নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনোয়ারা মণি

মনোয়ারা মণি

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার

কামরুন নাহার আমার নাম নয় আমার নাম মনোয়ারা মণি

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

PK, ধর্ম ব্যবসা এবং কিছু কথা

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

PK ভারতে নির্মিত একটি হিন্দি চলচ্চিত্র। এর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় ও শক্তিমান অভিনেতা আমীর খান। এই ছবির কাহিনি নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। ছবিটি নিয়ে লিখেছেন আমার দুই অনুজ প্রতিম বিক্রম ভট্টাচার্য এবং তাপস দাস। ওরা বিশিষ্ট লেখক ও বিশ্লেষক। দু’জনই খুব সুন্দর লিখেছে। একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে আমি আমার উপলব্ধির কথা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা করছি।
PK কারো নাম নয়। বেশি মদ পান করার ফলে মানুষ তাল হারিয়ে যখন উল্টা পাল্টা কথা বলে তখন অন্য মানুষ মনে করে সে মদ্যপ। নিত্যদিনের চলাফেরায় যদি কারো কথা কারো কাছে স্বাভাবিকের বাইরে মনে হয় তখন মানুষকে ব্যঙ্গ করেও বলে ‘মদ খেয়েছো নাকি?’ এই কথাকেই হিন্দি ভাষায় বলা হয় ‘পিকে হ্যাঁয় কিয়া?’ অর্থাৎ পান করেছো নাকি?
ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা এলিয়েন আমীর খানের অজানা প্রশ্নকে যারা স্বাভাবিক মনে করতো না তারাই তাকে বলতো, পিকে আয়া হ্যাঁয় কিয়া? এলিয়েন মনে করতো সবাই তার নাম রেখেছে ‘পিকে’। নিজের গ্রহের নিয়মনীতির সাথে পৃথিবীর অনেক কিছুরই মিল খুঁজে পেত না সে, আশ্চর্য হত পৃথিবীর মানুষের নানা রকম কর্মকাণ্ড দেখে। পিকে একটা যুক্তিপূর্ণ কথা জিজ্ঞাসা করলেও মানুষ ভাবতো সে মদ্যপ কারণ তাদের সমাজে অযৌক্তিক কাজগুলোই স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ভারতে সামাজিক শিক্ষামূলক ছবি মাঝে মধ্যেই তৈরি হয়। এই ধরণের ছবি বলিউডে আগেও নির্মাণ হয় নাই এমন নয়।
ছবিটির কাহিনিটি এরকম:
অন্য গ্রহ থেকে পৃথিবীতে আসা এলিয়েন আমীর খান (পিকে) পৃথিবীতে আসার পরে পৃথিবীর মানুষ তার কাছ থেকে নিজ গ্রহে ফিরে যাওয়ার রিমোট কনট্রোল ছিনিয়ে নেয় যে জায়গার সব কিছু তার অজানা। সে না জানে ভাষা, না বুঝে মানুষ বা পোশাকের ব্যবধান। অজানা পৃথিবীতে পদে পদে ধাক্কা খেয়ে সবকিছু শিখতে হয় তাকে। আপন গ্রহে ফিরে যাওয়ার জন্য রিমোট খুঁজতে গেলেই মানুষ তাকে বলে ঈশ্বরই ফিরিয়ে দেবে তার হারিয়ে যাওয়া রিমোট । পিকে খুঁজতে থাকে ঈশ্বরকে এবং বুঝতে পারে একই সৃষ্টিকর্তাকে ভিন্ন নামে ডাকছে সবাই। সে সকল ধর্মের উপাসনালয়ে যায়, সবার নিয়মে উপাসনা করে। উপাসনালয়ে চুরি, ঈশ্বরের নাম করে অর্থ নেয়া সবই তার কাছে আশ্চর্য মনে হয়। একদিন পিকে’র পরিচয় হয় এক সাংবাদিকের সাথে। অর্থের জন্য ধান্দা বাজ জগতে এই সাংবাদিক পিকে কে নিজের টাকা খরচ করে বিপদমুক্ত করে। বিশ্বাস করে পিকে তাকে সব সমস্যার কথা বলে।
পরের দেশে নিজের কন্ট্রোল হারানোর সমস্যার দৃশ্য এই ছবিতে প্রকট। পিকে বুঝতে পারে একজন মাত্র ঈশ্বরের জন্য এতো ধরণের উপাসনা আর উপাসনালয়। সে ভাবে সৃষ্টিকর্তা একজন, জন্মের পরে সবার শিশুরূপ অভিন্ন, মানুষে মানুষে এই বিভেদ, এই ভিন্নতা, সবই সৃষ্টির পরে সব মানুষ নিজেরা বানিয়েছে। একসময় পিকে দেখলো তার ছিনিয়ে নেয়া রিমোট কন্ট্রোল নিয়েও করা হচ্ছে ধর্ম ব্যবসা, ঠকানো হচ্ছে মানুষকে। রিমোট ফিরে পেয়ে নিজের গ্রহে ফিরে যাওয়ার আগে বুঝতে পারলো সে ভালোবেসেছে পৃথিবীর মানুষকে।
