নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিশ্চিত গন্তব্য

ভণ্ড সাধক

আমি কেউ না

ভণ্ড সাধক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভৌতিক গল্প: দ্বিতীয় সত্তা

২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৬




[রবার্ট আর্থারের ‘ডেথ ইজ এ ড্রিম’ অবলম্বনে, রূপান্তর : বিপুল হাসান]



ফাইভ ফোর থ্রি টু ওয়ান জিরো, মিস্টার ডেভিড... ডেভিড কার্পেন্টার।

হুমম।

ডেভিড কার্পেন্টার, তুমি কি এখন আমার কথা শুনতে পারছো?

জ্বি, আমি শুনতে পারছি ডাক্তার ম্যানসন ।

ডেভিড তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো?

জ্বি, আমি বুঝতে পারছি।

ডেভিড ডেভিড, তুমি কি আমার কথা শুনবে?

জ্বি, সব কথা আমি শুনবো।

তাহলে এখনই তুমি ঘুমিয়ে পড়। তুমি ঘুমিয়ে পড়।

জ্বি আমি ঘুমিয়ে পড়েছি।

ঘুমিয়েছো ডেভিড।

হ্যাঁ, আমি এখন ঘুমিয়ে পড়েছি।

আমি এখন তোমার স্ত্রীর সাথে কথা বলব। কিছুক্ষণের জন্য তুমি বিশ্রাম নাও, ডেভিড।

ঠিক আছে, ডাক্তার সাহেব। আপনি নিদ্বিধায় কথা বলেন। আমি বিশ্রাম নিচ্ছি।

মিসেস অ্যান কার্পেন্টার, আপনি কিছু বলুন।এখন সম্মোহনের হালকা স্তরে আছেন আপনার স্বামী। তিনি এখন আমাদের কথপোকথনে যোগ দিতে পারবেন না তাকে বিরক্ত না করেই আমরা কথা বলতে পারব।’

ডাক্তার ম্যানসন। আপনি কি জানতে চান? আমি যতোটা সম্ভব আমার জানা সবকিছু আপনাকে বলতে চেষ্টা করবো?

সবার আগে আপনি আমাকে ডেভিডের দুঃস্বপ্নের বিষয়টা খুলে বলুন। আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনাদের বিয়ের রাত থেকেই নাকি ডেভিড এই দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

জি, ডাক্তার সাহেব। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পরপর আমরা নতুন বাড়িতে উঠি। নতুন সংসার শুরুর পর ঘণিষ্ঠ কয়েকজনকে আমরা দাওয়াত দিয়েছিলাম। অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়। প্রায় মাঝরাতে আমরা ঘুমাতে যাই। ঠিক ভোরের দিকে আমারা ঘুম ভেঙে যায় ডেভিডের চিৎকারে ঘুমের মধ্যে প্রচন্ড চিৎকার করছিল ও। শরীর মোচড় খাচ্ছিল, দুর্বোধ্য স্বরে কি যেন বলছিল। আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জাগালাম ওকে । মুখ বিবর্ণ হয়ে গেছে ডেভিডের। রীতিমত কাঁপছে। জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে। শিউরে উঠল ও। বলল ভয়ানক একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে।

কিন্তু স্বপ্নটা যে কি ছিল সে সর্ম্পকে কিছুই বলতে পারেনি, তাই না?

ঠিক বলেছেন। কিছুই মনে করতে পারিনি। একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আবার শুয়ে পড়ল ডেভিড। কিছ্ইুড। কিন্তু পরদিন রাতেও একই ঘটনা। পরের দিন রাতেও। এভাবে প্রতিটি রাতে ও দুঃস্বপ্ন দেখছে।

মিসেস অ্যান কার্পেন্টার, এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। ডেভিডকে আমি ছেলেবেলা থেকে চিনি এবং আমার বিশ্বাস ওকে এই দুঃস্বপ্নের হাত থেকে মুক্ত করতে আমাকে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।

তাই যেন হয়, ডাক্তার ম্যানসন।

মনে হচ্ছে রিচার্ড অবচেতন মনে আবার ঢুকে পড়েছে।

মানে কি ডাক্তার! কে এই রিচার্ড?

রিচার্ড হচ্ছে ডেভিডের দ্বিতীয় সত্তা।

বিষয়টা আমার কাছে পরিস্কার হলো না। অনুগ্রহ করে কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?

ডেভিড আপনাকে কিছু বলেনি?

কোন বিষয়ে কথা বলছেন আপনি, ডাক্তার সাহেব।

ওই যে ডেভিডের বয়স যখন বারো কি তের। ওই সময় গাড়ি চালাতে গিয়ে সে একটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল।

না, এ বিষয়ে সে আমাকে কিছু বলেনি।

মিসেস কার্পেন্টার, ঘটনাটা তাহলে আপনাকে বলি। গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় শারীরীক আঘাত না পেলেও ডেভিড মানসিক আঘাত পায়। সত্যি বলতে কি, সে পরিণত হয় মানসিক রোগীতে। তখনই তার ভেতরে দুটো ব্যক্তিত্ব বা সত্তা গড়ে ওঠে। একটি সত্তার মালিক ডেভিড নিজেই। আর অন্য সত্তাটি ডেভিডের সম্পূর্ণ বিপরীত। বেপরোয়া,অশুভ এবং ভয়ঙ্কর। ডেভিড এই বিপরীতধর্মী সত্তাটিকেই রিচার্ড বলে ভাবতে থাকে এবং সে মনে করে, রিচার্ড তারই যমজ ভাই। মিসেস কার্পেন্টার, ডেভিড তাঁর কল্পনায় এই দ্বিতীয় সত্তাকে মনে মনে পুষে এসেছে।

বড় অদ্ভুত ব্যাপার মিস্টার ম্যনসন!

আপনার কাছে অদ্ভূত মনে হছে, কিন্তু মেডিকেল হিস্টরিতে একরম কেস বহু আছে। তো যা বলছিলাম। ডেভিড যখন খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে বা ভয় পায় কিংবা উদ্বিগ্ন হয়, তখন ডেভিডের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে আসে দ্বিতয়ি সত্তা রিচার্ডের। তখন রিচার্ডই ডেভিডকে পরিচালনা করে। যেমন ডেভিড ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিছানায় চাদরে। রিচার্ড যা বলে ডেভিড তখন তাই শোনে। কারণ নিজের ওপর তখন তার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মাঝে মাঝে ডেভিড বুঝতেও পারে না সে কি করছে বা করতে যাচ্ছে। কখনও কখনও তার মনে হয় পুরো ব্যাপারটাই আসলে একটা দুঃস্বপ্ন ছিল।

কি ভয়ঙ্কর!

