নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবার দেখা হবে কোনো এক আহত দেয়ালের কিনারায়, যেখানে ঠিকরে পড়ে কলুষিত কায়ার অব্যক্ততার ব্যক্ততা

স্ফিঙ্গেল

নিহত স্মৃতির আহত সত্তা বিধ্বস্ত কায়া।

স্ফিঙ্গেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

“মনীষীদের ভাগ্যগত উপগমন”

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:২৭

✴ অ্যান্ড্রু কার্নেগি
মার্কিন ধনকুবের অ্যান্ড্রু কার্নেগি ছলেন তার সময়ের সবচেয়ে বড় ধনকুবের। তিনি ছিলেন বস্তির ছেলে। তার বয়স যখন বারো বছর তখন খেলার জন্য একবার তিনি পাবলিক পার্কে ঢুকতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার পোশাক এত মলিন ও নোংরা ছিল যে সেই পার্কের দারোয়ান তাকে পার্কে প্রবেশ করতে দেয়নি। সেদিন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, একদিন তার টাকা হবে আর তিনি এই পার্কটি কিনে ফেলবেন। ধনকুবের হওয়ার পর কার্নেগি ওই পার্কটি-ই কিনেছিলেন এবং পার্কে নতুন একটি সাইনবোর্ডও লাগিয়ে ছিলেন। তাতে লেখা ছিল “আজ থেকে দিনে বা রাতে যে কোনো সময়ে যে কোনো মানুষ যে কোনো পোশাকে এই পার্কে প্রবেশ করতে পারবে।”

✴ আব্রাহাম লিংকন
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় এক ধর্মযাজক কথার প্রসঙ্গে আব্রাহাম লিংকনকে বলেছিলেন, “মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আসুন, আমরা বিশ্বাস রাখি এবং প্রার্থনা করি যে এই দুঃসময়ে মহান ঈশ্বর আমাদের পক্ষে থাকবেন।” প্রতি-উত্তরে লিংকন একটু ভেবে নিয়ে হাঁসতে হাঁসতে বললেন, “আপনি যাই বলুন না কেন, ঈশ্বর নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই। কারণ আমি একথা জানি যে ঈশ্বর সব সময় ন্যায় ও সত্যের পক্ষেই থাকেন। এর চেয়ে বরং আসুন, আমরা সবাই প্রার্থনা করি- এই জাতিটা যেন সব সময় ঈশ্বরের পক্ষে থাকতে পারে।”

✴আলেকজান্ডার ফ্লেমিং
পেনিসিলিনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার ফ্লেমিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন একদিন নিউইয়র্কের বালটিমোর হোটেলে প্রাতরাশ সারতে যাচ্ছিলেন। পথে কয়েকজন সাংবাদিক তার পথ আগলে দাঁড়াল এবং বলল, “মি. ফ্লেমিং, আপনি একজন বিখ্যাত আবিষ্কারক। দয়া করে বলবেন কি, এই মুহূর্তে আপনি ঠিক কি ভাবছেন?” রসিক ফ্লেমিং বললেন, “আপনারা খুব ভালো একটি প্রশ্ন করেছেন। আমি এ মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।” সাংবাদিকরা তার বক্তব্য নোট করার জন্য কাগজ-কলম বের করে বললেন, “ঠিক আছে, আপনি বলুন, আমরা নোট করে নিচ্ছি।” ফ্লেমিং বললেন, “আমি ভাবছিলাম ব্রেকফাস্টে কটা ডিম খাব?”

✴ ইংরেজ লেখক সমারসেট মম
প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক সমারসেট মম বৃদ্ধ বয়সে ভীষণ অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার এক ভক্ত ফোন করে উনার কাছে জানতে চাইল- “কিছু ফুল আর ফলমূল পাঠালে আপনি তা গ্রহণ করবেন কিনা।” উত্তরে মম বলেন - “ফলমূল পাঠাবার ক্ষেত্রে বলতে হয় তুমি বড্ড দেরী করে ফেলেছ। আর ফুল পাঠাবার সময় এখনও আসেনি।”
✴ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
((((ক))))
কবি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্তের’ অর্থিক অনটনের সময় ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ উনাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। একদিন এক মাতাল উনার কাছে সাহায্য চাইতে এলে বিদ্যাসাগর বললেন-আমি কোন মাতালকে সাহায্য করি না।
“কিন্তু আপনি যে মধুসুদনকে সাহায্য করেন তিনি-ওতো মদ খান”, মাতালের উত্তর।
বিদ্যাসাগর উত্তর দেন, “ঠিক আছে আমিও তোমাকে মধুসূদনের মত সাহায্য করতে রাজী আছি তবে তুমি তার আগে একটি ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য লিখে আন দেখি।
((((খ))))
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর খদ্দরের চাদর পরতেন। শীত বা গ্রীষ্ম যাই হোক না কেন গায়ে শুধু চাদর আর কাঠের খড়ম পরেই সংস্কৃত কলেজে ক্লাস নিতে যেতেন। মাঘ মাসের শীতের সময় প্রতিদিন সকালে এভাবে ঈশ্বর চন্দ্রকে ক্লাস নিতে যেতে দেখে প্রায়ই হিন্দু কলেজের এক ইংরেজ সাহেব যাওয়ার পথে বিদ্যাসাগরকে ক্ষ্যাপানোর জন্য বলতেন, “কি হে, বিদ্যার সাগর, বিদ্যার ভারে বুঝি ঠান্ডা লাগে না তোমার?” বিদ্যাসাগর প্রতিদিন কথা শুনতেন, কিন্তু কিছু বলতেন না। একদিন শীতের সকালে ঠিক একইভাবে তিনি ক্লাস নিতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আবার সেই ইংরেজের সাথে দেখা। আবার সেই একই প্রশ্ন। এবার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর চন্দ্র তার ট্যামর থেকে একটা কয়েন বের করে বললেন, “এই যে গুজে রেখেছি, পয়সার গরমে আর ঠান্ডা লাগেনা। এবার হলো তো?”

✴ কবি জেরার দ্য নের্ভাল
প্যারিসের রাজপ্রাসাদের সামনে বাগানের মধ্য দিয়ে হাঁটছিলেন নের্ভাল। তাঁর হাতে পুরনো নীল ফিতায় বাঁধা একটি ঢাউস চিংড়ি ঝুলছিল। একজন তাঁকে এরকম আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দিলেন, “প্রথমত: কুকুর, বিড়ালের চেয়ে চিংড়ি মাছ আমার বেশি পছন্দ। কেননা এরা কাউকে দেখে ঘেউ ঘেউ বা মিউ মিউ করে না। দ্বিতীয়ত: চিংড়ি মাছ সমুদ্রের রহস্য জানে।”

✴ কবি শেখ সাদী
সন্ধ্যা-রাতে লন্ঠন জ্বালিয়ে বই পড়ছে ছেলেটি। হঠাৎ তেলের অভাবে কুপিটি গেল নিভে। ছেলেটি তো চিন্তায় পড়ে গেল। কি করবে এখন। এমন সময় সে দেখতে পেল একজন প্রতিবেশীর রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে কিছু আলো বেরিয়ে আসছে। ছেলেটি করলো কি, সঙ্গে সঙ্গে বইটি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সেই আলোকিত জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে একমনে বইটি পড়তে লাগলো। এমন সময় সেই ঘরের কর্ত্রী জানালা দিয়ে কিছু গরম পানি বাইরে ফেললেন। আর অমনি এক আর্ত চিৎকার। চিৎকার শুনে সবাই ছুটে এলো। দেখলো ছেলেটির শরীরে গরম পানি পড়েছে আর ছেলেটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এটা দেখে সবাই যেমন আশ্চর্য হলো তেমনি মর্মাহতও হলো। গৃহকর্ত্রী ছেলেটির গায়ে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে বললেন, “বাছা তোমার পড়াশুনার জন্য যত তেলের দরকার, সব খরচ আজ থেকে আমি দেব। তুমি লেখাপড়া চালিয়ে যাও। লেখাপড়া করে অনেক বড় হও।” ছেলেটি আর কেউ নয়, তিনি পারস্য কবি ‘শেখ সাদী’।

✴ কাজী নজরুল ইসলাম
ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরাম পুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে দুখু মিয়া। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় রচনা এসেছে ‘বর্ষাকাল’। দুখু এমনিতেই অনেক ভালো ছাত্র। গত বার্ষিক পরীক্ষায়ও ক্লাসে সে প্রথম হয়েছিলো। এবারও তাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। তাই সে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য পুরো রচনাটি লিখলো কবিতার আকারে। কিন্তু পন্ডিতমশাই খাতা পড়ে তো রাগে একেবারে ফেটে পড়লেন। “কি? পরীক্ষার খাতায় মশকরা, ‘রচনা’ তাও আবার পদ্যে, দাঁড়াও, তোমার কবিতা গিরী ছুটাচ্ছি”- এই বলে তিনি দুখু মিয়াকে কড়া শাস্তি দিলেন আচ্ছামতন বেত্রাঘাত করে। দুখু মিয়াও কম যান না, তখনই খাতাসহ হেডমাস্টার মশাইয়ের কাছে পন্ডিতমশাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ জানান। আত্নপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, “তিনি তো প্রশ্নপত্রের রচনাটাই লিখেছিলেন, ‘রচনা’-টি গদ্যে নাকি পদ্যে লিখতে হবে তা তো বলা ছিলো না?” হেডমাস্টার সব শুনে বুঝলেন, দুখু ঠিকই বলেছে। তিনি পন্ডিতমশাইকে পুরো নম্বর দিতে বললেন। কিন্তু ক্লাসে এসে পন্ডিতমশাই নাম্বার তো দিলেনই না বরং নালিশ জানানোর জন্য দুখুকে আবারো বেত্রাঘাত করলেন। এমনিতেই দুখু মিয়ার আত্মসম্মানবোধ ছিলো অত্যন্ত প্রখর, তার উপর দ্বিতীয়বার বিনা কারণে শাস্তি পেয়ে সে ছুটে বেড়িয়ে এলো ক্লাস থেকে। আর কখনোই অভিমানী দুখু আর ঐ স্কুলে যায়নি। তাঁর স্কুল জীবনের ইতি ঘটে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে। আত্ম প্রত্যয়ী দুখু তারপর যোগদান করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। খুব বেশি পড়াশুনা করার সুযোগ হয়নি দুখু মিয়ার। কিন্তু সেদিনকার সেই দুখু মিয়াই অল্প বিদ্যা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে ঠিকই দখল করে নিতে পেরেছিলো নিজের আসন। হয়ে উঠেছিলো সবার প্রিয় কাজী নজরুল ইসলাম।

