![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনটা খারাপ হয়ে আছে।কেন জানি খারাপ লাগাটা যখন খুব পেয়ে বসে,তখন কি কারনে মন খারাপ তা আর খুঁজে পেতে ইচ্ছে করে না।ছাদে যেতে পারলে হয়ত ভাল লাগত।বিকালের বৃষ্টি শেষে রাতের আকাশের তারাগুলো আজ ভালই আলো ছড়াবে।তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে হয়ত কিছুক্ষণ মন খারাপও কমে যেতে পারে।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রাতে আম্মু যেতে দেয় না ছাদে।হয়ত যাওয়ার অনুমতি চাওয়ার কথা শেষ না হতেই মানা করে দিবে।কি যে করি!এই সময়ে মায়ের ডাক শুনতে পেলাম। আমাকে ডাকছে।"শিউলি, এই শিউলি, শুনে যা তো মা। ফ্রিজ থেকে মসলার বাটিটা আমাকে দিয়ে যা।" বাইরের কেউ শুনলেই ভাববে এই বাড়িতে যে মেয়েটি থাকে তার মা তাঁকে ডাকছে আর তার নাম বুঝি শিউলি। নাহ্,শুরুটা ঠিক বুঝলেও শেষটা ভুলই।আমার নাম শিউলি না।যদিও মায়ের কাছে আমার নিজের নামটা বিলুপ্তির পথে।তিনি কখনো আমার নামে ডাকেন না,ডাকেন বিভিন্ন ফুলের নামে।আজ শিউলি,কাল ডেইজি,পরশু করবী, তারপরদিন মালতী এরপর হয়ত অন্য কোন ফুল। কারণটা খুবই মজার বটে!খালারা বলেন,ছোট বেলা থেকেই মায়ের নাকি ইচ্ছা ছিল তার মেয়ে হলে মেয়ের নাম রাখবেন ফুলের নামে।কিন্তু যখন নিজের মেয়ে হল তখন দাদার রাগের ভয়ে তা আর হয়নি।মাও কম যান না। চুপি চুপি আমাকে ফুলের নামই ডাকতেন।আর সময়ের সাথে পরিবারে নিজের প্রতিপত্তি স্থাপনের পর থেকেই প্রতিদিন আমার নাম বদল শুরু হল।নতুন অপরিচিত কেউ আসলেই প্রথম দিন যে নামে আমাকে চিনেন পরের দিন তা আর শুনতে পান না মায়ের মুখ থেকে।আমিও অভ্যাস মত উত্তরে জবাব দিলাম,আসছি মা"।কারণ এই বাড়িতে যে ফুলের নামে ডাকা মানেই আমার নাম।বাবাও অনেকবার নাকি বাধা দিয়েও এই নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটাতে না পেরে নিজেও এই নিয়মে বন্দী হয়ে গেছেন।তবে তা কতটা নিজের ইচ্ছায় আর কতটা মায়ের রাগের ভয়ে তা আমার ও মায়ের দুইজনেরই জানা আছে।
ফ্রিজ থেকে মসলার বাটি হাতে নিয়ে রান্নাঘরে যাওয়ার আগেই মায়ের হাতের বিরানীর সেই চেনা পরিচিত গন্ধটা নাকে গেঁথে গেল।রান্নাঘরে ঢুকে মায়ের কাছে মসলার বাটি দিতেই উনি বললেন,"কিরে কি হয়েছে?"আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।কি বলব খুঁজে না পেয়ে হঠাৎ বলে ফেলি,"মা ছাদে যাব"।বলার সময় বুঝনি কি বলছি কিন্তু বলে বুঝলাম।মা হয়ত মানাই করে দিবে।তাতে আরও মন খারাপ হবে।কিছু চেয়ে না পাওয়ার ব্যাথাটা অনেক ভারী হয়। তার চেয়ে না চাওয়াই ভাল।হঠাৎ এসব চিন্তার জাল মায়ের কন্ঠ শুনে ছিঁড়ে গেল।"কিরে,এরকম বট গাছের মত ঠায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ছাদে গেলে যা,তবে ১০ মিনিট এর বেশি না।১০ মিনিট পর নেমে আসবি।" নিজেই অবাক হলাম।মা এত সহজে যেতে বলে দিলেন!!আর ১০ মিনিটের অনুমতিতে আধা ঘণ্টা পার করে দিলে মায়ের নারাজ হওয়ার শতকরা হার অনেক কম।আকাশে চাঁদ হাতে পাওয়ার মত করেই চাঁদ ছুঁতে ছাদের সিঁড়িতে পা রাখলাম।ধারণা মত চাঁদকে তারাদের ভীড়েই খুঁজে পেলাম।আকাশে মেঘ নেই বললেই চলে।পুরোটা জুড়েই তারার চাদর আজ।দেখে মনটা কিছুটা ভাল হয়ে গেল।