আমি নিজেই ডেভিডের এই মানসিক রোগের চিকিৎসা করি। আশা করেছিলাম যে ডেভিডের মন থেকে রিচার্ডকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছি। কিন্তু এটা সম্ভব হত... যাকগে। আমি এখন ডেভিডকে জিজ্ঞেস করে ওপর দুঃস্বপ্নের ব্যাপারটা জেনে নেই। ব্যাপারটা পুরো জানতে পারলে বোধহয় সমাধানের একটা পথ খুঁজে বের কর সম্ভব হবে।



ডেভিড, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?

বলুন, ডাক্তার ম্যানসন। আমি শুনতে পাচ্ছি।

যে দুঃস্বপ্ন তোমাকে বারবার বিরক্ত করছে সেই স্বপ্ন সর্ম্পকে যাবতীয় খুঁটিনাটি আমি তোমার কাছ থেকে জেনে নিতে চাইছি। তুমি কি স্বপ্নের কথা মনে করতে পারছ, নাকি পারছ না।

স্বপ্ন! হ্যাঁ, স্বপ্নের কথা মনে পড়ছে আমার। ডাক্তার, আমি মনে করতে পারছি।

ঠিক আছে, ঠিক আছে, এতো উত্তেজিত হতে হবে না। শান্ত হও। ঠান্ডা মাথায় আমাকে স্বপ্নের কথা খুলে বলো। প্রথম কবে তুমি এই স্বপ্নটা দেখেছ?

প্রথম বার- ও হ্যাঁ, অ্যানকে যেদিন বিয়ে করলাম সেই রাতে আমি স্বপ্নটা প্রথম দেখি। না না ভুল বলেছি। ওই দিন না। বিয়ের আগের রাতে আমি আসলে স্বপ্নটা দেখি।

দেখো, ঠিকঠাক বলছো তো?

অবশ্যই। ওইদিন সন্ধ্যায় রিভারডেপের কাছে কেনা নতুন বাড়িতে আমি আসি সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে। নতুন বাড়িতে অ্যানের যাতে কোন অসুবিধে না হয় তা দেখাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। সবকছু দেখেশুনে আমার এপার্টমেন্টে ফিরতে রাত এগারোটা বেজে যায়। সেদিন খুবই ক্লান্ত ছিলাম। বিছানায় গেলাম। কিন্তু এতো ক্লান্তি সত্ত্বেও ঘুম এলো না। ঘুমের বড়ি খেলাম। কিন্তু গভীর ঘুম আসার আগেই ভয়ঙ্কর স্বপ্নটার শুরু হলো।

ডেভিড, স্বপ্নের শুরুটা কিভাবে হলো? সবকিছু খুলে বলো আমাকে।

হুম, বলছি। মনে হলো স্বপ্নের মধ্যে বুঝি টেলিফোন বাজছে। আমার বিছানার পাশেই টেবিলের ওপর ফোনটা সবসময় থাকে। ফোন ধরলাম। এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো ব্যাপারটা আসলে স্বপ্ন নয়, সত্যি। পরক্ষণে বুঝলাম না, আমি সত্যি সত্যি স্বপ্ন দেখছি।

কিভাবে বুঝলে ডেভিড?

কারণ লুইজি তখন ফোনে কথা বলছিল। ঘুমের মধ্যে আমার এটুকু চেতনা ছিল যে লুইজি কিছুতেই কথা বলতে পারে না। ও তো মারা গেছে।

ডেভিড, আমাকে বলো তো লুইজি কবে মারা গেছে।

বছর দেড়েক তো হবেই। ছুটির দিনগুলো বাবা-মা’র সঙ্গে কাটাতে লুইজি পশ্চিম ভার্জিনিয়া যাচ্ছিল । হঠাৎ মাঝপথে ব্রেকফেল করে গাড়িটা উল্টে গিয়ে খাদে পড়ে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। আগুনে পুড়ে মারা যায় লুইজি। তার মানে দেখা যাচ্ছে তুমি যখন ফোনে ওর কথা শুনলে তখন তুমি ভাবছ আসলে তুমি স্বপ্ন দেখছ, তাই না?

ঠিক তাই, ডাক্তার।
এবার আমাকে কি সব খুলে বলবে, কি কি কথা হলো লুইজির সঙ্গে? একদম শুরু থেকে বলবে।

অবশ্যই। রিসিভার হাতে নিতেই লুইজি বললো, ‘ডেভিড, আমি লুইজি। আমি লুইজি বলছি। ডেভিড, কি হয়েছে হলো তোমার ? কথা বলছ না কেন?’ এক মুহূর্তের জন্য আমার মুখে কোন জবাব যোগালো না। বুঝলাম স্বপ্ন দেখছি। তাই স্বপ্নের মধ্যেই বললাম, তুমি লুইজি হতেই পারো না। সে মারা গেছে। ‘তাই নাকি ডেভিড’, লুইজি তীব্র ব্যঙ্গাত্মক কণ্ঠে বলে ওঠে। এই কণ্ঠ আমার খুব পরিচিত। ও আবার বলল, ‘সত্যি কি লুইজি মারা গেছে? ’

হুম, ডেভিড তুমি বলে যাও।

আমি ওকে বললাম, ‘এটা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি এখুনি ঘুম থেকে জেগে উঠব। দেখবো এতক্ষণ আমি একটা বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম।’ লুইজির হাসির শব্দ শুনলাম। ‘ ওকে ডার্লিং, এখন তোমার ঘুম থেকে উঠে পড়াই উচিত। কারণ তোমার সঙ্গে আমি কিছু কথা বলতে চাই। আমিও কবর থেকে উঠে আসছি।’

তারপর...?

ফোন কেটে দিল লুইজি। হঠাৎ করেই বদলে গেল স্বপ্নটা। সবারই এমন হয়, ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন বদল হয়ে যায়। হঠাৎ করেই দেখি পরিপাটি পোশাক পরে বসে আছি। হাতে জ¦লছে সিগারেট। অপেক্ষায় আছি কখন লুইজি আসবে। কিন্তু লুইজি নয়। দেখলাম রিচার্ড এসে দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে।

রিচার্ড কে, তোমার জমজ ভাই?

