নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিশ্চিত গন্তব্য

ভণ্ড সাধক

আমি কেউ না

ভণ্ড সাধক › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনাকাল এবং নির্দয়তার মহাকাব্য

০৩ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০

করোনাকাল এবং নির্দয়তার মহাকাব্য
---
এবারের ঈদের পরদিন আহসানের দেহে নমুনা পরীক্ষায় কোভিট-১৯ শনাক্ত হয়। গায়ে ১০০ থেকে ১০১ ডিগ্রি জ্বর, বুকে চাপা ব্যথা, কখনো কখনো প্রচণ্ড কাশি, গলা জ্বালাপোড়া, মাংশপেশিতে ব্যথা... খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছে আহাসান আনুবীক্ষণীক দানব করোনা ইদানিং ভালোভাবেই তাকে পেয়ে বসছে। হাসপাতালের পরিবেশ আর আর্থিক অসঙ্গতির কথা ভেবে বাসাতে আইসোলেশনে আছে আহাসান নামের ওই লোকটা। রাজধানীর একটি ব্যস্ত এলাকায় পারিবারিকসূত্রে স্থায়ী বাসিন্দা সে, গণমাধ্যমে কাজ করছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। জয়েন্ট ফ্যামিলি তাদের। এলাকায় তারা শিক্ষিত মার্জিত সম্মানিত পরিবার হিসেবেই পরিচিত। বিশেষ করে এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে জাড়িত থাকায় আহাসানের আছে একধরনের প্রভাব। আহাসানের কারণেই কেউ এই ফ্যামিলিকে ঘাটাতে আসে না।

★বাস্তবতা:

জীবনের মধ্যচল্লিশে পৌছে ভাড়াক্রান্ত হৃদয়ে আহাসান দেখলো, প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার পরিবারের কথিত সুশিক্ষিত দরদী সদস্যদের ঠুনকো-আলগা ও নির্দয়-পাষাণ চেহারা। করোনাকালে আহাসানের বেদনার মহাকাব্যটা সততার সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তবে তার আগে কিছু পটভূমি তুলে না ধরলেই চলছে না। এটা শতভাগ সত্যকাহিনী, এখানে প্রকৃত পরিচয়ের ইঙ্গিত থাকবে, কেউ বুঝে নিতে পারলে নিবেন- না পারলে নাই।

★পূর্বকথা:

পরিবারিকভাবে স্বচ্ছল থাকায় বেশ ভালোই চলছিল আহাসানদের। সে নিজের কাজ নিয়ে ডুবে থাকতে পছন্দ করে। বিয়ে করেছিল কলেজ শিক্ষক হারান সাহেবের মেয়ে ইশারাকে। স্বাভাবিকভাবেই আহাসান ভেবে নিয়েছিল তার সৃজনশীল কাজে ইশারার আগ্রহ থাকবে অনুপ্রেরণা পাবে। কিসের কি! ইশারার দিন কাটে আত্মীয় স্বজন আর কলেজ লাইফের বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ চ্যাটিং আর হৈ হুল্লোড় করে। একমাত্র মেয়ে নিকলিকেও মা ইশারা নানাভাবে বাবা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আহাসান ময়লা বা ছেড়া জামা পড়ে অফিসে যায়, তার স্ত্রী ইশারার তা চোখেও পড়ে না। স্বামীর জন্য খাবার রান্না করতে গেলে প্রায়ই ইশারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। হ্যা, মাসের প্রথম সপ্তাহে সে অবশ্য খানিকটা কেয়ারিং হয়। পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত ভাড়ার টাকা আর বেতনের টাকাটা কুক্ষিগত করাই আসলে তার এই নজরদারির মূল কারণ। আহসান শ্বশুরবাড়ির থেকে কোনোদিন কোন সাপের্ট পেয়েছে কিনা মনে পড়ে না। কত ঈদ যায় জামাইকে দাওয়াত করে একবেলা খাওয়ানো বা একটা শার্ট দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না ইশারার বাবা-মা।

★সুশীল পরিবার:

