নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পোড়া কপাইল্লা মিন্টু

পোড়া কপাইল্লা মিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লক্ষ্মী বাঈ ভারতবর্ষের ইতিহাসে একজন বিপ্লবী নেত্রী

১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৫৩


লক্ষ্মী বাঈ ছিলেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে একজন বিপ্লবী নেত্রী হিসেবে চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব । তাছাড়াও তিনি ঝাঁসীর রাণী বা ঝাঁসী কি রাণী হিসেবেও সর্বসাধারণের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের অন্যতম প্রতিমূর্তি এবং পথিকৃৎ হয়ে রয়েছেন তিনি। মারাঠা শাসনাধীন ঝাঁসী ভারতের উত্তরাংশে অবস্থিত। জন্মকালীন সময়ে তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মণিকর্ণিকা এবং ডাক নাম মনু। তিনি মহারাষ্ট্রের মারাঠী করাডে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮২৭সালের ১৯শে নভেম্বর কাশী বারানসী এলাকায় তার জন্ম। তার বাবার নাম মরুপান্ত তাম্বে আর মাতা ভাগীরথী বাঈ তাম্বে। চার বছর বয়সেই তিনি মাতৃহারা হন। পারিবারিক পরিবেশে বাড়িতে শিক্ষালাভ করেন লক্ষ্মী বাঈ। বিথুরের পেশোয়া আদালতে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন তার পিতা। সেখানে পরবর্তীতে নিজ কন্যাকে মনের মতো করে গড়ে তুলতে থাকেন মরুপান্ত তাম্বে। লক্ষী বাঈকে ছাবিলি নামে ডাকতেন উষ্ণ হৃদয়ের অধিকারী পিতা।বাবা কোর্টের কাজ কর্মে জড়িত থাকায় রাণী লক্ষ্মী বাঈ ওই সময়ের অধিকাংশ নারীদের তুলনায় অধিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পেরেছিলেন। আত্মরক্ষামূলক শিক্ষালাভের পাশাপাশি ঘোড়া চালনা আর্চারী শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাছাড়াও তিনি তাঁর বান্ধবীদেরকে নিয়ে নিজস্ব একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।১৮৪২ সালে ঝাঁসীর মহারাজা গঙ্গাধর রাও নিওয়াকরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন লক্ষ্মী বাঈ। এভাবেই তিনি ঝাঁসীর রাণী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বিয়ের পরই তার নতুন নামকরণ হয় লক্ষ্মী বাঈ হিসেবে। ১৮৫১ সালে তাদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় দামোদর রাও। চার মাস পর সন্তানটি মারা যায়। পুত্র শোক ভুলতে রাজা এবং রাণী উভয়েই আনন্দ রাওকে দত্তক নেন। আনন্দ রাও ছিলেন গঙ্গাধর রাওয়ের জ্যেঠাতো ভাইয়ের ছেলে। জীবিত থাকা অবস্থায় ঝাঁসীর রাজা তার পুত্রের মৃত্যু রহস্য কখনো উদঘাটন করতে পারেননি। ঝাঁসীর মহারাজা গঙ্গাধর রাও ১৮৫৩ সালের ২১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।আনন্দ রাওকে দত্তক নেয়ায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসী'র দখল স্বত্ত্ব বিলোপ নীতির কারণে তার সিংহাসন আরোহণে প্রতিবন্ধকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ডালহৌসী জানান যে ঝাঁসীর সিংহাসনে প্রকৃত উত্তরাধিকারী নেই এবং ঝাঁসীকে কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণাধীনে নেওয়া হবে। ১৮৫৪ সালের মার্চে ঝাঁসীর রাণীর নামে বার্ষিক ৬০০০০ ভারতীয় রূপি ভাতা হিসেবে মঞ্জুর করা হয় এবং ঝাঁসীর কেল্লা পরিত্যাগ করার জন্য হুকুম জারী হয়।
১৮৫৭ সালের ১০ই মে ওই দিন মিরাটে ভারতীয় বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে লি ইনফিল্ড রাইফেলের আচ্ছাদনে শুকরের মাংস এবং গরুর চর্বি ব্যবহার করা হয়। তারপরও ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী রাইফেলে শুকরের মাংস এবং গরুর চর্বির ব্যবহার অব্যাহত রাখে। তারা বিবৃতি দেয় যে যারা উক্ত রাইফেল ব্যবহারে অসম্মতি জানাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও শুরু করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। সেই বিদ্রোহে সিপাহীরা অনেক ব্রিটিশ সৈন্যসহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে নিযুক্ত কর্মকর্তাদেরকে হত্যা করেন।