নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত,
বুদ্ধ ব্যক্তির সমষ্টির নয় । তাই বৌদ্ধ , নাকি বুদ্ধের ধর্ম - প্রশ্নের মুখোমুখি ? দৃশ্যত, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার বৌদ্ধ দেশ গুলো নিয়ে এই প্রশ্ন টা এতোই পপুলার হয়ে উঠেছে যে, এটাকে লুকোচাপা করে রাখার কোন সুযোগ নেই। বৈষয়িক আর ক্ষমতার সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কোন পুরো জনগষ্টি কি ভাবে শান্তিবাদি হতে পারে তা কষ্টকল্পিত । ভারতীয় , দূর প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য র অনেক গবেষক, লেখকের বিভিন্ন আঙ্গিকে লেখা বুদ্ধের জীবনী মনোযোগ দিয়ে পড়েছি । ভারতীয় আবেগ তাড়িত লেখকের জীবনী নয় । খোদ প্রাচীন সংস্কৃত, পালি, তিব্বতি এবং চীনা টেক্সট নির্ভর জীবনী পড়েছি । কোথাও এমন কোন উপাদান পাইনি, যেটা নিয়ে বুদ্ধের দিকে তর্জনী তোলা যায় , প্রশ্ন তোলা যায় । এমনকি কোথাও দেখিনি তিনি কখনো ক্ষন সময়ের জন্যে রাগান্বিত হয়েছেন বা বিরাগ বশত কাউকে কিছু বলেছেন, কোন বিরক্তি, কনা মাত্র অসহনশীলতা - নেই, দেখিনি ।কারো কাছে যদি এমন নজির থাকে, তাহলে সত্য জানার কৌতূহল নিবৃত্ত হবে । আর যদি এতে বুদ্ধের সায় না থাকে তাহলে বলা যায়, বুদ্ধ আর বৌদ্ধ দুটো একেবারে ভিন্ন জিনিসে পরিনত হয়ে গেছে । বলা যায় বৌদ্ধদের হাতে বুদ্ধ ক্ষত বিক্ষত । ইতিহাসে দেখি যে, বুদ্ধের জীবনাবসানের পাঁচশ বছর বৌদ্ধধর্ম নামে কোন কিছু ছিল না । তার অনুসারীরা সেটাকে সদ্ধর্ম , সত্য ধর্ম, সত্যানুসন্ধানী ইত্যাদি অভিধা প্রয়োগ করে তা চিহ্নিত করতো । সিদ্ধার্থ গৌতম, বুদ্ধ বা জ্ঞানী হবার পর চান নি তার ধর্ম প্রচারিত হোক। তাঁর নিজের প্রাপ্তি নিয়ে তিনি স্বভাব সুলভ নিঃস্পৃহ ছিলেন । কারন তিনি ধরে নিয়েছিলেন, তার ধর্ম অনুশীলন সাধারনের জন্য সম্ভব নয়, মানুষের জন্যে তা কঠিন । সেটাই কালে কালে সত্যে পরিনত হয়েছে । সেই ধর্ম ,রিলিজিওন নয় । বুদ্ধ নিজেই তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন । তাঁর মুখের ভাষায় তা হল - ইয়াত্তা ভুতা নানা দাসসানা- (Yathā-bhūta-ñāna-dassana) এর মানে, বাস্তবে যা আছে অবিকল তাকে সেভাবে দেখা। কোন অলংকার প্রয়োগে তার আনকোরা রিয়ালিটি কে না বদলিয়ে তাকে সঠিক দেখা । জলের ধর্ম তা নিম্ন গামী হবে, বৃক্ষ ফলবান হলে , তার ডালটা নুইয়ে পড়বে - সেটাই ধর্ম, ট্র নেচার অফ রিয়ালিটি । মানুষের তথা প্রানী জগতের ধর্ম দয়া,মা যেমন সন্তান কে আগলে রাখে - লাভিং কাইন্ড নেস,আত্ম রক্ষা । সেটাই বিরাজমান, সেটাই তার ধর্ম । অতএব তার জন্যে কোন গ্রন্থের প্রয়জন তিনি বোধ করেন নি। প্রমান তাঁর ব্যাখ্যার মাঝেই রয়েছে - তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, নদী পেরুতে হলে ভেলা বা নৌকার প্রয়োজন। পেরুনোর পর তা নিছক বোঝা, অতএব পরিত্যাজ্য । এই বুদ্ধের অভিপ্রায় । কোন গ্রন্থ মানেই তা স্থায়ী কিছু, অপরিবরতনীয় কিছু । তিনি তা চান নি । তিনি চেয়েছিলেন চলার পথে যদি বুদ্ধ কে দেখো - হত্যা কর । কথাটা মেটাফরিক । মানে , কোন প্রিঅকুপেশন নয় । তাঁর পরবর্তী অনুসারীরা যেই গ্রন্থ বানিয়েছেন যার স্বত্ব বুদ্ধের নয় । অথচ সেই ধর্মের অনুসারীদের দয়া কোথায় ? কোথায় অহিংসা, কোথায় অঘৃণা ?