আহাসানরা দুই ভাই দুই বোন। ছোটভাই ডা. আশফিক বিসিএস ক্যাডার, সরকারি চিকিৎসক। তার স্ত্রী ডা. সায়হানা একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। বড় বোন মেহনাজ আন্নী একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কর্মকর্তা। মেজোবোন বান্না গৃহিনী। তাদের বাংক কমকর্তা বাবা মারা গেছেন। মা বেঁচে আছেন। উনার আবার মেয়েদের প্রতি অগাধ পক্ষপাত। পারিবারিক আইনে বোনদের প্রাপ্য সম্পত্তির চেয়ে ২৫ পার্সেন্ট বেশি দেওয়ার পরও মা ছেলেদের বঞ্চিত করে মেয়েদের আরও দিতে চান। মেজো মেয়েকে দিয়ে দেন ছাদসহ পুরো পাঁচতালা। মেজোবোন আন্নার স্বামী ক্ষমতাসীন দলের পাতি নেতা হওয়ায় কাউকেই মানেন না। বাড়ির বড়ছেলে আহাসান অসুস্থ, তাতে কি নিজের মাহিরাজি প্রয়োগ করে ধুমধারাক্কা বাড়ির কাজ চালিয়ে যান। বড়মেয়েকে নিয়ে দোতলা নিজের দখলে রাখতে চান মা। ছোটছেলেকে দেন তিনতালা আর নিচতালা। আর বড় ছেলে মিডিয়ায় কাজ করায় যার আর্থিক অবস্থা সবচেয়ে অস্থিতিশীল সেই আহাসানকে বরাদ্দ দেন চারতলা, আর নিচতালার একটি গুমোট ফ্ল্যাট। প্রথমে আহাসান আপত্তি জানালেও পরে মায়ের সম্মানে তা মেনে নেন। যদিও গ্রামের বাড়ির সবকিছু মা নিজেই কুক্ষিগত করে রেখেছেন। ছোটছেলেকে নিয়ে গ্রামের সম্পত্তির ব্যাপারে সব শলাপরামর্শ করেন, বড় ছেলেকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেন না। এমনকি আহাসানের স্ত্রী ইশারাকে নিয়ে সফর সূচি তৈরির আগে, তার স্বামী আহাসানকে জানানোরও প্রয়োজন মনে করেন না।

★আপসেই কোনঠাসা:

জীবনে চলতে গেলে কিছু না কিছু আপস করতে হবে, ছাড় দিতে হবে, মেনে নিতেই হবে। হাজার হোক মা বিদ্যামান , আর কথিত স্ত্রী ‘ইশারা’র স্বভাবই হলো নিজের ভালোমন্দ না বুঁঝে নগদ একটা থ্রি-পিস পেলেই স্বামীর বিরুদ্ধচারণ। আর সামথ্যবানদের চাটুকারতা। আহাসান বহুবার চেষ্টা করেও ইশারার চাটাচাটির স্বভাব পরিবর্তনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় হাল ছেড়ে দেয়। পরিবার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে বাড়ির নিচতালার গুমোট একটি ঘরে নিজের মতো কাজ করে যায় আহাসান। দোতলায় উৎসব হয় সে খবর পায় না। হয়তো কখনো পাতিলের নিচে দলা পাকানো পোড়া পোলাও তার কপালে জুটে এটাই বা কম কি! নিচতালায় নিজের মতো টিকে থাকার ক্ষেত্রেও আবার কথিত স্ত্রী ইশারার অযাচিত হস্তক্ষেপ। চিৎকার, চেঁচামেচি আর অভিযোগের পর অভিযোগ। আহাসানের যতদূর এগিয়ে যাওয়ার কথা তাতে স্ত্রীর বার বার বাঁধা তাকে পিছিয়ে দেয়, এটাই তার নিয়তি।

★করোনাকালের তীক্ষ নখদন্ত:

করোনার কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ায় আহাসান পরিবারের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে কোয়ারাইন্টানে যায়। নিজের উপসর্গ নিয়ে ছোটভাই ডা. আশফিকের সঙ্গে কথা বলে, টেস্টের প্রয়োজনের কথা জানায়। আহাসান টের পায় ডাক্তার হয়েও ছোটভাই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। পরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়েনের মেম্বর হিসেবে আহসান নিজেই শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য প্রেসক্লাবে যোগাযোগ করে। কিন্তু ঈদে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ থাকা সে বেকায়দায় পরে যায়। পরে করোনাবিডি অ্যাপ খুলে আইআরডিডিআরবি সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে স্যাম্পল টেস্টের ব্যবস্থা করে। এ খবর কানে যাওয়া মাত্রই টিভিমিডিয়ার সুপরিচিত মেহনাজ আন্নী লম্ফ দিয়ে বলে আমিই মিরজাদীকে বলে সব ব্যবস্থা করিয়েছে। ক্রেডিট ছিনতাইয়ের চেষ্টা আর কি! অথচ স্যাম্পল কালেকশনের সব ডকুমেন্টস অ্যাপেই আছে।

আহাসানের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। মাইগড সবচেয়ে চমৎকার প্রতিক্রিয়া দেখান তার স্ত্রী ইশারা। পজেটিভ রেজাল্ট আসায়, আহাসান না জানি কতো বড় অপরাধী। তার থেকে দশহাত দূরে থেকে স্ত্রী ইশারার চিৎকার চেচাঁমেচি আর ধমকাধমকি। আহসানের শ্বাসকষ্ট ওঠে- ওই পরিবারের দুই চিকিৎসক আপন ছোটভাই ডা. আশফিক আর তার স্ত্রী ডা. সায়হানা উদাসিন। কয়েকটা নাপা সরবরাহ করে দায়সারার চেষ্টা। আর ম্যাসেঞ্জারে একটু খোঁজ, কি অবস্থা এখন? চিকিৎসক হিসেবে পিপিই থাকা সত্ত্বে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আপন ভাইয়ের পাশে সে একমিনিটের জন্য এসে দাঁড়ায়নি। আর আহসান তার কথিত স্ত্রী ‘ইশারা’র কাছে এককাপ চা চেয়ে পান না। আহসানের মাল্টা খাওয়া দরকার সেই টাকাটাও তার কাছ থেকে আগে আদায় করে নেন স্ত্রী। প্রাণঘাতি ভাইরাস থেকে বাঁচতে আহসানের সময় মত ওসুধ খাওয়া জরুরী। কেমনে কি? সকালে নাস্তা আসে বেলা ১টায়। দুপুরের খাবার স্ত্রী দয়া করে দিয়ে যায় বেলা সাড়ে ৫টায়। সেই সঙ্গে বাসনপত্র ধুয়ে রাখার কঠোর নির্দেশনাও দিয়ে যায়। খুক খুক কাশতে কাশতে আহাসানের নিজের জামাকাপড় ধুয়ে রাখতে হয়।

আহসানের কাছে একমাত্র মায়ের কান্নাটাই খাঁটি মনে হয়েছে। আর সব মেকি।

★ উপলব্ধি:

আহসান বুঝতে পারছে তার মৃত্যু এগিয়ে আসছে। বুকে চাপা ব্যাথা বাড়ছে। সে নিশ্চিত তার মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু মুখোশধারীদের মায়াকান্নার সুযোগ করে দিতে তার ইচ্ছে করে না। আহাসান এই মুহূর্তে ভাবছে, মরতে যখন হবেই খোলা আকাশের নিচে গিয়ে মরলে কেমন হয়? শান্তির মৃত্যুর সন্ধানে সে কি ঘর ছাড়বে!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮

তানজীম আফরোজ বলেছেন: এক ভাইরাস যে কত মর্মান্তিক ঘটনা আর মৃত্যুর উদাহরণ তৈরি করলো তার হিসেব নেই ....। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে থাকা অনেক মানুষ আমরা রোজ হারাচ্ছি যাদের আমাদের সবসময় প্রয়োজন ....। ভাগ্য আমাদের ভবিষ্যতে কেমন চিত্র দেখাবে সৃষ্টিকর্তা জানেন ...।

২| ০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ৯:২৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ফেনীর সাহাব উদ্দিন এমন আরেক হতভাগ্য

৩| ০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ৯:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: করোনা সব তছনছ করে দিচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.