![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনির মিয়ার মন খারাপ । মন খারাপের বিশেষ কোন কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না । কিন্তু তবুও তাঁর মন অসম্ভব খারাপ । মন খারাপের কারণে তিনি অফিসের কাজেও ঠিক ঠাক মনোযোগ দিতে পারছেন না । বার বার তাঁর হিসেবে ভুল হয়ে যাচ্ছে । ৩০ হাজার টাকার ৫টি বান্ডিলের মধ্যে তিনি বার বার প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলছেন । তাঁর বয়স অবসরের কাছাকাছি এসে গেছে প্রায় । এই বয়সে শিশুতোষভাবে কেন হঠাৎ মন খারাপ হচ্ছে তিনি ভেবে পাচ্ছেন না । এমন না যে তিনি অবসরে যাচ্ছেন এ জন্য তাঁর মন খারাপ । তিনি বরাবরই তাঁর চাকরিটাকে অপছন্দ করতেন । তিনি যে চাকরি করেন সেটাকে ভালবাসার কিছু নাই । এই চাকরি হিসাব মেলানোর চাকরি । ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে হিসেব মিলিয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর কাজ । চাকরীতে হিসেব মিলাতে পারলেও তিনি জীবনের হিসেব মিলাতে পারেন নি ।
চাকরি পাবার কিছুদিনের মাথাতেই তিনি বিয়ে করেছিলেন । পাত্রী দেখা , পাত্রী পছন্দ করে বিয়ে করা এসব তাঁর কখনও পছন্দের ছিল না । বাবা মা এসে বলেছিল এই মেয়েটাকে পছন্দ করেছি । উনি বলেছিলেন , তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ । এরপর পরই তাঁর বিয়ে হয়ে গেল । তাঁর সংসার বেশ ভালই চলছিল । মাসের শেষে সবসময় একটা টানাটানি পরে যেত । তিনি ব্যপারটা মেনে নিয়েছিলেন । কিন্তু তাঁর স্ত্রী ব্যপারটা সেভাবে মেনে নেয়নি । অতঃপর তাঁকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রেখে তাঁর স্ত্রী চলে যায় । মনির মিয়া এই ব্যপারটিও বেশ স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলেন । তারপরে আবারও তাঁর বিয়ের চেষ্টা করা হলে তিনি এড়িয়ে যান । এরপর বেশ কয়েকটি বছর চলে যায় । ছা পোষা জীবনের বেশিরভাগ তিনি কাটিয়েছেন মেসে ।এই মেস খুঁজতে যেয়ে ঢাকা শহরের অলি গলি সবকিছুই তাঁর চেনা হয়ে গেছে । বছরে বছরে তিনি তাঁর আবাস পালটিয়েছেন । একা মানুষ , তাই অল্প অল্প করে তিনি বেশ কিছু টাকাও জমিয়েছেন ।
অফিস ছুটি হয়ে গেছে । মাঝে মাঝেই চিন্তার অতল সাগরে তিনি ডুবে যান । যখন চিন্তা করতে থাকেন তখন স্রোতের মত একটার পর একটা চিন্তা আসতে থাকে । তিনি কোন কূলকিনারা খুঁজে পান না । আজ যেমন ছুটি হয়ে গেছে , তবু তিনি টেরই পেলেন না । এমন মাঝে মাঝেই হচ্ছে আজকাল ।
মনির মিয়া অফিস শেষে পার্কে গিয়ে বসলেন । খুব ধীরে কালফ্রেমের চশমাটা হাতে নিয়ে শার্টের কণা দিয়ে মুছে আবার পড়লেন । এরপর মনির মিয়া হু হু করে কেঁদে ফেললেন । অনেক কষ্টে কান্না চাপা দেবার চেষ্টা করছেন , কিন্তু তিনি পারছেন না । আধো আলো আধো আঁধারে মনির মিয়া নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছেন । জীবনের একটি দীর্ঘ অংশ কেটে গিয়েছে অফিসের কোনার ঘরটিতে বসে । মনির মিয়া হিসেবের পর হিসেব মিলিয়ে গেছেন । নিজের জন্য কোন হিসেব মিলাতে পারেন নি । একটি দীর্ঘ জীবন হারিয়ে গেছে । উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে কেটে গেছে প্রতিটি দিন । বেঁচে থাকার জন্যই তিনি বেঁচে আছেন । মনির মিয়া তাই কাঁদছেন , মন ভরে কাঁদছেন । জীবন তাঁকে কিছু দেয়নি , তিনি নিজেও নিজেকে কিছু দিতে পারেননি । তাই আজ তিনি নিজের জন্য একটি কান্নাভরা সন্ধ্যা বরাদ্দ রেখেছেন । শুধুই নিজের জন্য একটি সন্ধ্যা ।
©somewhere in net ltd.