নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সব আলো নিভে গেলে- সব পাখি নীড়ে যায়... আমার সূর্য ডোবে,হতাশায়, হতাশায়

পথভ্রষ্ট বালক

" পথের খোঁজে ঘুরে আমার স্বপ্ন হলো নষ্ট, স্বপ্ন দেখে তাইতো আবার হলাম পথভ্রষ্ট "

পথভ্রষ্ট বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

"তুমি যে গিয়াছো বকুল বিছানো পথে..."

২৮ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:২৯

১.







প্রতিটি মানুষের ছোটবেলায় ছড়া আর কবিতাগুলি হয় মায়ের মুখে শোনা। আমার জন্যে বেশিরভাগ সময় সেটা ছিল আমার দাদুমনির কোলে মাথা রেখে। কবিতা ছিল দাদুমনির খুব ভালবাসার জিনিস, সারাক্ষণ পড়ত উপন্যাস আর কবিতা। নিজেও কবিতা লিখত, আবৃত্তিও ছিল অসাধারণ। যখন কবিতা বুঝতে শিখেছি তখন দাদুমনির লেখা কবিতা পড়ে অবাক হয়ে ভেবেছি প্রায় স্বশিক্ষিত একজন মানুষের সাহিত্যবোধ এত উঁচুমানের হয় কিভাবে!















২.







ছোটবেলায় একদম খেতে চাইতাম না আমি, ছিলাম প্রচন্ড দুর্বল আর হাড় জিরজিরে (আমার এখনকার বিশাল বপু দেখলে সেটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন, আমিও জানি)। খেতে চাইতাম না একদম। তখনো আমরা রাজবাড়ীতে থাকি। আম্মুর নাভিশ্বাস উঠে যেত আমার পিছনে খাবার নিয়ে ছুটতে ছুটতে, খেতে না চাইলে মাঝে মাঝে মৃদু প্রহারও জুটতো। তখন, আমার আম্মুর মার থেকে বাঁচার শেষ আশ্রয় ছিলো দাদুমনি। আমি বলতাম, দাদুমনি তুমি আম্মুকে থামাও, তুমি কবিতা শোনালেই আমি খাবো। কবিতা শেষ হতেই আমি একছুটে বাইরে... পিছনে দাদুমনির হতাশ কন্ঠ... আমাকে বোকা বানাইলি, ফাজিল!















৩.







তখন আমরা রাজশাহীতে, স্কুলে পড়ি আমি। দাদুমনি মাঝে মাঝেই আসতো আমাদের ওখানে, আর আমার স্বাধীনতার শুরু। সন্ধ্যা হতেই আমার শুরু হতো তীব্র ব্যাথা(সেটা মাথা, বুক, পেট, হাত, পা যেকোন জায়গায় হতে পারে)। আব্বু আম্মু খুব ভাল করেই জানতো আমার কুবুদ্ধি, পাত্তা দিত না মোটেই। কিন্তু এইখানেও শেষ ভরসা দাদুমনি... আমাকে বিশ্বাস এবং আশ্রয়দান। আর দাদুমনি থাকার ফলে স্বাভাবিকভাবেই শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়তো। আমাকে আর পায় কে?















৪.







ঈদের দিন সালামি নেবার সময় শুরু হতো আরেক মজা। দাদুমনিকে বলতাম অমুক অমুক আমাকে অনেক টাকা দিসে, তুমি নিশ্চয়ই আমাকে তার চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসো, এর চেয়ে বেশি টাকা তোমাকে দিতেই হবে। বলা বাহুল্য পুরাটাই থাকতো নিছক কল্পনা। ব্যাস, এরপর আমাকে আর পায় কে!















৫.







আমি বড় হচ্ছিলাম, স্কুল ছেড়ে কলেজে। দাদুমনিরও বয়স হচ্ছিল। কয়েকবার পা ভাঙল তার সেসময়। বিছানা থেকে নামতে খুব কষ্ট হত। রাজশাহীতে যেতে পারত না আর। কিন্তু তার প্রাণশক্তি ছিল অফুরন্ত। আমরা সবাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলেই লাঠিতে ভর দিয়ে নেমে আসত। আমার পছন্দের হাঁসের মাংস, চিতই পিঠা বানানো হত। বাসায় আম্মু হাঁসের মাংস রাঁধলে আমি এখনো বলি, আর যাই কর দাদুমনির মত হাঁসের মাংস তুমি কোনদিনও রাঁধতে পারবা না।















৬.







২০০৪ এর শেষদিকের ঘটনা। দাদুমনি হঠাৎ খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ল। কিছু খেতে পারতো না। সারাক্ষণ পেটে অসহ্য ব্যথা। ঢাকায় আনা হল তাকে, চাচারা বিদেশ থেকে চলে আসলো। অবশেষে ২৫ ডিসেম্বর(সম্ভবত) ধরা পরলো Malignancy. Metastasis হয়ে গেছে ততদিনে। ডাক্তার এতদিন কিছুই ধরতে পারেনি। আমি দেখতে গেলাম দাদুমনি কে হাসপাতালে। নতুন পাওয়া ক্যামেরায় দাদুমনির কিছু ছবি তুললাম। ফিরে এলাম রাজশাহী, কদিন বাদে এইচ এস সি। চিকিৎসা চলছিল পুরোদমে। কিন্তু তখন বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে। Diagnosis এর মাত্র ১৫ দিনের মাথায়, ১০ জানুয়ারী ২০০৫, দাদুমনি চলে গেল, আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে।























আরও কত কত স্মৃতি মাথার ভিতর ঘুরপাক খায়। প্রতিটা ঘটনার প্রতিটা মুহুর্ত এখনো আমার স্মৃতিতে এতই উজ্জ্বল যে, সত্যটা মেনে নিতে এখনো খুব কষ্ট হয়। দাদুবাড়ি গেলে কান্নায় বুক ভেঙ্গে আসতে চায়... এই বাড়ির প্রতিটা প্রান্তে আমার দাদুমনির স্পর্শ, আমার দাদুমনির স্মৃতি মিশে আছে। দাদুভাইও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে দুবছর। বাড়িটা এখন নিরব, শূন্য, আমার বুকের ভেতরটাও।















আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আমার দাদুমনি কে ভাল রেখো, বেহেশত নসিব কোরো তাকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.