সমাজে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে অসহায় মানুষকে ঠকানো, ধর্মের সাইনবোর্ড লাগিয়ে অন্যায় লুকানোর কৌশল, মিডিয়া তে দুর্নীতি ও ক্ষমতার প্রভাব, এসবই তুলে ধরা হয়েছে ছবির কাহিনিতে। এখানে দেখানো হয়েছে পৃথিবীতে স্বর্গের লোভ দেখিয়ে মানুষদের ধোঁকা দেয়া এবং জনপ্রিয় হওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ। বলিউডের অনেক ছবিতে পাকিস্তান এবং ভারতীয় ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রেম, পারিবারিক বাঁধা এবং বিবাহ দেখানো হয়। এখানে মনে হয় ভালোবাসা সকল ধর্মের উপরে এই মেসেজই দেয়ার চেষ্টা থাকে চিত্র নির্মাতার।
এবার কথা থাকে কাহিনিতে পাকিস্তানকেই কেন বেছে নেয় হলো? বাস্তব জগতে পাকিস্তানের সাথে ভারতের রয়েছে বৈরি ভাব। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই সব ঘটনা দেখানোকে আমি এই দু’দেশের বৈরি ভাব মিনিমাইজ করার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখতে চাই। অনেক গুণী ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান থেকে এসে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং হচ্ছেন, সম্পর্কের বন্ধনে জড়িয়ে যাচ্ছেন একে অপরের সাথে। এসব ভারতে বিশেষ করে ভারতের সাংস্কৃতিক জগতে তেমন সমস্যা সৃষ্টি করে বলে খুব একটা দেখা যায় না। অবশ্য এদিকটাতে এখন বাংলাদেশের মানুষরাও এগিয়ে যাচ্ছেন। আমি এগুলোকে সবার ভালোবাসার বন্ধনই বলতে চাই। যাহোক ফিরে আসি ছবির কাহিনিতে-
প্রকৃত ধর্মের কথাই তুলে দেয়া হয়েছে PK ছবির শেষে। এক ঈশ্বরবাদের কথা বলেছে পিকে, ‘আমাদের যিনি বানিয়েছেন আমরা তার উপাসনা করবো মানুষ যে ঈশ্বরকে বানিয়েছে তার উপাসনা নয়।’ অন্যদিকে ধর্ম ব্যবসায়ীর কথা, ‘বিনা ঈশ্বরের জগতে মানুষ দুঃখ বেদনার ভারে মরে যাবে, ঈশ্বরকে আঁকড়ে ধরেই মানুষ সান্ত্বনা পায়, পায় বেঁচে থাকার শক্তি।’
নিজস্ব অভিমত: ছবির কাহিনিতে নতুনত্ব খুব বেশি কিছু আছে বলে মনে হয় না। প্রতিদিন আমাদের সমাজে চলে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা, ধর্ম নিয়ে বিভেদ, মানুষকে না জেনে তার সম্পর্কে ধারণা করা, বাইরে থেকে দেখে মানুষের বিচার করা, মিডিয়াতে ক্ষমতাশালীদের প্রভাব, ঈশ্বরের ভয় আর স্বর্গের লোভ দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করা, স্বার্থ সিদ্ধিতে মানুষ সাহস দেখায় কিন্তু অন্যায় স্বীকারে তারা ভীত, ভালোবাসা বিভেদহীন এবং সব গ্রহে সব প্রাণীর মাঝেই ভালোবাসা বিদ্যমান। এই সব ঘটনাকেই তুলে ধরেছেন চিত্র নির্মাতা। হয়তো ধর্ম ব্যবসায়ীরাই এই ছবি নির্মাণের বিরোধিতা করতে পারে অন্য কেউ নয়। একটি সাধারণ, সত্য, বাস্তব গল্প নিয়ে এই ছবি নির্মাণ করে খুব সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন এই চিত্র নির্মাতা। আমার কাছে ছবিটি ভালো লেগেছে।
ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলেই এই ছবি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের সেন্সর বোর্ড আবারও প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। PK ছবিতে কোনো ধর্মকে আঘাত করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না বরং এই ছবি দেখে আমাদের সমাজে সকলেরই কিছু না কিছু শিক্ষণীয় আছে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৩

