![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারাবিশ্বের সকল গুরু, গোঁসাই, পির, মুর্শিদ, ভক্ত আসেকান ও তরিকাপন্থী সকলের পবিত্র চরণে প্রেমভক্তি রইল। এই আইডির ও গুরু গৃহ পেইজের সকল পোস্ট বিষয় ভিত্তিক ও গবেষেণাধর্মী। এখানে সাধারণ কোনো পোষ্ট দেওয়া হয় না। তাই; সবাইকে বিশেষভাবে জানানো যাচ্ছে যে; কোনো জাতি, ধর্ম ও শাস্ত্রীয় মতবাদকে ছোট করা বা কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা আমাদের লেখার উদ্দেশ্য নয়। তথাপিও; যদি; অজানতে আমাদের লেখার বিষয়বস্তু বা কোনো বাক্য কারো মতের বিপক্ষে যায়; সেক্ষেত্রে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মনে রাখতে হবে; যেহেতু; আমাদের পোস্টগুলো বিষয় ভিত্তিক ও গবেষণাধর্মী। লেখকের লেখার উদ্দেশ্য সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা; কাউকে হেওপ্রতিপন্ন করা নয়। তাই; সকলের প্রতি আবারও বিনীত নিবেদন; প্রতিটি পোস্টে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের করে লেখককে উৎসাহিত করবেন। যেহেতু; প্রতিটি পোস্ট তৈরিতে লেখকের প্রচুর মেধা ও শ্রম ব্যয় হয়। আর যদি তা না পারেন; তবে; খারাপ মন্তব্য করা হতে বিরত থাকবেন। লেখাতে তথ্যগত ভুল, অসংগতি ও ইতিহাস বিভ্রাট দেখা গেলে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন। গুরু গৃহ কর্তৃপক্ষ ও পরম কাঁইজি
‘আলেক সাঁই’ পরিভাষাটির উৎপত্তি ও ব্যবহার
আলেক (রূপ)বি অপার্থিব, অলৌকিক, অমানবিক, লৌকিক নয় এরূপ (ব্য্য) অলৌকিক- এর সংক্ষিপ্তরূপ (আলেক সাঁই) (আবি)বি পালনকর্তা, ঈশ্বর, প্রভু, বিষ্ণু, বুদ্ধ, স্বামী, গার্ডিয়ান (guardian), রব (আ.ﺮﺐ)(আভা)বি উপাস্য, নারায়ণ, নিধি, নিমাই, নিরঞ্জন, স্বরূপ (আদৈ)বি খোদা (ফা.ﺨﺪﺍ), মা’বুদ (আ.ﻤﻌﺑﻭﺪ), মুহাম্মদ (আ.ﻤﺤﻤﺪ), রাসুল (আ.رَسُول) (আপ)বি কাওসার (আ.ﻜﻭﺛﺮ), ফুরাত (আ.ﻔﺭﺍﺖ) (ইপ)বি গড (god), নেক্টার (necter), ইলিক্সার (elixir) (সংজ্ঞা) মাতৃজঠরে সর্বজীবের ভ্রণ লালনকারী অমৃতরসকে পালনকর্তা বা রূপকার্থেআলেক বলা হয় (দেপ্র) পালনকর্তা পরিবারের সদস্য বিশেষ, রূপকসাহিত্যের একটি দৈবিকা বা প্রতীতি (পরি)তরলমানুষ, যে এখনো মূর্তাকার ধারণ করেনি। মাতৃজঠরে ভ্রণ লালনপালনের দায়িত্ব পালনকারী সুমিষ্ট সুপেয় ও শ্বেতবর্ণের জল (উপ)বি উপাস্য, পালক (রূ)বি সাঁই (দেত)বি পালনকর্তা।
আলেকধ্বনি (রূপ)বি বাংলা “আলেক সাঁই” রূপ মহাবাণিকে আলেকধ্বনি বলা হয় {বাং.আলেক+ বাং.ধ্বনি}
“আলেক সাঁই নাদধ্বনির উৎপত্তি
