নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দু’অক্ষর জ্ঞানের ডিগ্রী পাশ বউ

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৭

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
পরিবারের মুরুব্বীদের পছন্দ মত ডিগ্রী পাস করা পাত্রী জোগাড় করা হলো। তাদের সুবিধামত সময় নিয়ে দিন তারিখ ঠিক করে ধুম ধামের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হলো। বউ দেখতে খুব সুন্দর নয়, তবে অসুন্দরও নয়। পাড়ার লোকজন নববধুর মুখ দেখে মোটামুটি ভাল চেহারা বলেই প্রশংসা করে। সুন্দর না বললেও কেউ অসুন্দর বলে নাক সিটকায় না। বাবা মা’র পছন্দ অনুযায়ী বউ ঘরে তোলায়, নববধুকে তাদের কথা মতই চলতে হয়। নববধুর ইচ্ছা বা আমার ইচ্ছামত চলতে দেয়া হয় না। মুরুব্বীদের নিয়ম কানুনের মধ্যেই দুইজনকেই চলতে হয়। এর হেরফের হলে খবর করে ছাড়ে। আবার সুবিধাও আছে, তাদের কথামত চলার কারণে, বাজর খরচ খাওয়া-দাওয়া সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রনে। টাকা-পয়সার যত টানাটানিই হোক, এসব ঝামেলা আমার উপর নেই। তাই সংসার কি জিনিষ আমার পক্ষে বোঝা মুশকিল।
কয়েক বছর পরে ঢাকায় বাসা নিয়েছি। ছোট ছোট দু’টি সন্তানসহ সস্ত্রীক থাকি। বাবার ঘাড়ে যত দিন ছিলাম রাজার হালেই ছিলাম। সংসারের ঝামেলা ছিল না। মাস শেষে বেতনের কিছু টাকা তার হতে তুলে দিলেই হতো। এই টাকা পেয়েই তিনি খুশি হয়ে যেতেন। অল্প টাকা পেয়ে বাবা খুশি হতেন দেখেই মনে করতাম সংসারের ব্যয় বহন করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। কিন্তু ঢাকায় বাসা নেয়ার পরই আমার সেই ধারনা পাল্টে গেল। তিন মাসেই মনে হলো বউ নয়, এটা যেন একটা হস্তী পালন করছি। হস্তী অনেক খাবার খায়, দুই, চার, দশটা আস্ত কলাগাছ চিবিয়ে খেয়ে ফেলে, তবুও মনে হয় তার পেট ভরে না। সে তুলনায় আমার বউয়ের খাবার সামান্য। মাত্র দুইছটাক চালের ভাত। কিন্তু বউয়ের দুই ছটাক চালের খাদ্য সরবরাহ করতে গিয়ে মনে হলো, এর চেয়ে হস্তী পালন অনেক ভালো। হস্তীর দুই চার দশটা কলাগাছের বাইরে আর কিছু লাগে না। কিন্তু বউয়ের দুই ছটাক চালের বাইরে এত আনুসঙ্গিক জিনিষপত্র লাগে যে, সেগুলো জোগাড় করতে করতে পয়সার অভাবে, মাঝে মাঝে জান না বেরোলেও তিড়িংবিড়িং লাফালাফি উঠে যায়। কুলোতে না পেরে রাগে, দুখে, গোস্বায় নিজেই না খেয়ে বসে থাকি। নিজে না খেয়ে থাকলে কি হবে কোন লাভ হয় না। যত কষ্টই হোক না কেন, আবার নিজেকেই সব জোগাড় করতে হয়।
প্রত্যেক দিন সকাল বেলা বাজারের ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিয়েই গিন্নি বলবে চাল আন, ডাল আন, নুন আন, তেল আন, মাছ আন, সবজি আন, আদা আন, রসুন আন, পিয়াজ আন, মরিচ আন, ইত্যাদি শুধু ‘আন’। সকাল বেলার এসব ‘আন’ চাহিদা কম বেশি পুরণ করে আধাশুন্য পকেটে অফিসে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই দিন গড়িয়ে বিকাল হয়ে যায়। বিকাল বেলা বাসায় ফিরলে, সকালের মত অত বড় ফর্দি না দিলেও, কিছু না কিছু ‘আন’ বলে চাহিদা দিয়ে বসে থাকে। অনেক সময় ঘুমানের আগেও দু’একটি এরকম ‘আন’ চাহিদার ফরমাশ আসে।
