![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা বাঙালি জাতি হলাম কবির জাতি। কথাটা আমার না, আমার একজন শিক্ষকের। অবশ্য আবেগপ্রবণতা সবসময় খারাপ কিছু না। কিন্তু বিপত্তিটা তখনই, যখন আবেগের তোড়ে আমাদের বিবেক পর্যন্ত লোপ পায়। ইদানিং আবার যুক্ত হয়েছে ‘চেতনা’। বিভিন্ন চেতনায় চেতনায়িত নানা দল-উপদলের সরব উপস্থিতি কারও চোখ এড়িয়ে যাবার কথা নয়। অনেক ক্ষেত্রে চেতনার অতি বাড়াবাড়ি শালীনতার সীমাও ছাড়িয়ে যায়।
তেমনই এক চেতনার মহড়া দেখলাম স্বাধীনতা দিবসের দিন। দেশপ্রেমের ‘চেতনায়’ উজ্জীবিত হয়ে লাখো মানুষ গাইল আমাদের জাতীয় সংগীত (আমি সবাইকে বলছি না)। আমরা দেশপ্রেমের রেকর্ড করলাম গিনেজ বুকে “উঠে”। এত বিশাল সংখ্যক মানুষ সবাই দেশপ্রেম দেখাতে স্বেচ্ছায় সমবেত হয়েছে, এরূপ হলে বিষয়টা অন্তত একদিক থেকে হলেও ভাল লাগতো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আমার এক বন্ধু ২৫ তারিখ রাতে জানালো তার ছোটো ভাইটিকে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে যদি সে প্যারেড গ্রাউন্ড-এ না যায়। আমি অবাক হলাম; কারণ স্কুলটি ঢাকা শহরের একটি নামকরা স্কুল। আমি যতদূর ধারণা করতাম রাজনীতির নগ্ন এবং নির্লজ্জ থাবা মোটাদাগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সীমিত। কিন্তু আমার ভুল ভাঙল। পরে আরো খবর পেলাম বিভিন্ন জায়গায় এরকম হুমকি দেয়া হয়েছে।
আসল চমক অপেক্ষা করছিল পরেরদিনের জন্য। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককেই একটি করে ‘সার্টিফিকেট’ দেয়া হয়েছিল স্মারক হিসেবে। যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব থাকায় অনেকেই একাধিক সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে। গুজব রটে যে এ সার্টিফিকেট চাকরির ক্ষেত্রে ‘কাজে’ লাগবে। শুনে আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না। আমার পরিচিত অনেককেই দেখলাম জিনিসটা হাতছাড়া করছে না। কি লজ্জা!!! আজকে আমরা চেতনা কাজে লাগাই চাকরির বাজারে সুবিধা করার জন্য।
বিষয়টা যদিও হাস্যকর এর একটা করুণ দিকও কিন্তু আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের কর্মীদের এমনিতেই চাকরি দিয়ে দিতে হবে, তখন সাধারণ ছাত্র, যারা সারাবছর পড়াশোনা করে, এদের আর আশা করার কিছুই থাকেনা। সে ক্ষেত্রে মহামূল্যবান এই ‘সার্টিফিকেট’ কাজে লেগেও তো যেতে পারে। একদিকে কোটা ব্যবস্থা, অন্যদিকে দুর্নীতি- মোটকথা আশার আলো যখন কোথাও নেই এমতবস্থায় এই বস্তু দিয়ে যদি কোনোরকম উতরে যাওয়া যায় তাহলে তো পোয়াবারো।
আমি অনেকের কষ্টের কথা শুনেছি, তারা তথাকথিত চেতনার ধার ধারেনা, দলবাজি করেনা, মামা-খালুও নেই। এদের অনেকেই মেধাবি ছাত্র কিন্তু বেকার। আজকে যে চেতনার নাম করে কোটি কোটি টাকা উড়ানো হলো, অনেকের পকেট ভারী হলো সে চেতনা কিন্তু এদের কিছুই দেবেনা। তাই তারা অনেকেই আজ চেতনার প্রত্যয়নপত্র নিয়ে হলেও স্বপ্ন দেখতে চাইছে। এদের সুতীব্র বেদনার সামনে অর্থহীন ফাঁকা চেতনার বুলি প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।
দেশপ্রেমের চেতনা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এভাবে কতোটা এক হলাম আমরা সেটা সহজেই অনুমেয়।
©somewhere in net ltd.