“আলেক সাঁই” এ মহানাদের দু’টি অংশ। যথা- ১.আলেক ও ২.সাঁই।
আলেক
অলৌকিক (রূপ)বিণ লোকাতীত, সাধ্যাতীত, মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় এরূপ, ইহলোকের নয় এরূপ।
অলোক (রূপ)বিণ ১.অলৌকিক, লোকাতীত, সাধ্যাতীত, মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় এরূপ, ইহলোকের নয় এরূপ ২.নির্জন, বিজন, অসাধারণ, লোক বসতিহীন (ব্য্য) অলৌকিক পরিভাষার সংক্ষিপ্তরূপ (প্র) রূপকসাহিত্যের আত্মতাত্ত্বিকদের নির্মিত- ১.জল ২.মাটি ৩.আগুন ৪.অলোক ৫.বাতাস- এ পঞ্চাত্মার একটি।
আলেক (রূপ)বি অপার্থিব, অলৌকিক, অমানবিক, লৌকিক নয় এরূপ (ব্য্য) ‘অলৌকিক’ পরিভাষার সংক্ষিপ্তরূপ (আলেক সাঁই)।
আলেক পরিভাষার উৎপত্তি
বাংলা অলৌকিকশব্দ হতে, অলোক এবং অলোক শব্দ হতে, আলেক পরিভাষাটির উৎপত্তি হয়েছে। অর্থাৎ অলৌকিক> অলোক> আলেক শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে।
সাঁই
ঈশ্বর (রূপ)বি সৃজক, স্রষ্টা, সৃষ্টিকর্তা (সাঅ) বিধাতা, অধিপতি, হৃদয়েশ, সনাতনীদের পবিত্রস্থান বা মৃতের নামের পূর্বে ব্যবহার্য মহিমাজ্ঞাপক ‘ ঁ ’ চিহ্ন, গড (god), লর্ড (lord) বিণ শ্রেষ্ঠ, প্রধান, অন্যতম (আবি)বিসাঁই, কাঁই, লালন, প্রভু, পতি, স্বামী, প্রণয়ী, গুরু, গোঁসাই (পরি) সাঁই ও কাঁই কিম্বা বিষ্ণু ও ব্রহ্মাকে একত্রে ঈশ্বর বলা হয়। তবে সাধারণত ঈশ্বর বলতে সাঁই বা বিষ্ণুকেই বুঝাই। সংস্কৃত ঈশ্বর পরিভাষাটির দ্বারা বাংলাভাষার সাঁই ও কাঁই উভয় উপাস্যকেই বুঝায় বিধায় ঈশ্বরকে সাঁই ও কাঁই উভয়রূপেই ভজন পুজন করা যায়, মহাকল্যাণকর পরম কাম্য উপাস্যকে ঈশ্বর বলে, যেমন- সাঁই। মানবদেহে প্রাপ্ত শুভ্র ও কালোবর্ণের এই জীবজল দ্বয়কে একত্রে ঈশ্বর বলা হয় (ব্য্য) ইষ্ট (আত্মীয় ) হতে ঈশ্বর পরিভাষাটির উৎপত্তি। মানবের আদিলালনপালনকর্তা সাঁই মাতৃজঠরে সন্তান লালন পালন করেন বলে, তার চেয়ে নিকটতম আত্মীয় বা ইষ্ট আর কেহই হতে পারে না বিধায় অত্যন্ত আপন বা অত্যন্ত ইষ্ট হতে ঈশ্বর পরিভাষাটির উৎপত্তি (আদৈ)বি রাসুল (ﺮﺴﻮﻝ) ও আল্লাহ (ﺍﻠﻠﻪ) (বাদৈ)বি সাঁই ও কাঁই (ইদৈ)বি গড (god), লর্ড (lord) (উপ)বি সৃষ্টিকর্তা (রূ)বি সাঁই(দেত)বি পালনকর্তা স্ত্রী ঈশ্বরী {বাং.ইষ্টি+ বাং.বর> ইষ্টর>}
বাংলা ঈশ্বর পরিভাষাটির আত্মতত্ত্বভিত্তিক সত্তা জীবজল বা মানবজল। মানবদেহে প্রাপ্ত ঈশ্বর নামক জীবজল দুই প্রকার। যথা- শ্বেতবর্ণ ঈশ্বর ও ২.কৃষ্ণবর্ণ ঈশ্বর। অর্থাৎ মানবদেহে প্রাপ্ত শুভ্র ও কৃষ্ণ উভয় বর্ণের জীবজলকে একত্রে ঈশ্বর বলা হয়। শুভ্রজলকে সুধা বা অমৃতসুধাও বলা হয়।
সাঁই পরিভাষাটির উৎপত্তি
সাদা + ঈশ্বর = সাঈ (উভয় শব্দের প্রথম বর্ণ গ্রহণ করে)। ‘সাঈ’ শব্দটির দীর্ঘই (ঈ) বর্ণটির দীর্ঘস্বর পড়তে কষ্ট হয় বিধায় পড়ার সুবিধার্থে দীর্ঘই (ঈ) বর্ণটিকে হ্রস্বই (ই) বর্ণ দ্বারা পরিবর্তন করে এবং সে পরিবর্তনের চিহ্নস্বরূপ একটি চন্দ্রবিন্দু “ ঁ ” গ্রহণ করে, ‘সাঈ’ শব্দটি হতে “সাঁই” পরিভাষাটির উৎপত্তি হয়েছে।
সাঁই (রূপ)বি ঈশ্বর, প্রভু, বুদ্ধ, পতি, স্বামী (ভাদৈ)বি বিষ্ণু (ইদৈ)বি গড (god) (আদৈ)বি রাসুল (رَسُولَ), রব (ﺮﺏ), মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺪ) {(সাদা+ঈশ্বর)> (সা+ঈ)> সাঈ> সাঁই}পরবর্তিতে ‘সাঁই’ শব্দ হতেই ‘সাঁইজি’ পরিভাষাটির উৎপত্তি। বাংলা ‘সাঁই’ এবং তুর্কি ‘জি (ﺠﻰ)’ শব্দদ্বয় একত্রিত করে (সাঁই+জি) হতে “সাঁইজি” পরিভাষাটি সৃষ্টি করা হয়েছে।সাঁইজি (রূপ)বি প্রাণনাথ, প্রাণপতি, প্রাণস্বামী, প্রাণেশ্বর, বিশ্বনাথ, বিশ্বপতি বিণ বৈষ্ণব, সাঁইবিহারী, সাঁইচারী (আপ্র) সাঁইদর্শনকারী সাধক সাধিকার উপাধি বিশেষ (প্র) ১.সাঁই বা লালন পালনকর্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দর্শনলাভকারী ২.সাধুশাস্ত্রের আউল, বাউল, নাড়া ও সাঁইজি- এ চতুর্সাধন পথের সর্বশেষ পথ বিশেষ (পরি) জ্ঞানের নৈরাকার স্তর এবং রসাশ্রয় ও রূপাশ্রয় হতে এ “সাঁইজি” সম্প্রদায়ের উৎপত্তি (ইদৈ)বি গডস (gods) (আদৈ)বি নায়েবে রাসুল (ﻧﺎﺌﺐ ﺮﺴﻭﻞ) {বাং.সাঁই+ তু.জি.ﺠﻰ}
জি [ﺠﻰ] অব্য নামের পরে ব্যবহৃত সম্বোধনসূচক শব্দ (নানাজি) {তু}
আলেক সাঁই পরিভাষাটির উৎপত্তি
বিশ্বের প্রায় সব ভাষাতেই দুই প্রকার মহানাদ দেখতে পাওয়া যায়। যথা- ১.রাজনৈতিক মহানাদ ও ২.সাম্প্রদায়িক মহানাদ।
১. রাজনৈতিক মহানাদ
রাজনৈতিক অঙ্গনে সভা সমাবেশ ও গণসংযোগের জন্য ব্যবহৃত উচ্চ ধ্বনিকে রাজনৈতিক মহানাদ বলে। যেমন- জয় বাংলা, বন্দে মাতারম ও আরবি ভাষায় নারায়ি তাকবির ইত্যাদি।
২. সাম্প্রদায়িক মহানাদ
সাম্প্রদায়িক ও আধ্যাত্মিক অঙ্গনে সভা সমাবেশ ও সাধু সম্মেলনের জন্য ব্যবহৃত উচ্চ ধ্বনিকে সাম্প্রদায়িক মহানাদ বলে। যেমন- আলেক সাঁই, জয় গুরু, গুরু ভরসা ও আরবি ভাষায় আল্লাহ আকবার ইত্যাদি।
রাজনৈতিক সভা ও সমাবেশে যেরূপ উচ্চস্বরে “জয় বাংলা” বলে, উপস্থিত নেতা কর্মীদের মনে সাহস ও মনোবল বৃদ্ধি করা হয়। তদ্রপ সাম্প্রদায়িক ও আধ্যাত্মিকসভা ও সমাবেশে আলেক-সাঁই বলে উপস্থিত সাধু সাথী ও সমর্থকদের মন আকর্ষণ করা হয়ে থাকে। বাংলাভাষার মহান লেখনি সৈনিক, মহাত্মা লালন সাঁইজি, বাংলাভাষায় “আলেক সাঁই” এ মহানাদ আবিষ্কার করেন। ফলে আমাদের বাংলা ভাষাই, মহানাদের যে অভাবটুকু ছিল, তা পূরণ হয় চিরদিনের জন্য। তখন হতেই “আলেক সাঁই” মহানাদটি বিভিন্ন সাধুসঙ্গ সাধু সম্মেলন ও সাধুসভায় ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে বর্তমানে লালন ঘরানার কোথাও কোথাও মহানাদরূপে “আল্লাহ আলেক” এরূপ চরম বিভ্রান্তিকরবাণিও, ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। “আল্লাহ আলেক” বাণিটি একেবারে ভুল। কারণ আল্লাহ (ﺍﻟﻟﻪ) পরিভাষাটি আরবি এবং এটি মুসলমানি একটি পরিভাষা। আল্লাহ (ﺍﻟﻟﻪ) পরিভাষাটি নিতান্তই ইসলামী সাম্প্রদায়িকমতবাদের সাম্প্রদায়িকসম্পদ। এক সাম্প্রদায়িকমতবাদের লোক অন্য সাম্প্রদায়িকমতবাদের সাম্প্রদায়িক পরিভাষা ব্যবহার করা, সাম্প্রদায়িকমতবাদ চুরি করারই নামান্তর। লালনঘরানা বর্তমানে যেহেতু পূর্ণাঙ্গ একটি সাম্প্রদায়িকমতবাদরূপে গণ্য, যাকে “মানবধর্ম” বলা হয় বিধায় স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি সাম্প্রদায়িকমতবাদের স্বকীয়তা অটুট রাখার জন্য, এরূপ পরিভাষা চুরির মত হীন কর্ম হতে বিরত থাকাই অধিক উত্তম। হ্যাঁ আমাদের “আলেক সাঁই” পরিভাষাটি বা মহানাদটি যদি না থাকত, তবে অগত্য “আল্লাহ আলেক” মহানাদটি ব্যবহার করাই কোন দোষ হতো না। যেহেতু আমাদের “আলেক সাঁই” মহানাদটি রয়েছে, সেহেতু “আল্লাহ আলেক” এটি বলা ও ব্যবহার করা সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি।
আবার যে কুরানিরা, লালনপন্থিদের চরম ও পরম শত্র“।
তারা পুনঃপুন লালনপন্থিদের চুল দাদি ও মুচ কেটেছে। তারা পুনঃপুন লালনশিল্পী ও বাউলদের একতারা ভেঙেছে । পুনঃপুন লালন সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার ব্যর্থ পরিকল্পনা করেছে। সে লালনপন্থিরা তাদের নিজস্ব পরিভাষা রেখে, কেন সে-ই কুরানিদের পরিভাষা ব্যবহার করবেন? বিধায় আামাদের পরামর্শ হলো, বাংলা ভাষায় বাঙালিপরিভাষা থাকতে, কোন বিদেশী পরিভাষা ব্যবহার করা, কোন বাঙালির উচিৎ নয়। এরূপ করলে বাংলা ভাষা ও বাঙালিজাতির সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করা হয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। মহাত্মা লালন সাঁইজি কর্তৃক নির্মিত “আলেক সাঁই” মহানাদটি যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তা নিচে এসবের বিবরণ তুলে ধরা হলো-
(ক) সম্বোধনবাণিরূপে “আলেক সাঁই”
