নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জার্মান কথাসাহিত্যিক, কবি ও চিত্রকর গুন্টার গ্রাস ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন, ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পান। ২০১২ সালে ইসরায়েল ও উহুদি বিরোধী কবিতা ( যা বলতেই হবে ) লিখে বিশ্বব্যাপী বিতর্কের ঝড় তোলেন। ৮৭ বছর বয়সে, গতকাল, মৃত্যুবরণ করেছেন।
তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। <3
.
.
১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে রচিত গুন্টার গ্রাস এর এই কবিতাগুলো মূল জার্মান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন Michael Hamburger. ফেসবুক বন্ধুদের পাঠের সুবিধার্থে বাঙলায়ন করে পোস্ট দেয়া হলো।
__________
।। সুখ ।।
যাত্রীশূন্য বাস
নক্ষত্রখচিত রাত চিরে তীরের বেগে ছুটছে।
সম্ভবত গান গাইছে চালকটি
এবং সে হয়তো সুখি কেননা গান গাইতে পারছে।
.
.
।। সেই সমুদ্রযুদ্ধ ।।
মার্কিনী একটা যাত্রীবিমানের ইঞ্জিন
আর গথিক উপাসনালয়
প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে
যুগপৎ তলিয়ে যাচ্ছে।
ডুবে যাওয়া শেষ না-হওয়া অব্দি
অর্গান বাজাচ্ছিলো তরুণ পাদ্রিটা।
এখন উড়োজাহাজগুলো আর দেবদূতগণ শূন্যে ঝুলছে
খুঁজে পাচ্ছে না অবতরণ-ভূমি ।
.
.
.
।। ফ্রান্স সা্ইক্লিং ।।
এগিয়ে থাকা সাইক্লিস্ট দলকে
যখন একটা গন্ধক-প্রজাপতি
অতিক্রম করে গেল
অনেক সাইক্লিস্টই প্রতিযোগিতায় ইস্তফা দিয়েছিলো।
.
.
।। বাঁক নিও না ।।
অরণ্যে যেও না,
অরণ্যের ভেতরে অরণ্য আছে।
যে অরণ্যে হাঁটে
গাছপালা খোঁজে,
পরে আর অরণ্যের ভেতর খুঁজবে না।
ভয় পেও না,
ভয় ঘ্রাণ আনে ভয়ের।
যে ভয়ের গন্ধ পায়
বীরের গন্ধও পাবে,
ওইসব বীরের গন্ধ যারা বীরগন্ধী।
সমুদ্রজল পান কোরো না,
ওতে অধিকতর সামুদ্রিক স্বাদ আছে।
যে সমুদ্রজল পান করবে
তারপর থেকে কেবলই
মহাসমুদ্রগুলোর জন্য তৃষ্ণা অনুভব করবে।
নির্মান কোরো না গৃহ,
অন্যথায় গৃহকাতর হয়ে পড়বে।
যে গৃহকাতরায় ভোগে
অপেক্ষা করতে থাকে
বিলম্বে ফেরা মানুষের জন্য দুয়ার খোলে।
চিঠি লিখো না,
যেসব চিঠি হয়রান করে আমাদের টেক্সাসে তার সমাধি।
যে চিঠি লেখে
মরণোত্তর খেলাকে
সে তার নাম ধার দেয়।
.
.
.
।। ডিমের মধ্যে ।।
ডিমের মধ্যে বাস করছি আমরা।
খোসার ভেতর-দেয়াল মলিন আঁকিবুকি আর
শত্রুদের খ্রীষ্টনামগুলো লিখে লিখে ভরিয়ে ফেলেছি।
তা দেয়া হচ্ছে আমাদের।
যে আমাদেরকে তা দিচ্ছে
আমাদের পেন্সিলগুলোকেও দিচ্ছে।
ডিমের ভেতর থেকে বের হয়ে একদিন
তৎক্ষণাৎ তার ছবি এঁকে ফেলবো
যে আমাদের তা দিচ্ছে।
অনুমান করছি যে তা দেওয়া হচ্ছে আমাদের।
মিষ্টি স্বভাবের কোনও মুরগিকে কল্পনা করছি
আর স্কুলের জন্য রচনা লিখছি
সেই মুরগির রং ও বংশবৃদ্ধি নিয়ে
যে কিনা তা দিচ্ছে আমাদের।
কখন আমরা ভেঙ্গে ফেলবো খোসা?
