নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পুংটা পোলা

পুন্টামি ছাড়া আমার আর কোন কাজ নাই

পুংটা পোলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক পঠিত একটি কবিতার নাম বলতে ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি নাম সবার আগে উচ্চারিত হবে। অন্ধকারের অবগুন্ঠনে চিত্রিত এই নারী চরিত্রটির আসল পরিচয় কি তা জানা এখন আর সম্ভব না। লিওনার্ডো দ্যা ভিঞ্চির মোনালিসা কিংবা শেক্সপিয়ারের ‘কৃষ্ণ মহিলা’র মত তিনিও এক অমিমাংসিত চরিত্র। জীবনানন্দের জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে যার পরিচয় চিরদিনের জন্য তিমিরতলে নিমজ্জিত হয়ে গেল। কিন্তু বনলতা সেন কবিতার প্রতিটি শব্দ তাৎপর্য্য থেকে আমরা তার পরিচয়ের খুজে বের করার চেষ্টা করতে পারি।



বনলতা সেন কবিতাটি প্রকাশ হবার আগেই ‘কারুবাসনা’য়, কবি বনলতার রূপের বর্ণনা দেন। সেখানে তিনি বনলতার প্রতি তাঁর মোহের প্রকাশ ঘটান। নিচের অংশ বিশেষ উদ্ধৃতি থেকে তাঁর রচনার কৌশল ও বনলতার সুনিপুন চিত্র দেখা যাবে।



“দক্ষিণ আকাশের সে-ই যেন দিগবালিকা, পশ্চিম আকাশেও সে-ই বিগত জীবনের কৃষ্ণমণি, পুব আকাশে আকাশ ঘিরে আছে তারই নিটল কাল মুখ। নক্ষত্রমাখা রাত্রির কাল দিঘির জলে চিতল হরিণীর প্রতিবিম্বের মতো রূপ তার-প্রিয় পরিত্যক্ত মৌনমুখী চমরীর মতো অপরূপ রূপ। মিষ্টি ক্লান্ত অশ্রু'মাখা চোখ, নগ্ন শীতল নিবারণ দু'খানা হাত, ম্লান ঠোঁট, পৃথিবীর নবীন জীবন ও নবলোকের হাতে প্রেম বিচ্ছেদ ও বেদনার সেই পুরনো পল্লীর দিনগুলো সমর্পণ করে কোনো দূর নিঃস্বাদ নিঃসূর্য অভিমানহীন মৃত্যুর উদ্দেশ্যে তার যাত্রা।



সেই বনলতা-আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত। কুড়ি-বাইশ বছর আগের সে এক পৃথিবীতে...আচঁলে ঠোঁট ঢেকে আমার ঘরের দিকেই আসছিল। কিন্তু কি যেন অন্যমনস্ক নত মুখে মাঝপথে গেল থেমে, তারপর খিরকির পুকুরের কিনারা দিয়ে, শামুক-গুগলি পায়ে মাড়িয়ে, বাঁশের জঙ্গলের ছায়ায় ভিতর দিয়ে চলেগেল সুনিবিড় জামরুল গাছটার নিচে একবার দাঁড়াল, তারপর পৌষের অন্ধকারের ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল।



অনেকদিন পরে সে আবার এল; মনপবনের নৌকায় চড়ে, নীলাম্বরী শাড়ি পরে, চিকন চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আবার সে এসে দাঁড়িয়েছে; মিষ্টি ঠাণ্ডানির্জন দুখানা হাত, ম্লান ঠোঁট, শাড়ির ম্লানিমা। সময় থেকে সময়ান্তর, নিরবিছিন্ন, হায় প্রকৃতি, অন্ধকারে তার যাত্রা।” ( কারুবাসনা, রচনাকাল-১৯৩৩ )





রচনাটি কবির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা প্রকাশ করেন নি এমনকি কেউই জানত না এই কারুবাসনার কথা। কেন এই গোপনতা? তবে কি তিনি পুকুর পাড়ের এই বনলতাকেই ইঙ্গিত করেছেন? মনে হয় না। যদি তাই হত তাহলে এত প্রাচীন ইতিহাস বেদের প্রয়োজন ছিল না। যদিও বদ্ধদেব বসু, বনলতা সেনের প্রকাশক ও সাহিত্যিক মনে করতেন এই গোপন স্বভাবি কবির কবিতায় যেসকল শব্দ তিনি ব্যাবহার করেছেন তা কেবলই ধ্বনি মাধুর্য্যের জন্য। এর মাঝে কোন আধ্যাত্নিকতা নাই, কোন গভীরতা নাই। এই ব্যাখ্যা জীবনানন্দকে কেবল খাটোই করে না – সেই সাথে তার রচনাকেও নিন্মমানের বলে সমালোচনা করা হয়। অথচ জীবনানন্দের বনলতা কবিতার প্রতিটি লাইন দিয়ে এক একটি বই রচনা অসম্ভব না। এই ধরনের সমালোচক থেকে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন নাই। তাই দেখা যায় সোনার তরীর মত নিটোল একটি কবিতায়ও সমালোচকেরা সাম্যবাদের বিরুদ্ধে পুজিবাদের অত্যাচার লক্ষ্য করেছেন।



আগে একটি পোষ্টে বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগত আর বিদর্ভ নগর নিয়ে সামান্য আলোচনা করলেও বিদিশার নিশা আর শ্রাবস্তির কারুকার্য নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,’। মধ্য প্রদেশের একটি অঞ্চলের নাম ছিল বিদিশা যা এককালে বেস নগর নামে পরিচিত ছিল। প্রাচীনসভ্যতায় এখানে উদয়গিরি নামে যে উপত্যকা পাওয়া যায় তাই এককালে নৈচাগিরি নামে পরিচিত ছিল। পরিত্যাক্ত এই বৌদ্ধ বিহারে এক সময় পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে গুহাগুলিতে চলত কামকেলী। বারাংগনাদের কল কাকলীতে মুখরিত এই এই নৈচাগিরিতে রাতের বেলায় তারা পুরুষের গায়ে চন্দন মেখে সুভাষিত করত।



তাই বিদিশার নিশা বলতে এখানে কবি রাতের অন্ধকারের সাথে তুলনা করেন নাই। তিনি তুলনা করতে চেয়েছেন সেই সুভাষিত মোহের সাথে। কথা হল কবিতাটির রচনাকাল ১৯৩৪ সালে কবির পক্ষে কি এতসব জানা সম্ভব ছিল? তিনি কি জেনে শুনেই এসব উপমা ব্যাবহার করেছেন? এজন্যই কি বনলতাকে কেবল রাতের অন্ধকারে দুদন্ডের শান্তির জন্য দেখা যায়? তবে কি তিনি ‘পন্য স্ত্রী’ ছিলেন। ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপকের পক্ষে এসব জানা অসম্ভব এই ধারনা করা ঠিক না। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি কবির অনুরাগ ছিল যথেষ্ট। এমনকি ইসলামের প্রতিও তাঁর ছিল অদম্য কৌতুহল। কোন এক পোষ্টে ধীরে ধীরে আমরা হয়ত সেইসবও জানতে পারব।



জানার জন্য প্রয়োজন তৃষ্ণিত হ্রিদয়। প্রতিটি উচ্চারিত শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম। আর সেই শব্দগুলি যদি আসে জীবনানন্দ থেকে তাহলেত কথা’ই নাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.