![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘটনাটি আজও ভুলতে পারিনি। মাঝে মাঝেই মনে পরে , তাই ভাবলাম আজ কে লিখেই ফেলি । জানি কখনই ভুলবো না , ভুলতে পারবও না। তবুও সেয়ার করে ভুলে থাকার মিথ্যা চেষ্টা ।
কোন এক দিন আমি স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিলাম মামনির হাত ধরে। পেটে প্রচণ্ড খিদে । বাসায় এসেই খাবারের টেবিলের দিকে উকি মারতে মারতে আমার ঘরে ব্যাগ রেখেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম তারাতারি কারন খুব খিদে পেয়েছে । আর একটু দেরি করলেই আমি মনে হয় শুঁটকী লেগে যাব, ভাবটা এমন। মামনি কে খুব তাড়া দিচ্ছিলাম আর বির বির করছিলাম কত কষ্ট করে আসলাম , মামনি আমার কষ্টটা একটুও বুজে না । খাবারের টেবিল এত পরিপাটি করবার কি দরকার আগে আমার পেটের কষ্টটা তো দূর করা হোক । আমার একটা খারাব অভ্যাস ছিল সেটা এখনও আছে ; খিদে পেলে সহ্য করতে পারি না। খাবার খেতে খেতে শুনতে পেলাম দরজায় কেউ জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে । মামনি দরজা খোলা মাত্রই কেউ ধিরে ধিরে অনেকটা অস্পষ্ট ভাবে কিছু একটা বলতে শুরু করল । মামনি কিছুই বুজলো না তার কথাবার্তা । আমি দরজার সামনে এসে দেখি "ওরে এতো ছোট একটা বাচ্চা" তখন আমি নবম শ্রেণী পড়ি আর বাচ্চাটার বয়স হতে পারে আট কি নয় বছর । মামনি আমাকে বলল “ তুমি খেতে যাও আমি দেখছি ”। এক দের মিনিট পরেই দেখি মামনি ওই পিচ্ছিটাকে নিয়ে খাবারের টেবিলে পাশের একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল । ওকে দেখতে খুব নোংরা লাগছিল , বাজে ঘ্রান আসছিল ওর সামনে থেকে । কিন্তু চেহারাটা খুব মিষ্টি । এখনও আমার চোখে ভাসে ওই মিষ্টি মুখ খানি । আমার বিপরীতে বসে কয়েকবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল । আমি কিছু না বলে খাবার খেয়ে চলে আসি আমার ঘরে । এরপর মামনি ওকে কি বলল কি করল আমি জানি না। রাতে খাবারের টেবিলে বসে বাবার সামনেই মামনি কে দুপুরের ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলাম । আমি চাইছিলাম বাবাও জানুক , কারন দুপুরের পুরো ব্যাপারটি আমার পছন্দ হয়নি । মামনি সব কথা আমাদের কে বলার পর বাবা বলল ওকে রেখে দিলে না কেন ? এখানেই থাকতে পারত। মামনি মানা করল , কিছু সমস্যা আছে তাই পিচ্ছিটাকে রাখা যাবে না। এভাবে কয়েক দিন চলল। মেয়েটা প্রায় দিনই আমাদের বাসায় চলে আসতো খাবারের সময়ে। একদিন মামনি ওকে নতুন একটা সাবান দিয়ে বলল “যা এই বাথরুমে সাবান শেম্পু দিয়ে ভাল ভাবে পরিষ্কার হয়ে আয়”। সেই দিন আমি প্রথম খুব স্পষ্ট ভাবে ওই মেয়েটার কথা শুনেছিলাম। আমি আমার ঘরে শুয়ে ছিলাম , মেয়েটি এসেই বলল “ আমি আইসি , দেহেন নতুন জামা ফরসি , খালা আমারে ছিরুনি দিসে চুল আছরাইতাম বইলা । আয়না লাগব চুল আছড়াইতাম ।” আমি অবাক কি মিষ্টি চেহারা , কি পবিত্র মুখ খানি , পরীর মতো লাগছে ওকে। সে আমাদের বাসায় এখন আর শুধু দুপুরে না রাতের খাবার টাও খেতে আসে, কিন্তু রাত সাত টার মাঝেই ওর রাতের খাবার খেয়ে চলে যায় । ওর জন্য আমার মনে ঘৃণার যে পর্দা টি ছিল সেটা নিজের অজান্তেই নষ্ট হয়েছে সেই কবে।
