একটা সত্য ঘটনা (ডাব চুরি)

২৫ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৮:৫৫

ছোটবেলায় আমরা সবাই-ই কিছু না কিছু চুরি করেছি। এইটা কেউ বলতে পারবে না যে আমরা কেউ-ই দুস্টুমি করি নাই। আমিও করেছি তবে হয়তো আপনাদের থেকে একটু বেশি। তবে আমার এই গল্প পড়ে কেউ ভাববেন না যে আমি প্রোফেশনাল চোর ছিলাম। আমরা চুরি করতাম শখে। শখের বশে মাঝে মাঝে চুরি করতাম তবে বেশি চুরি করতাম যেদিন পিকনিক থাকতো। আমরা পাড়ার সবাই মিলে মাঝে মাঝে পিকনিক করতার আর পিকনিক-এ মেনু বাড়ানো জন্য কিছু না কিছু চুরি করতে হতো। যা হোক এখন যে গল্পটা বলব তা কোন পিকনিক এর না।



হঠাৎ একদিন ইচ্ছা হলো ডাব খাবো। আমাদের বাসার পাশে একটা বড় মাঠ ছিলো আর তার পাশে একটা তিনতলা বাসা ছিলো। এক হিন্দু কাকার বাসা। ওদের সবার সাথে আমাদের সবার খুব ভাল সম্পর্ক্য ছিলো। পুজোতে আমাদের দাওয়াত দিতো, আমাদের কে খেলার জন্য চাঁদা দিতো। আরো অনেক কিছু করতো কাকারা। সেদিন আমি গৌতম, সুমন মিলে বুদ্ধি করলাম যে আজ কাকার বাসার ডাব চুরি করবো। কাকার বাসার ডাব গাছটা বাসার ছাঁদ পর্যন্ত ছিলো। তাই আমাদের গাছে উঠার প্রয়োজন পড়ে নাই। কাকার বাসার পাশের বাসাটা ছিলো সুমনের। ওদের বাসা ছিলো একতলা। আমরা সবাই সুমনের বাসার ছাঁদ-এ উঠে কার্নিশ বেয়ে তিনতলায় উঠলাম। ডাবএর কাঁন্দ কাটা হলো কিন্তু আমরা সেই কান্দ নামানোর জন্য দড়ি জাতীয় কিছু নিয়েছিলাম না। এখন কাটার পর পড়লাম বিপদে। তিনতলা থেকে ডাব ফেলাও যাবে না। শব্দ হলে সবাই টের পেয়ে যাবে। তখন সন্ধ্যা পার হয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। অন্ধকারে তেমন দেখাও যাচ্ছে না। ল্যাম্পপোষ্ট-এর আলোতে হালকা দেখা যাচ্ছিলো। সেদিন আমি আর গৌতম হাফ প্যান্ট পড়ে ছিলোম আর সুমন লুঙ্গি পড়ে ছিলো। এখন ডাব নামানোর জন্য কোন উপায় না দেখে সুমন কে বললাম যে তোর লুঙ্গি খোল। লুঙ্গিতে ডাবগুলো বেঁধে নামাতে হবে। তখন সুমন বলে যে, লুঙ্গি খুললে তো আমি ন্যাংটা হয়ে যাবো। তখন গৌতম বলে যে, রাতের বেলা কেউ দেখবে না। ডাবগুলো নিচে নামাই নিই তারপর তুই লুঙ্গি পরে নিস। তখন সুমন তার লুঙ্গিটা দেই আর আমরা ডাব গুলো লুঙ্গির সাথে বেঁধে তিনতলা থেকে সুমনের ছাঁদে নামাই।



সুমনের ছাঁদে নামানোর পর সুমনের মা টের পেয়ে যায় যে ওদের ছাঁদে চোর আছে। এই বলে সুমনের মা টচঁ নিয়ে নিচে থেকে চিল্লাতে শুরু করে চোর চোর বলে। সুমনের মাকে আমরা কাকী বলতাম। কাকীর আওয়াজ শুনে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। আশে পাশের মানুষ যে জড়ো না হতে পারে তার আগেই আমরা পালিয়ে যাব এই চিন্তা করে ডাবগুলো ছাঁদ থেকে নিচে ফেলে দিলাম। তারপর গৌতম সেই ছাঁদ থেকে এক লাফ দিলো। সুমনও তার সাথে সাথে লাফ দিলো। আমি লাথ দিতে যাবো এই সময় কাকী আমার মুখে টচঁ মারলো। আমি দুরে সরে গেলাম।কাকী তখনও চিল্লাচ্ছে। আমি কিছু না বুঝে দৌড় দিয়ে সেই ছাঁদ থেকে এক লাফ দিলাম। পাশের জঙ্গলে ধপাশ করে পড়লাম। তখন কিছু একটা বুঝে উঠার আগেই গৌতম আর সুমন ডাকলো। ডাবগুলো পাশের বাসার ছাঁদে রাখলাম। তার পর সবাই বাসায় চলে গেলাম।



পরদিন বুঝলাম যে, ছাঁদ থেকে লাফ মারার জন্য আমার পা মচকাই গিয়েছে। অসম্ভব রকম ব্যাথা করছিলো আর আমি হাঁটতে পারছিলাম না। এদিকে সুমনের মা সবাইকে বলে দিয়েছে যে কাল রাতে কারা ডাব চুরি করেছিলো। গৌতম কে তা তার বাবা আচ্ছা মত মেরেছে। আর সুমন কে মারার পর বাসায় বন্ধ করে রেখেছে। আর আমার অবস্থা তো আরো খারাপ ছিলো তবে পা মচকানোর জন্য মার কিছুটা কম খেয়েছি। ৪/৫দিন পর যখন পা ভালো হলো তখন আমরা তিনজন মিলে পাশের বাসার ছাঁদে গেলাম ডাবগুলো খাবার জন্য কিন্তু আফসোস ডাবগুলো একটাও খাবার মত না। আসলে ডাবগুলো পুষ্ট হয়েছিলো না। কোন উপায় না পেয়ে ডাবগুলো পাশের পুকুরে ফেলে দিলাম।



এই ছিলো আমার ডাব চুরির গল্প। আজো মনে পড়লে মনে মনে হাসি। কতটা দুষ্টুমি করেছি সেই সময়। আজো ইচ্ছা করে কিন্তু সময় নাই। তবে একটা কথা আমরা চুরি করেছি এবং ধরাও খেয়েছি কিন্তু তাই বলে কেউ-ই আমাদের অবহেলা করে নাই। যাহোক আজ আমরা আর সেই জায়গায় নাই। আজ সেই তিনজন আছি তিন জায়গায়, ওদের সাথে দেখাও কম হয় অথবা দেখা হলেও তেমন কথা হয় না। গৌতম আছে তার বাবার ব্যবসা নিয়ে, ব্যবসা খুব ভাল যাচ্ছে না। সুমন এখন কিছু করে না। আর আমিই এখন ওদের থেকে ভাল আছি। তারপরও ইচ্ছা করে সেই কাকার বাসায় যেতে, কাকার কাছে ক্ষমা চাইতে কিন্তু কেন যানি ইচ্ছা করে না। এমন হতে পারে যে, আমি যদি কাকার কাছে গিয়ে সত্য স্বীকার করে নিই তাহলে হয়তো এই মজাটা পেতাম না। যাহোক কোনদিন হয়তো কাকার কাছে গিয়ে অতীতের ভূল স্বীকার করবো। আপনারা কি বলেন?

৪ টি +৩/-০