![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্যরিসের নর্ড ট্রেইন স্টেইশন থেকে বাসায় হেটেই যাওয়া যায়। আঠারশ ছিয়াশি সালে নির্মিত এক নান্দনিক স্টেইশন। রিজিওনাল এক্সপ্রেস রেলওয়ে B থেকে নেমে হাটছি। ব্যাক প্যাকের হাতলে এক হাত। সেই হাতেই উল্টা করে ধরা বইটি। আজকাল রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বদের জীবনী পড়া বিপদজনক। কে জানে কে দেখে আবার কোথায় নালিশ করে। পরে না আবার ফ্রান্স থেকেই ঘুম হয়ে যেতে হয়। আজকাল আবার নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে – পজিশন অপজিশন কোন ব্যাপার না। যে কেউই নাই হয়ে যেতে পারে যখন তখন। যাই হোক আড়াল করে রাখলেও বাঙালির চোখ ফাকি দেয়া মুশকিল। পথের মাঝে আমাকে থামিয়ে এক স্নেহভাজন বন্ধু জিজ্ঞাসা করল – ‘কি বই পড়ছেন’?
আমি পাশ কাটিয়ে বললাম – এইত, তেমন কিছু না। ট্রেইনে সময় পার করা আর কি? কোথায় যাচ্ছ? আমি কথা ঘুরাতে চেষ্টা করলেও নাছোড় বান্দা বইটির পিছনের গাফফার চৌধুরীর নাম লক্ষ করে আমাকে শুনাল – ‘গাফফার চৌধুরির বই পড়ে কোন লাভ নাই। গলায় দড়ি নিয়ে ছাগলকে খুটি দিয়ে আটকে দিলে যেমন একটা বৃত্তের বাইরে যেতে পারে না, সেও তাই। এক শেখ মুজিব ছাড়া সে আর কিছুই বুঝে না লেখেও না। অথচ সে তার প্রতিভাকে অনেক কাজে লাগাত পারত’। অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে সে বলেই যাচ্ছে আর আমি মুখে হাসি ঝুলিয়ে শুনেই যাচ্ছি। একটা পর্যায়ে দেখলাম তার ভান্ডারে আর কিছু অবশিষ্ট নাই। এইবার সে বিদাই নিয়ে চলে যাবে।
আমি দেখলাম ছেলেটির আর কিছু না থাক সে নিয়মিত কলাম পড়ে এইটা সত্য। কিন্তু তার অভিযোগ হল কেন একজন প্রতিভাবান লেখকের লেখার স্টাইলে একজনকে ঘিরেই আবর্তিত হবে। আমি তাকে থামালাম – বললাম যাবার আগে কয়েকটা কথা শুনে যাও। প্রতিটা লেখকেরই নিজস্ব স্বকিয় স্টাইল আছে। বরীন্দ্রথান নিজেও এটা জানতেন – তাই তিনি শেষের কবিতায় আম ফুরালে আতা আনার মত প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন নিবারন চক্রবর্তি। আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে লিখতেন এমন আচ্ছন্ন লেখা লিখতেন যাতে পাঠক সহজে বুঝতে না পারে তিনি কি লিখছেন। আর এই যে গাফফার চৌধুরির কথা বলছ তিনি আলোকিত হয়েছেন শেখ মুজিবিবের অগ্নিশখায়। কেবল তাই নয় গাফফার, মুসা আর ফয়েজ আহমেদকে মুজিব ডাকতেন ‘আপদ বিপদ আর মুসিবত’ নামে। মুজিবের ব্যাক্তিত্বের সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা সারা জীবনের অন্য কিছু নিয়ে ভাবার অবকাশ কোথায় পাবেন? মুজিবের বিশালতা নিয়ে বিশ্লেষন করেইত জীবন চলে যায়। আর সেই চেষ্টাকে অব্যাহত যারা রেখেছেন তাদের কারনেইত আজ আমাকে কেউ মুজিবের নামে কুৎসা কানে ঢুকাতে পারে না। কিংবা আজকে যেই নেতা ও পিতা নিয়ে নানা রটনা রটছে তা আমাকে ছুতে পারে না।