লালন ঘরানার নিয়ম অনুযায়ী, নর হোক বা নারী হোক কিন্বা একজন নর ও একজন নারী হোক, যে কোন দুই ব্যক্তির সাক্ষ্যাত হওয়া মাত্রই “আলেক সাঁই” মহাবাণী দ্বারা সম্বোধন করা হয়। অতঃপর কুশলাদি বিনিময় করে, সর্ব প্রথম চাল ও জল দ্বারা তাঁকে আপ্যায়ন করা হয়। এ সূত্র হতেই দূরালাপনি বা আলাপির দ্বারা, এ ঘরানার প্রেমিক, অনুরাগী, ভক্ত ও অনুসারিরা, কোন সংবাদাদি আদান প্রদানের পূর্বে, “আলেক সাঁই” বলে উভয়ে উভয়কে সম্বোধন করে থাকেন।
বিশ্বের সর্ব ভাষাতেই এক বা একাধিক সম্বোধনবাণী রয়েছে। তদ্রপ বাংলা ভাষাতেও কিছু সম্বোধনবাণী রয়েছে। যেমন- আলেক সাঁই, গুরুপদে প্রেমভক্তি, গুরু ভরসা, জয় গুরু, জয় নেংটা বাবা, জয় বাবা লাডুম শাহ, জয় বাবা লোকনাথ, দয়াল ভরসা ইত্যাদি।
লালনপন্থিদের সম্বোধনবাণী-“আলেক সাঁই”
সেকিমপন্থিদের সম্বোধনবাণী- “গুরুপদে” (গুরুপদে প্রেমভক্তি বাক্যের সংক্ষিপ্ত রূপ)।
আহলে বাইয়াতপন্থিদের সম্বোধনবাণী- “গুরু ভরসা” ও “জয় গুরু”
সোলেমান নেংটাপন্থিদের সম্বোধনবাণী- “জয় নেংটা বাবা”
লাডুমশাহপন্থিদের সম্বোধনবাণী- “জয় বাবা লাডুম শাহ”
লোকনাথপন্থিদের সম্বোধনবাণী- “জয় বাবা লোকনাথ”
শাহলালপন্থিদের সম্বোধনবাণী- “দয়াল ভরসা”
এছাড়াও সম্বোধন বা আশির্বাদবাণিরূপে “ওঁম শান্তি” বাণিটি আমাদের বঙ্গদেশে অতি প্রাচীনকাল হতে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিচে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।
অ অ ম এ তিনটি সাংকেতিক চিহ্নের সমাহার, এটি সব মন্ত্রের আদিবীজ বা ‘প্রণব’! এর অপরনাম ‘ওঁম’! আঁজি বা আদ্যক্ষর, সর্ব প্রকার অক্ষর বা ধ্বনির আদ্য বীজ। এটি সনাতনী সমাজের বিশ্বাসের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্গ।
অদিতি- (পৃথিবী, বসুন্ধরা, ধরা),
অন্তরীক্ষ- (মহাশূন্য, পৃথিবী ও মহাকাশের মধ্যভাগ),
মহাকাশ-(নভমণ্ডল, আকাশ) অদিতি হতে ‘অ’, অন্তরীক্ষ হতে ‘অ’ এবং মহাকাশ হতে ‘ম’ যোগে গঠিত করা হয় ‘অঅম’, অতঃপর “অঅম” হতে {অঅম> অওম> ওঁম} বা {ওঁম} হয় (ব্য্য) প্রথমে মধ্যবর্তী ‘অ’ বর্ণটিকে ‘ও’ বর্ণদ্বারা পরিবর্তন করা হয় এবং প্রথম ‘অ’ বর্ণকে বিলুপ্ত করে, উক্ত বিলুপ্তির চিহ্ন স্বরূপ ‘ও’ বর্ণটির মাথার ওপর ‘ ঁ ’ বর্ণটি স্থাপন করে, ‘ওঁম’ পরিভাষাটির উৎপত্তি হয়। অথবা অ- বর্ণটির নিচে অ অক্ষর লিখে আকার (া) এর মতো (§)- এ টানটিকে উঠিয়ে দিয়ে, তার চিহ্ন স্বরূপ এর মাথার ওপর, একটি চন্দ্রবিন্দু বসান হয়েছে। আবার {ওঁম < অওম < অঅম} অর্থাৎ ‘ওঁম’ অর্থ পৃথিবী, অন্তরীক্ষ ও মহাকাশ বা সমন্ত সৃষ্টি