তিন মাসের আলাদা সংসারে ‘আন আন’ শব্দ শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেলাম। সেদিন মাস শেষ ২৯ তারিখ। হাতে একটিও পয়সা নেই। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতেই হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েই গড় গড় করে চাল, ডাল, শাক-শব্জির নাম বলেই বলে তাড়াতাড়ি আন। একে তো হাতে পয়সা নেই তারোপর এতোগুলো জিনিষের নাম বলে ‘আন’ বলায় মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। বউয়ের বলার ভঙ্গি দেখে বাপের উপর রাগ হলো। বাপ কেন আমাকে বিয়ে করিয়ে সংসার ঝামেলায় ফেলল? কিন্তু বাপ তো এখানে নেই, রাগ দেখালে লাভ হবে কি! তাই বাপের রাগটা বউয়ের উপর ঝাড়লাম। ডাক দিয়ে বললাম, এই শোন, আমার বাবা যখন তোমাকে দেখতে গিয়েছিল, তখন কি তুমি ডিগ্রী পাস ছিলে?
একথা শুনে বউ বসা থেকে তিড়িং করে দাঁড়িয়ে গেল। গলাটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, বিএ পাশ ছিলাম মানে, শুধু বিএ পাস নই, ভালভাবে পাস ছিলাম।
বললাম, কেমন পাস?
বউ হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল, এসএসসিতে ফাস্ট ডিভিশন, এইচ এসসিতে ফাস্ট ডিভিশন, ডিগ্রীতে সেকেন্ড ডিভিশন। আপনি মনে করেছেন কি? লেখা পড়ায় আপনার চেয়ে অনেক ভাল ছিলাম।
আমি মুখটা বিকৃত করে বললাম, এত ডিভিশন, এত ভাল লেখা পড়া, বাস্তবে তো সে লক্ষণ দেখি না?
একথা শুনে গিন্নি যেন বারুদের মত জ্বলে উঠল। মুখ ঝামটা দিযে বলল, লক্ষণ দেখেন নাই মানে! আপনি কি বলতে চান?
আমি তখন গলাটা নরম করে বললাম, আমি বলতে চাই তুমি ডিভিশন নিয়ে ডিগ্রী পাস করে যা শিখছ, সে সব দুই অক্ষরের বেশি নয়।
বউ চোখ বড় বড় করে বলল, তার মানে?
তার মানে ‘স্বরে-আ’ আর ‘দন্ত-ন’। অর্থাৎ ‘আন‘। এই দুই অক্ষরের ‘আন‘ শব্দ ছাড়া আমার ডিগ্রী পাস করা বউয়ের মুখ দিয়ে এই তিন মাসে অন্য শব্দ খুব একটা পাইনি। কাজেই মনে হলো তুমি ডিগ্রী পাস করে শুধু দুইটি অক্ষরই শিখে এসেছো। একথা বলে গিন্নির দিকে তাকিয়ে দেখি গিন্নি চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম আর দু’এক কথা বললে হয়তো গিন্নির মুখটা এটমের মত বাস্ট হবে, নয় তো হার্ট ফেল করবে। গিন্নির মুখ বাস্ট হওয়া বা হার্ট ফেল করার ভয়ে, খালি পকেটেই ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে হন হন করে দ্রুত হেঁটে চলে গেলাম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:২২

(একজন নিশাদ) বলেছেন: হা হা ব্যপক বিনোদন।

২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৪৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নিশাদ। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:০১

খেলাঘর বলেছেন:


খালি হা্তে গেলেন, বাজার এনেছিলেন?

অর্থনীতি, স্বামী স্ত্রীর শান্তি নস্ট করেছে; মুহিত ও ড: আতিয়ারের মগজ নেই।

৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫০

প্রামানিক বলেছেন: মূল্যবান মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ

৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪০

আহমেদ আলিফ বলেছেন:
ভাই, আমার মত বেতনের টাকা বউ এর কাছে রাখবেন।
বাজারের সময় টাকা আর বাজারের লিস্ট দিতে বলবেন দেখবেন প্রভলেম অনেকটা কমে যাবে।

০২ রা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮

প্রামানিক বলেছেন: এটা আগে বলবেন তো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.