নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা ভালবাসি

পােভল চৌধূরী

পাভেল চৌধুরী

পােভল চৌধূরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেলিব্রেটি বিভ্রান্ত

১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩৭

তাঁরাকারা যেমন তাদের ফ্যানদের ভয়ে অস্থির থাকে, আমার হয়েছে তার উল্টা, আমি তাঁরাকাদের ভয়ে অস্থির থাকি। কয়েকটি ঘটনা থেকে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে। আবার কখনো কখনো তাঁরকা না হয়েও তাঁরকা হবার মত ব্যাতক্রম কিছু কাহীনি ঘটে যা মনে হলে হাসি পায়।



৮৮/৮৯ সাল। ইন্টারে পড়ি। হলে থাকি। কলেজের সামনে এক রেষ্ট্রুরেন্টে আড্ডার সময় আশোক নামে লম্বা পাতলা লিকলিকে ভদ্রলোক আমার সাথে পরিচয় হল। মানুষ হিসাবে একটু বেশি মাত্রা সামাজিক ছিলাম (সেইকালে এখন নাই)। ঐ লম্বু কেমনে কেমনে জানি আমার সাথে ঘনিষ্ট হয়ে গেল। তারপরে আমাদের হলে আসত। ধীরে ধীরে সে আরও কিছু ভক্ত যোগাড় করল এবং আমাদেরকে এফ ডি সি নিয়ে যাবার প্রস্তাব করল। ব্যাটার ক্ষেমতা আছে বলতে হবে। যাই হক গেলাম এফ ডি সি। দিন সুবিদার ছিল না। তেমন কাউকেই সুটিংয়ে দেখা মিলল না। কিন্তু দেখা পেলাম শেখ হাসিনার গৃহ শিক্ষক প্রয়াত ‘আবুল খায়েরের সাথে’। বিখ্যাত মানুষ। তাকে দেখে নিশ্চয়ই সকলেই আবেগে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে থাকে। আমি পড়লাম বিপদে কিছু না জিজ্ঞেস করলে কেমন জানি ইগনোর করা হয় আবার জিজ্ঞেস করলে আতলামি হয়। আমার রুমমেট বেলাল কিছুটা দুষ্ট প্রকৃতির ছিল। সে সরাসরি ‘নানা’ সম্বোদন করে উনাকে জিজ্ঞাসা করল – ‘শইলডা ভালা’? তিনি উত্তর করেছিলেন কিনা মনে নাই। আবুল খায়েরকে আবার আমি দেখেছিলাম ৯৫ সালে। বেশ মাঞ্জা মারা অবস্থায় স্টাইনওয়ে ষ্ট্রিটে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন। কি বলব না বলব, তাই আর কিছুই বলা হয়নি।



নিউইয়র্কে এই এক মজা এস্টোরিয়া, জ্যাকসন হাইটস’য়ে সামারে দাড়ালে দেশি তাঁরাকাদের কাউকে না কাউকে দেখা যাবেই। একবার আমার এক রুমমেইট আমাকে টনি ডায়েসকে দেখিয়ে বলছে – ‘পাভেল ভাই, ঐ যে দেখেন টনি ডায়েস। নাটক করে কবিতা আবৃতি করে’। উত্তরে আমি বললাম – এমন আগ্লি চেহারা কেন? একটু পরে টনি ডায়েস আমাদের কাছাকাছি আসতেই তাঁর বৌ আমাকে পয়েন্ট আওট করে টনিকে বলল – ‘এই লোকটা তোমাকে আগ্লি বলেছে’। পাশের মহিলা যে টনির বৌ ছিল আমি কেমনে জানব! বিবৃত হয়ে আমি স্থান ত্যাগ করলাম। এমন আরও একবার হয়েছে। এষ্টোরিয়ার ইউনাইটেড আর্টিষ্ট সিনেমা হলের বাথরুমে ঢুকেছি। পাশেই দেখি তৌকির দাড়িয়ে হিশু করছে। আমার বাঙালি চেহারা দেখে কৌতুহলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন – ‘কেমন আছেন’?

