![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিপিড়িত শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ের লড়ায়ে আমিও একজন।
পেশাগত ভাবে আমি মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটা সহায়ক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। আর এই কারনে বন্ধুমহল, পরিচিত মানুষজনের কাছ হতে প্রায়ই যে প্রশ্নের সম্মুখিন হই তাহ'ল: সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসি হয়ে কিভাবে আমি সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল মার্কিনিদের সেবা করছি? খুব গুছিয়ে লিখতে না পারলেও এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং আমার নিজস্ব কিছু বোঝাপড়াটা ঠিক কিনা সেটা পরিষ্কার করার জন্যই এই লেখা।
বর্তমানে ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইল সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা বিশ্ব সমাজ ও মানবিকতার কাছে সবচেয়ে আলচিত ঘটনা। সারা পৃথিবীর মানুষ ইসরাইলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিভিন্ন ভাবেই। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হল একজন ব্যক্তির প্রতিবাদের সাথে তার রাষ্ট্রের ভাষার মিল থাকছে না। কিংবা আদর্শগত প্রার্থক্যের কারনে একই রাষ্ট্র বা জাতির মানুষের মধ্যে এই ঘটনাকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। যেমন ভারতের জনগণ ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর দাবী করলেও রাষ্ট্র হিসাবে ভারত তা করতে রাজি নয় জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে। পাকিস্তান সহ আরব দেশের সাধারন মানুষ পারলে ইসরাইলকে আজকেই ধ্বংস করে ফেলে। কিন্তু ঐসব দেশ গুলোর শাসক বা রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করতে রাজি না। রাষ্ট্র ক্ষমতার স্বার্থগত কারনে। তারমানে ঐসব রাষ্ট্রগুলোর জনগনের সাথে শাসক বা রাষ্ট্রের দৃশ্যতঃ কোন দ্বন্দ না থাকলেও আদর্শগত বা চরিত্রগত দ্বন্দ প্রার্থক্য প্রকাশ পাচ্ছে ঘটনা পদক্ষেপের ভিতর দিয়ে।
আমাদের দেশে একদম উল্টা লাগছে আমার কাছে। যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সহ সকল ধনবাদী রাষ্ট্রকে শত্রু বলছেন, ধর্মভিত্তিক যে কোন সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের বিরুদ্ধেই তাদের অবস্থান। বিপরীতে জামাত ইসলাম হেফাজত ইসলাম নামিরা ধর্মকে পুঁজি করেই রাজনীতি করে। তারমানে সমাজতন্ত্রী চিন্তার দল আর ধর্মজীবি রাজনৈতিক দলের আদর্শিক অবস্থান সম্পুর্ণ বিপরিত। কাজেই এই দুই ভিন্ন আদর্শের মানুষের স্থানীয়- জাতীয় কিংবা আর্ন্তজাতিক যেকোন ঘটনার মতামত-পতিক্রিয়া, প্রতিবাদ হওয়ার কথা ভিন্ন মাত্রায়। কিন্তু বিভিন্ন ব্লগ কিংবা ফেবু ওয়ালে একজন সমাজতন্ত্রী মানুষের পোষ্ট আর একজন জামাত-হেফাজতি ভাবনার মানুষের পোষ্ট একই কথা বলছে।আমি ইসরাইলি হামলার নিন্দা প্রতিবাদ করার বপক্ষে বলছি না। আমি ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে না-- তা কিন্তু কখনই না। আমি ফিলিস্তিনের পক্ষে। আমি বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে। আমার প্রশ্নটা এখানেই। ফিলিস্তিন ঘটনা নিয়ে যত বিলাপ হুনকার তার ছিটে ফোটাও কেন দেখা যাচ্ছেনা অন্য দেশের মানুষের কষ্টের বেলায়? ইরাকে একদল মানুষ চোখ বেধে উপড় করে শুয়ায়ে দিয়ে একটানা গুলি করে মেরে ফেল্ল শতাধিক মানুষকে। সেখানে বাড়ি বাড়ি হামলা দিয়ে মেয়েদের ধরে এনে ধর্ষন করে ঘোষনা দেয়া হচ্ছে জিহাদি সৈনিকের বিবি হিসাবে। কেন এসব করা হচ্ছে? কারা চোখ বেধে মানুষ হত্যা করছে? ধর্ষন কারা করছে? এসব খুন ধর্ষন করছে মসুলমানরাই। কাদের খুন-ধর্ষন করছে? মসুলমানদের। আফগানিস্তানে তালেবান নামের একদল অমানুষ প্রতিদিন মানুষ হত্যা করছে। কোথায়? কারা মরছে? দোকান-বাজার-মসজিদে। মরছে নারী শিশু বেসামরিক মানুষ। কোন কারন ছাড়ায় নিজ দেশের নিজ ধর্মের মানুষকে হত্যা করছে। তার প্রতিবাদতো দেখিনা? কোন মুসলীম ভাই এর কোন ব্লগ বা ফেবু ওয়ালে তো একদিও দেখলাম না একটা পোষ্ট। ইসরাইল ফিলিস্তিন আক্রমন করছে তাদের তো তবু একটা যুক্তি আছে। (সে যুক্তি