছিলেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বেগম রোকেয়ার সেই ভুরিভোজ এখন আর বিলাস নয়। বরং ওটাকেই এখন মানুষ সংযম হিসাবে দেখে। ইউরোপ-আমেরিকা বা বাড়ির কাছের কুয়ালালামপুর-সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক অথবা ঘরের পাশে ইন্ডিয়া গিয়ে ঈদের শপিং করেন যারা তারাও সুযোগ পেলে রমজানের সংযমের মহিমা কীর্তন করতে ভোলেন না একটুও।

সরকারী দফতরের দিকে যদি যান তাহলে তো আর কথাই নেই। “নিচেয় একটু ঘুরে আসেন, চারিদিকেই এখন এটিএম বুথ, আল্লার নাম নিয়ে দেখেন একটু বাড়ায়ে আনতে পারেন কি না। এই ফাকে আমি নমাজ টা পইড়া লই।” অথবা “একটু বাড়ায়ে দিয়েন, রোজা-রমজানের দিন। নিয়ত করছি এইবার পরিবার লইয়া ছোট হজটা করেই আসুম। প্লেনভাড়া যে হারে বাড়ছে...” এরকম নানান সংযমের বাণীতে অফিসপাড়া এখন সংযমিত। সরকারী চাকুরেদের সংযমের ঠ্যালায় আপনার পকেট ফাঁকা। রমজানে পুলিশেরও ঘুষের রেট অনেক বেশি। এ বছরের রমজানে আবার শাপে-বর হিসাবে যুক্ত হয়েছে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে গ্রেফতার বাণিজ্য ও ক্রসফায়ার বাণিজ্যের সুযোগ।

ঘুষখোরের ঘুষের রেট যেমন বেশি, সুদখোরের সুদের রেটও তেমনি বেশি, হুজুরের তারাবী পড়ানোর রেটও বেশি। চারিদিকে শুধু বেশি খরচের ছড়াছড়ি। আর সেটাই কি না সংযমের মাস! তবে সংযমের সঙ্গম যদি দেখতে চান তাহলে যেতে হবে বড় বড় রাজনৈতিক দলের ইফতার পার্টিতে। ধর্মকে ধোঁকা দিয়ে সেখানে চলছে পুরোপুরি রাজনৈতিক সমাবেশ। সাথে থাকবে ইফতারের নামে বিশাল বাজেটের নানান খাবারের সমারোহ। সামনে এবার ভোট, তাই নাম ইফতার পাটি হলেও আসলে সবখানেই হচ্ছে নির্বাচনী সমাশেব। কে যে ধোঁকা দিচ্ছে, আর কে যে ধোঁকা খাচ্ছে বোঝা বড়ই দুষ্কর!

আপনি বাজারে যাবেন, রোজার প্রভাবে সেখানে প্রতিটা পণ্যেরই অগ্নিমূল্য। এখন আবার সরকার-ব্যবসায়ী একজোট হয়ে রোজার মাসখানেক আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে আকাশছোঁয়া করে রাখে। যাতে করে রমজান মাস এলে সরকার পাবলিকেরে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে পারে যে, রোজা শুরু হলেও তাদের সরকারের সদিচ্ছার ঠ্যালায় কোন পণ্যের দাম বাড়েনি। কারণ সংযম রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটের উপর সরসরি প্রভাব ফেলে। কোথাও যাবেন? বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে এমনকি রিক্সায়ও রমজানের প্রভাব, তাই ভাড়া বৃদ্ধি। এমনকি রমজানে সংযমের প্রভাবে ব্যাচেলরদের ম্যাচের খাবার খরচও দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

কেউ কেউ যে সত্যিকার অর্থে সংযমের চেষ্টা করছেন না তা নয়! কিন্তু পুরো সমাজ-রাষ্ট্র যখন ভোগে মত্ত, কার সাধ্যি সংযম করে! তাই মুখে যতই সংযম বলে ফেনা তুলুন, মাস শেষে আপনার খরচ অন্তত দ্বিগুণ!

পাঠক লাল গোলদার
[email protected]

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১

স্বচ্ছ দর্পন বলেছেন: রমজান মাসে যে ধরনের সংযমের কথা বলা হয়েছে আমরা তার ধারে কাছেও নেই।
আমার ব্লগ ঘুরে আসার অনুরোধ রইলো ।
অথচ আমি,,, - স্বচ্ছ দর্পন ধন্যবাদ

২| ৩১ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৪২

লাবণ্য ২ বলেছেন: দারুন লিখেছেন।

৩| ৩১ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস রমজান এবং বাস্তবতা

৪| ৩১ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৭

নতুন বলেছেন: গত ফ্রেবুয়ারী মাসে মায়ের পাসপোটের জন্য এসবির লোক ভ্যারিফিকেসনের জন্য কল করলে তাকে বাসায় আসতে বলেছিলাম।

বাসায় এসে সব তথ্য নিয়ে যাবার সময় বলে একটু বাইরে আসুন....

বলে কিছু খরচা পাতির জন্য কিছু দিন।

কিছুই দেইনাই...পড়া দিয়েছি যে আমি ঘুষদেবার পক্ষেনা।.... অনেকে বলেছে পাসপোট হবেনা। ঝামেলা হবে।

যথা সময়ের ২ সপ্তাহ পরে ঠিকই পাসপোট এসেছে।

৫| ৩১ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৪

দপ্তরবিহীন মন্ত্রী বলেছেন: এই ১ মাসে মুসলমানদের পরীক্ষা দেয়ার কথা। অথচ এই ১ মাসেই ব্যবসায়ী ও সরকারী কর্মচারীরা বেশী মিথ্যা কথা ও দুর্নীতি করে।
রমাদান কড়চা

৬| ০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:১২

রাজীব নুর বলেছেন:

৭| ০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ৩:২৪

অনল চৌধুরী বলেছেন: শান্তিনগর থানা ঢাকা শহরের কোন এলাকায়?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.