ভাল আছি – ‘আপনি কেমন আছেন’?

ভাল।

একবারে চলে এসেছেন নাকি আবার ফিরে যাবেন?

আমার প্রশ্নে তিনি খুবই আহত হলেন। উত্তরে একটু তপ্ত স্বরে বললেন – ‘আমাকে কি মনে হয় আমি এখানে থাকব’?

- শাবানা, টনি ডায়েস, মমতাজউদ্দীন আহমেদ সহ আরও অনেকেইত এসে যায় না। ইত্যাদি তে এককালে অভিনয় করত মিঠু সে’ত ৯৫ সাল থেকেই অবৈধভাবে এখানে আছে।

- আমাকে কি তাদের মত মনে হয়? আমার আর্কিটেকচার ফার্ম আছে, মাল্টি মিডিয়া নির্মান স্টুডিও আছে।

- দুঃখ প্রকাশ করে আমি বললাম – আপনাকে আহত করতে আমি প্রশ্ন করি নাই। নিতান্ত কৌতুহল থেকেই...

মনে মনে ভাবলাম কথা না বলতাম তাইলেই ভাল ছিল। বেচারা নিশ্চয় অনেক দুঃখ পেয়েছে। অন্যদিকে মনে হলে প্রবাসে থাকাটাকে সে এত নীচু করে দেখে? আবার মনে হল নীচু করে দেখারইত কথা। বেশিরভাগ আমরাত এখানে মানবেতর জীবন যাপনই করি।



এইবার আসি আমার সেলিব্রেটি হবার গল্পে। আলাউদ্দীন রেষ্ট্রুরেন্টে আড্ডা দিচ্ছি। স্থানিয় এক স্পেনিশ টিভি চ্যানেল Univision এথনিক খাবারের উপর সাক্ষাতকার নিচ্ছে। কি কারনে যেন তারা আমাদের টেবিলে এসে আমাকেই দেশি খাবারের জনপ্রিয়তা কেন, কেন আমি এখানে আসি, ইত্যাদি ইত্যাদি ... দূরে টেবিলে বসা ছিলেন ফকির আলমগীর। প্রায় দৌড়ে তিনি আমাদের টেবিলে এলেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন – আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি। এই টিভি চ্যানেল আপনার সাক্ষাতকার নিলেন কেন? আপনি কি এখানকার কোন তারকা নাকি। আমি মুখে তালা মেরে মুচকী হেসেই চলছি। এই হাসিতে তিনি আরও বিভ্রান্ত হলেন। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন আমি ফকির আলমগীর। বাংলাদেশ টিভিতে গান করি। উত্তরে বললাম – ‘নাইচ টু মিট ইউ’। গলার স্বরে বাংলিশ করে বললাম – ‘ইচ্ছা করলে আপনি আমাদের সাথে বসে কিছু খেতে পারেন’। এইবার তিনি পুরাপুরিই বিভ্রান্ত। আমাকে বললেন – ‘আপনি যে মিডিয়ায় কাজ করেন সেখানে কি আমাকে একটা সুযোগ দেয়া যায়? আমি ইংরেজিতে গাইতে পারি’? মিটমিট হেসে আমি পাশের বন্ধুকে খোচা দিলাম। খোচার উদ্দ্যেশ্য – ‘আমারে রক্ষা কর’। বন্ধু ইশারা বুঝতে পেরে উনাকে বলল – ‘উই উইল সি’।