✴ গ্রীক কবি ফিলেমোন
প্রাচীন গ্রীক কবি ফিলেমোন, একদিন দুপুরে খেতে এসে দেখেন যে একটি গাধা তার জন্য রাখা সব খাবার খেয়ে নিচ্ছে। ঘটনাটি দেখে উনার ভীষণ হাসি পায়। হাসি এতই বেদম আকার ধারণ করে যে একটু পর হেচকি উঠে মারা যান দুর্ভাগা কবি।

✴ চার্লি চ্যাপলিন ও পাবলো পিকাসো
বিশ্বের দুই দিকপাল স্বনামধন্য ইংরেজ কৌতুকাভিনেতা ‘চার্লি চ্যাপলিন’ ও বিশ্বখ্যাত স্প্যানিশ শিল্পী ও ভাস্কর ‘পাবলো পিকাসো’-এর সাক্ষাৎ হলো পিকাসোরই স্টুডিওতে। দুজনই একে অপরের খুব ভক্ত। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল এক জায়গায় একজন অন্যজনের ভাষা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তাই ‘চ্যাপলিন’ তার মুকাভিনয়ের মাধ্যমে তার মনের কথা ‘পিকাসো’-কে বুঝাচ্ছিলেন। তখন ‘পিকাসো’-ও তার তুলির আঁচড়ে ছবি এঁকে এঁকে ‘চ্যাপলিন’-কে সবকিছু বুঝাচ্ছিলেন। এতে তাদের সাক্ষাৎকারে ভাষা কোনো অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারেনি।

✴ চিত্রশিল্পী হুইসলার
চিত্রশিল্পী হুইসলারের খুবই আদরের একটা পোষা কুকুর ছিল। একবার সেই কুকুরের গলায় ঘা দেখা দেওয়ায় হুইসলার সে সময়কার নামকরা গলার ডাক্তার ম্যাকেঞ্জিকে ডেকে আনলেন। ম্যাকেঞ্জি ভেবেছিলেন, মানুষের চিকিৎসা করতে হবে। বাড়িতে এসে কুকুরের চিকিৎসা করতে হবে শুনে মনে মনে রেগে গেলেন। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। যথারীতি কুকুর দেখে কয়েকটা ওষুধ লিখে দিয়ে বিদায় নিলেন তিনি। পরের দিন ম্যাকেঞ্জি হুইসলারকে তার চেম্বারে ডেকে পাঠালেন। হুইসলার ভাবলেন হয়তো তার কুকুরের ব্যাপারে ম্যাকেঞ্জি কথা বলার জন্য ডেকেছেন। তিনি ফুরফুরে মেজাজেই ম্যাকেঞ্জির চেম্বারে গেলেন। ম্যাকেঞ্জি হুইসলারের কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর বললেন, “আমার ঘরের সদর দরজার রঙটা একটু চটে গেছে। ওটা একটু রঙ করতে হবে। আর সে জন্যই আপনাকে ডেকেছি!”

