নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
।। ফুলগুলো ।।
এ মুহূর্তে পুষ্পসজ্জায় নিয়োজিত বালিকা আমি।
তরতাজা ফুল এনেছি, ছুঁড়ে ফেলেছি পুরনোগুলো, ময়লা দাঁতের মতো
দুর্গন্ধময় সবুজাভ জল ঢেলে ফেলেছি স্নানঘরের বেসিনে, বাড়তি ডাঁটাগুলো
সেবিকালয় থেকে আনা অস্ত্রপচারের কাচিতে ছেঁটে ফেলেছি খচাখচ
বাড়ি থেকে আনা পাত্রে সাজিয়ে রেখেছি ফুলগুলো
বাড়ি থেকে আনা, কেননা, রোগীদের জন্য এই হোটেলে
কোনও ফুলদানি রাখে না এরা,
ফুলের পাত্রটা বাবার পাশে একটা টেবিলে বসিয়ে দিয়েছি
যেখানে সে দেখতে পাচ্ছে না ওগুলো
কারণ সে চোখ দুটো খুলছে না।
শাদা চাদরের নিচে টান হয়ে শুয়ে আছে।
বলছে, সে একটা জাহাজে উঠেছে,
এবং জাহাজটাকে দেখতে পাচ্ছি আমি-
প্রায়োগিক স্থাপত্যের শাদা দেয়ালগুলো, সামান্য কটা জানালা,
ছোট ছোট ঘন্টি, আগন্তুকদের চটি-পরা পায়ের আওয়াজ,
চারপাশে এয়ার-কন্ডিশনারের
মৃদুশব্দ, কিংবা সমুদ্রেরও হতে পারে,
আর সে একটা জাহাজে উঠেছে;
ছেড়ে যাচ্ছে আমাদেরকে, সবকিছু ছেড়ে যাচ্ছে,
অথচ ক্রমনিঃশেষিত তার দেহের মধ্যে
নিঃশ্বাস ঢুকছে বেরোচ্ছে;
প্রত্যেক মিনিটে একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে তার জাহাজ,
আমাদের কাছ থেকে দূরে আর আমাদের আন্দোলিত হাতগুলো থেকে
যেগুলো এখন আর নড়ছে না।
যে নারীরা ভেতরে ঢুকলো, তাদের দুজন, নীল পোশাকের।
এখানে দয়ালু হয়ে কোনও কাজ নেই, যদি না ওদের মতো হাত থাকে-
লম্বা আর শক্তিধর, নধরকান্তি দেবকন্যাদের হাত
সেই রকম হাত, যারা
বিউগল বাজাতে পারে আর উঁচিয়ে ধরতে পারে তরবারি।
ওরা সযত্নে তুলে ধরলো তাকে আর এক কোণায় ঠেঁসে ঢোকালো।
কষ্ট দিচ্ছে ব্যাপারটা, কিন্তু যথাসম্ভব কম কষ্ট পাওয়াই ভালো।
কষ্টকে তারা লোকগানের মতো গেয়ে উড়িয়ে দেয়। আমরা
যারা অবশিষ্ট রইলাম, আমরা হলাম আনাড়ি।
এটা এমন এক ভোগান্তি যাকে না তুমি নিরন্ত করতে পারো
না পারো তার সাথে মিশে যেতে-
অনেক বাজে পরিস্থিতি আছে, কিন্তু এর তূল্য কমই।
অল্পক্ষণের মধ্যেই এটা অধৈর্য করে তোলে আমাদের।
ব্যথিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই কি করতে পারি না আমরা?
এখানে বসে আছি, ভিনেগার জলপাত্রে গোঁজা ফুলগুলো দেখছি। সে ঘুমোচ্ছে, কিংবা তা নয়।
ভাবছি; কাছিমের মতো দেখাচ্ছে তাকে।
কিংবা: তাকে দেখাচ্ছে মুছে যাওয়া দৃশ্যের মতো।
কিন্তু কোথাও, যন্ত্রণা ও বিস্মৃতি নামক সুড়ঙ্গের
দূরবর্তী কোনও প্রান্তে, ফাঁদে আটকা সে
অভিন্ন সেই পিতা যাকে ইতোপূর্বে যেমনটি জানতাম,
সেই জন, নাব্য নদী পেরিয়ে যে কিনা বেয়ে যেতো
সবুজ তার ডিঙ্গি নৌকাটি, মাছেদের শিকারস্থলে,
আমি সাথে নিয়েছিলাম ছিপ-বড়শি, ঘুমিয়েছিলাম
মাছি ভনভনে ভেজা পাথরের ওপর
সেটাই আমাদের শেষবার ওখানে যাওয়া।
শ্বেতবর্ণের এই কক্ষে, কেটে আনা ফুল হাতে এই যে আমার আসা,
এ ব্যাপারেও একটা শেষবার জন্ম নেবে।
ততদিনে আর থাকবো না আমি
শীঘ্রি হোক বা দেরিতে
আমাকেও ছেড়ে যেতে হবে সবকিছু,
এমনকি এইসব দুঃখকেও, যা উৎসারিত হচ্ছে এই ফুলগুলো থেকে,
এমনকি আমার উষ্মা,
এমনকি সেইসব স্মৃতি, এই ফুলগুলো কীভাবে একটা বাগান থেকে
আনলাম আর মৃত্যুমুখি বাবার পাশে সাজিয়ে রাখলাম
এই আশায় যে, এখনও বাঁচাতে পারবো তাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:২২
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: সুন্দর অনুবাদে +