এইবার শেষ ঘটনায় আসি। গেল সপ্তাহে আমার বাসায় বেড়াতে এল আমার পরিবারের বান্ধবী নীপা ও তার সহধর্মক, মাহাবুব। নীপা জানাল কোন একটা পারিবারিক সংগীতানুষ্টানে আমি কি নাকি গীটার নিয়ে কথা বলেছিলাম, তিনি দূর থেকে শুনেছিলেন। সেখান থেকেই তিনি নাকি আমার ফ্যান। আমার বাসায় দাওয়াতে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। মনে পড়ল, হুমায়ুন আহমেদ জামাইকা থাকাকালে উনার সামনের বাসায় একবার নিমন্ত্রনে গিয়েছিলাম। সেখানে কিছু সংগীত পাগলের সাথে কথা বলেছিলাম। নিতান্তই সংগীতের উপর আমার আগ্রহ টাইপের কিছু একটা। তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে নীপা জেনেছিলেন আমি এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় শিক্ষকতা করতাম। তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রী। যাই হোক পরিচয়ের পর্ব শেষে, আমাকে তিনি বললেন – ‘আপনি বাংলাদেশে থাকতে গান করতেন, তাই না ভাইয়া’? হায় হায় কয় কি। তিনি বলেই যেতে লাগলেন – ‘আপনি নোভা ব্যান্ডের সাথে ছিলেন। তাদের এলবামে আমি আপনার নাম দেখেছিলাম’। কি বিপদ! এক সময় অল্প বয়সে দুষ্টামি ফাইজলামি করতাম মানুষকে বিভ্রান্ত করতাম কিন্তু এখনত এসব সাজে না। তাছাড়া সামনে স্ত্রী এবং কন্যা। তাদের সামনে’ত আমি ভনীতা করতে পারি না কিংবা মিথ্যা সাজাতে পারি না। আমি প্রত্যাখান করলাম। বললাম না – আমি সেই ব্যাক্তি না’। উক্ত ব্যান্ডের পাভেল অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তি আমি সামান্য মানুষ। ‘না ভাইয়া বিনয় দেখাবেন না, আপনি মীরপুর ১০ নাম্বারে পলাশ ভাইয়ের সাথে একই মঞ্চে গান গেয়েছেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে রয়াল ব্লু কালারের একটা ফিনফিনা শার্ট পরা ছিল’। এইটা ঠিক আমার একটা রয়াল ব্লু কালারের প্রিয় শার্ট ছিল। তখনকার সময়ে সিংগাপুরি গোল্ডলিফ কম্পানির টরে কাপড়ের তৈরি শার্টটা আমি বংগ বাজারে গিয়ে হারিয়েছি। গায়ে থেকে শার্ট কেমনে হারায় সেটা না হয় অন্য কোনদিন বলা যাবে। আপততঃ আমি এই টপিকস শেষ করি। ড্রয়িং রুমে সাজানো ইয়ামহা গীটার দেখিয়ে তিনি বললেন – ‘আপনার তখন কাল একটা গীটার ছিল’। এইবার আমার স্ত্রী কনফিউজড। কৈ আমাকে’ত এইসব বল নাই’? যাই হোক এই বিপদ থেকে সেদিন উদ্ধার পাই নাই। উল্টা স্ত্রী সন্দ করল আমি নাকি তার কাছ থেকে অনেক কিছু লুকিয়েছি। তার বান্ধবী না জেনে কথা বলে না – আগর-বাগর, ইত্যাদি-বিত্যাদি। যত বুঝাই তার বান্ধবীর মাথা খারাপ, ততই সে বেশি সন্দ করে – আমারে বলে, ‘তাইলে এই গীটার তুমি কেন কিনছ’? - মর বিপদ। মানুষের শখ থাকে না! এই হল আমার সেলেব্রেটি কাহীনি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০০

অদ্ভুত_আমি বলেছেন: আমরাও তো বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম আপনার এই পোস্ট পড়ে B:-) B:-) B:-)

১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৫

পােভল চৌধূরী বলেছেন: হাহাহা

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৫২

কবিরাজমশাই বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার কাহিনী পড়ে।

ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

এক সেলিব্রেটি আমার সাথে work out করে। খুব সাধারন। দেখে মনেই হয়না উনি এক জন বড় মাপের সেলিব্রেটি ।


anyway, ভালো থাকবেন । আপনার next পোষ্টের জন্য wait করলাম।

ধন্যবাদ।

১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫৭

পােভল চৌধূরী বলেছেন: সাধারন মানুষ অসাধারন প্রমানিত হতে চায় - অসধারন মানুষ সাধারন থাকতে চায়।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.