নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রথম ফুল

প্রথম ফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিংহমর্দিনী

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২২

একথা সবাই জানে যে দুর্গা সিংহ চড়তেন। এবং সেই সিংহ মহিষাসুরের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় দুর্গাকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু দুর্গা কীভাবে হিংস্র সিংহকে বশ করলেন? গ্রীক পুরাণে হারকিউলিস কীভাবে সিংহ বধ করেছিলেন সেই কাহিনী আছে। বাইবেলেও স্যামসনের সাথে সিংহের যুদ্ধের কথা আছে। এই দুই মহাবীরই সিংহের মুখের চোয়ালকে দু'হাতে ধরে টেনে ফাঁক করে দিয়েছিলেন, তাতে সিংহ মারা গিয়েছিল। কিন্তু দুর্গার সিংহ তো জীবিত। কীভাবে তাকে দুর্গা পেলেন?

পার্বতী তখন হিমালয়ের দুর্গমতম পার্বত্য অঞ্চলে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর পিতার সাম্রাজ্যকে চিনে নেবার জন্য তিনি এই ভ্রমণে বেরিয়েছেন, সাথে আর কেউকে নেননি। ঘুরতে ঘুরতে তিনি এক ভয়ঙ্কর বনভূমিতে এসে পড়লেন। সেখানে তিনি দেখলেন, বনে কোনো পশুর ডাক শোনা যাচ্ছে না। সবাই যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে কীসের ভয়ে। যেতে যেতে দেখলেন, বিরাট কিছু গাছ শিকড় উপড়ে পড়ে আছে। কিছু বিশাল পাথরের চাঙড় ভেঙে পড়ে আছে। তাদের গায়ে কীসের যেন বড় বড় গভীর নখের দাগ। কিন্তু কোন জন্তুর এত ক্ষমতা যে পাথরে আঁচড় কাটতে পারে, বড় বটগাছ উপড়ে দেয়?

তিনি আসার পথে এক উপজাতির কাছে গল্প শুনেছিলেন যে এক ভয়ানক দানব-সিংহ এই অঞ্চলে বাস করে। সে নাকি পশুদের ইন্দ্র। তার ভয়ে অন্য হিংস্র প্রাণীরাও সেদিকে আসে না। পার্বতী বুঝলেন, এই সিংহের জায়গাতেই তিনি এসে পড়েছেন। তার মানে তাঁকে শিগগিরিই নিজের দুর্গা মূর্তি ধরতে হবে। এই গোপন খবর মহাদেব শিব ছাড়া কেউ জানেন না, যে পার্বতী ঘরোয়া চেহারাতে থাকলেও তার আরেকটা পরিচয় আছে, তিনি দুর্গা, অসীম শক্তিশালিনী এবং যুদ্ধে নিপুণ। দরকার পড়লে পার্বতী সেই ক্ষমতা দেখাতে পারেন। এই ঘটনা মহিষাসুরের আবির্ভাবের আগেকার কথা, তখনো দেবতারা কেউ দুর্গার কথা জানতেন না।

চলতে চলতে হঠাৎ পার্বতী দেখলেন, সামনেই একটা ঝোপের পাশে সিংহটা দাঁড়িয়ে আছে।

বিশাল তার চেহারা। প্রায় একটা হাতির সমান উঁচু, সেইরকমই মারাত্মক গঠন। সারা দেহে পেশীর ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ভয়ঙ্কর একটা নিষ্ঠুর মুখ। কালো কেশর। এক একটা থাবা যেন কুলোর মত বড়। পাগুলো শক্তিতে ফেটে পড়ছে। পার্বতী দেখতে দেখতে ভাবছেন, একে আমার বাহন হিসেবে পেলে ভালো হত, এমন সময় বিরাট গর্জন করে সিংহ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

সিংহ জানত না সে কী ভুল করছে। সে তার চেয়ে বলশালী কোনো প্রাণী আজ অবধি দেখেনি। সে এক থাবা মেরে বন্য মহিষ মেরে ফেলে। কিন্তু আজকে তার সব গোলমাল হয়ে গেল।

পার্বতী এক ঝটকায় প্রায় শূন্য থেকেই সিংহকে লুফে নিলেন। তার পর এক পাক মেরে তাকে মাটিতে আছড়ে ফেলে দিলেন। এখন আর তিনি পার্বতী নন, তিনি দুর্গা!