এক দিন ওকে বললাম ওর সাথে গল্প করব। সে দিন টি ছিল কোন একটা ছুটির দিন । ওর জীবনের খুঁটিনাটি জানতে চাইলাম । কি করে ? কোথায় থাকে ? কে কে আছে ? ওকে জানার পর বুজলাম ও গরিব না । গরিবের ও কিছু থাকে ;ওর সেটাও নেই । তবুও ওর মুখে কি সুন্দর হাঁসি । মনের মাঝে আছে মানুষের জন্য পবিত্র ভালবাসা । মেয়েটি কাগজ কুঁড়ায় । ওর বড় বোন আর দুলাভাই আছে। ওখানেই মেয়েটি থাকে। বোনের দুইটা বাচ্চা আছে। ওদের সাথে খেলা করে অবসর সময়ে। দুলাভাই রিক্সা চালক বোন ছাই বিক্রি করে । এই হল ওর সংসার। “বোন আর দুলাভাই খুব মারে এই যে দেহেন না সরিরে দাগ হালাইসে । আমি কাগজ টুকাইয়া যা টাকা পাই টা পুরাডাই হেরা লইয়া জায়গা, কয় এডা আমার থাহন খরচ। এক বেলা খাওন হেরা দেয় আর দুই বেলার আমার ভাগে, ভিক্ষা কইরা খাই । কোন দিন পাই কোন দিন পাই না। ওহন ভাল আসি। আপনেগো এহেন্তোন খাওন পাই। কিন্তু রাইতে দেরি হইলে আমারে মারে। আমিও চালাক কম না এহানে তাত্তারি আইয়া খাইয়া যাই আর রাইতে বুবুয়ে জেডা দেয় অইডা পলাইয়া রাইখা দেই সকালে খাই। ” আমি বললাম – তুমি থেকে জাও আমাদের বাসায় । পরাশুনা করবে , খেলবে , নতুন কিছু কাজ শিখবে । মেয়েটি থাকতে চায় না। কারন ওর বোনের মেয়েদের কে খুব পছন্দ করে। ওদের সাথে থাকতে ভালোবাসে।
আমারাও এক জন পরিচিত ছাইওয়ালির কাছ থেকে মাঝে মাঝে ছাই নেই । উনি আবার মানুষের বারিতে ছুটা বুয়ার মতো কাজ ও করে । ভেবেছিলাম উনি কি না ! মেয়েটি মানা করল কারন ওর বোন বুয়ার কাজ করে না। তিন থেকে চার মাসের মতো মেয়েটির এমন করেই আমাদের বাসায় যাওয়া আশা। মাজে মাজে মামনি কে বলতো ;মামনি যেন ওকে আর টাকা না দেয় কারন ওর টাকা গুলো নিয়ে যায় ওর দুলাভাই। মামনি বলল ঠিক আসে এগুলো আমার কাছেই জমা থাক। তোর যখন দরকার হবে আমকে বলিস কিন্তু।
আরো দু মাস পার হল। এরপর থেকেই ও খুব কম আশা যাওয়া করে। সপ্তাহে তিন দিন কি চার দিন , এমনটাই মনে হয় । এক দিন বাবা ওকে রাস্তা থেকে ডেকে বাসায় নিয়ে এসে খুব বকা দিলো। আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম ওকে বকা দিচ্ছে কেন ! বাবা যে ওর ভালই জন্যই বকা দিচ্ছিলো এটা বুজিনি। মেয়েটির শরীর খুব খারাব শুকিয়ে কাঠ , কিন্তু পেট ফুলে গেসে। এই টকুন মেয়ের এতো বড় পেট! কি হয়েছে ওর ! জানতে চাইলে, ও বলে “ কিছু না জ্বরে এমন হইসে ”
