নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে কিছুই দেখি না। তবে, মানুষ হয়ে মানুষকে ভুল বোঝা আমার স্বভাবে নেই, আপনার পেশা যাই হোক না কেন।

প্রসেনজিৎ হালদার

প্রসেনজিৎ হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিশোরের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৭

মুক্তিযুদ্ধ চলছে। আষাঢ়ের ভরা পদ্মা নদীতে ১৪ বছরের এক কিশোর ছেলেকে আটকে রেখেছে তার পিতা তাদেরই নৌকায়। নদীতে তখন নতুন জল এসেছে, মাছও প্রচুর। নদীতে মাছ ধরেই তাদের জীবিকা। পেশাদার মৎসজীবী হওয়ায় তাদের ভরসার জায়গা এই নদী এবং প্রায় প্রত্যেকের রয়েছে নৌকা। মাছ ধরার উদ্দেশ্যের কথা বলেই নৌকায় নেয়া হয় সে ছেলেটিকে। সে সময় কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় পেশা হিসেবে মাছ ধরাকেই বেছে নিয়েছিল সে কিশোর। ছেলেটি যে তার বাবার সঙ্গে ডাঙা থেকে নৌকায় উঠল, আর তাকে নামতে দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন বাধ্য হয়ে ছেলেটিকে বাস করতে হয়েছিল নৌকায়। তার পিতার একটাই উদ্দেশ্য ছিল- ছেলেকে যুদ্ধে যেতে দেবে না। পিতা তো আগে থেকেই জানে, অনেকে যুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে না। তাই তাকে ছাড়া হয়নি। আর এভাবেই একটি কিশোরের কেটে যায় ’৭১-এর গন্ডগোলের বছর। তখন বাবা-ছেলেও জানত না, এই-ই মহান মুক্তিযুদ্ধ। জানলে-বুঝলে হয়তো এমনটি নাও হতে পারত।
যুদ্ধের প্রায় চার মাস পেড়িয়ে গেছে। কিশোর ছেলেটির নামও উঠেছে মুক্তিযাদ্ধাদের তালিকায়। এ অবস্থায় বাকি থাকে শুধু সম্মুখ যুদ্ধ। পরবর্তীতে তাকে আর ছাড়া হয়নি। সে যেতে পারেনি যুদ্ধে। অনেক আক্ষেপ নিয়ে পার করেছে সময়। ছেলেটির অনেক সতীর্থ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, তারা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা। অতঃপর তার আর কিছুই করা ছিল না। তারপর, স্বাধীনতার ৪৭ টি বছর হয়ে গেল।
এখন ঘরের ছোট ছেলে তার ষাটোর্ধ বয়সের পিতাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘আচ্ছা বাবা, তুমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছো বা করছো? তুমি কি মুক্তিযোদ্ধা?’ বাবা বলছে, ‘না, করতে পারিনি, সে অতি দুঃখের ইতিহাস।’ একথা বলেই সে স্মৃতিচারণ করে সে সময়ের, যখন সে কিশোর ছিল। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের।
কিশোর সে ছেলেটিকে তার বাবা আটকে রাখলেও তার কিছু বন্ধুকে সেদিন আটকে রাখতে পারেনি তাদের পরিবার। তারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। দেখিয়েছে বীরত্ব। এও যুদ্ধ না করা কিশোর ছেলেটির কম গর্বের ছিল না। তবে অনেকে শহীদ হয়েছে বটে, কিন্তু ইতিহাস-সমাজ কেউই তাদের পেছনে ফেলে দেয়নি। এমন কি যারা সেদিন যুদ্ধে যেতে পারেন নি, তারাও নন। অনেকেই সগর্বে বলেন, আমার সন্তান মুক্তিযোদ্ধা, আমার বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা। এর মানে এদেশের সকলেই প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেই জড়িত। যেহেতু যুদ্ধ হয়েছে মুক্তির আন্দোলনে, তাই এখানে রয়েছে সমগ্র জাতির স্বার্থ। সেই স্বার্থ রক্ষায় যদি প্রাণ বিসর্জন দিতে হয় তাতে ক্ষতি হয় না।
সে সময় তথ্য প্রযুক্তির বা বিজ্ঞানের উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে, শুধু রেডিওই ছিল একমাত্র গণমাধ্যম। সে কিশোর ছেলেটি নিজের করা উপার্জনের টাকা খরচ করে একটি রেডিও কিনেছিল। নৌকায় বসে থেকে সে সময় তার সেই রেডিও শোনা ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না। রাত হলেই সে শুনতে পেত গুলির শব্দ, দেখতে পেত ডাঙ্গার দিকে গুলির আলোকছটা। আর ভাবত, এই বুঝি কারও সর্বনাশ হল। আক্ষেপ বুকে নিয়ে ঘুমোতে পারত না ছেলেটি। আরও ভাবত এ কেমন কপাল তার। দেশ আজ মহাবিপদে অথচ তার কিছু করার নেই। কিশোর বিধায় সে খুব শক্তিশালী ছিল না, আর পদ্মার সঙ্গে সাহস চলে না। কেননা স্রােত ঠেলে সাঁতরে কিনার পাওয়া সে নদীতে সহজসাধ্য ছিল। সাঁতরে পালানো পরিকল্পনা করেও ছেলে আর কূল পায়নি।

