নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অরণ্য প্রলয়

অরণ্য প্রলয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

চার্লি চ্যাপলিনের ‘মডার্ন টাইমস’

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১

যারা নিয়মিত সিনেমা দেখেন তাদের কাছে চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমাগুলো অত্যন্ত ভালো লাগে এটা বলাই যায়। আমিও প্রচুর সিনেমা দেখি। আমার কাছেও চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমাগুলো অত্যন্ত প্রিয়। বিশেষ করে ‘মডার্ন টাইমস’-এর বক্তব্যগুলো আমাকে খুব স্পর্শ করে।


‘মডার্ন টাইমস’ সিনেমাতে যন্ত্রনির্ভর সভ্যতার প্রতি বিদ্রূপ ঝরে পড়েছে চার্লি চ্যাপলিনের কণ্ঠ থেকে। এই সিনেমাটি তৈরির আগে ১৯৩১ সালের দিকে চার্লি চ্যাপলিন ১৮ মাসের জন্য ইউরোপ ভ্রমণে বের হয়েছিলেন তার ‘সিটি লাইটস’ সিনেমাটি নিয়ে। সেই সময়টাতে চ্যাপলিন প্রত্যক্ষ করেছেন সারা ইউরোপজুড়ে জাতীয়তাবাদ এবং বেকারত্বের উত্থান। তিনি দেখেছেন শিল্পকারাখানাগুলো কীভাবে যন্ত্রনির্ভর হয়ে উঠছে এবং এর ফলে সমাজের ভেতরে হতাশা কতোটা প্রকট আকার ধারণ করছে। তিনি অর্থনীতির তত্ত্বগুলো পড়তে শুরু করলেন এবং তিনি নিজেই চলমান সমস্যাগুলোর একটি সমাধান বের করে ফেললেন। যেটি ছিল ইউটোপিয়ান আইডিয়ালিজমের একটি চমকপ্রদ ভাবনা। তিনি আমেরিকার দিকে তাকালেন, আর দেখলেন কারখানাগুলোতে পুঁজিবাদ এবং যন্ত্রের আগ্রাসন বেকারত্বকে কতোটা বৃদ্ধি করে চলেছে। তিনি অনুভব করলেন একটি ছবি বানাবেন। যে ছবি মানুষের কথা বলবে। যে ছবি গুরুত্ব দেবে মানুষের দুঃখ এবং আনন্দকে। তিনি তার ছবির নাম দিলেন ‘মডার্ন টাইমস’।


এই ছবিতে দেখা যায় চার্লি চ্যাপলিন একটি কারখানায় কাজ করেন। তার দায়িত্ব নাট-বল্টু টাইট দেয়া। কিন্তু চ্যাপলিন যেখানে আছেন সেখানেতো একটু ঝামেলা হবেই। কাজ করতে করতে তিনি নিজেই যন্ত্রে পরিণত হন। তিনি যাকেই দেখেন তাকেই টাইট দিতে যান। কারখানার সবাই ভাবে তিনি বোধহয় পাগল হয়ে গেছেন। তাকে তখন হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল থেকে চ্যাপলিন সুস্থ হয়ে বেরিয়ে আসেন এবং কারখানায় আবারো যোগ দেন। কিন্তু কারখানায় হঠাৎ শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়ে যায়। চ্যাপলিন সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং কমিউনিস্টদের এক মিছিলের খপ্পরে পড়েন। তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, তার জেল হয় এবং জেল থেকে তিনি একসময় ছাড়াও পান। এরপর জাহাজ নির্মাণ কারখানায় তার চাকরি হয়, কিন্তু ওই চাকরিও তার চলে যায়। তিনি হয়ে পড়েন পুরোপুরি ভবঘুরে। রাস্তায় তার সাথে পরিচয় হয় এক অনাথ মেয়ের। মেয়েটি রুটি চুরি করে পালাচ্ছিল। তাকে সঙ্গে নিয়েই এরপর চলতে থাকে চ্যাপলিনের আরেক সংগ্রামী জীবন।


