নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম। অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম, অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি ছিলাম কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়। আমি নিজের হাতে গলা টিপে আত্মহত্যা করেছিলাম ১৮৪৪ সালে ৩১ অক্টোবর। সেদিন আমার মৃত্যুর সঠিক বিচার হয় নি। বিচারে মিথ্যারই জয় হয়েছিল। আজ আমি মৃত্যুর সঠিক বিচার চাই।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪০

আমার মৃত্যুর মিথ্যা বিচার
------------------------------------

আমি রাজা কৃষ্ণনাথ রায়। আমি কাশিমবাজার রাজবাড়ির অফিসে ছিলাম। আমি আমার স্ত্রী স্বর্ণময়ীকে নিয়ে ভাবছিলাম। স্বর্ণময়ী তিন মাসের গর্ভবতী ছিল। ভাবছিলাম এবারও কি আমার মেয়ে হবে নাকি ছেলে হবে। ছেলে হলে কি করবো। এই ভাবনা থেকে আমি উইল লিখতে ইচ্ছা করি। আমি ভাবনায় বিভোর হয়ে উইল লিখি। আমার লেখার সময় আমার চাকর কেশব চন্দ্র সরকার কয়েকবার আমার টেবিলের সামনে থেকে ঘুরে যায়। আমি লক্ষ্য করছিলাম যে কেশব আমার দুই ইংরেজ বন্ধুর সাথে কথা বলছে। চার্লস জর্জ স্ট্রেটেল এবং জন ডি হার্কলোটস নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলছিল। আমি একবার অফিসের মধ্যে ঢুকে সেটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলাম। কেশব মাঝে মাঝে আমার টেবিলের সামনে আসে আবার আমার ইংরেজ বন্ধুদের সাথে কথা বলতে থাকে। আমি বুঝতে পারছিলাম,আমি কি লিখছি তা আমার বন্ধুরা জানতে চায় অথচ তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারছে না। তারা কেশবকে আমার টেবিলের কাছে বার বার পাঠাচ্ছিল। আমি কেশবকে বললাম- কেশব,আমি একটা উইল লিখছি। তোমাকে কিছু সম্পত্তি দিচ্ছি। কেশব বললো-মহারাজ,আমি খুব গরিব,কিছু টাকা যদি আমাকে দেন,তাহলে মহারাজ আমি ভীষণ উপকৃত হবো। আমি বললাম-কেশব,তাই হবে,আমি তোমাকে এক লাখ টাকা দিচ্ছি। কেশব খুব খুশি হয়ে অফিসের ভেতরে চলে গেলো। আমি কেশবকে ডাকলাম। বললাম- কেশব,আমার বানজেতিয়া বাড়িতে যেসব ঘোড়া,হাতি,কুকুর আছে,সেগুলোর দেখাশোনা করার দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে কিন্তু বিক্রী করতে পারবে না। কেশব আমার সামনে দাঁড়িয়েছিল। এই কথা শুনে কেশব বললো- মহারাজ,হাতি ঘোড়া দেখাশোনা করার জন্যতো লোক রয়েছে। আমি বললাম-এখন না। যখন আমি থাকবো না,তখন তোমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। কেশব বললো- দায়িত্ব নেবো মহারাজ। আমাকে দায়িত্ব দিন। বললাম-তাই দিচ্ছি। খুব খুশি হয়ে কেশব আমার টেবিলের কাছ থেকে চলে গেলো। কেশব,আমার দানের কথা আর চেপে রাখতে পারে নি। হার্কলোটস জিজ্ঞাসা করতেই কেশব বলে দেয় যে মহারাজ একটা উইল লিখছে। বানজেতিয়ায় ঘোড়া কুকুর,হাতির দায়িত্ব তাকে দিয়েছে। তাকে মহারাজ লাখখানেক টাকা দিয়েছে। কেশব খুব আনন্দিত। হার্কলোটস এবং স্ট্রেটেল জানতে চাইছিলো যে তাদের কথা মহারাজ লিখেছে কিনা। কেশব বললো-জানি না। আমি সবই বুঝতে পারছিলাম। আমি উইলটা বাংলায় লিখছিলাম। লেখা শেষ করে বার বার পড়ছিলাম। হঠাৎ কেশব আমার ঘরে এলো। আমি কেশবকে বললাম-কেশব,কেউ সাক্ষী না থাকলে তো আমার এই উইল বাস্তবায়িত হবে না। কেশব বললো- মহারাজ,কিছু ভাববেন না। আমি আপনার ইংরেজ তিন বন্ধুকে দিয়ে স্বাক্ষর করে নিচ্ছি। আমি বললাম-তারা তো না পড়ে উইল স্বাক্ষর করবে না যে,আর যদি উইল পড়ে তারা স্বাক্ষর করে, তাহলে তোমাকে যে এত কিছু দিয়েছি তাতে তারা আপত্তি জানাবে। কেশব বললো-মহারাজ,আমি ব্যবস্থা করছি যাতে তারা না পড়ে উইলে স্বাক্ষর করে। কেশব আমার তিন ইংরেজ বন্ধুকে ডেকে আনলো। জন ডি হার্কলোটস, চার্লস জর্জ স্ট্রেটেল এবং রবার্ট ইয়ং আমার উইল না পড়ে স্বাক্ষর করে দিল। আমি উইলটা রেখে দিলাম। কেশব লক্ষ্য করলো যে আমি উইলে স্বাক্ষর করি নি। আমি বুঝতে পারছিলাম যে কেশবের মনটা একটু খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমি লক্ষ্য করছিলাম,কেশব আর আমার ইংরেজ বন্ধুরা এখন কি করে। কেশবের মনটা খচখচ করছিল,মহারাজ তাকে যে এক লাখ টাকা দিয়েছে। কিন্তু মহারাজ যে এখনো উইলে স্বাক্ষর করে নি। কেশব তখন হার্কলোটসকে বললো- মহারাজ তাকে এক লাখ টাকা দিয়েছে। হার্কলোটস বললো- মহারাজ কি উইলে স্বাক্ষর করেছে? কেশব বললো- না। হার্কলোটস বললো- মহারাজ স্বাক্ষর না করলে,কেশব তুমি লাখ টাকা পাবে না। কেশব বললো- তাহলে কি করবো। হার্কলোটস এবং স্ট্রেটেল দুজনে মিলে কেশবকে বুদ্ধি দিলো-কেশব,মহারাজকে কালি আর পেন দিয়ে বলো উইলে স্বাক্ষর করতে। তাদের কথা আমি শুনতে পেলাম। কেশব তাই করলো। আমার উদ্দেশ্য ছিল একটা উইল লেখা। সেটা লিখতে পেরেছিলাম। কিন্তু সাক্ষীর স্বাক্ষর নেওয়া কঠিন ছিল। আর সেইজন্য আমি কেশবকে লোভের ফাঁদে ফেলেছিলাম। ভাবতে ভাবতে আমি লিখলাম যে আমার নামে বানজেতিয়াতে ইউনিভার্সিটি হবে,আর সেখানে ঐ বাড়িটাতে একটা হাসপাতাল আর একটা কলেজ হবে। আর তখন ভাবলাম,বানজেতিয়ায় থাকা হাতি ঘোড়া কুকুর কাকে দেবো। আর আমার ভাবনার মধ্যে কেশব এসে গেলো। আর আমি তখন কেশবকে হাতি ঘোড়া কুকুর ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব দিলাম।এবার আমি উইলটাতে স্বাক্ষর করলাম। কেশবকে বললাম- কেশব,আমার তিন বন্ধুকে ডাকো। কেশব আমার তিন বন্ধুকে নিয়ে আমার কাছে এলো। আমি সবাইকে আমার উইলটা পড়ে শোনালাম। দিনটা ছিল ৩০ অক্টোবর, ১৮৪৪। বিকাল চারটার সময় কেশব আমাকে জানালো যে গোপাল দফাদার,বহরমপুর হাসপাতালে আজ মারা গিয়েছে। শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমি উইলটা নিয়ে বিকাল পাঁচটা নাগাদ নিজের বাড়িতে চলে এলাম। আমাকে দেখে স্বর্ণময়ী হতবাক হয়ে গেলো। স্বর্ণময়ী জানতে চাইলো- অন্যদিনতো ডেকে ডেকে তোমাকে পাওয়া যায় না। হয় বন্ধুদের সাথে নয়তো চাকরদের সাথে মদ খেয়ে বসে আছো,আজ কি হলো একেবারে সন্ধ্যাবেলায় মদ না খেয়ে ঘরে এলে। বললাম- গোপাল