জগত বুঝায়। এবার “ওঁম শান্তি” দ্বারা সমন্ত সৃষ্টি জগতে শান্তি বুঝায়। কারণ শুধু পৃথিবীতে শান্তি হলে এবং অন্তরীক্ষে অশান্তি হলে অর্থাৎ অশান্তিকর জলবায়ু দেখা দিলে, পৃথিবীতেও অশান্তি দেখা দিবে। আবার পৃথিবী ও অন্তরীক্ষে শান্তি হলে, মহাকাশে অশান্তি হলে অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্রে বা নক্ষত্রে ও নক্ষত্রে বা গ্রহ ও নক্ষত্রে ধাক্কাধাক্কি ও ঠেলাঠেলির সৃষ্টি হলে, কিম্বা জ্যোতিষ্কাদি ভেঙ্গে পড়লে, পৃথিবীতে অশান্তি দেখা দিবে বিধায় প্রায় চারসহস্র বছর পূর্বে বাঙালী মহাজ্ঞানী সাধু সন্ন্যাসিগণ পৃথিবী, অন্তরীক্ষ ও মহাকাশকে একত্রে সন্নিবেশিত করে, উক্ত “ওঁম” নামক অমীয় শান্তির বাণী উদ্ভাবন করেন। যাতে বিধাতার সৃষ্টি জগতের, কোথাও যেন অশান্তি না থাকে। কালক্রমে পরবর্তিকালে ভারত বর্ষীয় পণ্ডিতগণ নমস্কার, নমস্তুতি, নমস্তি, প্রণাম, জয় হোক, ও শুভ হোক, আরবি পণ্ডিতগণ “সালাম-(শান্তি), আচ্ছালাম-(শান্তি), ‘আচ্ছালামু আলাই, (শান্তি হোক), ‘আচ্ছালামু আলাইকুম- (আপনাদের ওপর শান্তি), ‘আচ্ছালামু আলাইকা- (আপনার (পুরুষের) ওপর শান্তি), ‘আচ্ছালামু আলাইকি- (আপনার (নারির) ওপর শান্তি)” ইত্যাদি। ইংরেজি পণ্ডিতগণ, “গুড মর্নিং (good morning)” অর্থ- শুভ সকাল। গুড আপটারনোন (good afternoon) অর্থ-শুভ বিকাল, “গুড় ইভিনিং (good evening)” অর্থ- শুভ সন্ধ্যা, “গুড় নাইট (good night)” অর্থ- শুভ রাত্রি ইত্যাদি সম্বোধনবাণী উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু ব্যবপকতা ও বিশালতার দিক দিয়ে, প্রায় চারসহস্র বছর পূর্বে সৃষ্ট শান্তির বাণী ‘ওঁম’ এর নিকট অনেক পরে সৃষ্ট, সম্বোধনবাণী বা শান্তির বাণিগুলো শিশু তুল্য বৈ নয়। কালক্রমে অনেক সম্বোধনবাণী উদ্ভাবন হোলেও বাঙালী সাধুগণের উদ্ভাবিত ‘ওঁম’ এর মতো মহাগুরুত্ব বহনকারিবাণী, আজো উদ্ভাবিত হতে দেখা যায়নি বিশ্বের কোথাও {স.অ+অ+ম>}ওঁমশান্তি (রূপ)বি বাংভারতীয় উপমহাদেশের বন্দনা বা আশির্বাদবাণী বিশেষ। বর্তমানে লালনপন্থিদের মধ্যেও তেমন বিশেষ এক সম্বোধনবাণির প্রচলন দেখা যায়। লালন প্রেমিক, লালন অনুরাগী, লালন ভক্ত, লালন অনুসারী ও লালন ঘরানার একজন, অপরকাউকে দেখতে পেলেই উভয়েই আলেক সাঁই বলে সম্বোধন করে করমর্দন করে থাকেন। আবার আলাপীর মাধ্যমে কথা বলার সময়ে তারা একে অপরকে “আলেক সাঁই” বলেই সম্বোধন করে থাকেন।
(খ) অন্নাদি গ্রহণের অনুমতিবাণিরূপে “আলেক সাঁই”