ডাঙ্গায় মৃত্যুর প্রহর গুনছিল মানুষ। হিংস্র নেকড়ে সমতুল্য পাকিস্তানীরা সেদিন কারও বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনকে বাদ দেয়নি তাদের অত্যাচার থেকে। যারা কোনমতে রেহাই পেয়েছিল তারাই পেয়েছিল নতুন জীবন। কিশোর ছেলেটিও রেহাই পেয়েছিল বটে। শুধু তার বাবার আটকে রাখার পরিকল্পনার জন্য। ব্যাপারটি এমনও হতে পারত, সেদিনের কিশোর ছেলে যুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তা হলে সে বাবাও সারা জীবন নিজেকে ক্ষমা করত না। তবে প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কারোরই তখন এতো কিছু জানা ছিল না। কেননা গণমাধ্যম ব্যবহারে তখনও সমগ্র পৃথিবীই ছিল পিছিয়ে।

৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং ২৬ মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণার পর এ জাতিকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সম্মুখ এই সমরে ত্রিশ লাখ মানুষ হয়েছে শহীদ। মা-বোনের ছিল না লাঞ্ছনার সমাপ্তি। তবুও কেউ পিছনের দিকে ধাবিত হয়নি। বুকে বুলেট বিধলে কি হয়, সে কথা কারও অজানা ছিল না। তবুও সে সময় কিশোর-তরুণ-যুবক সেদিনের আগে-পরে কোন কিছু না ভেবেই দেশমাতৃকার টানে ঘর ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে গিয়েছিল যুদ্ধে। অনেকে সহায় সম্বল সবই হারিয়েছে শেষে। তবুও শেষ পর্যন্ত কেড়ে এনেছে স্বাধীনতা।

গ্রামের পর গ্রাম সে সময় জ্বালিয়ে দিয়েছিল পাকিবাহিনী, দিনের পর দিন কিশোর সেই ছেলে দূর থেকেই প্রত্যক্ষ করেছিল তা। যুদ্ধের শেষদিকে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রায় নিশ্চিত তখন তাকে ছাড়া হয় নৌকা থেকে। ছেলেটি তার বাবার এই কাজের জন্য অনেক হতাশ হয়। কিন্তু, সে তো তার পিতা, এ চিন্তা করেও সেদিন তার পিতাকে কিশোর ছেলেটি অভিশাপ দেয়নি।

যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন করে নিজের ভিটেতে ফিরেছে অনেকেই, অনেকে হয়েছে শহীদ। যারা সশরীরে ফিরেছে তারা উপাধি পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধার। এই প্রাপ্তিটুকু তৎকালীন সময়ে মানুষকে বেশি প্রভাবিত না করলেও সময়ের পরিক্রমায় এর তাৎপর্য এখন সর্বোচ্চ। যাদের আত্মত্যাগে এদেশে এসেছে স্বাধীনতা, তারা সকলেই প্রকৃত নায়ক। শহীদ এবং জীবিত সেই সৈনিকরা পরবর্তীতে হন কেউ বীরশ্রেষ্ঠ, কেউ বীরপ্রতীক, কেউ বীরবিক্রম। রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রের জনগণও তাঁদের যথাযথ সম্মান করে।

আবার যদি দেশে এমন কিছু ঘটে তাহলে দেশ মাতৃকার সকল সন্তান তো বটেই তাদের পিতা-মাতারাও সন্তাদের এগিয়ে দেবে অন্তত প্রিয় ভূমিকে রক্ষা করতে। কেননা এতদিনে সবাই স্বাধীনতা এবং মাতৃভূমির আসল মর্ম বুঝতে শিখেছে।

২০ শতকের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২১ শতকের প্রেক্ষাপট, মাত্র অর্ধশত বছরের মাঝে কতই না বিচিত্রতা। সময়ের বাস্তবতায় একদিন ঠিক সে স্মৃতি অতীত হয়েছে সবার কাছে, হয়েছে ইতিহাস। মাত্র ১৪ বছর বয়সের সেই কিশোর, যার বর্তমান বয়স ষাটোর্ধ। তার সন্তানেরাও এখন সাবালক যারা যুদ্ধ দেখেনি। শুধু গল্প শুনেছে আর ইতিহাস পড়েছে মাত্র। দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। এরপরে যারা জন্ম নিয়েছে, তারা ধরাতে এসেই পেয়েছে স্বাধীনতা, পেয়েছে স্বাধীন ভূমি। এ সময়ের কিশোর তরুণেরা যদি নিজস্ব জাতির সম্পর্কে ধারণা না রাখে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবগত না হয়, তাহলে স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন হবে কিভাবে। প্রত্যেক কিশোরের প্রাণে জাগ্রত থাকুক মুক্তিযুদ্ধ। যুগে-যুগে, কালে-কালে, শত বর্ষ শেষে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: কিশোর মুক্তি যোদ্ধার নাম কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.