দফাদার আজ মারা গিয়েছে। স্বর্ণময়ী বললো-ও তাই বলো। তুমি বসো,আমি সন্ধ্যা দিয়ে আসি। আমি গোপালের কথা ভাবছিলাম। রাত আটটা নাগাদ আমি রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। আমি স্বর্ণময়ীকে বললাম- স্বর্ণময়ী, তুমি শুয়ে পড়ো,আমার শুতে যেতে একটু দেরী হবে। স্বর্ণময়ী খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি পাশের ঘরে আমার টেবিলের কাছে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়লাম। টেবিলে আমার বাংলায় লেখা উইলটা রাখলাম। ল্যাম্পের আলোয় আমি উইলটা পড়লাম। ভাবলাম- উইলটা আমি ইংরেজীতে অনুবাদ করবো। আমি ল্যাম্পের আলোয় উইলটাকে ইংরেজীতে অনুবাদ করতে থাকলাম। লেখার কাজ শেষ হতে না হতেই ভোর হয়ে গেলো। ভোর পাঁচটা নাগাদ আমার উইল লেখার কাজ শেষ হলো। ভাবলাম- স্বর্ণময়ীকে একবার উইলের কথা শোনাই। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। বাংলা এবং ইংরেজী উইল টেবিলে রেখে আমি স্বর্ণময়ীর কাছে গিয়ে ডাকলাম- স্বর্ণময়ী। এক ডাকেই স্বর্ণময়ী বিছানা থেকে উঠে আমার কাছে এলো। আমি বললাম- স্বর্ণময়ী, আমি বানজেতিয়ায় একটা কলেজ আর একটা হাসপাতাল বানাবো। স্বর্ণময়ী বললো- তুমি সারারাত ধরে এইসব করছিলে। বললাম- হ্যাঁ। স্বর্ণময়ী আমার লেখার ঘরে এলো। আমাকে বললো-তোমাকে কলেজ বানাতে হবে না। আমি বললাম- কেন? স্বর্ণময়ী বললো- তোমাকে কলেজ বানাতে হবে না,আমি আর বুঝি নে,তুমি মেমদের সাথে ফূর্তি করবে বলে কলেজ বানাচ্ছো। আমি বললাম- তুমি এসব কি বলছো। স্বর্ণময়ী বললো- ঘরে তোমার মন নেই। সারাদিন বন্ধু আর চাকর নিয়ে পড়ে থাকো। আমি কিভাবে আছি,একবারও দেখেছো। সারাদিন শুধু মদ খেয়ে থাকবে। তোমাকে কলেজ বানাতে হবে না। স্বর্ণময়ীর মুখে এই কথা শুনে আমার ভীষণ রাগ হলো। মনে হলো,এখনই এখানে এই জানালা থেকে নীচে ঝাঁপ দিই। কিন্তু নীচে আমার মা রয়েছে। আমি মারা গেলে মা,তার সন্তান হারানোর জন্যে কাঁদবে। আমি ঝাঁপ দিতে গিয়ে ঝাঁপ দিতে পারলাম না। আমি স্বর্ণময়ীকে বললাম- স্বর্ণময়ী, আমি বানজেতিয়ায় একটা হাসপাতাল বানাবো। সেখানে কত গরিব মানুষের চিকিৎসা হবে। স্বর্ণময়ী বললো- না,তোমাকে হাসপাতাল বানাতে হবে না। আমি আর বুঝি নে,তুমি নার্সদের সাথে ফূর্তি করবে। আমি বললাম- তুমি এসব কি বলছো। কলেজ বানালে সেখানে কত ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করবে। স্বর্ণময়ী কিছুতেই কলেজ আর হাসপাতাল বানাতে রাজী হয় না। আমার ভীষণ রাগ হলো। আমি বললাম- স্বর্ণময়ী, তুমি শিক্ষার কিছু বোঝো না। আমি এক মূর্খ মেয়েকে বিয়ে করেছি। স্বর্ণময়ী বললো- কে বলেছে আমি মূর্খ, আমি অ আ পড়তে জানি,লিখতে জানি। বললাম- অ আ জানলেই কি লেখাপড়া হয়? স্বর্ণময়ী বললো- আবার কি লাগে? আমি বললাম- তুমি তো ইংরেজী জানো না? স্বর্ণময়ী বললো- আমি A B C D পড়তে জানি,লিখতে জানি। আমি বললাম- A B C D জানলেই কি লেখাপড়া হয়? স্বর্ণময়ী বললো- লেখাপড়া