✴ জন এবারনেথি
অবসাদ আক্রান্ত এক রোগী এসে এবারনেথির সঙ্গে দেখা করলে তিনি পরীক্ষা করে তাঁকে বলেন: “আপনার আনন্দফূর্তি দরকার। আপনি গিয়ে কৌতুকাভিনেতা গ্রিমালডির কৌতুক উপভোগ করুন। সে আপনাকে প্রসন্নতা ফিরিয়ে দিতে পারবে এবং যে কোন ঔষোধের চেয়ে ঐটাই হবে আপনার জন্য উত্তম।” ডাক্তারের পরামর্শ শেষ হওয়ার পর রোগী বললো: “আমি নিজেই গ্রিমালডি।”

✴ জন ডেভিড রকফেলার
ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জন ডেভিড রকফেলারের ব্যক্তিগত জীবন ছিল খুব সাধাসিধে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি অর্থ উপার্জন করেছিলেন বলে অযথা অপব্যয়ে তার মন সায় দিত না। একবার ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়ে তিনি একটি হোটেলের সবচেয়ে কমদামী কক্ষটি নিজের জন্য ভাড়া করেন। হোটেলের ম্যানেজার একদিন বলে বসে, “স্যার আপনার ছেলে যখন এই হেটেলে আসে তখন সবচেয়ে দামী কক্ষটি ভাড়া নেন। অথচ আপনি সবচেয়ে কমদামি কক্ষটি ভাড়া নিলেন কেন?” রকফেলার জবাব দেন, “কারণ আমার ছেলের বাবা পয়সাওঅলা লোক। কিন্তু আমার বাবা ছিলেন নিতান্তই গরীব।”

✴ জন মেজর
একবার ব্রিটিশ পুলিশ এক চোরকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল যার চেহারার সাথে তখনকার প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের চেহারার অনেক মিল ছিল। পুলিশ চোরের ছবি দিয়ে ধরিয়ে দিন বিঞ্জাপনও ছাপিয়েছিল। লোকে জন মেজরকেই চোর ভেবে ভুল করতে পারে ভেবে তারা বিঞ্জাপনের নিচে লিখে দিল- “প্রধানমন্ত্রী নন”।

✴ জর্জ বার্নার্ড শ’
((((ক))))
খ্যাতনামা আইরিশ সাহিত্যিক, সমালোচক ও নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ’-এর মুখের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল তার দাড়ি। একবার একটি ইলেকট্রিক রেজার নির্মাতা কোম্পানির কর্তারা বাজারে আসা তাদের নতুন রেজরের প্রচারণায় শ’-র এই দাড়িকে নিশানা করল। শ’-কে তারা এই নতুন রেজর দিয়ে দাড়ি কামানোর অনুরোধ করল। বিনিময়ে দেয়া হবে লোভনীয় অঙ্কের টাকা। শ’ তাদের হতাশ করে বললেন, “তার বাবা যে কারণে দাড়ি কামানো বাদ দিয়েছিলেন তিনিও ঠিক একই কারণে এ জঞ্জাল ধরে রেখেছেন।” কোম্পানির কর্তারা কারণটি জানতে আগ্রহী হলে বার্নার্ড শ’ বললেন, “আমার বয়স তখন পাঁচ বছর। একদিন বাবা দাড়ি কামাচ্ছেন। আমি তাকে বললাম বাবা তুমি দাড়ি কামাচ্ছ কেন!” তিনি এক মিনিট আমার দিকে নীরবে তাকিয়ে থেকে বললেন, “আরে তাই তো, আমি এ ফালতু কাজ করছি কেন? এই বলে তিনি সেই যে জানালা দিয়ে রেজর ছুড়ে ফেললেন জীবনে আর কখনো তা ধরেননি।”
((((খ))))
প্রখ্যাত নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ’ তার ‘সেন্ট জোন’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়নের রাতে উপস্থিত থাকবার জন্য ‘স্যার উন্সটন চার্চিল’-কে দুটি টিকেট পাঠান। সাথে একটি চিরকুট লিখে পাঠান, “একটি টিকেট আপনার আর অন্যটি আপনার বন্ধুর জন্য। তবে আদৌ যদি আপনার কোন বন্ধু থেকে থাকে।” চার্চিলও শ’-কেও একটি চিঠি পাঠান। তাতে লেখা ছিল, “মঞ্চায়নের প্রথম রাতে উপস্থিত হতে পারছি না বলে দুঃখিত। সম্ভব হলে দ্বিতীয় রাতের জন্য টিকেট পাঠাবেন। অবশ্য আদৌ যদি আপনার নাটকের দ্বিতীয় রাত বলে কোন কিছু থেকে থাকে।”
((((গ))))
বার্নার্ড শ’-র বাড়িতে বেড়াতে এসে এক মহিলা অবাক হয়ে বললেন, “মিস্টার শ’, আপনার ঘরে দেখছি একটা ফুলদানিও নেই। আমি ভেবেছিলাম, আপনি এত বড় একজন লেখক; আপনি নিশ্চয়ই ফুল ভালোবাসেন। তাই আপনার বাসার ফুলদানিতে বাগানের তাজা, সুন্দর ফুল শোভা পাবে।” প্রত্যুত্তরে শ’ সঙ্গে সঙ্গেই বললেন, “ম্যাডাম, আমি বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকেও ভালোবাসি। তার অর্থ এই নয় যে, আমি তাদের মাথা কেটে নিয়ে এসে ঘরে সাজিয়ে রাখব।”