সে সময়ে লক্ষ্মী বাঈ তার বাহিনীকে নিরাপদে এবং অক্ষত অবস্থায় ঝাঁসী ত্যাগ করাতে পেরেছিলেন। সমগ্র ভারতবর্ষব্যাপী প্রবল গণআন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সেই চরম মুহুর্তে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অন্যত্র মনোযোগের চেষ্টা চালায়। লক্ষ্মী বাঈ একাকী ঝাঁসী ত্যাগ করেন। তার নেতৃত্বে ঝাঁসী শান্ত এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রয়েছিল। হলদী কুমকুম অনুষ্ঠানে ঝাঁসীর রমণীরা শপথ গ্রহণ করেছিল যে যে কোন আক্রমণকেই তারা মোকাবেলা করবেন এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণকে তারা ভয় পান না।সেই প্রেক্ষাপটে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনায় দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ১৮৫৭ সালের ৮ই জুন জোখন বাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীতে কর্মরত কর্মকর্তাসহ স্ত্রী সন্তানদের উপর গণহত্যার বিষয়ে তার ভূমিকা নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। অবশেষে তার দ্বিধাগ্রস্থতা কেটে যায় যখন ব্রিটিশ সৈন্যরা স্যার হিউজ রোজের লর্ড স্ট্রাথনায়র্ন নেতৃত্বে ঘাঁটি গেড়ে বসে এবং ১৮৫৮ সালের ২৩শে মার্চ তারিখে ঝাঁসী অবরোধ করেন। লক্ষ্মী বাঈ তার বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিলেন এবং সে অবরোধের প্রেক্ষাপটে তিনি প্রচণ্ডভাবে ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন। ঝাঁসী এবং লক্ষ্মী বাঈকে মুক্ত করতে বিশ হাজার সৈনিকের নিজস্ব একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অন্যতম বিদ্রোহী নেতা তাতিয়া তোপে। তবে ব্রিটিশ সৈন্যদলে সৈনিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৪০জন। স্বল্প সৈনিক থাকা স্বত্ত্বেও তাতিয়া তোপে ব্রিটিশ সৈন্যদের অবরোধ ভাঙ্গতে পারেননি। ব্রিটিশ সৈনিকেরা ছিল প্রশিক্ষিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ যা প্রতিপক্ষের আনাড়ী ও অনভিজ্ঞ সৈনিকেরা তাদের ৩১শে মার্চের আক্রমণে টিকতে পারেনি। লক্ষ্মী বাঈয়ের নিজস্ব বাহিনী সে আক্রমণ সহ্য করতে পারেনি। আক্রমণের তিন দিন পর ব্রিটিশ সৈন্যদল দূর্গের দেয়ালে ফাটল ধরায় এবং ঝাঁসী শহরটি করায়ত্ব করে নেন। তার পূর্বেই এক রাতে দূর্গের দেয়াল থেকে সন্তানসহ লাফ দিয়ে লক্ষ্মী বাঈ প্রাণরক্ষা করেন। সে সময় তাঁকে ঘিরে রেখেছিল তার নিজস্ব একটি দল যার অধিকাংশই ছিল নারী সদস্য।আনন্দ রাওকে সাথে নিয়ে রাণী তার বাহিনী সহযোগে বাণিজ্যিক বিনিয়োগের উর্বর ক্ষেত্র কাল্পীতে যান। সেখানে তিনি অন্যান্য বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে যোগ দেন। তাতিয়া তোপের নেতৃত্বেও একটি বিদ্রোহী দল ছিল।এরপর রাণী লক্ষ্মী বাঈ এবং তাতিয়া তোপে গোয়ালিয়রের দিকে রওনা দেন। সেখানে তাদের যৌথবাহিনী গোয়ালিয়রের মহারাজার দলকে পরাজিত করেন। পরাজিত বাহিনীর সদস্যরা পরবর্তীতে যৌথবাহিনীর সাথে একত্রিত হয়। তারপর কৌশলগত অবস্থানে থাকা গোয়ালিয়রের কেল্লা দখল করে বাঈ এবং তোপের সম্মিলিত বাহিনী। ১৮৫৮ সালের ১৭ই জুন ফুল বাগ এলাকার কাছাকাছি কোটাহ কি সেরাইয়ে রাজকীয় বাহিনীর সাথে পূর্ণোদ্দম্যে যুদ্ধ চালিয়ে শহীদ হন রাণী। পরবর্তীতে আরো তিনদিন পর ব্রিটিশ সেনাদল গোয়ালিয়র পুণর্দখল করে। যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের পক্ষে জেনারেল হিউজ রোজ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে রাণী তার সহজাত সৌন্দর্য্য চতুরতা এবং অসাধারণ অধ্যবসায়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাছাড়াও তিনি বিদ্রোহী সকল নেতা নেত্রীর তুলনায় সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিলেন।

