![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেকদিন পরে আজ একটু বেশি ঘুমিয়েছি। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে প্রায় নয়টা। হাত মুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে বসেছি। বাবা আগেই নাস্তা শুরু করেছিলেন। প্রসংগ ক্রমে বাংলাদেশের আধুনিক রাজনীতির চলে এল। তাঁর সাথে রাজনীতি নিয়ে কথা বলা হয়ে উঠে না। আজ যখন প্রসংগ এল তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম ৬৯ থেকে ৭১ সালের কিছু প্রসংগ। যেমন আমাদের অঞ্চলে গন অভ্যুত্থানের সময় তাদের বয়সী ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল, একাত্তরের ৭ই মার্চের ভাষনে কি মানুষ উদ্ধুধ হয়েছিল নাকি সামরিক বাহিনী থেকে কোন এক মেজরের ঘোসনা শুনে মানুষ অকাতরে দেশের জন্য প্রান দিতে সংঘবদ্ধ হয়েছিল। এইসবের উত্তর আমাদের সকলেরই জানা আছে, তবুও একজন প্রতক্ষ্য দর্শীর কাছ থেকে নিজের কানে শুনতে চাই।
‘আজকে যে বিএনপি জেনারেল সাহেবকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট দাবী করে এতে আপনার প্রতিক্রিয়া কি’? উত্তরে তিনি বললেন – ‘বাংলাদেশের ইতিহাস লিখা হয়ে গেছে। প্রকৃত ইতিহাস বইয়ের পাতায় নয় মানুষের হ্রিদয়ে গেথে গেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের জন্ম, আমাদের একাত্তর, আমাদের স্বাধিনতার প্রকৃত সত্য ঠিকই পৌছে যাবে’। হুম, ঠিক তা হয়ত যাবে। একজন ডাইল খোর মহামুর্খের খোরের মত একটা কিছু চালিয়ে দিতে চাইলেই কি বাঙালি জাতি তা মেনে নিবে! আমরা কি এইত মুর্খ? আমাদের বুদ্ধিভিত্তি কি এতই নীচে। আমার সবচেয়ে অবাক লাগে এত অসভ্যের মত কথা বলার সাহস এরা কোথায় পায়। জাতি কি তাহলে এতই অন্ধ হয়ে গেছে বলে তারা মনে করে? অবশ্য করতেই পারে – যেই দেশের মানুষ মনে করে চাদের রাজাকারের ছবি দেখা যায় সেই দেশে অথবা তাদের কাছ জিয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট, খালেদা জিয়া ভার্জিন মেরি, তারেক সোনার ছেলে বিশ্বাস হতেই পারে।
যাই হোক, বাবা ছেলের আলোচনা এগুতে লাগল। বাবার মতে স্বাধিনতার প্ল্যাট ফরম তৈরি হয়েছিল অনেক আগে। ৬৯ সালে গন অভ্যুত্থানের সময় জহিরুল ইসলাম নামে একজন সামরিক বাহীনির উচ্চতর কর্মকর্তাকে পাকিস্তানিরা মেরে বাঙালির মনোভাব টেষ্ট করেছিল। তখন বুঝেছিল শেখ মুজিবকে হজম করা সহজ হবে না। সত্তরে এসে টের পেয়েছিল মুজিব কেবল বড় বড় কথাই বলে না কাজে কর্মে সে অনেক দুর এগিয়েছে। ধানাই পানাই করে ছয় দফাত দুরের কথা উল্টো বাঙালির কন্ঠকে চিরদিনের মত নিস্তব্দ করতে পাকিস্তান এক জাতির উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় এবং আমাদেরকে একদফা একদাবিতে কর্নার করে। সত্যিকার অর্থে বাঙালিকে তারা কোনদিন মানুষ হিসাবে গন্যই করে নাই। তাদের আচরনে মনে হত বাঙালি যেন তাদের ক্রীতদাস। ক্রীতদাসে আবার কিসের দফা কিসের দাবী?
কথা বলতে বলতে দুটি বিষয় পরিস্কার হল – এক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোসনা হয়েছে ৭ই মার্চে রেসকোর্সের ময়দানে, দুই বাংলাদেশে এর পরে কালুর ঘাট থেকে কিংবা মুজিব নগর থেকেও যেসব ডাক এসেছে সেগুলি কেবল ৭ মার্চের প্রতিধ্বনি।
আমাদের সকালের টেবিলের আলোচনায় পাশে বসে আছে আমার মা। আম্মা দুপুরের রান্নার আয়োজন করছেন। আর ফাকে ফাকে আমাদের সাথে এড করছেন। প্রসংগত বলে রাখি আমার বাবা-মা ছিলেন একই এলাকার সমবয়সী মাদ্রাসা এবং প্রাইমারী স্কুল সুইট হার্টস। সুতরাং তারা দুজনই প্রায় একাত্তর ও অবর্তিত সময়গুলিতে প্রায় সমসাময়িক অভিজ্ঞতা। আমি বই পড়ে সমসাময়িক কিছু ঘটনা এড করলাম। যেমন তাজউদ্দীনের দেশ ত্যাগ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করে প্রতিবেশ দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা আদায়, শেখ মনি, খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার লোভ যা পরবর্তিতে শেখ মুজিবের কান ভারী করে মুজিব – তাজউদ্দিন দুরত্ব তৈরিতে সহযোগিতা করে। ফলে মুজিবের শক্তি হ্রাস এবং সরকার পরিচালনায় ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্ত, এবং মানুষের মুজিবের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি কোন কিছু বাদ যায় নাই আজকের নাস্তার টেবিল আলোচনায়। প্রসংগ এসেছে রক্ষীবাহীনির উদ্দ্যেশ্য ও ফল প্রসংগে এসেছে বাকশাল তৈরির প্রয়োজনীতা ও অপ্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা। আমি বললাম বাকশাল প্রসংগে শেখ মুজিবকে বেগম মুজিব বেশ শাসন করেছিলেন – বলেছিলেন ‘এক্ষুনি ঘোসনা দেওয়ার কি ছিল, কয়েকটা দিন অপেক্ষা করা যেত না’? হাসিনার স্বামী শেখ মুজিবের বলতে গেলে নয়নের মনি ওয়াজেদ শেখ হাসিনার মাধ্যমে মুজিবকে তার মতামতে বলেছিলেন বাকশাল তৈরি একটা বিরাট ভুল সিদ্ধান্ত। মুজিব আশ্বাস দিয়ে বলেছিল যেন হাসিনা ওয়াজেদকে বলে দেয় এটা সাময়িক, কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছে না তাই নিজেই সব কিছু দেখাশুনার দায়িত্ব নিতে চান।
অন্যদিকে একটু পিছনে গিয়ে বাবা বলল আওমীলীগের কিছুটা দুর্ভাগ্য যে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে মানুষ ভয় পেয়ে যায়। তোফায়েল শুরু করে সাম্রাজ্যবাদ আর মাওবাদের মাঝামাঝি মুজিব বাদ। অথচ মুজিববাদ বলতে কোন দর্শন সেই কালে কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শেখ মুজিব এইসব তোষামোদি দেখেও না দেখার ভান করেছেন। প্রসংগত বাবা বলল – ‘চুয়াত্তরে মানুষ ভাতের প্রসংগে কৌতুক করে বলত, মুজিবভাত খাও’। সব মিলিয়ে মানুষ সহসাই ধৈয্য হারা হয়ে হতাশ হয়ে পরে। ধারনা করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আসবে না। অন্যদিকে মোশতাক, মোমেনের মত কুচক্রিরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনা প্রায় শেষ। এই জালেই ধরা হবে বড় মাছকে। তাজউদ্দীন আচ করে অনেক চেষ্টা করেও মুজিবের মনে এই কুচক্রিদের ষড়যন্ত্র তুলে ধরতে পারেন নাই। অনেকের ধারনা আত্নবিশ্বাসি শেখ মুজিব যখন বুঝতে পেরেছিলেন তাকে হজম করার মত লোক এই দেশে আছে এবং তারা সক্রিয় তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। এই দেরীর কারনে বাংলাদেশ তার পিতাকে হারাল, হারাল বংগ তাজকে হারল আরও জাতিয় তিন নেতাকে।
এইভাবে হঠাৎ এখানে শেষ করার ইচ্ছা ছিল না। আমাদের আলোচনা একটু উচ্চ স্বরে উঠায় বৌ ঘুম থেকে ঊঠে পরে সেই সাথে মেয়েটাও। চায়ের কাপে শেষ চুমুকে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাপ-ছেলে টেবিল ত্যাগ করলাম। যাবার আগে বাবা বলল এখন মাল্টি মিডিয়ার যুগ। তাই সত্য প্রকাশে যারাই পিছিয়ে পরবে, যারাই মানুষকে মিথ্যা বুলি মিষ্টিতে পুড়ে খাওয়াতে চাইবে তাদেরকেই জনতা বোকা বানাবে।
©somewhere in net ltd.