জীবলু বলেছেন: সমালোচনা যথাযথ- শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৩৩

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, সুহৃদ জীবলু

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: ছবিটা ভাল লেগেছে আর সেটাকে নিয়ে আপনার রিভিউ টাইপ লেখাটাও সুন্দর হয়েছে।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৩৩

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ আর শুভকামনা ভাই ঢাকাবাসী

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনেকেই দেখেছি ধর্মের যে অপ ব্যবহারের কথা পিকেতে বলা হয়েছে সেই অপ ব্যাখা অনেকেই দিচ।ছেন নিজের মতো করে। শুধু হিন্দুদের দেবদেবীকে মন্দ বলা হয়েছে এই টাইপ!

নিজে ভাল করে দেখলাম। না তা ছিল সার্বজনিন উপস্থাপনা!

ধর্মের নামে অধর্ম কারী হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান সকলকেই আসল জায়গায় খোঁচা দিয়েছে শৈল্পিক ভাবে!

কিন্তু চেতনা জাগেনি তা ঐ সব রিভিউ দখলেই বোঝা যায়;)

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৩৪

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা অনেক সমস্যারই মূল কারণ :)
সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ আর শুভকামনা ভাই বিদ্রোহী ভৃগু

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৪২

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলেই এই ছবি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের সেন্সর বোর্ড আবারও প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। PK ছবিতে কোনো ধর্মকে আঘাত করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না বরং এই ছবি দেখে আমাদের সমাজে সকলেরই কিছু না কিছু শিক্ষণীয় আছে।
যথার্থ বলেছেন। মুভিটি দেখেছি। আপনার মূল্যায়ন তাই সঠিক বলেই বিবেচিত হয়েছে আমার কাছে। খুব সুন্দর গোছানো লেখা। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আমার মোটেই পছন্দ নয়। যারা 'লাল শালু' পড়েছে, তারা পিকে অনুধাবন করবে খুব সহজেই। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো মনোয়ারা।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন।
আমরা শুধু চিলের পেছনেই ছুটছি।
বর্তমান জীবনকে যথাযথ মূল্যায়ন করা
ভুলে ব্যস্ত রয়েছি অনুমানকে নিয়ে।
উদ্ধৃতি দিয়ে ভালো লাগা প্রকাশের জন্য
অশেষ ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা প্রিয় বিদ্রোহী বাঙালী

৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩

ভূতের কেচ্ছা বলেছেন: ছবির কাহিনিতে নতুনত্ব খুব বেশি কিছু আছে বলে মনে হয় না।ভাল কিছু করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর রকম অনর্থক ভাড়ামি করছে.............যা সিরিয়াস বিষকে হালকা করছে....
এর চাইতে "যমালয়ে জীবন্ত মানুষ" অনেক অর্থবহ ও শৈল্পিক ...

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫০

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: নতুনত্ব বলতে আমি বুঝাতে চেয়েছি এসব ঘটনার অনেক কিছু বর্তমান সমাজে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। যেমন আজকাল ঘুষ চাইতে মানুষ লজ্জা পায় না, ধর্মের কথা বলে নির্দ্বিধায় টাকা চাইছে ইত্যাদি।
সাধারণ অন্যায়গুলো চোখের সামনে তুলে ধরার সাহস হারাচ্ছি আমরা দিনে দিনে, সে ক্ষেত্রে এ ছবিতে সাহসিকতার কমতি নেই। যদিও সমস্যাগুলো কারো একক নয়, লক্ষণীয় একটি হিন্দু প্রধান দেশে এসব তুলে ধরেছেন চিত্র নির্মাতা। সর্বোপরি দর্শক হিসাবে নিজের মত করে ছবিটিকে গ্রহণ করার স্বাধীনতা তো আমাদের থাকেই।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আর শুভকামনা ভাই ভূতের কেচ্ছা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.