শিখতে আবার কি লাগে? স্বর্ণময়ী কিছুতেই আমার কথা বুঝতে চায় না। আমি বললাম- আমি কলেজ আর হাসপাতাল বানাবো। আমি শোবার ঘরে চলে এলাম। স্বর্ণময়ী আমার টেবিলে থাকা উইল ছুঁড়ে মেঝেতে ফেলে দিলো। তাই দেখে আমি শোবার ঘরে ঢুকে চীৎকার করে বললাম- আমি আর এই জীবন রাখবো না। যে গলা দিয়ে আমি আওয়াজ দিয়েছি,সেই গলা চিরতরে বন্ধ করে দেবো। আমার সব রাগ গিয়ে পড়লো আমার নিজের গলায়। আমি দু হাতের আঙুল দিয়ে নিজের গলা চেপে ধরলাম। নিজের দু হাতের আঙুল দিয়ে নিজের গলা জোরে চেপে ধরলাম। আমি বসে পড়লাম। স্বর্ণময়ী আমার লিখিত উইল ছুঁড়ে দিয়ে ঐ ঘরে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল, আর আমি তখন শোবার ঘরে ঢুকে গিয়েছিলাম। আমার মৃত্যুর মুহূর্তে স্বর্ণময়ী রাজা রাজা বলে চীৎকার করে আমার কাছে এলো। আর আমি তখন শেষ। হয়তো আর কিছুক্ষণ আগে এলে স্বর্ণময়ী আমাকে বাঁচাতে পারতো। মুহূর্তের রাগে নিজের জীবন নিজের হাতে শেষ করে দিলাম। দিনটা ছিল- ৩১ অক্টোবর, ১৮৪৪,সকাল সাড়ে পাঁচটা। দেখলাম,
আমি হঠাৎ ঘরের মধ্যে মেঝে ছেড়ে ওপরে দাঁড়িয়ে আছি। আমার শরীর আছে। আমার হাত পা আছে। আমি সব কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম। দেখি আমার মৃতদেহ মেঝেতে পড়ে রয়েছে,আর আমার স্ত্রী স্বর্ণময়ী বিছানায় বাম দিকে কাত হয়ে শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমি স্বর্ণময়ীকে ডাকলাম- স্বর্ণময়ী, আমি ভুল করেছি,আমাকে ক্ষমা করো। স্বর্ণময়ী সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো- রাজা,আমিও মরবো। স্বর্ণময়ী বিছানায় উঠে বসলো। আমি স্বর্ণময়ীর মুখের কাছে গিয়ে বললাম- না স্বর্ণময়ী, তুমি মরো না। আমি ভুল করেছি,আমাকে ক্ষমা করো। স্বর্ণময়ী বললো- আমার ওপর তোমার এত রাগ হয়েছিল যে রাজা,তুমি নিজের হাতে নিজের গলা টিপে নিজেকে মেরে ফেললে। কেন,রাগ করে আমাকে চড় মারতে পারতে। আমি তো ছোট,আমি ভুল করতে পারি। তুমি আমাকে চড় মারতে পারতে। আমি বললাম- স্বর্ণময়ী, আমি তোমাকে চড় মারতে পারি নি। স্বর্ণময়ী বললো- চড় মারতে পারো নি তো কি হয়েছে,রাগ করে দুটো জিনিষ ভেঙে ফেলতে পারতে। আমি বললাম- স্বর্ণময়ী, আমি তাও পারি নি। আমাকে তুমি ক্ষমা করো। আমি এই মুহূর্তে আর মানুষ হয়ে ফিরে আসতে পারবো না। কিন্তু আমি তোমাকে সাহায্য করবো। তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো কিনা বলো। স্বর্ণময়ী বললো- আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো। রাজবাড়িতে মুখ দেখাবো কি করে। এমন সময় আমার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ানোর শব্দ। কেউ যেন বৌমা বৌমা বলে ডাকছে। স্বর্ণময়ী বললো-বোধহয় মা এসেছে। আমি বললাম- এখন তুমি যাবে না,আগে তুমি আমাকে ক্ষমা করো,তারপর যাবে। স্বর্ণময়ী বললো- ক্ষমা করেছি রাজা। আমি ঘরের মধ্যে মেঝে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। স্বর্ণময়ী