নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
।। অনার্য বন্দনা ।।
শোকের শেকড় ছেড়ে উঠে এসো অনার্য যুবতী
পাহাড়ের পাদদেশে আবার উঠুক নেচে রাত
শ্রম ও শস্যের সেই সেতুবন্ধ, প্রকৃত প্রতিভা
অবাক সাহসে খোলো উর্বরতা, তৃষ্ণার্ত ভূবতী
আমিও শিল্পের দিকে তুলে আছি প্রত্যাখ্যাত হাত
তুমি সেই শিল্প হও, পাহাড়িয়া প্রাচীন প্রতিমা
আবার উঠুক নেচে পূর্ণিমায় প্রিয় সোমরস
পাহাড়ে থামুক নিদ্রা, দেহ হোক বাসনার বশ
মহান প্রকৃতি ছাড়া নেই কোনও ঈশ্বরের গান
লীলার ললিতকলা লুফে লও লক্ষ লীলাবতী
সমতলে বৃষ্টি হোক শস্য আর শারীরিক কষ
জ্বললে জ্বলুক জল, ভেসে যাক আর্যের বসতি
এই তো নির্ভীক সেই উদ্বোধন, অনল দিবস!
এবার উঠুক জেগে মৃত্তিকার নিবিড় সন্তান
।। দ্বিরুক্তিকা।।
আমিও কিছুটা খুলি, আর তুমি বাদবাকি খোলো
ভেতরে গুঁমরে কাঁদা প্রশ্নগুলি তোলো!
খোলাখুলি হোক আলোচনা
খানিক তুমিও ওঠো, আমিও ক্ষণেক উঠে থাকি
এইভাবে লিঙ্গভেদ করি ঢাকাঢাকি!
আমি অন্ধ আর তুমি পদ্মলোচনা
বুধে কী ফাল্গুনে ফের
রামধনু হেসে ওঠে আকাশপাড়ায়
তারও আগে বৃষ্টি নামে ভিন্ন দ্যোতনায়
কামধেনু কৃষকের দ্ব্যর্থ প্ররোচনা
মুষল পূর্ণিমা নেই—
অজগরঅন্ধকারে লিপ্ত গাঁওখানি
রাত্রি বলে, আমি ক্বচ, তুমি দেবযানি
পরিণতি এক বটে— পৃথক শোচনা
।। উত্থানপর্ব ।।
কতকাল তোমাকে দেখি না আর অনার্যকুমারী
সঙ্গত গড়েছ জানি, অভিমানী, অজ্ঞাত নিবাস
আমিও তো নই আজ সন্ত শুধু, নই ব্রহ্মচারী
কেবল স্মৃতির জলে স্বপ্নকেলি করি প্রত্ন-হাঁস
আছ কি নগরনটি জন্মে বালা, মৌন জাতিস্মর?
ইতিহাস রচে যারা, তারা এর শেকড় ছোঁবে না
কেননা, তারা তো জানে, একদিন অবৈধ সময়
রাতারাতি এই গাঁয়ে তুলেছিল আর্যদের ঘর
আর্যজন্মে ধন্য তারা, অন্ধত্বের গৌরবে তন্ময়
কলম তাদেরই হাতে। আমাকেও অনার্য থোবে না
তবু কন্যা একবার ইঙ্গিতে জানাও পরিচয়
সংগোপনে চিনে রাখি আদিসঙ্গী, প্রাচীন প্রেমিকা
কপালে কি টিপ আছে? প্রতীকচিহ্নিত পরাজয়!
