নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা ভালবাসি

পােভল চৌধূরী

পাভেল চৌধুরী

পােভল চৌধূরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাবি কাঠির খোঁজে - উন্মোচন

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩৯



জীবনান্দদাশের কবিতার সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন সজনীকান্ত দাস। সজনীকান্ত ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের বাংলা সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব, শনিবারের চিঠি পত্রিকার সম্পাদক। শনিবারের চিঠি ছিল বাংলাভাষার অন্যতম বিখ্যাত সাহিত্য-সাময়িকী যা এর প্রথম প্রকাশ ১০ই শ্রাবণ ১৩৩১ তথা ১৯২৪ খৃস্টাব্দ।। এটি ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। যোগানন্দ দাস এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এতে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মোহিতলাল মজুমদার এবং নিরোদ সি চৌধুরী - যাঁদের ভাষা ছিল ব্যঙ্গময়; সমালোচনার ছিল জ্বালাময়ি। রবীন্দ্রনাথ, শরৎবাবু প্রমথ চৌধুরী কাউকেই তাঁরা ছাড় দেন নাই। সজনীকান্ত দাস জীবনান্দদাশের কবিতাকে বলতেন অশ্লীল ও দুর্বোধ্য। অথচ জীবনান্দের শেষ দিনগুলিতে এই সজনীকান্তই তাঁর চিকিৎসার জন্য বিশেষ চেষ্টা করেছিলেন এবং কবির মৃত্যুর পর স্বীকার করেছেন রবীন্দ্রনাথের পরে তিনিই বাংলা সাহিত্যে সরস্বতীর সেবা প্রদান করে গেছেন।



সজনীকান্তের মতে কবিতা দুর্বোধ্যের কারন কবিতার চাবিকাঠি। জীবনান্দের কবিতা বুঝতে হলে কবিতার চাবিকাঠি খুজে বের করতে হবে। তা নাহলে কবিতা ভিতরকার ঐশ্বর্য্য বের করা যাবে না। জীবনান্দদাশের তার প্রায় প্রতিটি কবিতাই কিছু শব্দের মাধ্যমে লক করেছেন। সেই শব্দগুলির মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারলেই কবিতাইয় আনন্দের ঝর্নার উৎস খুজে পাওয়া যাবে। লেখক আকবর আলী সেই রকম কিছু কবিতার চাবিকাঠির সন্ধান দিয়েছেন তার ‘চাবিকাঠির খোজে – নতুন আলোকে জীবনান্দদাশের বনলতা সেন’য়ের মাধ্যমে। নীচের কবিতাটি থেকে তিনি দুটি চাবিকাঠি বের করে দেখিয়েছেন। আগে কবিতাটি পড়া যাক।



“হায় চিল, সোনালী ডানার চিল,এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে !

তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে ।

পৃথিবীর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে ;

আবার তাহারে কেন ডেকে আনো ?

কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদন জাগাতে ভালোবাসে !

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে”!



লেখক আকবর আলীর মতে এই কবিতায় দুটি চাবি রয়েছে। প্রথম চাবিটি উদ্ধার করতে পারলেই কবিতাটির ভাব বুঝা সম্ভব। কিন্তু দ্বিতিয়টি চাবিটি পেলে কবিতার রস আস্বাদিত হবে। লেখক যুক্তি পাল্টা যুক্তি দিয়ে প্রথমে দেখিয়েছেন সোনালি ডানার চিলের কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। সোনালী ডানার ইগল রয়েছে। কবির পক্ষে এর পার্থক্য নির্নয় করা অবশ্যই সম্ভব হয়েছিল। তবে তিনি হয়ত তা ইচ্ছা করেই উপেক্ষা করেছেন – ইলুশন। এখানে সোনালি ডানার চিলের প্রসংগ টেনে আনা হয়েছে – কারন সোনালি ডানার চিলেরা ‘বহুগামি’ নয়, জোড়ায় জোড়ায় চলে। তারা যাকে ভালবাসে তাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়। এমন নীবিড় ভালবাসার সংগীটি যদি মারা যায় তাহলে যে ‘মানসিক যন্ত্রনার’ সৃষ্টি হয় তার সাথেই কবি তুলনা করতে চেয়েছেন।



দ্বিতীয় চাবি যাকে তিনি মনের করেন সহকারি চাবি যা না হলেও চলে কিন্তু হলে বেশি ভাল – সেটি হল “ধানসিড়ি নদী”। লেখক নানা তথ্য উপাত্ত থেকে বের করেছেন যে আসলে নদীটি তেমন কোন গুরুত্বপুর্ন নদী নয়। তবে নদীটি ঘিরে জীবনান্দের কিছু রোমান্টিক স্মৃতি থাকতে পারে। লেখক বলতে চেয়েছেন হয়ত কবির খুড়তুতু বোন বেবি, যাকে তিনি মনে প্রানে ভালবাসতেন, যার আবাস ছিল আসামে, যেখানে একটি নদীর নাম ‘ধানসিড়ি’, হয়ত সে বরিশালের এই নদীটিকে দেখে ধানসিড়ির রুপের সাথে তুলনা করেছিলেন। বেবি তার জীবনে এক লস্ট কেইস। তাই তিনি আজ একা এই ধান সিড়ি নদীর তীরে – স্মৃতি হাতড়ে চলেছেন আর নিজেই নিজেকে সান্তনা দিচ্ছেন কি হবে আর তাকে স্মরন করে।



এইত গেল প্রথম অংশ থেকে একটি সামান্য উদাহরন। এমনি বেশ কিছু যুক্তিসাক্ষ্য আবার সেই যুক্তি নিজেই কেটে পাল্টা যুক্তি দিয়ে একের পর এক সাজিয়েছেন লেখক – যেন এক গোয়েন্দা কাহীনি পড়ছি। ডঃ আকবর আলী যেন আর অর্থনীতিবিদ আকবর আলী নেই যেন তিনি এক লেখন নন – তিনি যেন আমাদের প্রিয় ফেলুদা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.