![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক
বিগত ২১শে জুলাইয়ের সন্ধ্যা থেকেই কম্পিউটারের সামনে বসেছিলাম। সারারাত বসে বসে বিভিন্ন খবর দেখছিলাম আর বিমান বাহিনীর দুর্ঘটনার আপডেট জানার চেষ্টা করছিলাম। গভীর রাতে জানতে পারলাম আরো কয়েকজন আহত ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো। ভোর রাতে ফজরের নামাজ পড়েও বিছানায় যেতে পারি নি। তখনো পিসিতে বসে আছি। সারারাত এভাবে জেগে থাকায় গিন্নী বার বার অনুরোধ করছিলো নাস্তা করে একটু ঘুমুতে। যথারীতি নাস্তা এলো, নাস্তা করেও পিসিতে বসেছিলাম। কিছু ভিডিও দেখে আমার ভীষণ কান্না পেল, আমার ছেলে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আমি কেন কান্না করছি। সে কখনো মনিটরের দিকে তাকাচ্ছে কখনো আমার দিকে।
কিছুক্ষণ পর গিন্নী-কে বললাম আমি হাসপাতাল যাচ্ছি। দেখি, কারো রক্তের প্রয়োজন হয় কি না! উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে গিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা হলো, ডাক্তাররা জানালেন আপাতত রক্তের দরকার নেই। ওখানে তখনো বেশ কয়েকজন চিকিৎসাধীন থাকায় আমি অনুরোধ করতেই আমার নাম, রক্তের গ্রুপ ও ফোন নাম্বার লিখে রাখলেন। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, স্কুলটা আমি সামনে থেকে দেখবো। জানি ওখানে দেখার মতো তেমন কিছু নেই, তবুও যেতে চাইলো মনটা। হাসপাতাল থেকে ব্যাটারী চালিত রিকশায় ষাট টাকা। স্কুলের এরিয়াতে গিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ এখনো ঐদিকটায়। মূল ফটক দিয়ে স্কুল/কলেজ আই.ডি. ছাড়া ঢোকার উপায় ছিলো না তাই পেছনের দিকটায় গিয়ে ঢুকে পড়লাম।
পেছনের গেইটা ভাঙা ছিলো। গেইটের একটা পাশ ভেঙ্গে স্কুলের দোতালার সাথে হেলিয়ে রাখা ছিলো। ভিডিওতে দেখেছিলাম এটা দিয়েই অনেক বাচ্চাকে নিচে নামানো হয়েছিলো। আরেকটা অংশ তখনো মাটিতেই পড়ে ছিলো। ওটা মাড়িয়েই ভেতরের দিকে ঢুকে গেলাম।
স্কুলের প্রাঙ্গনটায় কম-বেশী সবুজের সমারোহ দেখা গেল। তখনো স্কুলে অনেক মানুষ এসে ভীড় করেছেন। আমার মতো অনেকেই দেখতে এসেছেন, অনেকেই আফসোস করছেন, অপলক বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে আছেন আর অনেকেই আমার মতো দু'একটা ছবি তুলছেন। আমি সঙ্গে করে আমার ডি.এস.এল.আর কিংবা এ্যাকশান ক্যামেরাটা নিয়ে আসিনি তাই ফোন দিয়েই কয়েকটা ছুবি তোলার চেষ্টা করলাম। আসলে ভিডিও করার মতো মানসিকতাও ছিলো না। প্রচুর কান্না-কাটি করে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম।
বলতে গেলে মাইলস্টোন কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রীই তখন মাঠে অবস্থান করছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি অবশ্য পরে বাসায় এসে জানতে পারি যে তখন আইন উপদেষ্টাকে এক প্রকার কলেজ বিল্ডিং এর ভেতরে ঘিরে রাখা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ কিছু দাবী-দাওয়া উপস্থাপন করেছে যার বেশীরভাগই আমার কাছে যথেষ্ট যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে।
একটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো স্কুলটার আশেপাশে। মনে হচ্ছিলো যে কোন সময় একটা বড় রকম ঝামেলা হতে পারে। উত্তেজিত ছাত্র জনতা কিছু একটা করে বসলে পুলিশও ঝামেলা করতে পারে মনে করে, বেশীক্ষণ অবস্থান না করে চলে আসি। বেশ কয়েকটা টিভি চ্যানেলের লোকজনকে ছাত্ররা এক প্রকার জোর করে বের করে দেয়। আমার কাছে কোন প্রকার আই.ডি. ছিলোনা আর তাছাড়া আমার কাছের কেউ ঐ স্কুলেও পড়াশোনা করছে না। সব মিলিয়ে ওখানে বেশীক্ষণ অবস্থান না করাটাই যৌক্তিক মনে হয়েছে।
বাসায় এসেও স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম কিন্তু ঘুম আসছে না। ওদিকে বেলা পড়ে সন্ধ্যে হয়ে আসছে, আসরের নামাজের সময় হয়ে গেল। বিছানায় আমার পাশেই আমার মা'মনি আরাম করে ঘুমুচ্ছে। আমিও ওর মতো ভাবনাহীন ঘুম চাইছিলাম। গতকালও অনেকগুলো বাচ্চা অবেলাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো চির-নিদ্রায় সে ভাবনাতেই আমার ঘুম আসছে না। ফুলগুলো শান্তিতে ঘুমাক, তোমরা কেউ জাগিয়ে দিও না। আমিও একটু ঘুমুবো।
ছবি কপিরাইট: ছবিগুলো আমার ফোন দিলে তোলা।
২| ২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:০৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেলো পড়ে।
৩| ২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:২৩
কিরকুট বলেছেন: যে সকল শিশুর শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাদের সনাক্তের কি কোন ব্যবস্থা হয়েছে ?
৪| ২৪ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি কষ্ট এবং যন্ত্রনা পাওয়ার জন্য হাসপাতাল এবং স্কুলে গেলেন??
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৪৩
সুলাইমান হোসেন বলেছেন: আজকেও ঐ জায়গাটায় অনেক ভীর দেখলাম,সাংবাদিকরা এখনও সেখানে আছে।কিন্তু ভিতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না,আমি গিয়েছিলাম ঢুকতে পারিনি,ভিতরে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে