নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প ঃ রোস্তম ফকিরের দেমাগ (পর্ব -০২)

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:১৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রোস্তম ফকির ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরে হাঁটুতে ব্যাথা পেল। উঠে দাঁড়াতেই চেয়ারম্যান আঙুল তুলে চোখ রাঙিয়ে বললেন, সোজা বাঁধের উপর চইলা যা, এই দিকে আসবি তো ঠ্যাং ভাইংগা ফালামু। আর কাইলকা যদি এই গমের আসে পাশে আইবি তো জানে মাইরা ফালামু। যদি আগামীতে কারো কাছে শুনি যে তুই এই কথা কারো কাছে কইছস, তাইলে তরে জ্যান্ত পুইতা ফালামু।
রোস্তম ফকির আর এদিকে আসার সাহস পেল না। সোজা বাঁধের উপর চলে গেল।
রোস্তম ফকিরের চিল্লাচিল্লিতে বাঁধের উপরে যারা শুয়ে ছিল তাদের অনেকেই ঘুম থেকে উঠে এলো। কিন্তু চেয়ারম্যান ও রোস্তম ফকিরের বচসা ও গলাধাক্কা সচক্ষে দেখার পরও কেউ কোন প্রতিবাদ করল না। এমন কি তারা কেউ বাঁধের নিচেও নামল না। চেয়ারম্যান মানুষ হিসেবে খুবই খারাপ প্রকৃতির। এসব কাজে যে প্রতিবাদ করতে যাবে তাকেই ধরে মারধর করবে অথবা রিলিফের সমস্ত গম সরিয়ে ফেলে প্রতিবাদকারীদের নামে উল্টো ডাকাতি কেস দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিবে।
রোস্তম ফকির ঘাড় ধাক্কা খেয়ে বাঁধের উপরে উঠে উত্তর দিকে কিছুদূর গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল। নিচের দিকে মুখ করে নিরবে চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতে লাগল। তার এই অসহায় অবস্থায় কেউ তার কাছে এলো না। বাঁধের লোকজন সব দেখার পরেও না দেখার ভান করে যে যার জায়গায় বসে থাকল। কেউ মুখটি পর্যন্ত খুলল না।