ঠিক বলেছেন, সে আমার জমজ ভাই। তবে আমার চেয়ে অনেক সুদর্শন, লম্বা ও বলবান।সেই পুরানো বুনো হাসি তার মুখে। সে বললো, ‘হ্যালো, ডেভিড । আমাকে ভেতরে আসতে বলবে না? পনেরো বছর ধরে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ভদ্রতার খাতিরেও তো একবার আমাকে ভেতরে আসতে তোমার বলা উচিত?’ আমি চিৎকার করে বললাম, ‘অসম্ভব রিচার্ড। তুমি আবার ফিরে আসতে পারো না!’ সে আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকলো। বললো, আমি কিন্তু সত্যিই ফিরে এসেছি । বেশ কিছুদিন ধরেই ধরেই মনে মনে ভাবছিলাম কিভাবে তোমার কাছে আসা যায়, ইস্যু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আজকে রাতে অবশ্য এখানে আসার বেশ ভাল একটা ইস্যু খুঁজে পাওয়া গেছে।

থামলে কেন, বলে যাও ডেভিড আমি শুনছি।

হুম। আমি রিচার্ডকে বললাম,‘তুমি আবার এলে কেমন করে? আমি আার ডাক্তার ম্যানসন মিলে সেই কবেই তো তোমাকে হত্যা করেছি।’ হো হো করে হেসে উঠলো সে। বললো, ‘লুইজিও তো মরে গেছের্ । সে যদি আসতে পারে আমার আসতে দোষ কি? আমি শুধু তোমাকে সাহায্য করতে চাই, ডেভিড। আজকে রাতে আমার সাহায্য তোমার খুবই দরকার। মৃত স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার মতো করার মতো স্নায়ুর জোর তোমার নেই!’ আমি দুহাত জোর করে রীতিমতো অনুনয় করে বললাম।‘ প্লিজ রিচার্ড। দয়া করে চলে যাও!’ আমার কথায় কান দিলো না রিচার্ড। বললো লুইজি আসছে।। সাহায্যে দরকার হলে ডাক দিয়ো। এই বলেই সে পাশের রুমে চলে গলে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরোজায় নক করার শব্দ পেলাম।

কে নক করেছিল, লুইজি?



হ্যাঁ, ডাক্তার ম্যানসন। বেশ কয়েকবার কড়া নাড়ার পর দরজা খুলে দিলাম। ওটা লুইজি-ই ছিল। পরনে ধবধবে সাদা পোশাক। এ পোশাকেই তাকে কবরে শোয়ানো হয়েছিল। মাথায় লম্বা স্কার্ফ। স্কার্ফের একটা অংশ মুখের বিভৎস পোড়া অংশ ঢেকে রেখেছে। কিছু না বলেই আমাকে পাশ কাটিয়ে নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকলো লুইজি, চেয়ারে বসল। চুপচাপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। তারপর কথা বলে উঠল লুইজি, ‘আমাকে দেখে খুব চমকে উঠেছে, তাই না। ডেভিড? যাও দরজাটা বন্ধ করে এসো। তারপর তোমার সাথে আমি কথা বলছি।’ আমি চাবি দেওয়া করের পুতুলের মতো দরজা বন্ধ করলাম। তারপর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম। ‘কি চাও তুমি এখানে? বলো, কেন এসেছ?’ তুমি তো মারা গেছ।’ লুইজি হাসতে হাসতে বলল, ‘তাই নাকি, ডেভিড? আমি মারা গেছি? তুমি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করো না যে আমি মারা গেছি, নাকি করো? না, ডেভিড, আমি মরিনি? তোমার সাথে একটা ছোট্ট মশকরা করেছি।’

‘আমার সাথে মশকরা, তাও মৃত্যু নিয়ে।’ আমি তো হতভম্ব। লুইজি আবার হাসতে থাকলো। অস্বাভাবিক হাসি, যেন মৃগী রোগ হয়েছে। হাসি থামিয়ে বললো, ‘ডেভিড এখনো তুমি কাঠখোট্টাই রয়ে গেলে। অল্পতেই তুমি অস্থির হয়ে যাও। আসলে আমার ইচ্ছে করল, ভূত সেজে তোমাকে ভয় দেখাতে। দেখতে চেয়েছি, ভূত দেখে তুমি আসলে কি করো!’ অসহ্য লাগছিল আমার। চিৎকার করে বললাম, ‘মিথ্যে কথা কেন বলছো। তুমি মৃত। আমি নিজে তোমাকে কবরে শোয়াতে দেখেছি’।

‘মা মেরির কসম লাগে ডেভিড। আমি মোটা মিথ্যে বলছি না।’ লুইজি বোধহয় ধৈর্য্য হারালো। ‘আমার দিকে ভাল করে তাকাও তো। আমাকে কি মরা মানুষের মতো লাগছে দেখতে?’ স্কার্ফটা টান দিয়ে খুলে ফেলল লুইজি। আমি ওর পুরো চেহারা দেখতে পেলাম।মুখে কোথাও কোনো দাগ নেই। ভরাট গাল, উজ্জ্বল চোখ, ঝকমকে দাঁত। কামনীয় ঠোঁটে দুষ্ট হাসি। রহস্যময় তার অভিব্যক্তি। লুইজি বললো, ‘তোমরা যাকে কবর দিয়েছ সেটা আমি নই। অন্য একটি মেয়ে। ওই মেয়েটি রাস্তায় আমার কাছে লিফট চেয়েছিল। আমি তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নেই। ব্রেক ফেল করে খাদে উল্টে পড়ে গেলে মেয়েটি মারা যায়। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাই আমি। ওর আঙুলে আমার আংটি পরিয়ে দেই। আমার হাতব্যাগটা দেই ওর শরীরের নিচে। তারপর গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলাম’।

লুইজির কথা শুনে আমি কেঁপে উঠলাম। এমনভাবে সে কথা বলছিল যে অবিশ^াস করার উপায় ছিল না। মাথা ঘুরছে আমার। ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। গুঙিয়ে উঠলাম, ‘কিন্তু কেনো? কেনো তুমি এই কাজ কেরতে গেলে?’ রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠলো লুইজির ঠোটে। সে বললো, ‘এটাকে একটা খেয়াল বলতে পারো। আমি আসলে মজা দেখতে চেয়েছিলাম। আমাকে নিয়ে তুমি যতটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলে, আমি তার চেয়েও বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম তোমার সাথে বাস করতে গিয়ে। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিচয়ে বেঁচে থাকার প্ল্যানটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। তাছাড়া আমি তখনই প্ল্যান করে রাখি, যখন এই লুকোচুরি খেলায় ক্লান্ত হয়ে পড়ব তখন আবার ফিরে আসব। এখন আমার সঙ্গে যে টাকাপয়সা ছিল সব শেষ। তাই আমাকে আবার ফিরত হয়েছে।’

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। হতবুদ্ধি হয়ে গেছি পুরোপুরি। বললাম, ‘কিন্তু লুইজি আমি তো কাল বিয়ে করতে যাচ্ছি। অ্যান নামে একটি মেয়েকে। সব আয়োজন চুড়ান্ত হয়ে আছে।’ মুখটা একটু ফ্যাকাশে হলেও সে চমকালো না। নিজেকে সামলে নিয়ে লুজি বললো, ‘আমি জানি। খবরের কাগজেই জেনেছি তোমাদের বিয়ের কথা। খবরটা পড়ার পর মনে হলো তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না এতো চমৎকার সময় তোমাদের চারপাশে আমি ঘুরঘুর করে তোমার বারোটা বাজাই। না, ডেভিড, আমি তোমার বারোটা বাজাব না। আমি না হয় মরার ভূমিকায় অভিনয় চালিয়ে করব। তুমি নির্ভয়ে তোমার কোটিপতি মক্কেলের মেয়েকে বিয়ে করতে পারো। আমি বাগড়া দিতে আসব না। তবে ত্যাঁ, এর বিনিময়ে আমার টাকা চাই।’

‘না! আমি তোমাকে টাকা দেব না। কেনো তোমাকে আমি টাকা দেবো? যা বলছো সব মিথ্যে, তুমি তো মরে গেছো।’ আমাকে তীব্র কটাক্ষ লুইজি বললো, ‘আগামীকাল সংবাদপত্রগুলোর হেডলাইনে কি হবে তা এখনই আমি কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, বলল লুইজি, প্রখ্যাত তরুণ আইনজীবীর মৃতা স্ত্রী সমাধি ত্যাগ-মৃতা স্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিয়ে কি ভন্ডুলের পথে?’