রাণী লক্ষ্মী বাঈ ভারতবর্ষের জাতীয় বীরাঙ্গনা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান। তাঁকে ভারতীয় রমণীদের সাহসী প্রতীক এবং প্রতিকল্প হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম নারী দলের নামকরণ করেন রাণী লক্ষ্মী বাঈকে স্মরণপূর্ব্বক।ভারতীয় মহিলা কবি সুভদ্রা কুমারী চৌহান রাণী লক্ষ্মী বাঈকে স্মরণ করে একটি কবিতা লিখেন। কবিতার নামকরণ করা হয় ঝাঁসী কি রাণী যাতে জাতীয় বীরাঙ্গনা হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করেছেন তিনি।১৮৭৮ সালে কর্ণেল ম্যালসন লিখিত দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ইন্ডিয়ান মুটিনি পুস্তকে লক্ষ্মী বাঈ বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি লিখেন তার জনগণ সর্বদাই তাঁকে স্মরণ করবে। তিনি নিষ্ঠুরতাকে বিদ্রোহের পর্যায়ে উন্নীত করার মাধ্যমে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি জীবিত আছেন এবং স্বীয় মাতৃভূমির জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।সাম্প্রতিককালে ২০১১সালের ২১শে জুলাই তারিখে লক্ষ্মী বাঈকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ জন ডানপিটে রমণীদের একজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা তাদের স্বামীদের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা পেয়েছিলেন। টাইম ম্যাগাজিনে সে তথ্য প্রকাশ করা হয়। তালিকায় ঝাঁসীর রাণীর অবস্থান ছিল ৮ম।ব্রোঞ্জ মূর্তিতে খচিত ভাস্কর্য্যে রানী লক্ষ্মী বাঈকে ঝাঁসী এবং গোয়ালিয়র উভয় শহরেই ঘোড়ায় আরোহিত অবস্থায় অঙ্কিত করা হয়েছে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ৩:০৯

কল্লোল পথিক বলেছেন:




সুন্দর পোস্ট।
পোস্টে ++++++++

১২ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫

পোড়া কপাইল্লা মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

২| ১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ৩:২৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ভালো লাগল মিন্টু ভাই ।

১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:২৮

পোড়া কপাইল্লা মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ সার্চম্যান ভাই ভালো থাকবেন ।

৩| ১২ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৫:৪৭

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

পোড়া কপাইল্লা মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ আপুমনি ।

৪| ১২ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: যদি কপিপেস্ট না মাইরা থাকেন পোস্ট কম্পাইল করতে, তাইলে বলতে হবে সুপার পোস্ট। মনতু বাই রকজ B-))

১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩২

পোড়া কপাইল্লা মিন্টু বলেছেন: আমি কপি পোস্ট ছাড়া মারতে পারি না ।আমিই না খালি এহন দেখি আইজ কাইলকার পুলাপাইন অনেকেই কপি পুস্টই মারে । B-))

৫| ১৪ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১

শেয়াল বলেছেন: উইকি থাইক্কা মাইড়া দিসো মন্থু মিয়াআ ! ভালাই করসো । গোছানুতে তুমি ১০০ মার্ক পাইচো । পেলাস

১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

পোড়া কপাইল্লা মিন্টু বলেছেন: ধৈন্য হলুম আপনার দেয়া পিলাচ পাইয়া ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.