নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক
আমার কর্মস্থল আমার বাড়ি থেকে প্রায় ১১৪০ কিলোমিটার দূরে, অন্তত গুগল ম্যাপ সেটাই বলছে। তবে অতটা পথ পাড়ি দিয়ে আমাকে প্রতিদিন যেতে আসতে হয় না। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই কম্পিউটার অন করে কাজে বসে যেতে পারি। মজার বিষয় হলো, রিমোট অফিস করার বিষয়টি অনেকের কাছেই নতুন হলেও, আমার কাছে এটা মোটেও নতুন নয়। আমি ২০০১/২০০২ সালেও রিমোটলি অনলাইনভিত্তিক কাজ করেছি বাংলাদেশে বসে। তবে সেটা এখনকার মতো এতটা অফিসিয়াল কাজ ছিলো না।
যাইহোক, ২০২২ সালের প্রথম দিকে করোনা পরবর্তী সময়ে অনেকের মতোই আমার কর্মহীন অবস্থা ছিলো। কিছুটা হতাশ হলেও চাকুরির জন্য এ্যাপ্লাই করা বন্ধ করিনি। মোটামুটি ভালো মনে হলেই এ্যাপলিকেশন জমা দিচ্ছিলাম, হঠাৎ করেই একদিন একটা এজেন্সি থেকে ফোন এলো। আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করার পর ফোনের অপর প্রান্তের লোকটি আমাকে ইন্টারভিউর জন্য বেশ ক'টা সম্ভাব্য তারিখ দিতে বললেন। মনে মনে ভাবলাম এতক্ষণ তাহলে উনি কেন এত টেকনিক্যাল প্রশ্ন করছিলেন! বুঝতে পারলাম উনি কিছুটা বাজিয়ে নিচ্ছেন, বুঝতে চাইছেন আমি আদৌও কাজটির জন্য যোগ্য প্রার্থী কি না। সম্ভবত আমার উত্তরগুলো উনার কাছে পজিটিভ মনে হয়েছে তাই আসল ইন্টারভিউর জন্য সম্ভাব্য দিনক্ষণ জানতে চাইছেন। বললেন তাদের ক্লায়েন্ট (আমি যেখানে কাজ করবো) একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেতন ভালো। আমার কাছে জানতে চাইলেন, বাৎসরিক কি ধরনের বেতন প্রত্যাশা করছি। চাকুরির বাজার ভালো ছিলো না তাই মোটামুটি একটা কিছু হলেই জয়েন করার ইচ্ছে ছিলো। ভদ্রলোক যে ধরনের বেতনের কথা বললেন তাতে আমার খুশি না হয়ে উপায় ছিলো না। তবে এটাও বলে রাখলেন জবটা মোটামুটি ছ'মাসের মতো। আগ-পিছ না ভেবেই "ওকে" বলে দিলাম।
যথাসময়ে ইন্টারভিউর দিন-ক্ষণ চলে আসলো। ভালো শার্ট-স্যুট, টাই পরে ক্যামেরার সামনে বসে পড়লাম। ওপার থেকে দু'জন ভদ্র মহিলা প্রায় একই সাথে "হাই ইফতিখার" বললেন। প্রাথমিক কুশলাদি শেষ করার পর বুঝলাম, একজন আমার সম্ভাব্য সুপারভাইজার ও অন্যজন বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ.আর. ডিপার্টমেন্টের একজন পদস্থ ম্যানেজার। এই সুপারভাইজার এর নাম (ধরে নিলাম) সারা। তিনি বেশ কিছু টেকনিক্যাল প্রশ্ন করলেন, আমার কাজ দেখতে চাইলেন। কিছু প্রোগ্রামিং সমস্যার বিষয় দেখিয়ে জানতে চাইলেন আমি কিভাবে এগুলো সমাধান করতে পারবো। বিষয়গুলো ততটা কঠিন ছিলোনা তাই সাথে সাথেই সব উত্তর দেয়া হয়ে গেল। মনে হলো, তারা দু'জনেই বেশ খুশি হলেন। দ্বিতীয় রাউন্ড ইন্টারভিউর ডেট চাইলেন এবং যথারীতি সেটাও সম্পন্ন হলো। সে দিন অবশ্য সারা-সহ আরো দু'জন ডেভেলপার উপস্থিত ছিলেন। তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সপ্তাহখানেক বাদেই ইমেইলে অভিনন্দন জানিয়ে তৃতীয় রাউন্ড ইন্টারভিউর জন্য তারিখ নেয়া হলো। তৃতীয় ইন্টারভিউর দিন মূলত ফরম্যালিটির বিষয় ছিলো, আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে জয়েন করার পুরো প্রক্রিয়া বুঝিয়ে বলা হলো। বেতন আর কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষ হলো। এর দু'দিন পরই অফার লেটার আসলো। কাল বিলম্ব না করা জয়েন করে ফেললাম।
আমার কাজ শুরু হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডিপার্টমেন্টে, সারা'র তত্ত্বাবধানে। যার প্রতি কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানাতেই আজকের এই লিখা। সারা প্রথম থেকেই বেশ সহযোগীতা করেছে, আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছে, আর তাই আমার দায়িত্ব বুঝে নিতে একটুও সমস্যা হয় নি। আমার পজিশনে আমার আগে একটা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো যারা অনেকটাই দায় সারা কাজ করে, পুরো ডিপার্টমেন্টকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বেশ অপ্রস্তুত অবস্থায় রেখে যাওয়াতে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর বেশ বিরক্ত ছিলেন। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে বাদ দিয়ে আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চুক্তিভিত্তিক। সারা পুরো সমস্যাটাকে আমার সামনে তুলে ধরে, আমার মতামত চাইলো আর সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আমার একটা প্রেজেন্টেশান দিতে বললো ডিরেক্টরসহ সবার সামনে। আমি আমার অবস্থান তুলে ধরে মোটামুটি ৬/৭ মাস সময় চাইলাম। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমি পুরো ডিপার্টমেন্টের সামনে নতুন সিস্টেম দাঁড় করিয়ে দিলাম। দায়িত্ব শেষ হলো।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে একটা এ্যাপলিকেশন বানাতে চেয়েও পারে নি। আমার তত্তাবধানে আর সারা'র উৎসাহে সেটাও করে দিলাম বোনাস প্রজেক্ট হিসেবে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো ডিপার্টমেন্ট তথা আমার ডিরেক্টর এবং সুপারভাইজার সারা আমার ব্যাপারে খুবই উৎসাহ দেখালো। বিশেষ করে সারা-ই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আমাকে অনেকটাই হাই-লাইট করে দিলো। তাতে সারা'র অবস্থান এবং অবদানও বেশ প্রশংসিত হলো। আমাকে ফিচারড এম্পলয়ি করা হলো, মোটামুটি স্টার স্টাফ টাইপ কিছু একটা। ডিন আমাকে ও আমার ডিপার্টমেন্টকে সবার সামনে তুলে ধরলেন। বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও বেশ ক'জন প্রফেসরদেরকে কিছু বিষয় শিখিয়ে দেয়া হলো।
গত বছরের নভেম্বরে ছ'মাসের চুক্তি শেষ হওয়ার পরপরই আমাকে আরো এক বছরের প্রাথমিক চুক্তির অফার দেয়ার জন্য সারা রিকোমেন্ডেশন করলো ডিরেক্টরের কাছে, এটা অনেকটাই অফিসিয়াল প্রসেস। তবুও আমার ডিরেক্টরের মাধ্যমে ডিন সেটাও এ্যাপ্রুভ করে দিলেন। তার কিছুদিন পরেই অবশ্য সারা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অন্য কলেজে জয়েন করেছে। আমার বিশেষ একটা কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কলেজ থেকেও অনেকেই যোগাযোগ করলেন আমার সাথে। আমার বানানো একটা সিস্টেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আরো কিছু কলেজে এ্যাডপ্ট করা হলো। যতটুকু জানি, আমাার বানানো সিস্টেমটাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ফাইনালি সবগুলো কলেজে এডপ্ট করার চেষ্টা করছে। বেশ কিছু ডেভেলপারদেরও কিছু জিনিস আমি দেখিয়ে দিয়েছি ও দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৪ এর মে মাসের দিকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সিস্টেমটা সবার সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরার জন্য। সেখানে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছাড়াও আমার ডিরেক্টর, ও ডিন নিজেও থাকবেন। পুরো বিষয়টিই আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক বিষয়।
আর এর মাঝেই মাত্র ক'দিন আগেই এলো আরো বড় সুসংবাদ। সেই এক বছরের প্রাথমিক চুক্তি শেষ করে আমাকে স্থায়ী/পার্মানেন্ট রিমোট ডেভেলপার হিসেবে অফার দেয়া হয়েছে। আমি সেটা সানন্দেই একসেপ্টও করেছি। সেই সাথে স্বাধীনভাবে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে কাজ করার সুবিধা যদিও ডিপার্টমেন্টে আমার জন্য একটা অফিস বরাদ্দ রয়েছে। এই পুরো যা্ত্রার পেছনে সারা'র অবদান অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ কারণ সারা আমার সুপারভাইজার হিসেবে আমার ব্যাপারে যে আনুষ্ঠানিক ইভ্যালুয়েশন জমা দিয়েছিলো তা আমার নজরে এসেছে। সারা এই লিখা হয়তো কখনো পড়বে না বা বুঝবে না। তবুও তাকে নিজ ভাষায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানানোর এই সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না। করোনা পরবর্তী সময়ে আমাকে চাকুরির সুযোগ দেয়া থেকে শুরু করে, তার সাথে কাজ করার সময় তার আন্তরিকতা তথা আমার ব্যাপারে সুন্দর মন্তব্য ও সুপারিশ করার জন্য তার প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। আমি তার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল, সাফল্য ও সুস্থতা কামনা করছি। ধন্যবাদ।