ডিমের ভেতরে আমাদের অবতারগণ
মধ্যম মানের বেতন নিয়ে দরকষাকষি করছে
বাচ্চা ফোটানের মেয়াদের জন্য যা পরিশোধ্য।
ফুটে বেরোনোর দিন হিসেবে 'এক্স'-কে নির্ধারণ করছে।
একঘেয়েমিত্ব থেকে আর অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনে
আমরা আবিস্কার করেছিলাম ডিম ফোটানোর যন্ত্র।
ডিমের ভেতর থেকে লাফিয়ে বেরোতে খুবই আগ্রহী আমরা।
যে আমাদের দেখভাল করছে খুশিমনে
এই মেধাস্বত্ব তার জন্য সুপারিশ করা উচিৎ আমাদের।
কিন্তু আমাদের মাথার ওপরে ছাদ।
বয়স হয়ে যাওয়া ছানাগুলো,
বহুভাষিক ভ্রূণ
সারাদিন চিঁউ চিঁউ করছে
আর পরস্পকে বলাবলি করছে নিজেদের স্বপ্নগুলো।
এবং কী হবে যদি কখনই আমাদের তা দেয়া না ফুরায়?
এই খোসা যদি কোনওদিনই না ফাটে?
যদি আমাদের একমাত্র দিগন্ত হয়
হিজিবিজি আঁকা এই ভেতর-দেয়াল আর সেটাই থেকে যায়?
আশা করি তা দেওয়া হচ্ছে আমাদের।
এমনকি, আমরা যদি কেবল তা দেওয়ার কথাই বলি
তবু এই ভয় থেকে যায় যে, খোসার বাইরে
কেউ একজন ক্ষুধার্ত হতে থাকবে আর
এক চিমটি লবণসহ আমাদেরকে তপ্ত কড়াইয়ে ঢালবে।
ডিমের ভেতরে থাকা ভায়েরা আমার, তখন আমরা কী করবো?
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৪:০১
পোয়েট ট্রি বলেছেন: ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে রচিত গুন্টার গ্রাস এর এই কবিতাগুলো মূল জার্মান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন Michael Hamburger. ফেসবুক বন্ধুদের পাঠের সুবিধার্থে বাঙলায়ন করে পোস্ট দেয়া হলো।
__________
।। সুখ ।।
যাত্রীশূন্য বাস
নক্ষত্রখচিত রাত চিরে তীরের বেগে ছুটছে।
সম্ভবত গান গাইছে চালকটি
এবং সে হয়তো সুখি কেননা গান গাইতে পারছে।
.
.
।। সেই সমুদ্রযুদ্ধ ।।
মার্কিনী একটা যাত্রীবিমানের ইঞ্জিন
আর গথিক উপাসনালয়
প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে
যুগপৎ তলিয়ে যাচ্ছে।
ডুবে যাওয়া শেষ না-হওয়া অব্দি
অর্গান বাজাচ্ছিলো তরুণ পাদ্রিটা।
এখন উড়োজাহাজগুলো আর দেবদূতগণ শূন্যে ঝুলছে
খুঁজে পাচ্ছে না অবতরণ-ভূমি ।
.
.
.
।। ফ্রান্স সা্ইক্লিং ।।
এগিয়ে থাকা সাইক্লিস্ট দলকে
যখন একটা গন্ধক-প্রজাপতি
অতিক্রম করে গেল
অনেক সাইক্লিস্টই প্রতিযোগিতায় ইস্তফা দিয়েছিলো।
.
.