ঘরের দরজা খুলে দিলো। মা হরসুন্দরী ঘরে ঢুকলো। আমার দেহ পড়ে থাকতে দেখে মা জিজ্ঞাসা করলো- এ কি করে হলো? স্বর্ণময়ী হাউহাউ করে কাঁদতে থাকলো আর বললো- রাজার সঙ্গে জোরে জোরে কথা বলেছিলাম,আর রাজা তা সহ্য করতে না পেরে নিজের হাতে গলা টিপে আত্মহত্যা করেছে। মায়ের চোখে জল। মা বললো- বৌমা,দরজা বন্ধ করে দাও। কাউকে ঘরে ঢুকতে দিও না। স্বর্ণময়ী দরজা বন্ধ করে দিলো। মা তার আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে দোতলা থেকে নীচে নামলো। আমি দেখছিলাম,মা কি করে। মা কি করবে বুঝতে পারছিলো না। তখন সকাল ছয়টা। আমি ভাবলাম- আজ সকাল নয়টা নাগাদ স্ট্রেটেলের সাথে আমার একটা মিটিং ছিল। সবাই আমার খোঁজ করবে। মা শ্রীনাথ চ্যাটার্জীকে দেখতে পেয়ে বললো- শ্রীনাথ,রাজা আত্মহত্যা করেছে। এখন বৌমাকে বাঁচাবো কি করে। মা কাঁদতে থাকলো। শ্রীনাথ হতবাক হয়ে গেলো। শ্রীনাথ বললো- রাণীমা,রাজার ইংরেজ দুই বন্ধুকে বরং ডেকে আনি,তারা যদি কোন পরামর্শ দিতে পারে। মা বললো- তাই করো তাড়াতাড়ি। তবে রাজা আত্মহত্যা করেছে,এখন সেই কথা তাদেরকে বলো না। মা শ্রীনাথের ঘরে চুপচাপভাবে বসে রইলো। শ্রীনাথ হার্কলোটসকে ডাকলো এবং বললো- রাণীমা এখনই আপনাকে আর স্ট্রেটেলকে ডাকছে। হার্কলোটস জানতে চাইলো- কেন? শ্রীনাথ বললো- জানি না,তবে দেরী করলে হবে না। সাড়ে ছয়টা নাগাদ হার্কলোটস এবং স্ট্রেটেল আমার মায়ের কাছে এলো। তারা আমার মাকে জিজ্ঞাসা করলো- কি হয়েছে? মা আঁচলে চোখের জল মুছতে মুছতে বললো- তোমাদের রাজা আত্মহত্যা করেছে। শুনেই আমার দুই বন্ধু চমকে উঠলো। বললো- কি করে হলো। মা বললো- বৌমা নাকি জোরে জোরে কথা বলেছিল,তাই রাজা নিজের হাতে গলা টিপে আত্মহত্যা করেছে। হার্কলোটস বললো- আপনার বৌমা ঠিক বলছে না। রাজার রাগ আছে জানি। তবে এর জন্য রাজা আত্মহত্যা করবে না। নিশ্চয় আপনার বৌমা রাজার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। মা বললো- আমি তো জানি না। বৌমা আমাকে এই কথা বললো,আর সেটাই তোমাদেরকে বললাম। আমার বৌমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করো। হার্কলোটস বললো- আপনার বৌমা এখন কোথায়? মা বললো- বৌমা এখন নিজের ঘরে আছে। হার্কলোটস বললো- আপনার বৌমা অপরাধ করেছে,তার সাজা পাওয়া উচিৎ। রাজার আত্মহত্যা আমরা মন থেকে মেনে নিতে পারছি নে। মা বললো- বৌমাকে মেরে ফেলে আমি কোথায় থাকবো? হার্কলোটস বললো- রাজার দেহ কোথায়? মা বললো- একই ঘরে। বৌমা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তোমরা একটা ব্যবস্থা করো যাতে বৌমাকে বাঁচাতে পারি। হার্কলোটস বললো- আপনার বৌমাকে ঘর থেকে চলে যেতে বলুন। মা বললো- বৌমাকে ঘর থেকে বের করে আনা যাবে,কিন্তু বাড়ীর সবাই জানে বৌমা রাজার কাছে ছিল। বরং রাজার দেহ সরানোর ব্যবস্থা করো। হার্কলোটস বললো- রাজার দেহ নিয়ে তাহলে কোথায় যাবো? মা বললো- কলকাতায় জোড়াসাঁকো রাজবাড়িতে রাজার দেহটাকে নিয়ে যাও। হার্কলোটস এবং স্ট্রেটেল