সিংহ ধড়মড় করে উঠে দাঁড়িয়ে আবার থাবা তুলে তেড়ে এল। এবার দুর্গা তাঁর দুই হাতে থাবাদুটো ধরে মুচড়ে দিলেন। সিংহ বিকট একটা ডাক ছাড়ল ব্যথায়। তারপর তিনি একটানে সিংহকে আবার মাটিতে মুখ থুবড়ে ফেলে দিয়ে নিজে তার পিঠে চড়ে বসলেন। বসে এক হাতে তার কেশরটা মুঠো করে ধরে, তার গলা আর বুক ঘিরে নিজের পা দুটো জড়িয়ে দিলেন। জড়িয়ে ধরে এবার দুর্গা দিলেন চাপ।

প্রথমেই মটমট করে একটা ভয়ানক শব্দ উঠল। এবং পরের মুহূর্তেই সিংহ বিকট চীৎকারে আর্তনাদ করে উঠল। দুর্গা খিলখিল করে হেসে উঠলেন। তাঁর পায়ের নিষ্পেষণে সিংহের পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে। হাসতে হাসতে তিনি আরেকটু চাপ দিলেন। সিংহ আবার চীৎকার করে উঠল। কিন্তু এবার যেন গর্জন নয়, গোঙানির মতো শোনাল। দুর্গার মনে পড়ল একবার শিবের বাহন নন্দীর পিঠে তিনি চেপেছিলেন। নন্দী কিছুক্ষণ পরে হাতজোড় করে বলেছিল, 'মা, আমি মহাদেবকে অক্লেশে বহন করতে পারি, কিন্তু আপনাকে বহন করার সাধ্য আমার নেই। আপনি দুই পায়ে যখন আমার দুপাশ চেপে ধরেন, আমার প্রাণবায়ু প্রায় বেরিয়ে আসে। কোনোদিন আপনি ভুল করে একটু চাপ বাড়ালেই আমার মৃত্যু হবে।'

এখন এই সিংহ সেই চাপের শিকার হচ্ছে। তার বলিষ্ঠ থাবাদুটো প্রাণের ভয়ে পাগলের মতো মাটিতে আঁচড় কাটছে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। দুর্গা পায়ের বন্ধনী আরেকটু শক্ত করে চাপ দিয়ে বললেন, "বল, ক্ষমা চাইছিস?" - সিংহ যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠতে গেল, সাথে সাথে মুখ থেকে ফোয়ারার মতো রক্ত উঠে এল দুর্গার প্রচণ্ড পদপেষণে। দুর্গা বাঁকা হাসলেন, হেসে দু'পায়ের মাঝে সিংহকে তুচ্ছ খেলনার মতো ঝাঁকুনি দিতে দিতে বললেন, "ক্ষমা চাইছিস?"

সিংহের মুখ থেকে ছলকে ছলকে রক্ত বেরোতে লাগল। তার আর গর্জন করার ক্ষমতা নেই। দুর্গার চাপে আর্তনাদ করতে গেলেও মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত উঠছে। কোনোরকমে গোঙাতে গোঙাতে সে ক্ষমা চাইল।
দুর্গা পায়ের বন্ধন থেকে তাকে ছাড়লেন। দুর্দান্ত সিংহ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়ে তার পায়ের কাছে ছটফট করতে লাগল। দুর্গা নিজের বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ সিংহের মাথায় ঠেকিয়ে বললেন, "আজ থেকে তুই আমার দাস হলি। আমার বহন করবি তুই। আমার আদেশ পালনই হবে তোর বেঁচে থাকার শর্ত। এখন চলে যা। শীঘ্রই একদিন আমার পিতা হিমালয় তোকে ডাকবেন, আমার হাতে তুলে দিতে। এক বিশাল যুদ্ধ আসছে।"

--------------------------------- এই ভয়ঙ্কর বলশালী সিংহ মহিষাসুরের সাথে লড়াইয়ে অসহায়ভাবে হেরে গিয়েছিল। দুর্গা না থাকলে সে মহিষাসুরের হাতে প্রাণ হারাত। কিন্তু যে মহিষাসুরের কাছে এই সিংহও সামান্য, তাকে কীভাবে বধ করলেন দুর্গা? যে ত্রিশূল মহাদেবের হাতে মহিষাসুরকে বিদ্ধ করতে পারেনি, কী করে দুর্গা তাই দিয়ে মহিষাসুরের বুক গাঁথতে পারলেন?

সেই কাহিনী বর্ণনা করব আরেকদিন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৭

রানার ব্লগ বলেছেন: পার্বতি তো শিব থেকে সৃষ্টি তাহলে তার পিতা আসলো কই থেকে ?

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯

প্রথম ফুল বলেছেন: পার্বতী শিব থেকে সৃষ্টি নয়। পর্বতের কন্যা তাই নাম পার্বতী।

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৩

নীল আকাশ বলেছেন: wwe wrestling story!!! B-)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০১

প্রথম ফুল বলেছেন: হ্যাঁ আসলে রেসলিং বা মল্লবিদ্যার কায়দাগুলি বহু প্রাচীন। পুরনো অনেক জায়গায় অন্য নামে তাদের উল্লেখ পাওয়া যায়।

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: এসব আসলে রুপকথা।

০১ লা অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:৪৭

প্রথম ফুল বলেছেন: রূপকথা না, পুরাণ। দুইটাই কাল্পনিক, কিন্তু দুটোর শ্রেণীবিভাগ আলাদা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.