ভেবে ভাল লাগে একটা রাত এমন চাদরে জড়িয়ে কাটাতে পারলে স্বপ্ন বলে ভুল ভাবতাম।মোবাইলটা বন্ধ করা ছিল।খুলে আবার হাতের মুঠোয় নিলাম।একটি খুদে বার্তা এসে জানিয়ে দিল কাল কপিল স্যার তার ক্লাসটা নিবেন না।এ বিষয় খুব একটা গায়ে লাগেনি,স্যারের ক্লাস কালে ভদ্রেই সপ্তাহে একদিন হয়ে থাকে।এ সপ্তাহেরটা আর হবে না মনে হচ্ছে।আকাশে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখের কোণাটা জ্বলতে আরম্ভ করল;লোনা পানি গাল বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ল।এই পানি কেন এতক্ষণ নিজেকে ধরে থাকল জানা আছে ;তবে সে জানে কিনা তা জানতে ইচ্ছে করে।নাহ্ ,মায়ের চোখে ধরা খেলে অনেক কঠিন প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।নিজেকে শান্ত করলাম।তারাদের কাছে কান্না জমা দিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসলাম।কাল ক্লাশের জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রাখছি এমন সময় মা এসে বলল,"বলতে ভুলে গেছি বিকালে ফাহাদ এসেছিল।তোকে এই বইটা দিতে বলল।"কখন এসেছিল জানতে চাইলে মা বলল,"বিকেলে খুব বৃষ্টির মাঝে কাকভেজা হয়ে আসল।কতবার বললাম ঘরে ঢুকে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে নিতে,শুনলোই না কথা।এই ঝুম বৃষ্টির মাঝেই আবার বের হয়ে গেল।" শুনে বললাম,”কি বল?!ফাহাদ তো বৃষ্টি পছন্দ করে না।বৃষ্টি নিয়ে তার অভিযোগের শেষ নেই।বৃষ্টি হলে সে ঘর থেকে বের হয় না আর যদি বের হতেই হয় তবে বৃষ্টিতে না ভেজার সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই তবে বের হয়”।মা বলল,”কি জানি,হয়ত আজ ব্যবস্থা করতে পারেনি”।মা ঘর থেকে গেলে আমি পলিথিনে মোড়া বইটা হাতে নিলাম।পলিথিন খুলে বইটা নিতেই একটা নীল কাগজের খাম মেঝেতে পড়ল।খামের ভিতর একটা চিঠি, সাথে একটা চ্যাপ্টা হওয়া কৃষ্ণচূড়া। চিঠিতে লেখা,"তোমার মত করে আজ বৃষ্টিতে ভিজতে শিখলাম , তবে খুব মন কাঁদানো এক বৃষ্টি ছিল "।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৯
প্রহেলিকাবালিকা বলেছেন: ধন্যবাদ।অনেকদিন পর ফিরে এসে ভাল লাগল।
২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৭
আর.হক বলেছেন: চমৎকার । খুবই চমৎকার
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩০
প্রহেলিকাবালিকা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে,
৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৩
স্বপ্ন নীল বলেছেন: বৃষ্টি মানুষের লুকানো ভালোবাসা জাগিয়ে তুলে
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৬
প্রহেলিকাবালিকা বলেছেন: হয়ত তাই!
৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৩
প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার বলেছেন: বৃষ্টিতে একা ভিজতে হয়
১২ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:১৩
প্রহেলিকাবালিকা বলেছেন: দোকলা হয়ে যান,তাইলেই দোকলা ভিজতে পারবেন
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩
মায়াবী ছায়া বলেছেন: চিঠিতে লেখা,"তোমার মত করে আজ বৃষ্টিতে ভিজতে শিখলাম , তবে খুব মন কাঁদানো এক বৃষ্টি ছিল "।
..........ভাল লাগলো ।।