একজন বৌদ্ধও ক্রোধে উম্মত্ত হয়। চীন ,জাপান, কোরিয়া । জাতীয়তা বাদ এঁদের কাছে ধর্মের চেয়েও উপরে। এক চীনা সম্রাট নাকি বুদ্ধ ধর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে যুদ্ধে প্ররোচিত করেছিলেন । তো, এটার জন্যে কি বুদ্ধ দায়ী ? দেশ পরিচালনায় বুদ্ধের ধর্ম যে রিলিভেন্ট নয়, সেটা বৌদ্ধ প্রধান দেশগুলিতে প্রমাণিত ।
অশোক এর ছিল ধর্মের প্রতি টোটালিটি অর্থাৎ সর্ব সাকুল্যতা । একজন পরাক্রম শালী সম্রাট দীক্ষাগুরুর প্রতি হয়ে উঠেন একনিষ্ট । সর্বোত্তম দাতা হতে গিয়ে তিনি তাঁর পুত্র রাজকুমার মাহেন্দ্র ও রাজকন্যা সংঘ মিত্রা কে দান করেছেন ধর্মের কাছে । ফুসলিয়েছে ধর্ম গুরু । তাতে মূলোৎপাটিত হল সাম্রাজ্যের ভবিষ্যত । এর বিপরীত যদি হতো তাহলে আজ গোটা ভারত, পাকিস্থান, আফগানিস্থান এর চেহারা অন্য রকম হতো, তেমনি কনিস্ক র বেলায় ও সত্য । তক্ষশীলা, বিক্রম শীলা কালের গর্ভে হারিয়ে যেত না । কিন্তু সেসব আজ বিলীন , অদৃশ্য । তাদের অনুশীলিত ধর্মের নাম গন্ধও নেই কোথাও । সে সব বৌদ্ধরা গেলো কোথায় । গবেষক রা কেউ কেউ বলেছেন - ভারতবর্ষ যে বাইরের শক্তির কাছে হেরেছে, তার জন্যে বুদ্ধ বা মহাবীর এর সমর্পিত অভিপ্রায় দায়ী । কথাটা অপ্রিয় কিন্তু সুদুর প্রসারী । বঙ্গ দেশে এখনও ভগ্ন স্তুপে দাঁড়িয়ে আছে শালবন, সোমপুর বিহার যেখানে হাজার হাজার পন্ডিত সাধক, শিষ্যর বিচরন ছিল। মুন্সিগঞ্জের নটেশ্বরে র সেই হাজার বছর আগের সেই বৌদ্ধ জনপদ তাঁর সাক্ষী । কিন্তু সেই জনপদ আর এগোয় নি । অতীত সময়ের ফ্রেমেই আটকে আছে । এমন বিশাল পাল সাম্রাজ্য। দক্ষিণ ভারতের সেন রা এসে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিল । নন্দিত অথচ পরাজিত । তবে কি দায়ী তাঁদের অনুশীলিত বুদ্ধের ধর্ম ? তা না হলে এমন বিলুপ্তি কী করে সম্ভব ? পৃথিবীর সর্ব প্রথম আবাসিক বিশ্ব বিদ্যালয় নালন্দা - যেখানে দশ হাজার ছাত্র আর দেড় হাজার শিক্ষক ছিল, তিনটি সুবিশাল গ্রন্থাগার আর চিকিৎসা শাস্ত্র সহ অনেক ফ্যাকাল্টি ছিল । এমন এক বিশাল স্থাপনা অথচ ছিল না কোন রক্ষী । কেউ কি ভাবেও নাই যে সেটা কেউ আক্রমন করে ধ্বংস করে দেবে ? প্রতিরোধ করার মত কেউ ছিলনা, যারা পেরেছে বাঁচতে তাঁরা সবাই নিজের জীবন আর বই পত্র লেখা গবেষনা সন্দর্ভ সাথে নিয়ে পালিয়ে গেছে নেপালে তিব্বতে । ফারসি ইতিহাসবিদ মিনহাজ-ই-সিরাজ তাঁর তাবাকাত-ই-নাসিরি বা ফারসী ঐতিহাসিক ফিরিস্থা তাঁর তারিক ই ফিরিস্থা গ্রন্থে নালন্দা ধ্বংসের বিবরনী লিপিবদ্ধ করে গেছেন। বুদ্ধের ধর্মের এই পরিনতি । বুদ্ধ তো মানুষ ছিলেন, কোন ইশ্বর প্রেরিত দেবদূত নন । তিনিও হয়তো ভাবেন নি যে সামনের পৃথিবী হবে প্রবল প্রতিকুলতার পৃথিবী, যেখানে তিনিও প্রশ্ন বিদ্ধ হবেন ।
©somewhere in net ltd.