দু’চোখে প্রোজ্জ্বল করে তুলি এসো পুনর্জয়টিকা
।। দাসকাল, দাসকাম ।।
ইতিহাস থেকে উঠে আসি ফের ভারবাহী, খোঁড়া-কুজো
জন্মেই দেখি, পিঠের ওপরে সাতপুরুষের ঋণ
তুমি মালকিন, দিয়েছিলে ভার, সে ভারে হয়েছি ন্যুব্জ
প্রশ্নবিহীন বিনত বালক, নিবেদিত নিশিদিন
মাঠে মাঠে ঘুরি মেষপাল নিয়ে আর ভাবি স্বাধীনতা
এই তো মাঠের মুক্ত হাওয়ায় বটের ছায়াতে নাচে
আড়ালে তোমার দৃষ্টিশাসন খুঁজে দ্যাখে এই মাথা
নত হয়ে আছে; শিষ্য যেমন গুরুপত্নীর কাছে
রৌদ্রতাপে অমল হাসিও ম্লান হয়ে আসে দ্রুত
তুমি তো বটেই মালকিন! তবে কম নও রমণীয়
রোদমগ্ন পাঠশালে আমি বাসনা-উপদ্রুত
দাসরক্তেও ফরমান ঠেকে বড় দুঃসহনীয়!
মনে হয়, এই শরীর তো নয় নিষেধের অনুগামী
লজ্জাভাঙার গৌরবে ঘামো, ঋণ শোধ করি আমি
।। প্রাধিকার ।।
চাও তো পদ্মের কলি ফোটাই পলকে
নদীর মতন কেন বাঁক নিয়া যাও?
দু’চোখে বিদ্যুৎ নাচে হাসির ঝলকে
সর্পিনী স্বভাবে কেন শরীর পল্টাও?
আমি তো অনার্য কবি, শোনো কন্যাসতী,
বীণ হাতে আমি এক প্রত্ন-সাপুড়িয়া;
আমারই প্রতাপে কাঁপে আর্যের বসতি
এই শব্দ, সুর, ধ্বনি, সুখজাগানিয়া...
আগুনে আগুন রাখো, সুখে ওঠো বেঁকে,
আশরীর নগ্নতায় তোলো রতিঢেউ
মরদের নৈপুণ্য অপরখ রেখে
যৌবন কৌটায় তুলে ফিরে যায় কেউ?
কাতারে থাক না যত বেগানার দাবি
কবির হাতেই সুখ, তৃপ্তিরও চাবি!
।। জিউসের গান ।।
শরীরের জিয়াফত দিয়াছো ইঙ্গিতে
কস্তুরী ছড়ায় যথা মাতাল হরিণী
সে রকম প্রলোভন ভুরুর ভঙ্গিতে
আমিও তোমার ডাক উপেক্ষা করিনি;
দ্যাখো, বড় দুঃসাহসে এসেছি জ্যোৎস্নায়
প্লাবনের আলপথ স্বনামে এঁকেছি
তোমার আঙিনা পোড়ে অপয়া খরায়
আমি তো অঢেল বৃষ্টি সঞ্চয়ে রেখেছি!
সকল কপাট খোলো, জাগিয়ে বিশ্বাস
নির্বন্ধন যৌবনের ধনুক ওঠাও
ছুড়ে দাও অকপট শরীরের তীর;
এসেছি জিউস আমি, শুভ্র রাজহাঁস
এই ঠোঁটে জোড়া পদ্মকোরক ফোটাও
অগ্নি নির্বাপিত হোক আফ্রোদিতির!
।। বিষতৃষ্ণা ।।
কী সুন্দর শিল্পসম্মত এই উপেক্ষার ভাষা!