আরও কিছু কথা শুনে যাও – যে বইটি প্রায় এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি এটি গাফফার চৌধুরীর বই না। এটি এবি এম মুসার লেখা ‘মুজিব ভাই’। এর ভুমিকা লিখেছেন গাফফার চৌধুরি। সকলের বন্ধু মুজিবের নানা কিংবদন্তির ইতিহাস আছে এই বইয়েতে। জানবা মুজিবের দেশ প্রেমের বিরল সব তথ্য। কেবল কৃতিই না আছে মুজিবের জীবনের কৌতুকময় নানা মুহুর্তগুলির উপাখ্যান। এখানে পাবে বেগম মুজিব অর্থাৎ ‘রেনুর’ জীবন কাহীনির নানা অজানা কথা। আর যদি জিজ্ঞাসা কর কি হবে জেনে – তবে জেনে রাখ নিজের জন্যই এসব জানতে হবে। কোথাও তর্ক করে জিতে আসার জন্য না। অন্যথায় ৮ম শ্রেনী পাশেরা তোমাকে ইতিহাসের জ্ঞ্যান দিয়ে হুগায় বাশ ডুকাবে। আমার মুখে ‘হুগা’ উচ্চারব শুনে এতক্ষনে বেচারা বুঝে গেছে আমি ভালর ভাল কিন্তু পাজির চেয়েও বেশি পাজি।
অবস্থা টের পেয়ে বন্ধুটি প্রসংগ কিছুটা মেনুওভার করতে চাইল। আচ্ছা ভাই পড়ব, কিন্তু রিপি এইটা কি করল! তাজউদ্দিনের উদৃতি দিয়ে একেবারে শেখ সাহেবকে কাইত করার অপচেস্টা – এইটা কি ভাল হল? উত্তরে আমি বললাম হাতে বেশি সময় নাই তাই আজকে বেশি কিছু বলতে পারব না। তবে এইটা জেনে রাখ – ইতিহাসের পাতা থেকে যারা পৃষ্ঠা চুরি করে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে তারাও চোর। না শারমিন আহমেদ রিপিকে আমি অসাধু বলব না। তার চেষ্টা হল কি করে লাইম লাইটের নিচে আসা যায়। একটা উদাহরন দেই – তাজউদ্দিনকে নিয়ে একটি মাহাবুব করিম একটি বই সম্পাদনা করেছিলেন তার নাম ছিল – ‘তাজউদ্দিন আহমেদ নেতা ও মানুষ’। নামের সাথে ‘তাজউদ্দিন আহমেদ নেতা ও পিতা’ বইটির নামের মিল পাও? নেতা ও মানুষ আর নেতাও পিতা - এই দুই বইয়ে দুই ধরনের কথা লিখা। নেতা ও মানুষ বইয়ে অনেক গন্য মান্য ব্যাক্তি তাজউদ্দিনের স্মৃতি চারন করেছেন। জোহরা তাজউদ্দিন এবং ব্যারিষ্টার আমীরুল ইসলামের লেখাও আছে। ব্যারিষ্টার আমীরুল ইসলামের লেখাটির প্রথম পৃষ্টাতেই পাবে তাজউদ্দিন ঘাড়ে বন্ধুক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন। আর রিপি লিখেছে তিনি কোমরে পিস্তল গুজে বের হচ্ছিলেন। একজন চাক্ষুস সাক্ষির কথা তুমি বিশ্বাস করবা নাকি একজন শিশুর যার সেসময় কোন বুঝ হয়েছিল কিনা সন্দেহ আছে। এজন্যই বলি পড় তাইলেই কেউ তোমাকে তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারব না।
©somewhere in net ltd.