‘না! এটা হতে পারে না। আমি কিছুতেই হতে দেব না।’ চিৎকার করে বললাম আমি। লুইজি শীতলকণ্ঠে বললো, ‘সবকিছু ঠান্ডা মাথায় ভাবো। বেশি না, পঞ্চাশ হাজার ডলার হলেই চলবে আমার। নিরবে ডিভোর্স পেয়ে যাবে তুমি। কাউকে কিছুই আমি বলবো না। কাকপক্ষীটিও টের পাবে না। নির্ভাবনায় বিয়েটা করতে পারবে। কোন ঝামেলাই হবে না। ভেবে দেখো, আমার প্রস্তাবটা মন্দ না।’

আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। কোন কথা বলতে পারলাম না। মনের মধ্যে ঝড়, কি করবো আমি। মাথাটা কাজ করছে না। নিজেকে নিস্তেজ লাগছে। লুইজি উঠে পড়লো। বললো, ‘প্রস্তাবটা ভেবে দেখো। এই ফাঁকে আমি ফ্রেশ হয়ে । পাঁচ মিনিট সময় দিয়ে গেলাম ভাবার। আশা করি ফিরে এসে তোমার কাছে থেকে একটা চেক পাবো।’

ঘর থেকে বেরিয়ে গেল লুইজি। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না আমি। হতাশা আর যন্ত্রণায় আমি মুখ ঢেকে বসে রইলাম। এসব কি হচ্ছে? নিজেকে প্রবোধ দিয়ে বলি, যা হচ্ছে তা বাস্তব নয়। পুরোটাই দুঃস্বপ্ন। এখনই ঘুম ভেঙে জেগে ওঠবো আমি। মৃদু একটা শব্দ মুখ তুলে দেখি, আমার সেই জমজ ভাই রিচার্ড সামনে দাঁড়ানো। গম্ভীর কণ্ঠে সে বলে, ‘ও তোমার পিলে চমকে দিয়েছে দেখছি। পুরো ব্যাপারটা দেখা যাচ্ছে তোমাকে ঘাবড়ে দিয়েছে।’

আমি রিচার্ডের কথার প্রতিবাদ জানালাম, ‘ওই মেয়েটা মানে লুইজি বেঁচে নেই। সে মৃত। আমি নিশ্চয়ই দুঃস্বপ্ন দেখছি।’ রিচার্ড আমাকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বললো, ‘কানটা স্বপ্ন আার কোনটা স্বপ্ন নয় এ কথা কে বলতে পারে? আমি বলবো, ওকে কোনরকম সুযোগ দিয়ো না। একবার যদি ওকে টাকা দাও, কয়েকদিন পর আবার এসে নির্ঘাত টাকা চাইবে এবং তা চলতেই থাকবে।’

হতাশায় গুঙিয়ে উঠে আমি বললাম, ‘কিন্তু যে জটলা তৈরি হয়েছে। ওকে টাকা না দিয়ে আর কোনো উপায় নেই।
এ ছাড়া আমার করার তো কিছু নেই।’ দানবের মতো হেসে ওঠে রিচার্ড বললো, ‘অবশ্যই আছে। লুইজি একবার মরেছে, এখন ওকে আরেকবার মরতে হবে। না! না! ভয় পেয়ো না। তোমার ওকে মারতে হবে না। আমার উপর সবকিছু ছেড়ে দাও। পুরো ব্যাপারটা সেই ছেলেবেলার মতো আমিই সামলাবো। আমার দিকে তাকাও, আমার চোখের দিকে তাকাও ডেভিড!’

না! না! আমি তাকবো না। কিছুতেই না। নিজের ইচ্ছে শক্তির সবটুকু ব্যবহার করেও নিজেকে আমি ফেরাতে পারলাম না। চুম্বকের মতো আমকে আকর্ষণ করল রিচার্ডের চোখ। আমার মধ্যে ফিরে এলো সেই ছোটবেলার অনুভূতি । রিচার্ডের চোখের মণি খুব দ্রুত রঙ পাল্টালো, ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করেছে। সেই চোখের তারার আলোছায়ার তীব্র আকর্ষণে আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আমি টের পাচ্ছি , কিন্তু নিজেকে ঠেকাতে পারছি না। মনে হচ্ছে চোখ নয়, গভীর একটা কুয়োর মধ্যে আমি পড়ে গেছি। কুয়োর কালো পানিতে আমি ডুবে যাচ্ছি।

কানে ভেসে এলো রিচার্ডের গমগমে কণ্ঠ, ‘শোনো ডেভিড, তোমার শরীরের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন আমি নিয়ে নিচ্ছি, যেভাবে আগে নিতাম। কিছুক্ষণের জন্য তোমার সত্তা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে আমার মধ্যে।’ রিচার্ডের চোখের ওই সর্বগ্রাসী কালো কুয়ো আমাকে ক্রমশ গ্রাস করে ফেললো। হঠাৎ মাথাটা মোচড় দিয়ে সবকিছু ফাঁকা হয়ে গেল। দেখি, সামনে রিচার্ড নেই। বুঝতে পারলাম আমার আত্মার ভেতর ঢুকে গেছে। আমাদের শরীর সে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমার আর কিচ্ছু করার নেই। এই চোখ এবং কান এখন শুধু আমার নয়, আমাদের। আমাদের বললেও ভুল হবে। কারণ আমি কেবল পালন করে যাবো। রিচার্ড যা বলবে কোন প্রতিবাদ ছাড়াই সেই কাজগুলো আমাকে করতে হবে।

দরোজা খুলে লুইজি ঘরে ঢুকলো। তার ঝকমকে উজ্জ্বল চোখে খেলা করছে আত্মবিশ^াস। পুরনো ভালোবাসার সেই দিনগুলোর মতেই সে আমার দিকে তাকিয়ে মিস্টি হাসলো। বললো, ‘প্রিয় ডেভিড, কখনো যে তুমি অন্য কোনো মেয়ের হয়ে যাবে কল্পনাও করিনি। সবই কপালের লিখন, মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যাক, পুরনো কথা ভেবে আর কষ্ট বাড়িয়ে কি লাভ! তুমি নিশ্চয়ই এতক্ষণে তোমার মনস্থির করে ফেলেছ, তাই না।’