✴ জন ড্রাইডেন
বিখ্যাত ইংরেজ কবি সমালোচক জন ড্রাইডেন প্রায় সারাক্ষণই পড়াশোনা আর সাহিত্যচর্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন; স্ত্রীর প্রতি খুব একটা মনোযোগ দিতেন না। একদিন স্ত্রী লেডি এলিজাবেথ তাঁর পড়ার ঘরে ঢুকে রেগে গিয়ে বললেন, “তুমি সারা দিন যেভাবে বইয়ের ওপর মুখ গুঁজে পড়ে থাকো তাতে মনে হয় তোমার স্ত্রী না হয়ে বই হলে বোধ হয় তোমার সান্নিধ্য একটু বেশি পেতাম।” ড্রাইডেন বইয়ের ওপর মুখে গুঁজে রেখেই বললেন, “সে ক্ষেত্রে বর্ষপঞ্জি হয়ো, বছর শেষে বদলে নিতে পারব।”

✴ ক্রিস্টোফার রীভ
সুপারম্যান খ্যাত অভিনেতা ক্রিস্টোফার রীভকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল- “সুপারম্যান আর জেন্টেলম্যান এর মধ্যে পার্থক্য কি?” তিনি গম্ভীর মুখে উত্তর দিলেন - “সহজ পার্থক্য। জেন্টেলম্যানরা আন্ডারঅয়্যার পরে প্যান্টের নিচে আর সুপারম্যান পরে ওপরে।”

✴ জার্মানির রাষ্ট্রনায়ক বিসমার্ক
((((হ্যাঁ, সম্ভবত ও না))))
সেন্ট পিটারসবুর্গে এক নাচের অনুষ্ঠানে বিসমার্ক তার নাচের সঙ্গিনীকে মিষ্টি মধুর মিথ্যা প্রসংশা দিয়ে আপ্যায়ন করছিলেন। কিন্তু সঙ্গিনী এর কিছুই গেলেন নি। “আপনারা কূটনীতিকরা যা বলেন, তা কেও বিশ্বাস করেনা।” “মানে?” - বিসমার্ক কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন কূটনীতিক বললেন, “একজন কূটনীতিক ‘হ্যাঁ’ বলার মাধ্যমে ‘সম্ভবত’ বোঝান। ‘সম্ভবত’ বলার মাধ্যমে ‘না’ বোঝাতে চান। আর যদি তিনি ‘না’ বলেন তাহলে তিনি কূটনীতিকই নন।” একথা শুনে বিসমার্ক জবাবে বললেন, “ম্যাডাম, আপনি ঠিকই বলেছেন এটা আমাদের পেশারই একটা অংশ। কিন্তু আপনাদের মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এক্কেবারে উল্টো।” কূটনীতিক বললেন, ‘কিভাবে?’ বিসমার্ক জবাবে বললেন, “যখন কোন মেয়ে ‘না’ বলে তখন সে ‘সম্ভবত’ বোঝায়, ‘সম্ভবত’ বলার মাধ্যমে ‘হ্যাঁ’ বোঝায়, আর যদি সে ‘হ্যাঁ’ বলে তাহলে সে মেয়েই নয়।
((((অব্যর্থ পদ্ধতি))))
একবার জার্মানির রাষ্ট্রনায়ক বিসমার্ক এক ইংরেজ রাষ্ট্রদূতের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ করছিলেন। আলাপের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রদূত জানতে চাইলেন - “যেসব দর্শনার্থীরা আপনার মূল্যবান সময় বেশি নিয়ে নেয় তাদেরকে কিভাবে সামলান?” বিসমার্কের উত্তর - “ওহ, আমার একটা অব্যর্থ পদ্ধতি আছে। এক্ষেত্রে আমার পরিচারক এসে জানায়, আমার স্ত্রী জরুরী কিছু বলার জন্য আমায় ডেকেছে।” ঠিক ঐ সময়ই তার দরজায় করাঘাত পড়লো এবং চাকর এসে বলল, “তার স্ত্রী খবর দিয়েছে।”

✴ জীবনানন্দ দাস
জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে জাগতিক নিঃসহায়তা জীবনানন্দ দাসকে মানসিকভাবে কাবু করেছিল এবং তাঁর জীবনস্পৃহা শূন্য করে দিয়েছিল। মৃত্যুচিন্তা কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল। তিনি প্রায়ই ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা ভাবতেন। তাঁর বন্ধুবান্ধবকেও এ ব্যাপারে বলতেন। কাকতালীয়ভাবে ১৪-ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে এ সময় দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে ট্রাম লাইন পার হচ্ছিলেন কবি। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। গুরুতরভাবে আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল ও অন্যান্যরা এবং তাঁকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ২২-শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত ১১-টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গত একশত বৎসরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কোলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি। তিনি আর কেউ নন, কবি জীবনানন্দ দাশ।