কখনই গ্রহনযোগ্য নয়) একটা ভিন্ন জাতি ভিন্ন ধর্মের ভিন্ন রাষ্ট্র-জাতি গত স্বার্থে আরেক ধর্মের আরেক জাতির দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। কিন্তু ইরাক সিরিয়া আফগানিস্তানে তো মসুলমানরাই মসুলমানদের হত্যা করছে। ধর্মকে পুঁজি করে যারা ব্যাবসা করে যাদের মানব আদর্শ বলতে কিছু নাই তারা ধ্র্ম গেল ধর্ম গেল করবে। কিন্তু বিশ্ব মানবতায় বিশ্বাসী সমাজতন্ত্রীরাও একি রকম করবে কন? তারা যেমন ফিলিস্তিনের জন্য রুখে দাড়াবেন ঠিক একই ভাবে ইরাক সিরিয়া সহ বিশ্বের সকল অন্যায় হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। তা না হলে হেফাজতি আর সমাজতান্ত্রিক চিন্তার মানুষদের মধ্যে প্রা্র্থক্য থাকল কোথায়।
এবার আমার কৈফিয়তের পালা। আমি মার্কিন সামরিক ঘাটিতে কাজ করি। আর সেই কারনে যদি আমি দেশপ্রেমহীন মার্কিন দালাল হয়ে যাই তাহলে তো বলতে হয় বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত মানুষই তাই। আজ যারা এনজিও তে কাজ করছেন তাদের কথা বাদ দিলাম। আমাদের সবচেয়ে শ্রদ্ধার সম্মানের জায়গায় যারা আছেন তারা (শ্রেণীগত ভাবে বিপরীত) হলেন শিল্প উদ্যোগক্তা এবং সেই শিল্পের শ্রমিক শ্রেণী। আমাদের দেশের শিল্প ক্ষেত্রের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠীত জায়গা হল বস্ত্র খাত। এই সমৃদ্ধ শিল্পখাতে পঁজি খাটে দুইভাগে। এক বিদেশী উদ্যোগক্তাদের পুঁজি। আর দেশীয় উদ্যোগক্তাদের পুঁজি। বিদেশ পুঁজির দ্বারা উৎপাদিত পণ্য এবং মুনাফার সবটাই যায় বিদেশে। দেশীয় পুঁজির দ্বারা উৎপাদিত পণ্যেরও বেশির ভাগ যায় বিদেশে। তারমানে দেশীয় পুঁজি হতে উৎপাদিত বস্ত্র হতেও বেশীরভাগ মুনাফা অর্জন করছে অন্য দেশ। আর সেইসব অন্য দেশের অন্যতম হল আমেরিকা। এইসব বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শ্রমিক ভাই বোনেরা কাজ করছে। তাদের শ্রমের বিনিময়ে মুনাফা অর্জন করছে মার্কিন অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক ইহুদিরা। তাহলে কি আমাদের দেশের শ্রমিক ভাই বোনদের মার্কিন ইহুদির দালাল সেবক বলতে হবে? আমার ক্ষেত্রেও তো ব্যাপারটা তাই। আমি মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাথে চুক্তির মাধ্যমে কিছু কাজ করছি। এই কাজের জন্য আমি দেশ হতে কোন অর্থ এনে এখানে বিনিয়োগ করিনি। উপরন্ত অর্জিত মুনাফার সবটুকুই আসছে দেশে। দেশীয় ছোট বড় সব উদ্যোগক্তারা ব্যাংক হতে টাকা নেন, মুনাফা করেন। আবার শ্রমিকদের নানান ভাবে ফাকি দেন, ব্যাংকের টাকা মেরে দেন। আমি অন্তত তাদের হতে সৎ। হ্যাঁ-- আমাদের একটা জালিয়াতি আছে। কাছ নেয়ার সময় আমেরিকানদের বলছি -- এই কাজ করার জন্য এতজন লোকবল নিয়োগ করবো এবং তাদের এত বেতন দিব। কিন্তু কাজ পাওয়ার পর কিছু কম লোক নিয়োগ দেয়া এবং উল্লেখিত বেতনের কম বেতন দেয়া হয়। তবে তাদেরকে নিয়োগের সময় যে বেতন বলা হয় শতভাগ তাই দেয়া হয়। আমি কোন ক্রমেই মার্কিনিদের দালালি করছি না। তাদের সাথে ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করে দেশে আনছি বৈদেশিক মুদ্রা। আমি যা বলতে চাই-- আজকে যারা আমাকে দালাল বলছেন তারা কি সৌদি আরবে কর্মরত ভাইদের দালাল বলবেন? কারন সৌদি আরব যতনা মুসলীম রাষ্ট্র তার চেয়ে বেশী ধণবাদী রাষ্ট্রের পক্ষের রাষ্ট্র। আজ ফিলিস্তিনে ইজরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে না থেকে নিরব হয়ে আছে সৌদি আরব। এই নিরবতার মাধ্যমে সমর্থন করছে ইজরাইলকে। আজকে যারা মার্কিন-ইহুদি পণ্য বর্জনের কথা বলে সস্তা দেশপ্রেম দেখাচ্ছেন সেই সব ভইদের বলি দেননা একটা আহবান--- সৌদি আরবকে বয়কট করার। মুসলিম হিসাবে বিস্বাস আছেই আল্লাহ সর্ব শক্তিমান। আল্লাহ সর্ব বিরাজমান। পৃথিবীর যেকোন যায়গা হতেই তাঁর এবাদত করা যায়। তাহলে বলুননা একবার সৌদি আরবের ভিসা বর্জন করার কথা।
২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬
মকসুদ মনি বলেছেন: ভাল লাগায় আমি খুব খুসি। ভাল লিখতে তো পারিনা, কিন্তু লিখতে ইচ্ছা করে। চেষ্টা করবো আরো লিখতে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫
অদীত বলেছেন: ভালো লাগল পড়ে। অভিজ্ঞতার লেখা চাই।