‘হ্যাঁ, লুইজি। আমি মনস্থির করে ফেলেছি।’ আমি নই, আমার ভেতরে থেকে কথা বলে উঠলো রিচার্ড। কন্ঠটা রিচার্ডেরই। আমার কণ্ঠের সঙ্গে মিল আছে, তবে ওর কণ্ঠ খানিকটা ভারি এবং আত্মবিশ্বাসী। লুইজি একটু চমকে উঠল কি! বিস্ময়টুকু খুব দ্রুত গোপন করে বলল, ‘তাহলে আর দেরি কেনো। চেকটা দাও। এখনই লাসভেগাসে যাচ্ছি আমি, ডিভোর্সের ঝামেলাটা চুকিয়ে ফেলব। তোমার সাথে আর কোন সর্ম্পকই থাকবে না।’

‘দুঃখিত প্রিয় লুইজি। তুমি কোনো চেক পাচ্ছো না, কোন ডিভোর্সের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।’ রিচার্ড বলল ওকে।

সাপের মতো হিস হিস কণ্ঠে লুইজি বললো, ‘নিজের ভালো নাকি পাগলেও চায়। তুমি আমাকে আঙুল বাঁকাতে বাধ্য করছো। আমাকে তুমি মুখ খুলতে বাধ্য করছো। তবে আমি মুখ খুললে কোটিপতি মেয়েকে বিয়ে করার স্বপ্ন তোমার ভেঙে ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। তোমার ক্যারিয়ারেও নিশ্চিত ধ্বস নেমে আসবে বলেই আমার বিশ^াস, ডেভিড।’

‘তুমি কোনোরকম পাবলিসিটি করার সুযোগই পাচ্ছো না। আর তোমাকে তো বলা হয়নি, আমি ডেভিড নই। আমি রিচার্ড।’

চমকে ওঠলোা লুইজি। বললো, ‘রিচার্ড? এসব কি আবোলতাবোল বলছো তুমি? মাথা নষ্ট হয়ে গেলো নাকি!’

‘নাহ, সব ঠিক আছে। আমি ডেভিডের জমজ ভাই। ডেভিড যা করতে পারে না, আমি রিচার্ড ওর সেই কাজগুলো করে দেই।’

‘কি হাবিজাবি বলছো তুমি। সত্যিই দেখি তোমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। যাক, কি আর করা। বেঁচে থাকতে হলে টাকা দরকার। টাকা আমার চাই। শোনো, আমি এখন যাচ্ছি। কাল সকাল ন’টা পর্যন্ত তোমাকে সময় দিলাম। এর মধ্যে মন পরিবর্তন করে চেকটা আমাকে হস্তান্তর করতে হবে। নয়তো তোমার সর্বনাশ হবে।’ বললো লুইজি।
শীতল গলায় রিচার্ড বললো, ‘কোন চেক পাবে না তুমি, আর সর্বনাশও করতে পারবে না। কারণ আমি খুব ভাল করেই জানি যে, তুমি একটা দু’মুখো সাপ। আর দু’মুর্খো সাপেরা কখনও তাদের কথা রাখে না।’ এ কথা বলতে বলতেই সে লুইজির দিকে এগিয়ে গেল। এই প্রথম আতঙ্কের একটা ছায়া পড়লো মেয়েটির গোলাপি চেহারায়। প্রচ- ভয় পেয়েছে সে। দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল, দরোজার দিকে হাঁটা ধরলো।

চৌকাঠে পা রাখার আগেই লুইজির ঘাড় লক্ষ করে ঝাপ দিল রিচার্ড। তাল সামলাতে না পেরে উপর হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল লুইজি। তাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরালো রিচার্ড। কঠিন দুটে হাত দিয়ে চেপে- ধরণ লুইজির গলা। অসহায়ের মতো আমি দেখলাম রিচার্ডের দুই হাত শক্ত হয়ে ক্রমশ চেপে বসছে লুইজির গলায়। লুইজির মুখের রঙ গোলাপি থেকে নীলবর্ণ ধারণ করলো। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে উঠল। ত্রিশ সেকেন্ডের মতো ধস্তাধস্তি করলো সে। লাথি মেরে সরিয়ে দিতে চাইল রিচার্ডকে, মুখে খামছি বসাল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ল লুইজি। মুখ গহ্বর থেকে বেরিয়ে এলো জিহ্বাটা। মারা গেছে সে।

লুইস মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে উঠে দাঁড়ালো রিচার্ড। মেঝেতে পড়ে গেল নিষ্প্রাণ দেহটা পা দিয়ে উল্টে দিলো। মানুষ মারা যেন মামুলি ব্যাপার, এমন একটা ভঙ্গিতে পরনের পোশাক থেকে ধুলো ঝাড়লো। এরপর বললো, ‘অনেকক্ষণ কথা বলতে না পারায় নিশ্চয়ই হাঁসফাস লাগছে ডেভিড। ঠিক আছে,এখন তুমি কথা বলতে পারো।’

‘এটা কি হলো! তুমি ওকে খুন করেছ!’

টিস্যুবক্স থেকে একটা টিস্যু বের করে চোখ মুখ ভালো করে মুছে রিচার্ড বললো, ‘ফালতু কথা। আমি কি খুন করেছি, নাকি করিনি? সত্যি কি ওই মেয়েটা জীবিত ছিল নাকি মৃত ছিল?

‘তুমি আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছ। অবশ্যই ও মৃত ছিল। এটা নিছক একটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু-’

রিচার্ড হাসলো, ‘হতে পারে এটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু তোমার বাসায় এরকম একটা লাশ এভাবে ফেলে রাখা নিশ্চয়ই ঠিক হচ্ছে না, তাই না? ওর আসল জায়গা যেখানে, মানে যেখান থেকে সে ওঠে এসেছে। ওকে আমাদের সেই ফেয়ারফিল্ড কবরস্থানে রেখে আসাতে হবে। নয়ত পড়ে বেকায়দা হতে পারে।’

‘রিচার্ড কিসব বলছো, এটা কিভাবে সম্ভব!’