বললো- ঠিক আছে,তাই হোক। হার্কলোটস শ্রীনাথকে বললো- তাড়াতাড়ি গাড়ী ঠিক করতে। শ্রীনাথ প্রায় সাতটা নাগাদ গাড়ী নিয়ে এলো। তারপর শ্রীনাথকে নিয়ে মা আমার ঘরে গেলো। স্বর্ণময়ী অনেক্ষণ ঘরে একাকী ছিল। মায়ের ডাকে দরজা খুলে দিলো। শ্রীনাথ আমার দেহ কোলে নিয়ে নীচে নেমে এলো। গাড়ীর পেছনের সিটে ঠিক ড্রাইভারের পেছনে আমার মৃতদেহটাকে বসিয়ে দিলো। রাজবাড়িতে অনেকের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। রাজার দেহ গাড়ীর মধ্যে তোলার সময় পাশের ঘরের এক বৌ আমার মাকে জিজ্ঞাসা করলো- রাজার কি হয়েছে? মা বললো- রাজাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। বৌটা মাকে বললো- রাজার কি হয়েছে? মা আর উত্তর দিলো না। গাড়ীর পেছন সিটে আমার দেহের পাশে হার্কলোটস এবং স্ট্রেটেল বসলো, আর সামনে শ্রীনাথ বসলো। গাড়ী সকাল সাতটা নাগাদ কাশিমবাজার রাজবাড়ি ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। আমিও গাড়ীর মধ্যে ছিলাম। এক সময় হার্কলোটস আমার মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে বললো- দেখো,রাজা কেমন ঘুমিয়ে আছে,যেন কিছুই হয় নি।
দুপুর বারোটা নাগাদ গাড়ী এসে থামলো জোড়াসাঁকো রাজবাড়ির সামনে। হার্কলোটস এবং স্ট্রেটেলের নির্দেশে শ্রীনাথ আমার দেহটা কোলে নিয়ে দোতলার ঘরে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। শ্রীনাথ তারপর নীচে নেমে এসে নীচে বসে পড়লো। দরজা বন্ধ করে হার্কলোটস এবং স্ট্রেটেল ভাবতে লাগলো। কিভাবে রাজার স্ত্রীকে বাঁচাবো। হার্কলোটস বললো- গলায় দড়ি দিয়ে ফ্যানে ঝুলে দিই। স্ট্রেটেল বললো- সেটা ঠিক হবে না। একে তো গলায় আঙুলের ছাপ রয়েছে,তারপর দড়ির ছাপ পড়ে যাবে। আমরাই মারা পড়ে যাবো। দুজনে ভাবতে থাকলো। কোন উপায় তারা খুঁজে পেলো না। দুপুর একটা নাগাদ কাশিমবাজার রাজবাড়ি থেকে মায়ের ফোন এলো-রাজার খবর কি। হার্কলোটস বললো- রাজা ভালো আছে। কোন অসুবিধা নেই। মা বললো- আমি আর বৌমা খুব চিন্তায় আছি। হার্কলোটস জানালো- কোন চিন্তা করবেন না। হার্কলোটস এবং স্ট্রেটেল খুব ভাবতে থাকলো। হার্কলোটস বললো- আমরা দুজন এখন ফেঁসে গেলাম। সবাই এখন রাজার খোঁজ করবে। কি করবো। না হয় বলে দেবো যে রাজা নিজের হাতে গলা টিপে আত্মহত্যা করেছে। স্ট্রেটেল বললো- এখন কি আর সেই কথা কেউ বিশ্বাস করবে। কি দরকার ছিল রাজার স্ত্রীকে বাঁচানোর। এখন রাজার স্ত্রী তো দূরের কথা আমরা বাঁচবো কি করে। আমরা ভীষণ ভুল করলাম। রাজার গলায় আঙুলের ছাপ রয়েছে। তারা দুজনে খুব ভাবতে থাকে। কিন্তু উপায় খুঁজে পায় না। হার্কলোটস বললো- আর কোন উপায় নেই,রাজার সাথে আমাদেরও মরতে হবে। ঘরে দুজনে পায়চারি করতে থাকলো। তারা শেষে নিজেদের বাঁচার আশা ছেড়ে দিলো। এমন সময় দেওয়ালে ঝুলানো বন্দুকের দিকে হার্কলোটসের নজর গেলো। সে স্ট্রেটেলকে বললো- বন্দুক দিয়ে রাজার মাথায় গুলি করবো। আর গলায় রক্ত চলে আসবে। তাহলে গলায় আঙুলের