✴ জেমস জয়েস
‘ইউলিসিস’ খ্যাত লেখক জেমস জয়েস এর কাছে একদিন এক তরুণ ভক্ত এসে বলল- ‘যে হাত দিয়ে আপনি ‘ইউলিসিস’-এর মত মহৎ সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন সেই হাতে কি আমি একবার চুমু খেতে পারি?” ‘না’ - উত্তর দিলেন জয়েস। কারণ, এই হাতে আমি অনেক মন্দ কাজও করেছি।

✴ টমাস আলভা অ্যাডিসন
((((ঘোড়ার ডিমের যন্ত্র))))
টমাস আলভা অ্যাডিসনের গ্রামোফোন আবিষ্কার উপলক্ষে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এক তরুণী তাঁর বক্তৃতায় অ্যাডিসনকে অযথাই আক্রমন করে বসল, “কী এক ঘোড়ার ডিমের যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই থাকে। আর তাই নিয়ে এত মাতামাতি! ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না...।” তরুণী বলেই যাচ্ছে। থামার কোনো লক্ষণ নেই। অ্যাডিসন চুপ করে শুনে গেলেন। বক্তৃতা দিতে উঠে তিনি বললেন, “ম্যাডাম, আপনি ভুল করছেন। আসলে সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করার যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন উপরওয়ালা। আমি যেটা আবিষ্কার করেছি সেটি ইচ্ছেমতো থামানো যায়।”
((((খাবার সাবাড়))))
বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের কথা তো আমরা সবাই জানি। তিনি ছিলেন খুব ভুলোমনা, কোনো কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। তো একবার তিনি তার এক বন্ধুকে তার বাসায় খাবার দাওয়াত দিলেন। অথচ দাওয়াতের দিন এডিসন নিজেই বন্ধুকে দাওয়ার দেয়ার কথা ভুলে গেলেন। যথাদিনে বন্ধু এসে হাজির। এসে দেখেন বাড়িতে কেউ নেই। বন্ধুটি তাই তার বিজ্ঞানী বন্ধুটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। কিন্তু সময় গড়িয়ে যায়, বন্ধুতো আসে না। অবশেষে খিদে লাগায় বন্ধুটি খিদে সইতে না পেরে টেবিলে রাখা খাবারের প্লেট নিজেই সাবাড় করে দেয়। কিছুক্ষন পরে এডিসন আসলেন। এসে বন্ধুকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আরে বন্ধু! তুমি এই অসময়ে আমার বাসায়? দাঁড়াও, দেখি তোমার জন্য কোনো খাবার আছে কিনা।” এই বলে তিনি টেবিলে রাখা খাবারের প্লেটটির ঢাকনা তুলে দেখেন প্লেটটি খালি। এরপর আফসোস করে বন্ধুকে বলতে লাগলেন, “এই দেখো কান্ড, তোমার জন্য কিছুই রইল না। যাওয়ার সময় যে আমি খাবারটি খেয়ে গেছিলাম তাও ভুলে গেছি।”

✴ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
হাওড়া জেলা স্কুলের একটা ক্লাস রুম। একটু বেঁটে খাটো, স্বাস্হ্য ভালো এক ছেলে এসে ক্লাসে ঢুকলো। এত গরমের ভেতরেও গায়ে কোট চাপানো। এমনিতেই একটু মোটাসোটা। আজকে আরো বেঢপ হয়েছে দেখতে। ছেলেরা হাঁসাহাঁসি শুরু করেছে। অথচ ছেলেটি চিন্তামগ্ন। আজ তার বুকটা ভয়ে ঢিব ঢিব করছে। কখন ডাক আসবে স্যারের। তারপর পিটুনী। কারণ গতকাল যাদের সে মেরেছিল তারা নিশ্চয় নালিশ জানিয়েছে শিক্ষকের কাছে। অবশেষে ডাক এলো। শিক্ষক তাকে যতই প্রশ্ন করেন ততই ছেলেটা গুটিয়ে ফেলে নিজেকে, কোন জবাব দেয় না। শিক্ষক রেগে গেলেন। গায়ের কোট ধরে টান মারলেন। অবাক কান্ড! বেরিয়ে এলো শাড়ী। সারা গায়ে জড়ানো। তার উপর শার্ট। শার্টের উপর এই কোর্ট। হাসির রোল বয়ে গেল সারা ক্লাসে। স্যার আর কি বিচার করবেন তিনিও হেঁসে ফেললেন ছেলেটির কান্ড দেখে, ছেড়ে দিলেন তাকে। এই ছোট্ট ছেলেটি আর কেউ নয়, তিনি হলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্।

