![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাসা পরিবর্তন করে যেদিন তিয়ানাদের বাসায় উঠলাম,সেদিনই বুঝলাম যে এই মেয়েটা সুবিধার না।বাসা ভাড়া এমনিতেই পাওয়া যায় না,তার উপর আমি ব্যাচেলর।কিন্তু তিয়ানার বাবার কাছে অনুরোধ করার পর,ভদ্রলোক না করতে পারেনি।আমি যদিও এতটা খারাপ ছেলে না।
অবশেষে ছাদে একটা রুম পাওয়া গেল।কিন্তু সমস্যা হল এই মেয়েটাকে নিয়ে।আমাকে দেখলেই ভ্রু কুচকে তাকায়।যদিও এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না।
লামিয়ার সাথে সেদিন কথা হবার পর আর যোগাযোগ করিনি।এক ফ্রেন্ডস এর মাধ্যমে জানলাম ওর বিয়ে ১ মাস পর।তাই ১ মাস ওর থেকে লুকিয়ে থাকছি।
তিয়ানাদের বাসা টা খারাপ না।ছাদ টা আরো মনোরম।তারপর কেন যেন মন শান্ত হয় না।
তো পরের দিন ছাদে দাড়িয়ে আছি,দেখলাম তিয়ানা আমার সামনে আসছে।নিশ্চয়ই কয়েকটা উপদেশ শোনাবে।
-এই যে হ্যালো......
-জি বলেন।.?
-এত ছাদে কি.....!!!?
-মানে.....
-আপনাকে কি বাবা বলে দেয় নাই যে আমি ছাদে আসলে আমি চলে যাবেন....?
-ঠিক আছে।আমি যাচ্ছি
বলেই নিচে চলে আসলাম।মেয়েটা খানিকটা অবাক হল।
দুপুর হয়ে গেছে।ভাবলাম একটা ঘুম দেই।তাহলে লামিয়ার ভুত মাথা থেকে নামবে।কিন্তু কিসের কি....দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনলাম
-কি করেন.. (তিয়ানা)
-মানে.....?
-আরে এত মানে মানে করেন কেন!!!!
-কোনো সমস্যা হইছে....?
-কেনো আপনি কিছু করেছেন....?
-নাতো....
-খাওয়া দাওয়া হয়েছে....?
আমি বুঝলাম না মেয়েটা হঠাৎ এত চেঞ্জ হল কিভাবে...
-না।
-বলেন কি....!!!চলেন।আমাদের সাথে খাবেন।বাবা যেতে বলছে
ওর সাথে সাথে চললাম।তিয়ানার বাবা আমাকে দেখে বলল
-কি ব্যাপার,এই বাসায় কি তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকি....?
-না তো আংকেল....এই কথা কেন বলছেন...?
-তা না হলে তুমি কেমন চুপচাপ থাকো....!!!
-না আংকেল,এমনি।
-আচ্ছা,লাঞ্চটা আমাদের সাথে কর।
তো এইভাবে দিন যেতে থাকে।লামিয়ার বিয়ের আর মাত্র ১০ দিন বাকি।আমার মনে হচ্ছে আমার জীবনের আর ১০ দিন সময় বাকি আছে।
-কোথায় যাচ্ছেন....?(তিয়ানা)
-তোমাকে বলার তো কোনো প্রয়োজন দেখছি না।
-আপনি আমাকে এত ইগনোর করেন কেন!??আমি কি দেখতে অনেক খারাপ!!!!?এলাকার কত ছেলে আমার পিছে ঘুরে....
-দেখ,আমার এসব শুনতে ভাল লাগছে না।
-কেন ভাল লাগবে না।আমি যে আপনাকে পচ্ছন্দ করি এইটা বুঝেন না....?
আমি ওর কথা না শুনে চলে আসলাম।ওকে কিভাবে বুঝাই যে আমি এসবে জড়াতে পারবো না।
পরদিন ছাদে দাড়িয়ে ছিলাম।কখন যে তিয়ানা পাশে এসে দাড়িয়েছে খেয়ালই করিনি।
-সরি.....(খুব কোমল গলায়)
-কেন.....?
-আপনার সাথে কালকে খারাপ ব্যবহার করার জন্য.....
-খারাপ ব্যবহার কর নি,ওইটা জাস্ট তোমার মনে এক্সপ্রেশন ছিল।
কিছুক্ষন চুপ থেকে.....
-আচ্ছা আপনি কি কাউকে ভালবাসেন.....?
-হঠাৎ এই কথা....?
-প্লীজ,বলেন না....?
-হুম,বাসি...
-কে সে....?
-লামিয়া। ওর বিয়ে আগামি সপ্তাহে।
-তাহলে.....কি করবেন...?ভেবেছেন কিছু....?
-কিছু করার নাই।আমি বেকার।বেকার ছেলের হাতে কেউ মেয়ে তুলে দেয় না।আর পালিয়ে গেলেও ওকে খাওয়াবো কি!!!!অভাব যখন দরজায় কড়া নাড়বে,আমার ভালবাসা তখন জানাল দিয়ে পালাবে।
-সো,এই আপনার মন খারাপের কারন...?