বাবা ওকে ১,০০০ টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখাইতে বলে , ওর বোন যেন ওকে নিয়ে যায় । বাবা জানতো না ওর বোন টা খারাব , মেয়েটিও বাবা কে কিছু বলেনি টাকা গুলো নিয়ে ভাত না খেয়ে ভাত নিয়ে চলে গেলো। তিন সপ্তাহ পর মামনি ওকে খুজে কথা থেকে জানি নিয়ে আসে বাসায়। তখন ওর অবস্থা খুব খারাব। মামনি ডাক্তারের কাসে নিয়ে যায় । পর পর কয়েক দিন ওকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করায় ধরা পরে লিভারে সমস্যা। অনেক বেশি খারাব অবস্থা । বেড রেস্ট নিতে হবে। খুব সাবধানে চলতে হবে। আমরা খুব চিন্তায় পরলাম ওকে নিয়ে। কি করা যায় !!
মেয়েটিকে গ্রামে ওর মায়ের কাছে পাঠাতে চাইলাম । সে যাবে না। কারন ওর স্টেপ মাদার । ও বুবুর কাসেই থাকবে। মেয়েটি মামনির কাসে ওর জমানো টাকা গুলো চাইল মামনি দিয়ে দিলো । হাতে নিবে না “ খালা আমার জামায় লুকাইয়া সিলাইয়া দেন , বুবু দেখ নিয়া যাইব ।” মামনি তাই করে । মেয়ে টি বলে গেলো “আমি আবার আসুম , ভালা হইয়া লই। আপনাগরে খুব মনে পরব। আমি মনে হয় আমার ফুপুর বাড়ি জামুগা, তয় পলাইয়া জামু । আমার ফুপু খুব ভাল, গার্মেন্টসে কাম করে। বুবুর লগে বনে না দেইখা আমারে জাইবার দেয় না। এইবার যামু। এই নাম্বারে একটা ফউন কইরা দিবেন ? হ্যালো ফুপু , আমারে লইতে আইও । আমি, আমারে চিন নাই! , বকুলের মাইয়া ছোট মাইয়া।” এই বলেই মেয়েটি কি কান্না । ওর কান্না দেখে মামনিও কান্না করছিল । আমিও কান্না করতে থাকলাম। ওকে আবার বুজালাম আমদের বাসায় থেকে যাও সে থাকবে না।
অনেক দিন হল মেয়েটির কোন দেখা নাই। অনেক খুজা খুজির পর খবর পেলাম মেয়েটির বুবু কে আমরা চিনি। ওই ছাইওয়ালি , যার কাছ থেকে আমরা ছাই নেই। ওকে ধরলাম , জিজ্ঞাসা করলাম বলল বোন টা অনেক অসুস্থত টাকার জন্য ডাক্তার দেখাতে পারে না। মামনি সাথে সাথে ৩০০ টাকা দিলো। এমন করে এক মাস মামনি আর বাবা টাকা দিতে থাকলো। এক দিন মামনি ওই মহিলা কে অনেক অনুরোধ করল টার বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে নিল না। আর টাকাও চায় নাই। এর ও দু’ মাস পর মামনি খোঁজ পেলো মেয়েটি তিন মাস আগেই মারা গিয়েছিল । মেয়েটির নাম বলে বলে ওর বুবু শুধু আমদের কাছ থেকেই না আরও অনেকের কাস থেকে টাকা তুলত।
ভীষণ বড় একটা ধাক্কা খেলাম মনের মাঝে । মামনি এমন ভাবে কান্না করতে শুরু করল মনে হচ্ছিলো টার নিজের সন্তান মারা গিয়েছে। আমার আজ ও মনে হয় , আর একটু খেয়াল করলে হয়ত মেয়েটাকে বাঁচাতে পারতাম।
মেয়েটির নাম আমার এখন আর মনে পরে না । আমি ওর নাম ধরে কখন ডাকিনী । সব সময় “ ওই পুচকি” বলেই ডাকতাম।
খুব মনে পরে । মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আবারও এক সাথে দুপুরের খাবার খাই। কিন্তু কথায় ? কথায় সেই মিষ্টি মেয়েটা? সে তো আর নেই আমাদের মাঝে।
( ব্লগের সব ভাই ও বোনেরা এই ছোট পরীর মতো মেয়েটির পবিত্র আত্মার জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করবেন )