✴ দার্শনিক ডায়োজেনিস
((((রোদ পোহানো))))
কাউকে পরোয়া এবং তোষামোদ না করার ব্যাপারে দার্শনিক ডায়োজেনিসের খুব সুনাম ছিল। সেটা ছিল দিগ্বিজয়ী ‘বীর আলেকজান্ডার’-এর শাসনামল। এক সকালে দার্শনিক ডায়োজেনিস তার বাসার সামনে রোদ পোহাচ্ছিলেন। হঠাৎ আলেকজান্ডার এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?” ডায়োজেনিস বললেন, “আমি রোদ পোহাচ্ছি; আপনি সূর্যটা আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছেন। আপাতত একটু সরে দাঁড়ালেই হয়।”
-
((((শাক দিয়ে রুটি খাওয়া))))
অত্যাচারী রাজা ডেনিসের আমলের ঘটনা। তাকে একদিন শাক দিয়ে রুটি খেতে দেখে ওই সময়কার আরেক দার্শনিক বললেন, “যদি রাজাকে একটু তোষামোদ করে বলতেন, তাহলে আর শাক দিয়ে রুটি খেতে হতো না!” ডায়োজেনিস সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “আপনি যদি শাক দিয়ে রুটি খেতে শিখতেন, তাহলে এমন এক অত্যাচারী রাজাকে তোষামোদ করতে হতো না।”

✴ দার্শনিক প্লেটো
দার্শনিকদের কাজ-কারবারই ছিল অন্যরকম। উল্টোভাবে বলা যায়, এ রকম কাজ-কারবার করতেন বলেই তারা দার্শনিক ছিলেন। বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো একবার মানুষের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “মানুষ হচ্ছে পালকবিহীন দ্বিপদ একটি প্রাণী।” এই সংজ্ঞা শুনতে পেয়ে আরেক দার্শনিক ডায়োজেনিস একটি মুরগি জবাই করে সবগুলো পালক ফেলে দিয়ে প্লেটোকে পাঠিয়ে দিলেন। সঙ্গে একটি কাগজে লিখলেন, “এটাই তোমার সংজ্ঞায়িত মানুষ।”

✴ নীলস বোর
((((পরীক্ষার খাতা))))
পরমানু মডেলের জনক নীলস বোর এমনিতেই ছিলেন খুব শান্ত শিষ্ট মানুষ। এটা তার ছেলেবেলার ঘটনা। স্কুলে ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। তার মা তাকে নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। ছেলেটা পরীক্ষা কেমন দিচ্ছে তা কোনদিন-ই বলেনা। তাই পরীক্ষা থেকে ফিরে এলে মা প্রতিবারই প্রশ্ন করেন, “কেমন পরীক্ষা দিয়েছ, নীলস বোর?” নীলস বোরের বিরক্তমুখে একই কথা ‘ভালই’। আর কিছুই সে বলত না। তো একদিন যথারীতি পরীক্ষা শেষে মা জিজ্ঞেস করলেন পরীক্ষার কথা। নীলস বোর সাথে সাথে তার পরীক্ষার খাতা বের করে বলল, “প্রতিদিনই তুমি একই কথা জিজ্ঞেস করো, তাই আজ পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষার খাতাই নিয়ে এলাম তোমাকে দেখাবো বলে।”
-
((((ব্যারোমিটারের সাহায্যে ভবনের উচ্চতা নির্ণয়))))
ছোট্ট ছেলেটির মন খারাপ। খুব বেশিই খারাপ। পরীক্ষায় একটি প্রশ্নের উত্তরে সে শূন্য পেয়েছে। প্রশ্নটি ছিলো এরকম- “ব্যারোমিটারের সাহায্যে একটি ভবনের উচ্চতা কীভাবে মাপা সম্ভব?” উত্তরটি তার জানা ছিলো না। তাই বলে তো আর প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না। মা বারবার বলে দিয়েছে ‘ফুল অ্যান্সার’ করে আসার জন্য। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে সে লিখেছিলো - “দড়ি বেঁধে ভবনের ছাদ থেকে ব্যারোমিটারটি নিচে ফেলে দিতে হবে। তাহলে ঐ দড়ির দৈর্ঘ্যই হবে ভবনের উচ্চতা।” শিক্ষক ঊত্তর দেখে খুশি তো হনইনি বরং ভেবেছেন ছেলেটি দুষ্টমি করে উত্তরটি লিখেছে। তাই তাকে ডেকে খাতাটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “ধরে নিলাম, উত্তরটা তুমি জানো। দ্বিতীয়বার তোমায় সুযোগ দিচ্ছি, চটপট উত্তরটা লিখে ফেল।” ছেলেটি ভাবলো, এবার আর ভুল করা যাবে না। তাই এবার সে লিখলো- “আমি ভবনের উপর থেকে নেমে এসে ভবনের অ্যাটেনডেন্টকে বলব, ভবনের প্রকৃত উচ্চতাটি বললে আমি তোমাকে এই ব্যারোমিটারটি উপহার দিবো, তখন সে বলে দিবে আর আমি জেনে নিবো।” এবার হয়েছে, এবার নম্বর না দিয়ে শিক্ষক যাবেন কোথায়? এই ভেবে মনে মনে এক চোট হেসে নিলো ছেলেটি। কিন্তু তার উত্তর দেখে এবার আর শিক্ষকও ভুল করলো না। দিয়ে দিলেন পুরো শূন্য (0)। পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নে ভুল করলেও পরবর্তীতে সেই ছেলেটিই হয়ে ওঠে, ‘বোর পরমাণু মডেলের’ জনক প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর।

