নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পুংটা পোলা

পুন্টামি ছাড়া আমার আর কোন কাজ নাই

পুংটা পোলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়াজদা - (মুভি রিভিও)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৫

মুভিটি যদি না দেখেন তাহলে হয়ত মিস করবেন। গল্পটি খুবই সরল স্বাভাবিক। তবে এই অসামান্য সামান্য ছবিটিই সেখানে সমাজ পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে। অজান্তেই হয়ত পুর্ব দিগন্তে বিরাট সুর্য্য উঠে গেছে। বলছিলাম “ওয়াজদা” (Wadjda) মুভিটির কথা। কয়েকটি কারনে এই ছবিটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। প্রথমতঃ এটি সৌদি আরবে নির্মিত প্রথম পুর্ন দৈর্ঘ্য চলচিত্র, দ্বিতিয়তঃ এর নির্মাতা হাইফা আল মনসুর একজন মহিলা, তৃতিয়ত ছবিটি নারীদের বঞ্চিত অধিকারের ইশারা দিয়েছে খোদ সৌদি আরবে। যদিও সৌদিতে নারী জাগরনের সহসা সূযোগ হবে বলে মনে হয় না।



কাহীনি সংক্ষেপ হল একজন অল্প বয়সি মেয়ে, ওয়াজদা (আসল নাম ওয়াদ মোহাম্মদ) তার কাছাকাছি বয়সের ছেলেদের সাইকেল চালাতে দেখে তারও মনে হয় যদি তার একটা সাইকেল থাকত! আইনতঃ নিষিদ্ধ না হলেও সৌদি সমাজ ব্যাবস্থায় মেয়েদের সাইকেল চালানো নিয়ম নাই। ইচ্ছা পুরনের জন্য সে প্রথমে তার মাকে অনুরোধ করে যেন তাকে একটি বাইক কিনে দেয়। সংগত কারনেই তার মা অপারগ। তাই বলে ইচ্ছাপুরনের ইচ্ছা বসে থাকে নাই। ওয়াজদা নিজ হাতে মেয়েদের ব্রেসলেট তৈরি করে সেগুলি স্কুলে বিক্রি করে টাকা জমাতে থাকে। কিন্তু এমনি করে কতদিনে সে ৮০০ রিয়ালের বাইক কিনবে? ওদিকে যে বাইকটি তার পছন্দের সেটা কিনতে অনেকেই আগ্রহী।





এই অবস্থায় স্কুলে কোরানের উপর একটি প্রতিযোগীতার সুযোগ আসে। বিজয়ী প্রথম পুরস্কার ৮০০ রিয়াল। ধর্ম পাঠে অমনোযোগি ওয়াজদা ভাবে এই তার সুযোগ। সে তার জমানো টাকা থেকে কিছু ব্যায় করে কোরানের উপর কিছু মাল্টিপল কুইজের ডিভিডি কিনে আনে। এবং নিজেকে ট্রেইন আপ করতে থাকে। অন্য দিকে মায়ের সহযোগিতায় সে সুর করে কোরান তেলওয়াত শিখে। যদিও সে সুর করে কোরান তেলওয়াত করাকে একটি লজ্জাস্কর বিষয় বলে মনে করে তবুও স্বপ্নের বাইকের জন্য সে শুদ্ধ ভাষায় তেলওয়াত শিখে নেয়। যাই হোক ঘটনার সংক্ষেপ করি – প্রতিযোগিতায় সে প্রথম হয়। এবং স্কুল প্রিন্সিপাল তাকে প্রশ্ন করে পুরস্কারের টাকা দিয়ে সে কি করবে। সে যখন উত্তরে বলল যে সে একটি বাইক কিনবে সংগে সংগে তার পুরস্কার তুলে নেয়া হয়। বলা হয় তার ঐ প্রাপ্য পুরস্কারের টাকাটা প্যালেষ্টাইনের গরীবদের জন্য চ্যারেটি ফান্ডে পাঠানো হবে।



চৌকষ ওয়াজদা উত্তরে কি বলেছিল সেটা বলছি না কারন সেটি পাঠকদের খুজে নেয়ার জন্য রেখে দিলাম। শেষ পর্যন্ত্য ওয়াজদা কি বাইটি কিনতে পেরেছিল? সে কি সৌদি সমাজে বাইক চালাতে পেরেছিল? তা জানার জন্য হয়ত ছবিটি দেখতে হবে। আগ্রহী কেউ যদি ছবিটি দেখেন তাহলে লক্ষ্য করেবেন ফ্যামেলি ট্রিতে ওয়াজদার তার নাম যোগ করে - কিন্তু সকালে উঠে কি দেখতে পায়! শেষ দৃশ্যে লক্ষ্য করবেন একদিকে তার বাবা যখন বিয়ে করে অন্যদিকে তার মা-মেয়ে কি অনুরাগে সিক্ত।



পরিচালক হাইফা আল মনসুর সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে পারি। আমেরিকান স্বামী অপ সন্তান নিয়ে তিনি বাস করেন বাহরাইনে। ওয়াজদা ছবিটিতে তেমন বেশি কিছু দেখিয়ে সমাজের বিরাগবাজন হতে চাননি। তিনি চেয়েছেন সামান্য নাড়া দিতে। পুরুষ শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত সৌদি সমাজে মেয়েদের উপর আদিপত্যের কিছুটা আংগুল দিয়ে ছবিটিতে দেখানো হয়েছে বটে তবে চোখে খোচা দেননি। পরিচালক হাইফা আল মনসুরের এটি পুর্ন দৈর্ঘ্য চলচিত্র হলেও এর আগে তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি নিয়ে কাজ করে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। তার নির্মিত শর্ট ফিল্ম “The Bitter Journey and the documentary Women Without Shadows” এখানে বলে রাখা দরকার সৌদিতে একসময় কিছু সিনেমা হল থাকলেও এখন সেখানে কোন সিনেমা হল নাই। মানুষ টিভি আর ডিভিডি দেখে থাকে। আশির দশকে মিশরিয়, টার্কিশ ও হিন্দি ছবি সেখানে বেশ প্রভাব বিস্তার করলেও এখন মুভিগুলি ব্যান রয়েছে।



সৌদিতে মহিলারা প্রকাশ্যে পুরুষের উপর কতৃত্ব করতে পারে না। তাই পরিচালক সরকারের কাছ থেকে ছবি বানানোর অনুমতি পেলেও তাকে কাভার ভ্যানের ভিতরে বসে ছোট টিভি দেখে ওয়াকি টকির মাধ্যমে নির্দেশ দিতে হয়েছে। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে তিনি ছবিটি নির্মান করতে অনুপ্রেরিত হয়েছেন তারই ভাস্তির বাইক চালানোর ইচ্ছা থেকে। প্রসংগত বলে রাখি – সৌদির ঘরে ঘরে পপ-কালচার জনপ্রিয় হলেও প্রকাশ্যে অনুশীলন একেবারেই অসম্ভব। তবে ছবিটিতে সৌদি অন্দর মহলে মহিলাদের পোশাক আশাকের যে স্বাধীনতা দেখানো হয়েছে তাতে করে বুঝা যায় ঘরের ভিতরে তারা আমাদের নারীদের মত পরাধিন নয়। আশার কথা হল – “সৌদিতে ব্যাক্তিগত দর্শন ফলানো কিংবা ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কেউই সহ্য করবে না। কিন্তু এর মাঝেই যে অল্প একটু ফাকা জায়গা রয়েছে সেখান থেকে কিছু করতে চাইলে কেউই বাঁধা দিবে না”।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.