নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক
একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মেজাজ বিগড়ে ছিলো। রুমমেট বেশ জোরে জোরে স্পিকারফোনে কথা বলছিলো। তাকে অনুরোধ করা হলো স্পিকারফোনে কথা না বলে নিজ রুমে গিয়ে কথা বলার জন্য। "স্যরি ভাই" বলে লোকটা চলে গেল ঠিকই কিন্তু ঘন্টাখানেক পর আবার একই কাজ।
তারও বেশ কিছুক্ষণ পরে লোকটা আবার রুমের কাছে এসে বললো, "ভাই, একটা উপকার করেন"।
আমি বললাম, "কিভাবে?"
সে বললো,"কিছুদিন আগে বাবা-মা'র জন্য এ্যাপ্লাই করেছিলাম, তাদের কাগজ মনে হয় হয়ে যাচ্ছে। আমাকে একটা স্পন্সরশিপ দেন আপনারতো ভালো ইনকাম আছে।"
মেজাজ আগে থেকেই কিছুটা খারাপ ছিলো। এবার সত্যি সত্যি খারাপ হবার জোগাড় হলো।
বললাম,"গত বছরতো আপনি বেশ ইনকাম দেখিয়েছেন ট্যাক্স ফাইলে, তো স্পন্সরশিপ কেন লাগবে?"।
সে বললো,"ওটাতো স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আসার জন্য দেখাতে হয়েছে, ওতোতো ইনকাম হয় নি।"
আমি বললাম, "তাহলে সরকারকে মিথ্যে বলার কি দরকার ছিলো? আর আপনার যদি ইনকাম না'ই থেকে থাকে তাহলে স্ত্রী-সন্তান আসার আগেই আপনি আবার আপনার মা-বাবার জন্যে এ্যাপ্লাই করলেন কেন?"
সে বললো,"সে বললো সেটা আমার চিন্তা, আপনার সমস্যা কি?"
আমি বললাম,"আমার পারতপক্ষে সমস্যা নেই, কিন্তু আপনি দু'দিন আগেও আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আপনার পরিবারের জন্য মাসিক খরচের টাকা পাঠিয়েছেন। আর আজ বলছেন স্পন্সরশিপ দেয়ার জন্য?"।
সে চলে যাওয়ার আগে মুখ বাঁকা করে বললো,"না দিলে না দিবেন এত কথার দরকার কি? টাকা হলে কত স্পন্সরশিপ কেনা যায়!"
আমি আর কথা বাড়াই নি। মনে মনে ভাবলাম, দু'শো ডলার যে দিতে পারছে না সে আবার স্পন্সরশিপ কেনার গরম দেখাচ্ছে কি ভাবে? বসে বসে ভাবছি কথাগুলো আর মনে হচ্ছে বাঙালীর পেটে ভাত না থাকলেও ফুটানি কম দেখাতে অপারগ। এই ধরনের মানুষগুলোই মূলত আমেরিকাতে এসে চৌদ্দগুষ্ঠি দেশ থেকে নিয়ে এসে সরকারের কাছে হাতপাতে, সাহায্য চায়। পরিবারের খাবারের জন্য ফুড স্ট্যাম্প, চিকিৎসার জন্য হেল্থ ইনসুরেন্স নেয়, মিথ্যে তথ্য দিয়ে অনেক টাকা ইনকাম দেখায়। সমস্যা সেখানে নয়, সমস্যা অযাচিত ফুটানিতে।
করোনার কারনে অনেকের চাকুরি নেই। আমার বলতে দ্বিধা নেই আমিও সমস্যার মধ্যেই আছি। আমারও পরিবার আছে, খরচ আছে। কিন্তু মিথ্যে তথ্য দিয়ে ইনকাম ট্যাক্স ফাইল আমার কখনো করা হয় নি, ইচ্ছেও নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় বাঙালীদের নতুন অসুখ দেখা দিয়েছে। কিছু দেশী লোকজন কিছু ভুঁইফোড় বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং এর নামে ক'দিন টুকটাক কাজ করে নিজেদের "আইটি প্রফেশনাল" হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। এদের বেশীরভাগেরই আমেরিকার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। মিথ্যে তথ্য দিয়ে এরা কাজের অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে, বাস্তবে এদের কোন কর্মাভিজ্ঞতাও নেই। আর থাকলেও তা অত্যন্ত সীমিত। সার্টিফিকেট এর নাম দিয়ে কিছু কাগজ প্রিন্ট করেই গলায় ঝুলিয়ে নিজেদের "সফট্ওয়্যার টেস্টার", "সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার", "সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার" ইত্যাদি দাবী করছে।
যারা দেশে বা প্রবাসে আছেন। তাদের ছেলে-মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব কোন তথাকথিত উল্লেখিত চাকুরীর পদবীধারী লোকজন হলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করুণ কোন ইউনিভার্সিটি বা কোন কলেজ থেকে সে পড়াশোনা করেছেন। তার ব্যক্তিগত ইউনিভার্সিটির ইমেইল এ্যাড্রেস জিজ্ঞেস করুন। প্রয়োজনে মেইল পাঠান ঐ ঠিকানায়। বিশ্বাবিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দেখতে চাইতে পারেন, কমন্সেমেন্ট প্রোগ্রাম কত সালে আর কোথায় হয়েছে জিজ্ঞেস করুণ। দেয়া তথ্য যাচাই করুণ। গ্রাজুয়েশন গাউন পরিহিত কমেন্সমন্টে ডে'র ছবি দেখতে চাইতে পারেন। এগুলো খুব সহজেই অনলাইনে যাচাই করা সম্ভব।
করোনার পর থেকেই বেশ কিছু বাঙালী লোকজনের এ্যাড রিকোয়েস্ট পাচ্ছি লিঙ্কডইনে। এদের বেশীরভাগ লোকেরই একই ধরনের পদবী। বুঝতে বাকি থাকে না যে এরা লিঙ্কডইনকেও ফেইসবুক মনে করছে। বাঙালী মনে হলেই তাকে এ্যাড করছে এটা প্রমাণ করার জন্য যে তাদের প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক অনেক বড়। আদতে এদের বেশীরভাগ লোকই আমার অপরিচিত। এমনকি যে লোকটা আমার কাছে স্পন্সরশিপ চেয়েছে, সেও একই পন্থায় ক'দিন আগেই আমাকে এ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। ওটা এবার আজীবন পেনডিং-ই থাকছে।
লিখার সারমর্ম হচ্ছে। সত্যবাদী হওয়ার চেষ্টা থাকা উচিত, কাজে-কর্মে সৎ আর ব্যক্তিগতভাবে বিনম্র বা হাম্বল হওয়ার চেষ্টা করা উচিত সবার। তাতে হয়তো কারো স্পন্সরশিপ পাওয়াটা সহজ হলেও হয়ে যাতে পারে। ঠাঁট দেখানো আচরণ আর যাই করুক মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে শেখায় না। ধন্যবাদ।
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৩৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সুন্দর পোস্ট।
বাংলাদেশীদের চরিত্র ফুটে উঠেছে।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৫৮
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৭
ফয়সাল রকি বলেছেন: আগে শুনতাম- ঢাকায় টাকা উড়ে! এখন শুনি- অনলাইনে টাকা উড়ে!!
৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: বাঙ্গালী যেখানেই যাক, তারা তাদের স্বভাব বদলাতে পারে না।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩২
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: কথা সত্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৪৭
বিষন্ন পথিক বলেছেন: আপনার মত "প্রফেশনালের" লেখা কে 'লিখা' বলা বড়ই বেমানান