আমাকে দেখেই তুমি উঁচিয়েছ ফণা
কেবল কবিতা এই শিল্পের তুলনা
অথচ নির্বোধ আমি, তোমাকেই করেছি দুরাশা
যে রূপে গর্ভিনী তুমি, যে রূপে জননী
যে রূপে কামিনী তুমি যে রূপে নাগিনী
সর্বরূপে সর্বজ্ঞানে অকল্যাণে এবং কল্যাণে
যে করে তোমার ধ্যান অনুপল বিপন্ন বিজ্ঞানে
আমি তার সর্বৈব প্রতিভূ। অনন্তর
দেহের অধিক অর্থে বেঁধে দেহঘর
উপশম যাকে বলি সেও বটে প্রকৃষ্ট প্রদাহ
যেমন মৃত্যুই হলো নিরন্তর জীবনপ্রবাহ
তোমাকে চেয়েছি বলে আমি মূর্খ, আমি হতজ্ঞান
তোমাকে চেয়েই তবু শিল্প আমি, আমিই প্রজ্ঞান
।। প্রণয়ঘটিত ।।
তোমার আনন্দ তৃপ্তি শনাক্ত করেছি
এসো আজ আমাকে শনাক্ত করো, মৃত
ভালোবাসা দাগী চোর বিধানে, বিধৃত
তাকে গ্রেফতার-ছলে তোমাকে ধরেছি
দোঁহেই দোঁহার কাছে প্রার্থী দোনো পাণি
অথচ না-জানি কোন ধূর্ত অজগর
এমতো পেঁচিয়ে ধরে প্রকাশের স্বর
পাণিপ্রার্থী, এই নাও চক্ষুভরা পানি!
আপন নাভিটা কেটে রক্ত কিছু দাও!
আপাদমস্তক সুখ চাকু ঠেঁসে চিরি
ভালোবাসা জন্ম আর মৃত্যুর সংজ্ঞাও
দোঁহার আনন্দে দোঁহে যাঁচি হারিকিরি
নিরীহ স্তনাগ্র খোলো, ছিঁড়ি বিষদাঁতে
দুনিয়া দেখুক প্রেম বিস্মিত প্রভাতে!
।। পুনোরুৎসব ।।
আমি যখন তোমার কথা ভাবি স্বপ্ন ফোটে বনের গাছে গাছে
সফলতম শব্দলোকের চাবি তুমিশ্লিষ্ট ভাবনামালায় আছে
তুমি যখন আমার কথা ভাবো স্বপ্নগুলো শিল্পিত সন্ত্রাসে
উস্কে দিয়ে অনঙ্গ স্বভাবও জ্বরের মতো শরীর বেয়ে আসে
তুমি তখন বাঙলাভাষার নদী আমি শব্দ অন্যরকম ঢেউ
ছিন্নভিন্ন আর্যভাষার গদি সর্বনাশ তো রুখতে পারেনি কেউ
এভাবে এনেছি কাক্সিক্ষত জয় প্রতিস্বপ্নের বেলা
তুমি আর আমি এ নিখিলময় নন্দিত অবহেলা
আবার যখন পৃথিবী উঠেছে জেগে , খুঁজে খুঁজে তার শেকড়ের সন্ধান
আমরা এনেছি চিরায়ত উদ্বেগে , ভেজা মাটি আর নয়া পৃথিবীর গান
উস্কে দিয়েছি সবগুলো নদী-নালা, ভাসিয়ে নিয়েছি মেকি স্বপ্নের বেদী
শব্দের মাঠে অনুসন্ধানমালা, সচল করেছি তুমি আর আমি জেদি
দ্যাখো, বাঙলার গাছে গাছে আর মাঠে আলোকিত ফুল আলোকিত সবপাখি
এসো আজ এই সুষুপ্ত তল্লাটে অনার্যদের পুনোরুৎসব ডাকি
।। ডিমের সম্ভাবনা।।
ডিমেভরা কৈ-এর মতো কথা
উপ্ত ছিল বুকের ভেতর, মনে
গোপন করে স্নিগ্ধকোমল ব্যথা
ঘুরছিল সে অচিন বনে বনে
বনে বনে মানুষ ছিল; ভাষা
ভিনদেশীদের মতোই অন্যতর
স্থগিত রেখে ব্যক্ত করার আশা
কাছিমখোল-এ কষ্ট হলো দড়
মুক্তাফলা ঝিনুকরীতির মতো
বিসর্জনে রাখল দ্যুতিদানা
কবি হলো শামুক, আত্মরত
রইল পড়ে ডিমের কাব্যখানা
গ্রস্ত আশায় প্রতীক্ষা, দিনগোণা
খুঁজবে কে সেই ডিমের সম্ভাবনা?
............
গ্রন্থ: গীতঅনার্য, ২০০১
...........
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৪
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ ---------