ছবি কপিরাইট: ফ্রীপিক
২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৩৯
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৩৫
অধীতি বলেছেন: অনেকদিন পরে এলাম আপনার ব্লগে। এসেই একটা সুসংবাদ পড়লাম। আপনার পেশাগত জীবনের এই সুন্দর মুহূর্ত এবং সারা নামের সেই সুপারভাইজারের জন্য শুভ কামনা রইল।
২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৪০
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার জন্যেও থাকছে অনেক অনেক শুভ কামনা। ধন্যবাদ।
৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪৫
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: সারা ও আপনার জন্য শুভ কামনা।
২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৪০
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
৪| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট।
আপনি ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন এটাই কামনা করি।
২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৪১
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার জন্যেও থাকছে শুভ কামনা। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন এটাই প্রত্যাশা করছি। ধন্যবাদ।
৫| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৩৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
অভিনন্দন আপনাকে, ধন্যবাদ সারাকে।
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৫
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: সময় নিয়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
৬| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:২৫
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সব মিলিয়ে চমৎকার একটি বিষয়, খুব ভালো লাগলো।
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৬
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: ব্লগে আপনাদের সরব উপস্থিতিও আমার ভালো লাগে। অনেক ধন্যবাদ।
৭| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪৪
আমি সাজিদ বলেছেন: অভিনন্দন ভাই।
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৬
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সাজিদ ভাই।
৮| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫৭
অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:
অভিনন্দন ভাইয়া।
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৭
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন। শুভ কামনা থাকছে আপনার ও ব্লগ পরিবারের সবার জন্য।
৯| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৪
বাকপ্রবাস বলেছেন: পেশাগত জীবন গল্পের মতো সুন্দর হোক, সারাকে সাধুবাদ ও শুভেচ্ছা
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:১৮
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: শুভ কামনার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আপনার জন্যে থাকছে অনেক অনেক শুভ কামনা। ধন্যবাদ।
১০| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১০
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: অভিনন্দন এবং শুভ কামনা আপনার জন্য।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকে অভিনন্দন। একজন বাংলাদেশী হিসাবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানে সিনসিয়ারিটি ও ট্যালেন্ট দিয়ে সবার মন জয় করতে পারা এক বিরাট গর্বের বিষয়, বাংলাদেশের মুখই উজ্জ্বল হয়।
মোবাইলে আমাদের সাইটের একটা ইংলিশ ভার্সন আছে, অটোমেটিক্যালি সেটা ইংলিশে ট্রান্সলেটেড হয়ে যায়। আমি বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়ে দেখেছি, ট্রান্সলেটেড ইংলিশ অনেক সাবলীল এবং প্রায় নির্ভুল (মাঝে মাঝে কিছু উদ্ভট ট্রান্সলেশন হয়ে যায়)। সম্ভব হলে আপনি সেটা সারাকে পিডিএফ আকারে পাঠাতে পারেন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।