-হুম।
-টেনশন নিয়েন না।আমি থাকতে আপনার কোনো চিন্তাই নাই
এবার আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম
-মানে কি!!!!!
-মানে কিছু না
বলেই চলে গেল।আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
আগামিকাল লামিয়ার বিয়ে।কিভাবে যে দিন চলে গেল বুঝতেই পারলাম না।গতরাতেও হাটতে হাটতে ওদের বাসার সামনে চলে গেছি।কিন্তু ওকে ডাক দেই নি।
তাই ভাবলাম আজ রাতেই বাড়ি চলে যাব।মার সাথে দেখা হয়না অনেকদিন।বিকালে ছাদের রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে সিগারেট টানছি।দেখলাম পাশে তিয়ানা এসে দাড়িয়েছে।
-কাল তো লামিয়ার বিয়ে.....দেখতে যাবা না...?
মেজাজ টা গরম হয়ে গেল।
-দেখ তিয়ানা,সব সময় প্যাচাল ভাল লাগে না।
-আরে রিলেক্স।তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
-আমি এমনেতেই অনেক সারপ্রাইজ পেয়েছি।আর চাই না।
-আরে ধুর!!!!তুমি না চাইলেও আমি দিব।চল আমার সাথে।
আমাকে প্রায় টানতে টানতে রিক্সায় উঠালো।রিক্সা মনে হয় আগেই ঠিক করা ছিল।কারন কিছু বলতে হয় নাই আমরা কোথায় যাচ্ছি।
রিক্সায় উঠার পরই দেখলাম তিয়ানা যথেষ্ট গম্ভীর হয়ে গেছে।বুঝলাম না কি হল আবার
রিক্সা এসে থামল স্টেশন। হুম,ট্রেন স্টেশন এ
আর দুরে একটা বেঞ্চিতে সেই প্রথম দেখার মত মেয়ের অবয়ব দেখতে পেলাম।অনেকদিন পর মনে হয় আমি আমাকে খুজে পেলাম।
-তোমরা কথা বল।আমি আসছি(তিয়ানা)
-এসবের মানে কি তিয়ানা!!!?
কিছু না বলে চলে গেল।ওর দিকে ঘুরে তাকাতেই দেখি গভীর চোখে আমাকে দেখছে।লামিয়ার মুখ অনেক শুকিয়ে গেছে।সেই চোখ মুখে হাসির ঝিলিকটা আর নেই
-কেমন আছো....?
-আমি...!?এই তো......আছি।
-আমাকে ছেড়ে অনেক ভাল ছিলা,তাই না....?
-........
-এই জন্য একবার দেখাও করনি....
-তোমার বিয়েতে কোন ঝামেলা হোক আমি সেটা চাইনি।
-আমার বিয়ে হয়ে গেলে তুমি অনেক খুশি হবে....?
-লামিয়া,বাদ দাও না......
-তুমি জান,তিয়ানা আমার বাবা কে রাজি করাইছে...!
-মানে.....
-তিয়ানা আমাদের রিলেশন এর কথা বাবাকে জানিয়েছে।তারপর বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজিও করাইছে।যার সাথে আমার কাল বিয়ে হবার কথা ছিল,তা কেনসেল করে দিসে।
-......
-আর আজ যখন জানতে পারল তুমি বাড়ি চলে যাবে, তখন তোমার সাথে যাওয়ার জন্য এখানে নিয়ে আসছে
-এই নাও,তোমাদের টিকেট।
আমি তিয়ানার দিকে তাকালাম।আমি স্পষ্ট দেখছি মেয়েটা মনে মনে কাদছে।
-তোমাদের ট্রেনের ১০ মিনিট বাকি আছে।তোমার সাথে কি কিছু কথা বলতে পারি।
আমি সড়ে এসে দাড়ালাম।তিয়ানার চোখে অলরেডী পানি জমে গেছে।
-আমি কি আমার কথা রাখতে পারছি....?
আমি মাথা উপর নিচ করলাম
-অল দা বেস্ট।বিয়ে করে কিন্তু আমাদের বাসায় উঠবে।নাহলে কিন্তু খবর আছে।
-আচ্ছা।
-একটা কথা বলবো....?
-বল.....
-তোমাকে একটু.......না থাক।চল।তোমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমি জানি তিয়ানা কি চায়।আমারো খুব ইচ্ছা করছিল।কিন্তু সব তো আর পসিবল না।
লামিয়া আর আমি ট্রেনে উঠলাম।তিয়ানা লামিয়ার সাথে কথা শেষ করে আমার সামনে আসল।
-আসি।ভাল থেকো
-তুমিও নিজের প্রতি খেয়াল রেখো।
ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।আমার সপ্ন পুরন হয়েছে,কিন্তু মেয়েটার হল না।
©somewhere in net ltd.