।। বাঁক নিও না ।।
অরণ্যে যেও না,
অরণ্যের ভেতরে অরণ্য আছে।
যে অরণ্যে হাঁটে
গাছপালা খোঁজে,
পরে আর অরণ্যের ভেতর খুঁজবে না।
ভয় পেও না,
ভয় ঘ্রাণ আনে ভয়ের।
যে ভয়ের গন্ধ পায়
বীরের গন্ধও পাবে,
ওইসব বীরের গন্ধ যারা বীরগন্ধী।
সমুদ্রজল পান কোরো না,
ওতে অধিকতর সামুদ্রিক স্বাদ আছে।
যে সমুদ্রজল পান করবে
তারপর থেকে কেবলই
মহাসমুদ্রগুলোর জন্য তৃষ্ণা অনুভব করবে।
নির্মান কোরো না গৃহ,
অন্যথায় গৃহকাতর হয়ে পড়বে।
যে গৃহকাতরায় ভোগে
অপেক্ষা করতে থাকে
বিলম্বে ফেরা মানুষের জন্য দুয়ার খোলে।
চিঠি লিখো না,
যেসব চিঠি হয়রান করে আমাদের টেক্সাসে তার সমাধি।
যে চিঠি লেখে
মরণোত্তর খেলাকে
সে তার নাম ধার দেয়।
.
.
.
।। ডিমের মধ্যে ।।
ডিমের মধ্যে বাস করছি আমরা।
খোসার ভেতর-দেয়াল মলিন আঁকিবুকি আর
শত্রুদের খ্রীষ্টনামগুলো লিখে লিখে ভরিয়ে ফেলেছি।
তা দেয়া হচ্ছে আমাদের।
যে আমাদেরকে তা দিচ্ছে
আমাদের পেন্সিলগুলোকেও দিচ্ছে।
ডিমের ভেতর থেকে বের হয়ে একদিন
তৎক্ষণাৎ তার ছবি এঁকে ফেলবো
যে আমাদের তা দিচ্ছে।
অনুমান করছি যে তা দেওয়া হচ্ছে আমাদের।
মিষ্টি স্বভাবের কোনও মুরগিকে কল্পনা করছি
আর স্কুলের জন্য রচনা লিখছি
সেই মুরগির রং ও বংশবৃদ্ধি নিয়ে
যে কিনা তা দিচ্ছে আমাদের।
কখন আমরা ভেঙ্গে ফেলবো খোসা?
ডিমের ভেতরে আমাদের অবতারগণ
মধ্যম মানের বেতন নিয়ে দরকষাকষি করছে
বাচ্চা ফোটানের মেয়াদের জন্য যা পরিশোধ্য।
ফুটে বেরোনোর দিন হিসেবে 'এক্স'-কে নির্ধারণ করছে।
একঘেয়েমিত্ব থেকে আর অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনে
আমরা আবিস্কার করেছিলাম ডিম ফোটানোর যন্ত্র।
ডিমের ভেতর থেকে লাফিয়ে বেরোতে খুবই আগ্রহী আমরা।
যে আমাদের দেখভাল করছে খুশিমনে
এই মেধাস্বত্ব তার জন্য সুপারিশ করা উচিৎ আমাদের।
কিন্তু আমাদের মাথার ওপরে ছাদ।
বয়স হয়ে যাওয়া ছানাগুলো,
বহুভাষিক ভ্রূণ
সারাদিন চিঁউ চিঁউ করছে
আর পরস্পকে বলাবলি করছে নিজেদের স্বপ্নগুলো।
এবং কী হবে যদি কখনই আমাদের তা দেয়া না ফুরায়?
এই খোসা যদি কোনওদিনই না ফাটে?
যদি আমাদের একমাত্র দিগন্ত হয়
হিজিবিজি আঁকা এই ভেতর-দেয়াল আর সেটাই থেকে যায়?
আশা করি তা দেওয়া হচ্ছে আমাদের।
এমনকি, আমরা যদি কেবল তা দেওয়ার কথাই বলি
তবু এই ভয় থেকে যায় যে, খোসার বাইরে
কেউ একজন ক্ষুধার্ত হতে থাকবে আর
এক চিমটি লবণসহ আমাদেরকে তপ্ত কড়াইয়ে ঢালবে।
ডিমের ভেতরে থাকা ভায়েরা আমার, তখন আমরা কী করবো?
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১৪
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: উনি মারা গেছেন জানতাম না। সাহিত্যের একজন নক্ষত্র ছিলেন ।