নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় দেশ বাংলাদেশ

আমার প্রিয় দেশ বাংলাদেশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ: তৃতীয় বিশ্বে গণতান্ত্রিক নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতার কারণ

১৪ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:১২

প্রত্যক্ষ কিংবা প্রকাশিত কারণগুলো রাজনীতি সচেতন সকলেরই কমবেশি জানার কথা। বর্তমান লেখার আলোচ্য বিষয় অপ্রকাশিত কারণসমূহ; যা পত্র-পত্রিকা কিংবা মিডিয়াতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকাশিত হয় না। ব্যর্থতার প্রথম কারণটাই হচ্ছে- তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের জ্ঞান এবং সত্যের প্রতি অনাগ্রহতা। তারা আগ্রহী শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলে এবং তা কীভাবে ধরে রাখা যায়, তার প্রতি। আর এ কারণেই তারা বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও কখনোই ব্যর্থতার কারণ উদঘাটনের সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারে না। চিকিৎসা শাস্ত্রে সর্বজন স্বীকৃত একটি প্রবাদ বাক্যের প্রচলন আছে। “রোগের সঠিক কারণ চিহ্নিত করা মানেই সফল চিকিৎসার অর্ধেক সুসম্পন্ন করা।” রোগীকে যতই ওষুধ প্রয়োগ করা হোক, কারণ উদঘাটন ব্যতীত সব ধরনের চিকিৎসা ব্যর্থ হতে বাধ্য।



কম্পিউটার কিংবা মানবশরীর যেভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, ঠিক তেমনি তৃতীয় বিশ্বের নেতারাও এক কঠিন ভাইরাসে আক্রান্ত। ওই ভাইরাসের প্রকৃতি এবং কার্যক্ষেত্র এত বৈচিত্রময় যে, চিহ্নিত করা তো অনেক দূরের ব্যাপার, নেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা উপলব্ধিই করতে পারে না। যে ভাইরাস তাদের দেশকে স্থায়ীভাবে তৃতীয় (শ্রেণীর) বিশ্ব কিংবা অনুন্নত বিশ্ব বানিয়ে রেখেছে নেতারা তা চিহ্নিত করতে পারলে অনেক আগেই এ দেশগুলোর জনগণ প্রথম বিশ্বের মর্যাদা লাভ করতে পারতো। কিছু কিছু নেতা ওই কঠিন ভাইরাসে এত গভীরভাবে আক্রান্ত যে, তারা উক্ত ভাইরাসের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে। তখন তারা স্বয়ং ওই ভাইরাসের ধারক-বাহক এবং বিতরণকারীতে পরিণত হয়।



এই ভাইরাস তাদের উপলব্ধিতে এমনি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে যে, তাদের অধিকাংশ সিদ্ধান্তই নিজ এবং দলের প্রতি সাধারণ জনমনে বিদ্বেষের সৃষ্টি করে। যারফলে, পরবর্তী নির্বাচনে গদি থেকে ছিটকে বের হয়ে যায় তীরের বেগে। এখন জানা প্রয়োজন, তৃতীয় শ্রেণীর বিশ্বের একজন ভাইরাস আক্রান্ত নেতার বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

১। তারা সার্বক্ষণিকভাবে ঘেরাও থাকে অন্ধ ব্যক্তি আনুগত্যতা উপস্থাপনকারী কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও ধূর্ত চাটুকার দ্বারা।

২। এরা অন্তর্দৃষ্টি, দূরদৃষ্টি, প্রজ্ঞা এবং আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রশংসা করবে, তবে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবে না।

৩। ভাইরাস আক্রান্ত নেতারা জ্ঞানী ও বিবেকবান ব্যক্তিদের পরিহার করে চলবে এবং ওই ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারীরাও এহেন অসুস্থ নেতাদের পরিহার করে চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

৪। ভুয়া অনুগত ধূর্ত চাটুকাররা নেতাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রকার অসামাজিক কাজে প্ররোচনা দিয়ে দিনের শেষে এক চরম ভোগবাদী ব্যক্তিতে পরিণত করে।

৫। অন্ধ ব্যক্তি অনুগত, ধূর্ত চাটুকাররা সাধারণত হয় চরম দুর্নীতিবাজ। ব্যক্তি আনুগত্যতা যাই থাকুক না কেন, দিনের শেষে এরাই নেতার জনপ্রিয়তা ধ্বংসের মূল কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়।

৬। ভাইরাস আক্রান্ত নেতা সহকর্মীদের নিকট থেকে ক্রীতদাস সুলভ আনুগত্যতা আশা করে; যা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সহকর্মীদের পক্ষে কস্মিনকালেও উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।