ছাপ রক্তে ঢাকা পড়ে যাবে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। বেলা তখন আড়াইটা। কাশিমবাজার রাজবাড়ি থেকে রাণীমা হরসুন্দরীর ফোন-রাজার খবর কি,সবাই রাজাকে খোঁজ করছে। অনেকে রাজার খোঁজ করছে,তিনটার সময় রাজার সঙ্গে তাদের মিটিং আছে। তাদেরকে কি বলবো। হার্কলোটস জানালো- রাজা ভালো আছে। চিন্তা করবেন না। আর যাদের মিটিং আছে তাদেরকে বলুন কলকাতায় জোড়াসাঁকো রাজবাড়িতে আসতে। এখানে তিনটার সময় মিটিং হবে। হার্কলোটস ফোন নামিয়ে রাখলো। হাতে গ্লোবস পড়ে নিয়ে হার্কলোটস বন্দুকে গুলি ভরলো। রাজার হাতে বন্দুক রেখে সব কিছু একবার দেখে নিলো, কিভাবে রাজার হাত নিয়ে ট্রিগার টেপা হবে। আবার ফোন। হার্কলোটস ধরলো। রাণীমা বললো- তারা তিনটার মিটিং-এ এখন তো উপস্থিত হতে পারবে না। হার্কলোটস বললো- কলকাতায় আসতে বলুন। রাত আটটা নাগাদ মিটিং হবে। ফোন নামিয়ে রাখলো।
স্ট্রেটেল ঘরের বাইরে চলে গেলো। শ্রীনাথ অনেক্ষণ ধরে ছটফট করছিল। হার্কলোটস বন্দুক ঠিকঠাক করে আবার দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখলো। বিকাল প্রায় তিনটা। হার্কলোটস আমার ডানহাত লম্বা করে রাখলো। ডান হাতে কয়েকটি টাকা রাখলো। বাম হাতটি চেয়ারের হাতলে রাখলো। আমার দুই চোখের পাতা সরিয়ে চোখ দুটি খুলে রাখলো। হার্কলোটস ঘরের বাইরে এসে বরকন্দাজকে ডাকলো আর বললো- রাজা তোমাকে ডাকছে। তুমি রাজার কাছে যাও। রাজাকে জিজ্ঞাসা করো,কি কিনতে হবে। বরকন্দাজ রাজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো- মহারাজ কি আনতে হবে? হার্কলোটস সঙ্গে সঙ্গে
বরকন্দাজকে বললো- রাজা তোমাকে পান কিনে আনতে বললো, তুমি বোধহয় বুঝতে পারো নি,যাইহোক,রাজা তোমাকে টাকা দিচ্ছে,রাজার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে নাও। তাড়াতাড়ি পান কিনে আনো। বরকন্দাজ ঘর থেকে বের হতেই হার্কলোটস দুই হাতে গ্লোবস পড়ে নিলো। দেওয়াল থেকে বন্দুক নামিয়ে রাজার হাতে রেখে রাজার হাত ট্রিগারে রেখে হার্কলোটস ট্রিগার টিপে দিলো। মাথায় গুলি লাগলো। শরীর রক্তে ভেসে গেলো। চেয়ার থেকে দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। হার্কলোটস তাড়াতাড়ি রাজার কাছ থেকে নিজের চেয়ারে এসে বসে পড়লো। হাতের গ্লোবস খুলতে না খুলতেই স্ট্রেটেল,বরকন্দাজ, শ্রীনাথ ঘরে ঢুকলো। হার্কলোটস গ্লোবসগুলো টেবিলের তলায় রেখে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। গ্লোবসগুলোকে যাতে কেউ দেখতে না পায়,সেইভাবে আড়াল করে হার্কলোটস দাঁড়িয়ে রইলো। নন্দ সরকার নামের এক বেয়ারাও ছুটে এলো। রক্তাত্ত রাজার দেহ। পাশেই বন্দুক। অনেকদূরে হার্কলোটস। সবাই ঘর থেকে বের হতেই হার্কলোটস গ্লোবসগুলো টেবিলের তলা থেকে তুলে নিয়ে নিজের প্যাণ্টের পকেটে রাখলো। কাশিমবাজার রাজবাড়ি থেকে ফোন এলো। রাজার খবর জানতে চাইলো। হার্কলোটস জানালো- রাজা বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যা