চার্লি চ্যাপলিন এই ছবির পূর্বপ্রস্তুতির কাজ আরম্ভ করেছিলেন ১৯৩৪ সালের শুরুতেই। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই ছবিতে তিনি কথা সংযোজন করবেন। অর্থাৎ এটি হবে সবাক ছবি। পরে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং এটিকে তিনি নির্বাক ছবি হিসেবেই নির্মাণ করতে শুরু করেন। অবশ্য এটিই তার সর্বশেষ নির্বাক ছবি এবং এটি ছিল তার ৭৬তম ছবি। তিনি এই ছবিটির দৃশ্যায়নের কাজ শুরু করেন ১৯৩৪ সালের ১১ই অক্টোবর, এবং এটি শেষ হয় ১৯৩৫ সালের ৩০শে আগস্ট।


এই ছবিতে অনাথ মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পলেট গডার্ড। চার্লি চ্যাপলিন তাকে পরে বিয়েও করেছিলেন। কিন্তু তাদের বিবাহিত জীবন বেশিদিন টেকেনি। এই মেয়েটিকে চ্যাপলিন পরবর্তীতে তার ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ ছবিতেও কাস্ট করেছিলেন। ‘মডার্ন টাইমস’ ছবিটিতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হেনরি বার্গম্যান, স্ট্যানলি স্যানফোর্ড, রিচার্ড আলেকজান্ডার ও স্ট্যানলি ব্লিস্টোন সহ বেশ কয়েকজন দক্ষ অভিনয়শিল্পী।


এই ছবির মিউজিক করেছিলেন চার্লি চ্যাপলিন নিজেই। তাকে সহায়তা করেছিলেন কম্পোজার আলফ্রেড নিউম্যান। চার্লি চ্যাপলিন এই ছবিতে শুধু যে মিউজিকই করেছেন তাই নয়, তিনি এই ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন, এটি প্রযোজনা করেছেন, পরিচালনা করেছেন এবং ‘ভবঘুরে’ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। এই ছবিটিই চার্লি চ্যাপলিনের প্রথম ছবি যেটিতে তিনি প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেছিলেন রাজনীতি এবং সামাজিক বাস্তবতা। যেটিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কারখানায় যন্ত্রের বাহুল্য সম্পর্কে তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ।


১ ঘন্টা ২৭ মিনিটের এই ছবিটি রিলিজ পায় ১৯৩৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি। এই ছবিটি নির্মাণ করে চার্লি চ্যাপলিন যেমন প্রচুর অভিনন্দন পেয়েছেন, তেমনি তাকে অনেক সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে। পুঁজিপতিরা তার ওপরে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছে। ধর্মব্যবসায়ীরা তাকে কমিউনিস্ট আখ্যা দিয়েছে। আবার কমিউনিস্টরাও খুশি হতে পারেনি। কারণ এই ছবিতে যন্ত্রকে মানুষের দুর্দশার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাছাড়া শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কেও বিস্তারিত কিছু নেই এই ছবিতে। এই সমস্ত সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে চার্লি চ্যাপলিন বলেছেন যে তিনি মোটেই কমিউনিস্ট হতে চাননি। এমনকি শ্রমিক আন্দোলনকেও প্রধান বিষয় করতে চাননি। তিনি সুখ এবং দুঃখ মিলিয়ে একটি উপভোগ্য ছবি বানাতে চেয়েছেন।


‘মডার্ন টাইমস’ ছবিটির আবেদন আজ এতো বছর পরেও একটু ম্লান হয়নি। ক্ল্যাসিক এই ছবিটি যুগ যুগ ধরে মানুষকে আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি করছে। আগামীতেও করবে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৩

জিএমফাহিম বলেছেন: এখনো একবারে পুরোটা দেখা হয়নি। :(

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০০

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: রিভিউ ভাল্লাগছে। সুযোগ হইলে দেখব

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০১

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: রিভিউ ভাল্লাগছে। সুযোগ হইলে দেখব

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৪

অরণ্য প্রলয় বলেছেন: দেখবেন। ভালো লাগবে এবং ভাবাবে।

৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:০১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
চরম একটা মুভি।
যেমন হাসছি - তেমনি এর আড়ালের মূল বক্তব্যে চমৎকৃতও হইছি।

রিভিউটা একদম খাসা। +

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪৪

অরণ্য প্রলয় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: দেখেছি। অসাধারণ একটি ছবি। তিনি সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। চমৎকার রিভিউ।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:০৭

অরণ্য প্রলয় বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:২৫

চানাচুর বলেছেন: আপনি কি প্রলয় হাসান?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.