লালন ঘরানার যে কোন আশ্রমেই অন্ন বা প্রসাদ পরিবেশনের পর, অন্ন বা প্রসাদ গ্রহণের অনুমতি স্বরূপ“আলেক সাঁই” মহানাদ উচ্চারণ করা হয়। লালন ঘরানার অনুযায়ী, যে কোন প্রকার অন্ন বা প্রসাদ প্রদান করা হোলেই, আয়োজক কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত, তা ভক্ষণ করার নিয়ম নেই। তাদের মতে সবাই একসঙ্গে অন্ন গ্রহণ ব্যতীত, একাকী অন্ন বা প্রসাদ গ্রহণ করা, কারো পক্ষেই উচিৎ নয়। তাই তারা বলে থাকেন-“পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই ভক্ষণ- ছাগলের লক্ষণ।” বিধায় যে কোন অনুষ্ঠানে, যে কোন প্রকার অন্ন বা প্রসাদ পরিবেশনের পর আয়োজক কর্তৃপক্ষের মহানাদের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। আয়োজকদের পক্ষ হতে মহানাদ উচ্চারিত হোলেই, কেবল অন্ন বা প্রসাদ গ্রহণ করা আরম্ভ করতে হয়।
‘আলেক সাঁই’ উচ্চারণকারির বিবরণ
নারিবৎ লম্বা চুল বিশিষ্ট, যে কোন ব্যক্তি, উদাম মাথায় মহানাদ “আলেক সাঁই” উচ্চারণ করতে পারবেন। তবে যাদের মাথায় চুল নেই, তারা একটি গামছা বা অন্য কোন কাপড় মাথায় দিয়ে, মহানাদ “আলেক সাঁই” বাণিটি উচ্চারণ করতে পারবেন। মহানাদকারী নারিবৎ লম্বা চুলবিশিষ্ট হওয়ার কারণ হলো- এ ঘরানা অনুযায়ী, যারা শুক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে, নর হওয়া সত্ত্বেও, নারী চরিত্র ধারণ করতে পেরেছেন, তারাই সিদ্ধ সাধক। তাদের ধারণা হলো- নারির নিকট যেমন কোন শুক্র নেই, তদ্রপ ঊর্ধ্বরেতা সাধকের নিকটও শুক্র নেই বিধায় একজন নারী ও একজন সিদ্ধ সাধকের মধ্যে, মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। তাই নারিচরিত্র গ্রহণকারী এরূপ সিদ্ধ সাধকগণই এ মহামান্য “আলেক সাঁই” ধ্বনি উচ্চারণের অধিক উপযুক্ত। এ সূত্র হতেই তারা পুরুষের নারিবৎ লম্বা চুল রাখার প্রথা উদ্ভাবন করেছেন। তাদের মতে ঊর্ধ্বরেতা হওয়ার পূর্বে, কোন সাধকই লম্বা চুল রাখতে পারবেন না। ঊর্ধ্বরেতা হওয়ার পরই কেবল স্ব স্ব গুরুর গোঁসাইয়ের নিকট হতে, নারিবৎ লম্বা চুল রাখার অনুমতি পাওয়া যায়, বা দেওয়া হয়। আবার যাদের মাথায় চুল নেই, তারা একটি গামছা বা অন্য কোন কাপড় মাথায় দিয়ে, এ মহামান্য “আলেক সাঁই” ধ্বনি উচ্চারণ করতে পারবেন- এরূপ করার কারণ হলো- সব সময় সিদ্ধ সাধক পাওয়া যায় না। আর সিদ্ধ সাধক ছাড়া নারিবৎ লম্বা চুল রাখারও, কোন অনুমতি নেই। লম্বা চুল যেভাবে সমস্ত মাথাকে ঢেকে রাখে, তদ্রপ পরিধানকৃত বসন ভিন্ন, গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে সারামাথা আচ্ছাদিত করলে, মানুষকে নারিবৎই