করেছে। মা হরসুন্দরী কাশিমবাজার রাজবাড়িতে প্রচার করে দিলো যে,রাজা বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যা করেছে। আমি ছিলাম প্রেতাত্মা। আমার স্ত্রীকে বাঁচানোর মিথ্যা পরিকল্পনা আমি বুঝেছিলাম। আমার স্ত্রী রাণী হবে। স্বর্ণময়ীর জন্য রাজার মৃত্যু হয়েছে, এটা প্রজারা জানতে পারলে আমার স্ত্রীকে রাণী বলে স্বীকার করবে না। আমি স্বর্ণময়ীকে তাই এ ব্যাপারে কিছুই বললাম না।
আমার মৃত্যু বন্দুকের গুলিতে হয়েছে। বিচারে এটাই প্রমাণিত হয়েছিল। আমার মা হরসুন্দরী নাকি কলকাতায় জোড়াসাঁকো রাজবাড়িতে ছিল। তাহলে বন্দুকের আওয়াজ শুনে মা দেখতে এলো না কেন? মা আসলে কাশিমবাজার রাজবাড়িতে ছিল। আমার উইল আমার নিজের ঘরে ছিল। সেই উইল কাউকে না দেখালেই হতো। কিন্তু স্বর্ণময়ী ভয়ে সেই উইল আমার মা হরসুন্দরীকে দিয়েছিল। মা হয়তো প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে রাজা উইল করে আত্মহত্যা করেছে। হরসুন্দরী আমার এই উইলটাকে নিয়ে দ্বারকানাথ ঠাকুরের কাছে গিয়েছিল,আর আমার কাছ থেকে মা উইল নিয়েছিল দুপুর একটা থেকে দুটোর মধ্যে। তাও আবার ৩১ অক্টোবর, ১৮৪৪ তারিখে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন মিথ্যারই জয় হয়েছিল। আসলে জয় হয়েছিল বুদ্ধির। আজ আমি জাতিস্মর বলছি- সত্যকে চাপা দেওয়া যায় না। আমার মৃত্যুর সঠিক বিচার হয় নি। সঠিক বিচার হলে হয়তো আমাকে জাতিস্মর হয়ে জন্ম নিতে হতো না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০৩

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: লেখা পড়ার আগে অনেকদিন পর আপনার দেখা পাওয়ার শুভেচ্ছাটা জানিয়ে নেই। একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে ব্যক্তিগত ভাবে আপনার ভৌতিক লেখাগুলো আমার ভালো লাগে। শুধু ভালো লাগে বললে কম বলা হবে অনেক বেশিই ভালো লাগে।

আপনার লেখাগুলো বাংলা ভাষার অন্যতম সম্পদ হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা করি।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৪

প্রদীপ হালদার বলেছেন: আমার শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা রইলো। ভালো থাকবেন।

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৫

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: লেখা পড়লে মনে হয় যেন অভিজ্ঞতা বলছেন! ++++

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৫

প্রদীপ হালদার বলেছেন: আমার শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা রইলো। ভালো থাকবেন।

৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: লেখাটা ভালো লাগলো ।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১২

প্রদীপ হালদার বলেছেন: আমার শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা রইলো। ভালো থাকুন,আনন্দে থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.