‘ডেভিড আমি জানি কাজটা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব। আমি লুইজিকে নিয়ে লিফটে নিচে নামবো, একটা ট্যাক্সি ডাকব এবং ওটাতে করেই ওকে ফেয়ারফিল্ড কবরস্থানে রেখে আসব। ব্যস, ঝামেলা খতম মামলা খালাশ। এখন তুমি চুপ থাকো। আমি অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত আর কথা বলতে পারবে না।’
রিচার্ড ঠা-া মাথাায় কাজ শুরু করল । প্রথমেই হাতে গ্লাভস পরে নিল। দুই হাতে চোয়াল টেনে ধরে জিহ্বাটা মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিলো। লুইজির পার্স থেকে স্কার্ফটা বের করে আটকে দিল টুপির সাথে। কোট আর স্কার্ট ঠিকঠাক করল, অবিন্যস্ত চুলগুলো আঁচড়ে দিল আগের মত। । এরপর টিস্যু দিয়ে লুইজির মুখমন্ডল মুছে দিল। এখন আর তার চেহারায় ধস্তাধস্তির কোন চিহ্ন নেই। দু হাত বাড়িয়ে কাঁধে তুলে নিল লাশটা। যেন একটা বাচ্চা মেয়েকে বহন করছে এই ভাবে স্বচ্ছন্দ গতিতে এগিয়ে লিফটের দিকে।



বেল বাজাল রিচার্ড। লুইজিকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে অপেক্ষা করতে লাগল। খানিক পর লিফট এল। দরজা খুলে দিল। জিমি, আমাদের সিকিউরিটি গার্ড।

‘ছোট্ট একটা সমস্যা হয়ে গেছে, জিমি’, বলতে বলতে ভেতরে লিফটের ভেতরে পা রাখল রিচার্ড। লুইজিকে জড়িয়ে ধরে আছে। এই সময় লুইজির কোল থেকে ওপর পার্সটা পড়েল গেল। যেভাবে রিচার্ড আশা করেছিল। সেভাবে জিমি ঝুঁকল, তুলে নিল পার্স। ফিরিয়ে দিল রিচার্ডকে।

খুব স্বাভাবিক গলায় রিচার্ড বললো, ‘এই ভদ্রমহিলা এখানে আসার আগেই মাতাল ছিলেন। আমি তাঁকে শুধু একটা ককটেল খেতে দিয়েছি। ইনি ওটা খেয়েই অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। এখন আমাকেই ওর বাসায় যেতে হচ্ছে পৌঁছে দেয়ার জন্যে। তুমি কি কষ্ট করে আমার জন্যে একটা ট্যাক্সি, ডেকে দিতে পারবে?’

‘কেন পারব না স্যার, এখনই ডেকে দিচ্ছি।’ জিমি বিগলিত গলায় বলল। অল্প সময়ের মধ্যেই ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে এলো করিৎকর্মা সিকিউরিটি গার্ড। হাত তুলে তাকে বিদায় দিয়েলুইজিকে নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো রিচার্ড। ওর হাবভাব এমন যেন এই গভীর রাতে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় একটা লাশকে নিয়ে ট্যাক্সিতে চড়া খুবই স্বাভাবিক একটা কাজ।

‘কোথায় যাবেন, স্যার?’ জানতে চাইল ট্যাক্সি ড্রাইভার।

‘ফেয়ারফিল্ড কবরস্থান।’

‘ বলেন কি স্যার, ফেয়ারফিল্ড কবরস্থান। এতো রাতে? আপনি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন না তো, স্যার’! ট্যাক্সি ড্রাইভারের প্রশ্নে খুবই বিরক্ত হলো। ওর কথার যদি কেউ দাম না দিতে চায় ও এভাবেই বিরক্ত হয়। বললো, ‘ মোটেও না। আমার সঙ্গে থাকা এই ভদ্রমহিলা মারা গেছেন এবং আমি তাকে কবর দিতে যাচ্ছি’।

রেগে গেল ড্রাইভার, ‘শুনুন, স্যার! এই মধ্যরাতে এসব ঠাট্টা ইয়ার্কি ভাল লাগে না। আপনি সত্যি কোথায় যেতে চান বলুন, না হয় দয়া করে ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়ুন।’

যে কোনো পরিস্থিতি খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে দারুণ পটু রিচার্ড। সে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘দুঃখিত। আসলেই তোমার সাথে আমি সত্যি ইয়ার্কি করছিলাম। এত রাতে এটা ঠিক হয়নি। যাকগে, আমাদের রিভারডেল নিয়ে চলো-নয়শো সাঁইত্রিশ ওয়েষ্ট স্ট্রিট।’

‘হ্যাঁ, ওয়েস্ট স্ট্রিট যাওয়া যেতে পারে!’ ড্রাইভার ট্র্যাক্সি স্টার্ট দিল। নিউ ইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে ছুটে চললো গাড়ি। রিচার্ড এখনও লুইজির মরদেহ জড়িয়ে ধরে আছে। ভাবটা এমন যে গার্লফ্রেন্ডকে আদর করছে। ড্রাইভারকে শুনিয়ে সে বলল, ‘আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো, সোনা!’

টাইম্স স্কোয়ার পেরিয়ে হেনরি হাডসন হাইওয়েতে উঠে ট্যাক্সি ছুটল রিভারডেলের দিকে। যে বাড়ির ঠিকানা রিচার্ড ট্যাক্সি ড্রাইভারকে দিয়েছে ওটা আমারই বাড়ি। অ্যান আর আমার জন্যে বাড়িটা কিনেছি আমি। গভীর রাতেও নিউ ইয়ার্কে ট্রাফিক জ্যাম থাকে। পথে একাধিক জায়গায় দাঁড়াতে হলো। লোকজন পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। কেউ টেরও পেলো না যে, ট্যাক্সির ব্যাকসিটে হেলান দেওয়া স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢাকা এই মহিলাটি মৃত, তাকে কিছুক্ষণ আগে খুন করা হয়েছে। এখন তার লাশ গুম করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রিভারডেলের বাড়ির সামনে ট্যাক্সি থামলো। রিচার্ড সাবধানে লুইজিকে নামাল ট্যাক্সি থেকে। পকেট থেকে টাকা বের করল। ভাড়া দিয়ে দিল। চলে গেল ট্যাক্সি ড্রাইভার। অন্ধকার রাত। শূন্য রাস্তা। এমনিক একটা কুকুর র্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা কোথাও। কেউ দেখল না, কেউ জানল না একটা লাশ নিয়ে রিচার্ড বিাড়িতে ঢুকতে যাচ্ছে। পকেট থেকে চাবি বের করল সে। দরজা খুলল। লুইজিকে নিয়ে ঢুকলো ভেতরে।

লিভিংরুমে ঢুতে একটা সোফার ওপর ছুঁড়ে ফেলল লুইজির নিথর দেহকে। বাতি না জ¦ালিয়েই বসল ওর বিপরীত দিকের সোফায়। একটা সিগারেটর ধরিয়ে কষে টান দিয়ে রিচার্ড বললো, ‘ডেভিড, এখন তুমি কথা বলতে পারো।

প্রচন্ড রাগে চিৎকার করলাম আমি।

‘রিচার্ড, উন্মাদের মতো কি শুরু করেছো তুমি! লুইজিকে এই অ্যাপার্টমেন্টে কেনো নিয়ে এলে। কাজটা করে মোটেও বুদ্ধির পরিচয় দাওনি তুমি। আর একদিন পরেই অ্যান এসে এই এপার্টমেন্টে উঠবে। এখানে কেনো এলে?