মনে হয় বিধায় তারা চুলের পরিবর্তে, গামছা বা অন্য কোন কাপড় মাথায় দিয়ে, মহানাদ “আলেক সাঁই” ধ্বনি উচ্চারণ করার প্রথা উদ্ভাবন করেছেন। তবে এটা অগত্য পড়েই করা হয়। যেমন কখনো কখনো দুধ না পাওয়া গেলে, হলো পান করা হয়। অর্থাৎ দুধের স্বাদ ঘোল দ্বারা মিটানো হয় আর কী। নারিবৎ লম্বা চুলবিশিষ্টব্যক্তি উদাম মাথায় ও লম্বা চুলহীনব্যক্তি গামছা বা অন্য কোন কাপড় পরিহিত অবস্থায়, সর্ব সম্মুখে মহানাদ “আলেক সাঁই” বলে, একটি ভক্তি দিয়ে থাকেন। “আলেক সাঁই” নামক এ মহানাদই অন্ন বা প্রসাদ গ্রহণের অনুমতিবাণী। তবুও ভক্তিদাতা আবার ‘আলেক সাঁই’ বলে ভক্তি হতে মাথা উত্তোলন করে, আবার উচ্চস্বরে বলে থাকেন- “নিন গো সাধু গুরুগণ, যার যার সেবা নিন।” এরপর সবাই অন্ন বা প্রসাদ গ্রহণ আরম্ভ করে থাকেন। সভা বা সমাবেশ বড় হলে- ভক্তিদাতার কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে, মুখে মুখে বা যে কোন প্রকার শব্দালের (মাইক) দ্বারা অন্য এক বা একাধিক ব্যক্তি বসে বসে বা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ স্বরে, একবার মহানাদ “আলেক সাঁই” ধ্বনিটি উচ্চারণ করে থাকেন- যা সভা বা সমাবেশের সবাই শুনতে পান। সভা বা সমাবেশ ছোট হলে, কোন শব্দাল ব্যবহার করা হয় না। শুধু মুখে মুখেই “আলেক সাঁই” এ মহানাদ ধ্বনিটি একবার উচ্চারণ করা হয।
(গ) গণভক্তির পূর্বে “আলেক সাঁই” ধ্বনির ব্যবহার
প্রাতঃভক্তি মধ্যাহ্ন ভক্তি ও সান্ধভক্তি বা অন্য কোন বিশেষ গণভক্তির পূর্বে, সর্ব সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, বা সবাইকে একসঙ্গে ভক্তি প্রদানের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য “আলেক সাঁই” নামক এ মহানাদ ধ্বনি সর্বোচ্চ স্বরে উচ্চারণ করা হয়। ফলে উপস্থিত সবাই প্রায় একই সঙ্গে ভক্তি প্রদান করতে পারেন। তবে একমাত্র গণভক্তি ব্যক্তি ব্যতীত একাকিভক্তির জন্য কখনই “আলেক সাঁই” এ মহাধ্বনি উচ্চস্বরে উচ্চারণ করা হয় না।
(ঘ) যে কোন বিপদাপদের সময় “আলেক সাঁই” ধ্বনি
লালন ঘরানা অনুযায়ী যে কোন প্রকার কঠিন বিপদের সময়, অতি উচ্চস্বরে এ “আলেক সাঁই” রূপ মহানাদ ধ্বনিটি, পুনঃপুন উচ্চারণ করা হয়। যেমন- প্রবল ঝড়বৃষ্টি, প্রবল ঝড় প্রবাহ, শিলাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, চুরি, দস্যুতা বা যে কোন প্রকার সতর্কতার জন্য এ “আলেক সাঁই” রূপ মহানাদ ধ্বনিটি উচ্চারণ করা হয়।
(সংক্ষিপ্ত সংকলন)
তথ্যসূত্র
লালন ঘরানা পরিচিতি
বলন কাইঁজি
©somewhere in net ltd.