৭। চাটুকাররা নেতাকে এক ধরনের উপলব্ধি দেয় যে, ক্ষমতার সামনে ‘অর্ধ সঠিক’ কিংবা ‘ভুল’ বলে কিছু নেই। নেতা যা বলবে কিংবা করবে সবই সবসময় সঠিক। এ কারণেই জালিম রাজাদের সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে "king is never wrong, he is always right." এখানে বুঝার বিষয় হচ্ছে, কিং আর গণতান্ত্রিক নেতা এক নয়। সউদী রাজার ইলেকশন নেই, আমৃত্যু রাজা, তার সব ভুলই সঠিক কিন্তু গণতান্ত্রিক নেতার জন্য ভুল ভুলই। আর ওই ভুলের খেসারত দিতে হয় নেতাকেই, সাঙ্গ-পাঙ্গরা অধিকাংশ সময় পালিয়ে বাঁচে কিংবা মাঝে মধ্যে ধরা পড়া সাপেক্ষে জেল-জরিমানা ভোগ করে।

৮। অন্তর্দৃষ্টি, দূরদৃষ্টি কিংবা প্রজ্ঞাহীন এসব চাটুকাররা হীন ব্যক্তি এবং দলীয় স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দেয়, যার দায়ভার পরবর্তীতে নেতার ঘাড়ে বর্তায়। দূরদৃষ্টি এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন ডক্টর মাহাথির মুহাম্মদ মালয়েশিয়াতে ২২ বৎসর ক্ষমতায় ছিলেন স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত। এহেন উদাহরণ থেকে ভাইরাস আক্রান্ত নেতারা শুধুমাত্র চাটুকারদের জন্য শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়।

৯। অন্ধ/হীন আত্মস্বার্থের সাথে ”বিকশিত আত্মস্বার্থের” তফাৎ কি, তা ভাইরাস আক্রান্ত নেতারা বুঝতে অক্ষম। জনগণের স্বার্থ রক্ষা মানেই যে পরোক্ষভাবে নিজের স্বার্থ রক্ষা, বিষয়টি চাটুকারদের প্ররোচনার কারণে এ ধরনের নেতারা উপলব্ধি করতে পারে না।

১০। চাটুকাররা নেতাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে, দেশে রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে নিরপেক্ষ বলে কোন মানুষ থাকতে পারে না। নেতার কোনো সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা মানেই সে অন্য দলের সদস্য। আশ্চর্য হলেও বিষয়টি বাস্তব, তৃতীয় বিশ্বের নেতারা তাই ধারণা করে।

১১। তৃতীয় বিশ্বে কোনো সিস্টেম সহজে কাজ করে না। তাই সবাই তাদের বিধিসম্মত কাজ উদ্ধারের জন্য নেতাদের কাছে ধর্ণা দিতে বাধ্য হয়। নেতার চাটুকার সহযোগীরা ওই কাজ উদ্ধার করে দেয়। তবে মধ্য থেকে অমানবিক পরিমাণ বখরা আদায় করে নেয়। নেতাকে তারা কখনই সিস্টেম উন্নয়নের পরামর্শ দেয় না এবং ভাইরাস আক্রান্ত নেতাও এ বিষয়ে বেদনাদায়কভাবে নির্লিপ্ত থাকে। ভাইরাস আক্রান্ত অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ জনসাধারণের উপকারে ইতিবাচক দিকসমূহ দেখতে পায় না। ফলে ইহকালে তারা ব্যর্থ এবং পরকালে নিশ্চিত জাহান্নাম।

সিস্টেমের উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি যে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়; বিষয়টি তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের ধারণার বাইরে। রাজা কিংবা নেতা ভালো কি মন্দ তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রবাদ রয়েছে, “জনগণ যদি ধারণা করে রাজা ভালো কিন্তু তার উপদেষ্টারাই খারাপ এবং সে কারণেই দেশ খারাপ চলছে, ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, রাজা খারাপ বলেই খারাপ উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে। জনগণ যদি ধারণা করে যে, রাজা খারাপ কিন্তু ভালো উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়ার কারণে দেশ ভালো চলছে এ ধারণাটিও সম্পূর্ণ ভুল। রাজা ভালো বলেই ভালো উপদেষ্টাদের নিয়োগ দিয়েছে এবং সে কারণেই দেশ ভালো চলছে।” এই প্রবাদটি সূক্ষ্ম চিন্তার দাবি রাখে। আর দেশীয় প্রবাদ হচ্ছে- “বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়।” মন্ত্রী আর উপদেষ্টারা যদি হাজার কোটি টাকা চুরি ও লুটের সাথে জড়িত থাকে এবং ওইসব চোরদের যদি কোনো প্রকার বিচার না হয়, তবে তাদের (চোর মন্ত্রী/উপদেষ্টাদের) নেতা (গাছ) এর নামকরণে সমস্যা থাকে না। চোর নেতার মন্ত্রী/উপদেষ্টারা চোর হবে, ডাকাত নেতার মন্ত্রী/উপদেষ্টারা ডাকাত হবে এইতো প্রকৃতির নিয়ম। যেমনিভাবে “আম গাছে কাঁঠাল হয় না, হয় না আম, কাঠাল গাছে” । মহান আল্ল­াহ পাক তিনি তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের হিদায়েত দান করুন। এতদাঞ্চলের সর্বস্তরের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা দূর করুন। আমীন।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.