বিরক্তির সঙ্গে রিচার্ড বললো, ‘দেখো ডেভিড, আমাকে কেনো দোষ দিচ্ছো? আমারই বা আর কি করার ছিল? নিজেই তো দেখলেওই ব্যাটা ড্রাইভারটা কবরস্থানে যেতে চাইল না।’

এই সময় ঘোত করে একটা শব্দ হলো, আমাদের ভয়ানক চমকে দিয়ে উঠে বসল লুইজি। কয়েকবার খুক খুক করে কাসলো। হাত দিয়ে গলা ডলল ও কিছুক্ষণ। লুইজিকে ভয়ানক অসুস্থ লাগছে। কণ্ঠে ব্যাঙের আওয়াজ তুলে সে বললো, ‘ছি: ডেভিড, তুমি- তুমি আমাকে খুন করতে চেয়েছিলে।’

রিচার্ড শীতল চোখে ওর দিকে তাকালো। ভযঙ্কর একটা অশুভ অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে চেহারায়। অনেকটা স্বাগতোক্তির মতো বললো, ‘কাজটা দেখছি আমি ঠিক মতো করতে পারিনি।’ নিজের ওপর সাংঘাতিক বিরক্ত সে।

লুইজি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, তাই রিচার্ডে কথাগুলো তার কানে ঢুকলো না। সে একঘেয়ে ফ্যাঁস ফ্যাসে কণ্ঠে বলেই চললো,

‘তুমি আমাকে খুন করতে চেয়েছিলে ডেভিড। ভেবেছো আমি তোমাকে ছেড়ে দেব। মোটেও না। এজন্য তোমাকে জেলে যেতে হবে। ঈশ^রের কসম, আমি সেই ব্যবস্থা করবোই।

হো হো করে হেসে উঠে রিচার্ড বললো, ‘সেই সুযোগ তুমি আর পাবে না। ‘কাজটা আবার নতুন করে করতে হবে, এটুকুই যা বাড়তি পরিশ্রম হবে আমার।’

রিচার্ড বিপজ্জনক ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলো ওর দিকে। ভয়ে কুঁকড়ে গেল লুইজি। সেই খুনে দৃষ্টিটা চিনতে পেরেছে সে। আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে বললো, ‘দোহাই লাগে তোমার। আমাকে মেরো না। আমি ক্ষমা চাচ্ছি। কথাটা ওভাবে বলতে চাইনি। মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দাও। এই জীবনে আমি আর তোমার কাছে আসব না। বিশ্বাস করো, কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করব না। আ-আমাকে মেরো না, ডেভিড। আমাকে মেরে না প্লিজ।’

‘চোপ, একদম চোপ’, ধমকে উঠলো রিচার্ড। খনখনে কণ্ঠে বললো, ‘আমি রিচার্ড, ডেভিড। তুমি কি ভেবেছো লুইজি তোমাকে খুন করা খুব কঠিন কাজ, তাই না? দুইবার মরেও তুমি মরোনি। কিন্তু এবার আর না। দান দান তিন দান। এই দানে তুমি শেষ , এবার তোমাকে মরতেই হবে।’

এবার আমি চিৎকার করলাম, ‘খবরদার রিচার্ড। তুমি আর একপা এগুবে না। থামো, ওকে চলে যেতে দাও। ও চলে যাক। ও আর কখনও আমার কাছে আসবে না।’

সিনেমার ভিলেনদের মতোই হাসি ঝুলে আছে রিচার্ডের ঠোঁটে। চিবিয়ে চিবিয়ে সে বলে ওঠালো, ‘ ডেভিড, আমার কাজ আমাকে করতে দাও। লুইজির মতো পঁেচ যাওয়া হৃদয়ের মেয়েদের জন্য তোমার এতটুকু করুনা থাকা উচিত নয়। তুমি তাকে চিনতে পারোনি। চিনলে ওকে জীবনে জড়াতে না।’




কি যেন বলতে চাইলো লিজা, মুখ দিয়ে বিড়ালের মতো ঘরর ঘরর একটা শব্দ বেরিয়ে এলো।

‘ডেভিড তুমি এখন চুপ থাকো, এখনকার হিসাবটা কেবল আমার আর লুইজির। তুমি এর মাঝে আসতে পারো না। ঘুমাও ডেভিড। তুমি ঘুমাও, ঘুমাও... ঘুমিয়ে পড়ো।’ ধীর ধীরে অস্পষ্ট হয়ে এলো রিচার্ডের কণ্ঠ। আবছা হয়ে গেলো আমার চোখের দৃষ্টি। টের পেলাম ঘুমে ঢলে পড়ছি আমি। নিকষ কালো একটা অন্ধকারের চাদর আমাকে ঢেকে ফেললো। আমার কিছুই করার রইলো না। আমরা সত্তা নিয়ন্ত্রণ করছে রিচার্ড...।

কতক্ষণ আমি ঘুমে নির্জীব হয়ে ছিলাম জানি না। ঘুম ভাঙলে নিজেকে আবিস্কার করলাম বেডরুমে নিজের বিছানায়। আমার পরনে ঘুমের পোশাক। বেডরুমের দরোজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিচার্ড। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বললো, ‘ডেভিড, সব সমস্যার শেষ হয়েছে। নিজেকে এখন তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ ভাবতে পারো। নতুন সংসারে তুমি সুখি হও, সেটাই আমার চাওয়া। আমি বিদায় নিচ্ছি।’

আমি এদিক ওদিক দেখলাম, কোথাও নেই লুইজি। চিৎকার দিয়ে ওঠলাম, ‘লুইজি কোথায়, কি করেছো তুমি লুইজির’।

রিচার্ড হাই তুলে বললো, ‘লুইজির মতো মেয়েদের ভুলে যাওয়াটাই ভালো। নিশ্চিত থাকো, ও আর তোমাকে কোনদিন জ্বালাতে আসবে না। ওর ব্যবস্থা হয়ে গেছে।’

‘কি ব্যবস্থা -কি করেছ তুমি ওর? জবাব দাও।’

রিচার্ড আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানির একটা হাসি দিয়ে হাত তুলে টাটা দিল, ‘ বিদায় ডেভিড। সকালে ঘুম ভেঙে সাবধান ভয় পেয়ো না। মনে করো পুরো ব্যাপারটা একটা স্বপ্ন ছিল। এই স্বপ্নটা নিশ্চয়ই তোমার ভালো লেগেছে। বিদায়।’

রিচার্ড চলে গেল। আমি চোখ মেলে তাকালাম। দেয়াল ঘড়েিত ঘণ্টি বাজলো। নয়টা বেজে গেছে। শুরু হলো আমার অরেকটা সকাল। বুঝলাম এতক্ষণ আসলে একটা স্বপ্নই দেখছিলাম। ভয়ঙ্কর একটা দুঃস্বপ্ন। এই হলো আমার কাহিনী, ডাক্তার। এখন আপনার ব্যাখা কি? ফের এমন ভয়ংকর স্বপ্ন আমি আর দেখতে চাই না ডাক্তার ম্যানসন।

হুমম, ধন্যবাদ তোমাকে ডেভি। এখন আমার কাছে পুরো ব্যাপারটাই এখন পরিস্কার হয়ে গেছে । আশা করি পুরো বিষয়টা যদি আমি তোমাকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারি তাহলে আর কখনও ওই দুঃস্বপ্ন তুমি দেখবে না।

ডাক্তার আমাকে বুঝিয়ে বলুন, সত্যি আমি ওরকম স্বপ্ন আর দেখতে চাই না।

ডেভিড, সবার আগে আমাকে তুমি একটা কথা বলো তো। সত্যি কথাটাই আামি তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই। তোমার প্রথমা স্ত্রী লুইজির মৃত্যুর আগে তুমি অনেকবার ওর মৃত্যু কামনা করেছ, তাই না?