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:২৬
মেগা বাইট বলেছেন: সেটাই।
২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:০৯
খইকাঁটা বলেছেন: আপনারা তো বোকা তাই অনেক করেছেন; আমরা হলে ১০ টাকাতেই খালাস। আপনাদের মত এত দুর্বল মনের লোক আমরা না যে, 'পুচকি'কে দেখে অতগুলোন টাকা জলে ফেলে দেব।
তবে আপনাদের এই বোকামীটা যেন আপনারা সারা জীবন করেন এই দোয়া করি।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৪
মেগা বাইট বলেছেন: অন্য কারো হাতে 'পুচকি' লিখাটা দেখে কেমন জানি একটা অনুভুতি জাগল মনের ভিতর । মনে হল মেয়েটি কে কেউ ডাকল ।
ওর জন্য দোয়া করবেন।
৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:১২
ফিরোজ-২ বলেছেন: কষ্ট হল লেখাটি পড়ে।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৫
মেগা বাইট বলেছেন: মেয়েটির আরও অনেক খুটি নাটি কথা আছে জ্যা আমি লিখতে পারিনি। মনে হয়েছে বড় লিখা কেউ কষ্ট করে পরতে চাইবে না।
৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৫৪
১১স্টার বলেছেন: ছোট পরীর মতো মেয়েটির পবিত্র আত্মার জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করছি।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৯
মেগা বাইট বলেছেন: ধন্যবাদ বলে আপনাকে ছোট করবো না ভাই । ভাল থাকবেন।
৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪২
ঢাকা ভাই বলেছেন: কষ্ট হল লেখাটি পড়ে.......
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫১
মেগা বাইট বলেছেন: আপনাদের যতটুকু সম্ভব সাহায্য কইরেন এই মেয়েটির মতো মানুষদের কে।
৬| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:০৪
পিয়াস কুমার বলেছেন: ভাই আডপনাকে ধন্যবাদ। আমার সেই ব্লগ শেখানোর গুরুকে পেয়েগেছি। হয়তোবা আপনার দোয়াতেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আজই তার সাথে আমার কথা হল।
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ,ধন্যবাদ,ধন্যবাদ,ধন্যবাদ,ধন্যবাদ,ধন্যবাদ,
ভালো থাকবেন..................
০৬ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:১৭
মেগা বাইট বলেছেন: খুবই ভাল খবর ।
৭| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:০৭
পিয়াস কুমার বলেছেন: ক্ষমা করবেন, আজ আমি এতটাই উচ্ছাসিত যে আপনার এই সুন্দর ব্লগটি পড়তে পারলামনা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:২১
রাতজাগাপাখি বলেছেন: ভাই মেগা বাইট, coincidence আর কাকে বলে। আজই আমি লিভার সংক্রান্ত আমার পোষ্টটি দিলাম, আজই তোমার এই লেখা প্রকাশিত হল। নিশ্চয়ই দোআ করব। লিভার জিনিসটা অনেক জটিল ভাই। এর চিকিৎসা ব্যয় বহুলতো বটেই, অনেক জটিলও।
বড় লোকেরা হয়ত একজন দাতা পেয়ে যাবে, এই গরীব মেয়েটি পেত না।
কষ্ট হল লেখাটি পড়ে। ভাল থেকো।