চেয়ারম্যান রোস্তম ফকিরকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়ার পর তার লোকেরা দ্রুত গম বোঝাই করে নৌকা ছেড়ে দিলো। চেয়ারম্যান নিজেও ঐ নৌকায় উঠে চলে গেলেন।
চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার পর কয়েকজন এসে রোস্তম ফকিরকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল। কেউ কেউ তাকে একাজ করার জন্য ভাল বললেও অনেকে তিরস্কার করল। একজন বলল, চেয়ারম্যান ডাকাত মানুষ, এ এলাকার বড় বড় মাইনষেরাই তার মুখের উপর কথা কয় না, আপনে কোন আক্কেলে তার সাথে পাল্লা ধরতে গ্যাছেন? আপনের সাহসের তারিফ না কইরা পারি না!
রোস্তম ফকির তাদের এসব কথার কোন জবাব দিলো না। যেমন বসে ছিলো তেমনি বসে রইলো। সকাল বেলা সবার কানে কানে রোস্তম ফকিরের কান্ড কাহিনী ছড়িয়ে গেল। প্রায় লোকই রোস্তম ফকিরের রাতের ঘটনা শুনে মনে মনে খুব খুশি হলো। কিন্তু মুখে কেউ কিছু বলল না। তবে রোস্তম ফকিরকে সাবধান করে দিল অনেকেই। আগামীতে যেন চেয়ারম্যানের সাথে আর কখনও এরকম ঘটনা না করে। অনেকে ভয় দেখালো। আরেকবার এরকম করলে চেয়ারম্যান আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। সাবধান! ভুলেও আর কখনও একাজ করবেন না।
বেলা দশটার দিকে চেয়ারম্যান তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে রিলিফ বিতরণের জন্য এলেন। পূর্ব থেকেই তৈরী করা লিস্ট দেখে নাম ডেকে ডেকে গম বিতরণ করছেন। যারা প্রকৃতপক্ষে রিলিফ পাওয়ার কথা তাদের অনেকেই পেল না। আবার যারা পেল তাদের অনেকেই পরিমাণে অনেক কম পেল। যাদের রিলিফ পাওয়ার কথা নয় তারা গরীব মানুষের চেয়ে অনেক বেশি পেল। রিলিফ যারা বেশি পেয়েছে চেয়ারম্যানের চামচারা তাদের চেয়েও অনেক বেশি পেল।
লিস্টে রোস্তম ফকিরের নামও ছিল। তার নাম ডাকার পর রোস্তম ফকির উপস্থিত ছিলেন না। চেয়ারম্যান কাছেই চেয়ারে বসে ছিলেন। সে ডাক দিয়ে বলল, এই-- ঐ নামের গম বাদ রাখ। আগামীতে ওর নাম লিস্ট থাইকা বাদ দিয়া দিবি।
যে ব্যাক্তি লিস্ট নিয়ে বসে ছিল তার নাম বিলাল। সে বলল, চেয়ারম্যান সাব, ও ফকির মানুষ, ওর নাম বাদ দেওয়া কি ঠিক হইবো?
এ কথা শোনার পর চেয়ারম্যান ক্ষেপে গেলেন। দাঁত খিঁচিয়ে বলে উঠলেন, এই বিলাল এই, তোর ফকিরের প্রতি যদি এতো মায়া লাগে, তোর বাড়ি থাইকা গম দিয়া দিস। এখান থাইকা একটা গমও দিবার পারবি না। বলেই মেজাজ গরম করে বলল, এই বিলাল এই, লিস্টটা আমার হাতে দে। লিস্ট হাতে নিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে উঠল, তুই এখান থাইকা উইঠা যা। ভাগ তুই। এই এলাকায় আর থাকবি না। যা কইতাছি। সোজা বাড়ি চইলা যা। আমার সামনে আর এক মুহুর্তও থাকবি না। বেহায়া পোলাপান। আমার মুখের উপর কথা কস। তর সাহস তো কম না। আমি তর চায়া কম বুঝি রে? বেয়াদ্দপ কোনহানকার। ভালোবাসি বইলা সুযোগ পায়া আস্তে আস্তে মাথায় উইঠা গ্যাছোস না- - ?
বিলাল মুখটি কালো করে চেয়াম্যানের হাতে নামের লিস্ট দিয়ে চুপচাপ উঠে চলে গেল। না গেলে হয়তো চেয়ারম্যান চর-থাপ্পর দিতে পারে। চর-থপ্পরের ভয়ে সে আর কোন কথাই বলল না।
এই ঘটনা দেখার পরে উপস্থিত যারা ছিল তারা কেউ আর রোস্তম ফকিরের জন্য সুপারিশ করার সাহস পেল না। রোস্তম ফকির নিজেও রিলিফ বিতরণ এলাকার আশেপাশে এলো না। কোথায় আছে তাও কেউ বলতে পারে না। ফকিরের রিলিফ বন্ধ করার ব্যাপারটি মনে মনে কোন লোকই সমর্থন করল না। তবে মুখ ফুটে বলার সাহসও পেল না।
(--- চলবে ---)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:২৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: চলবে। চলতে থাকুক। আমরাও পড়তে থাকি। ভাল লাগলো।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ বোন লিলিয়ান। পড়ার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:





সবচেয়ে নিকৃস্ট ভুমিকা পালন করছে চেয়ারম্যান পদটি; এটি বিলুপ্ত করে, একজন এডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ দেয়া দরকার।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:২০

প্রামানিক বলেছেন: তবে এডমিনিষ্ট্রেটর পদটির জবাব দিহিতা থাকতে হবে নইলে যে লাউ সেই কদু হবে।

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:০৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: Waiting for next part.

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:২০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, শুভেচ্ছা রইল।

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৩১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: চরম বাস্তবতাঃ

// ফকিরের রিলিফ বন্ধ করার ব্যাপারটি মনে মনে কোন লোকই সমর্থন করল না। তবে মুখ ফুটে বলার সাহসও পেল না।//

ভাল থাকুন। সবসময়।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:২১

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮

রানা আমান বলেছেন: খুব ভালো হচ্ছে লেখাটা ।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৩১

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:০৩

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: এই না হলে চেয়ারম্যান, এমন দাপট না থাকলে পাবলিকে ওদেরকে ভোট দিবো ক্যান?

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩২

প্রামানিক বলেছেন: কথা ঠিকই কইছেন, এখন দাপট না থাকলে শুধু ভালো মানুষ হইয়া ভোট পাওয়া মুশকিল।

৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:০৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: নেন একটু চা খান

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩২

প্রামানিক বলেছেন: এখন তো ডিনারের টাইম চা খাইলে খিদা নষ্ট হইবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.