জ্বী, ডাক্তার। মিথ্যা বলবো না। আমার জীবনটাকে সে বিষিয়ে দিয়েছিল। আমি মনেপ্রাণে চেয়েছি ডাইনিটার যেন মৃত্যু হয়।

গলদটা ছিল এখানেই। লুইজি যখন মারা গেল তখন নিজের অবচেতেন মনের কাছে অপরাধী হয়ে গেলে তুমি। নিজেকেই দায়ি করলে তার মৃত্যুর জন্য। তোমার মনে বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হলো, তুমিই খুন করেছ ওকে। তুমি এখন অ্যানকে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছো। তোমার অবচেতন মনে জমে থাকে একটা চিন্তা আবারও উসকে উঠলো, লুইজি যদি বেঁচে থাকতো তোমার দ্বিতীয় বিয়েটাকে কিভাবে নিতো। এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তে স্থির সিদ্ধান্তে তুমি পৌছে গেলে যে, লুইজি মরেনি। সে বেঁচে আছে। আবারও সে ধুমকেতুর মতো উদয় হয়ে তোমার সব পরিকল্পনা-স্বপ্ন ছাড়খার করে দেবে। অবচেতন মনের এই আশঙ্কায় তোমাকে দুঃস্বপ্ন দেখতে বাধ্য করেছে। তোমার একটা অ্যালার্ম ক্লক আছে দেখেছি। ওটা বেজে ওঠার শব্দ শুনে ঘুমের মধ্যে ভেবে নিয়েছো ফোন বাজছে। এরপরই ওই স্বপ্নটা তুমি দেখতে শুরু করো। আর সেই স্বপ্নে একের পর এক হাজির হয়েছে লুইজি, রিচার্ড ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যাপারটা এখন বুঝতে পারছ তো, ডেভিড?

জ্বি, ডাক্তার। বুঝতে পারছি।

হুম, ডেভিড। এবার তুমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নাও। যখন তোমাকে জেগে উঠতে বলব, তখনই তুমি চোখ মেলে তাকাবে। আর জেগে ওঠার পর থেকে এই দুঃস্বপ্নের কথা সম্পূর্ণ ভুলে যাবে। তোমাকে এই স্বপ্ন আর কোনদিন তাড়া করবে না। এখন বিশ্রাম নাও, ডেভিড।

জ্বী ডাক্তার, অনেক ধন্যবাদ। আমি ঘুমাই।

ডাক্তার ম্যানসন, ডাক্তার ম্যানসন।

বলুন, মিসেস অ্যান কার্পেন্টার?

ও আর কখনো ওরকম দুঃস্বপ্ন দেখবে না, আপনি কি নিশ্চিত।

অবশ্যই নিশ্চিত, আপনিও নিশ্চিত থাকতে পারেন। ডেভিডের অবচেতন মনের অপরাধবোধ থেকেই এই দুঃস্বপ্নের সৃষ্টি। আমি ওর অবচেতন মন থেকে সেই অপরাধবোধের বীজটুকু উপড়ে ফেলতে পারলেই ও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। কোন সমস্যা আর থাকবে না।

আমিও তাই চাই ডাক্তার ম্যানসন। এতে আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবো। ওর জন্য সত্যি আমার খুব কষ্ট লাগে। সরি ডাক্তার। কলিংবেলের শব্দ শুনলাম। কেউ বোধহয় এসেছে। আমি দেখে আসছি।

ঠিক আছে, মিসেস অ্যান কার্পেন্টার। আপনি যান। আমি আছি ডেভিডের পাশে এখানটাই। ওর ঘুম ভাঙিয়ে আমি বিদায় নেবো।

একটা লোক আমাদের জন্য অনেকগুলো কম্বল নিয়ে এসেছে। দেখি দেখি, কে পাঠাল। ওমা, ডেভিডের বোন পাঠিয়েছে উপহার হিসেবে। কম্বলগুলো খুব সুন্দর, তাই না?

হ্যাঁ, সত্যিই দেখার মতো।

আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এগুলো আমি যতœ করে তুলে রাখতে চাই। কোথায় যে রাখি! ডেভিড আমাদের বড় জানালাটার পাশের দেয়ালে বেশ বড় একটা সিন্দুক বানিয়ে রেখেছে। ওটা পুরোপুরি এয়ারটাইট। পোকায় ধরারও সম্ভাবনা নেই। ওটার মধ্যেই কম্বলগুলো রাখি, ভালো থাকবে।

ডেভিড, সম্মোহন থেকে তুমি এখন বেরিয়ে আসো। জেগে ওঠো। সম্মোহিত অবস্থা থেকে নিরাপদে জেগে ওঠতে পারো। বাহ, এই তো ভালোই ভালোই জেগে ওঠেছো। ঠিক আছো তো, এখন তোমার কেমন লাগছে ডেভিড?

চমৎকার লাগছে, ডাক্তার। তবে আপনার একটা ভুল ভাঙানো দরকার। আমি ডেভিড নই, আমি হচ্ছি রিচার্ড। আমি বুঝতে পারছি না, যে গল্পটা আপনাদের ডেভিড শোনালো সেটাকে কোন যুক্তিতে ¯্রফে একটা দুঃস্বপ্ন বলে আপনি উড়িয়ে দিলেন। আপনার বোঝা উচিত ছিলো যে, সত্যকে ঢেকে রাখতে ওটা ছিল ডেভিডের একটা কৌশলমাত্র। কিন্তু মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি, এই রিচার্ড কখনও মিথ্যে বলি না। সেদিন রাতে সত্যি সত্যিই ফোনটি বেজে ওঠেছিল আর ... । আরে আরে অ্যান! থামো থামো। সাবধান, সিন্দুকটা খুলো না। আমি না করলাম। খুলো না বলছি। ... হায় হায় সিন্দুকটা কেন খুললে? আমি তোমাকে খুলতে নিষেধ করেছিলাম। কি আর করা, খুলেই যখন ফেলেছো। এখন লাশটা দেখো ভয় পেলে আমার কিছুই করার নেই!


**মার্কিন লেখক রবার্ট আর্থারের গল্প ‘ডেথ ইজ এ ড্রিম’ অবলম্বনে , রূপান্তর : বিপুল হাসান

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ভয় নাই। একটুও ভয় লাগলো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.