✴ নেপোলিয়ান বোনাপার্ট
১৭৯৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধরত ছিলেন নেপোলিয়ান বেনোপোর্ট। একদিন তিনি সহকারীদের বললেন, “১২০০ তুর্কি বন্দীকে মুক্তি দিতে।” কিন্তু আদেশ দেয়ার ওই মুহুর্তেই বেদম কাশি শুরু হয় তাঁর। বিরক্ত হয়ে বলেন, “মা সাকরি তাকস (অর্থ- কি বিদঘুটে কাশি)”। সহকারীরা ভুলে শুনলেন, “মাসাকরি তাওস (অর্থ- হত্যা করো সবাইকে)”।
[সামান্য কয়েকটি শব্দের হেরফেরে প্রাণ গিয়েছিলো ১২০০ বন্দীর।]

✴ নোবার্ট উইনার
এমআইটি (MIT)-র অধ্যাপক নোবার্ট উইনার অন্যমনস্কতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তার সঙ্গে তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে কোনদিকে আমার গন্তব্য ছিল বলতে পারো?” বন্ধু বিস্মিত হয়ে বললেন, “কেন, ম্যাসাচুসেটসি এভিনিউর দিকে!” “ধন্যবাদ তোমাকে, তার মানে আমার দুপুরের খাবার কাজটা শেষ করে ফেলেছি!”

✴ বঙ্কিমচন্দ্র
বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন ইংরেজ শাসনামলের প্রথম বাঙ্গালী মেজিস্ট্রেট। মেজিস্ট্রেসিতে যোগ দিতে গিয়ে তাকে পরীক্ষা (ইন্টারভিউ) দিতে হয়েছিল, পরীক্ষক ছিলেন একজন ইংরেজ। পরীক্ষক বঙ্কিমচন্দ্রকে প্রশ্ন করেছিলেন, “হোয়াট ইজ দ্যা ডিফারেন্স বিটউইন ‘আফদ’ (আপদ) এন্ড ‘বিফদ’ (বিপদ)?” [What is the difference between ‘Afod’ and ‘Bifod’?] বঙ্কিমচন্দ্র উত্তর দিলেন - “ধরুন, নৌকায় চড়ে নদী পার হচ্ছি এমন সময় প্রচন্ড ঝড় উঠল, এটা হচ্ছে বিপদ। আর এই যে আমি একজন বাঙ্গালী হয়েও ইংরেজের কাছে বাংলার পরীক্ষা দিচ্ছি এটা হচ্ছে আপদ।”

✴ বারট্রান্ড রাসেল
“পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে” সে সম্পর্কে একবার বক্তৃতা করছিলেন বারট্রান্ড রাসেল। বক্তৃতার মাঝখানে এক বৃদ্ধলোক দাঁড়িয়ে রাসেলের কথার প্রতিবাদ করে বললেন, “ওহে তরুণ তুমি বেশ বুদ্ধিমান এতে কারো সন্দেহ নেই। তবে পৃথিবী যে চ্যাপ্টা আর তা কচ্ছপের পিঠে করে বয়ে বেড়াচ্ছে, তা মনে করেছ আমরা জানিনা!” রাসেল বৃদ্ধের কথা শুনে অবাক হলেন। প্রশ্ন করলেন, “ঠিক আছে, তাহলে আপনি এবার বলুন, ওই কচ্ছপটা কিসের ওপর দাঁড়ানো?” বৃদ্ধ একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, “হু, আমি তোমাকে বলে দেই আর তুমি তা শিখে ফেল আর কী!”

✴ ভিক্টর হুগো
১৮৬২ সালে প্রকাশিত হয় ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত বই ‘লা মিজারেবল’। তখন এটি নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। নানা সমালোচক এবং নানা খবর পত্র পত্রিকায় আসে। কিন্তু সেখান থেকে ভিক্টর হুগো বুঝতে পারলেন না বইটি বিক্রি হচ্ছে কেমন। অবশেষে তিনি এর উত্তর জানার জন্য প্রকাশককে খুব ক্ষুদ্র একটা চিঠি দিলেন শুধুমাত্র ‘?’ লিখে। প্রকাশক ‘?’ এর মানে বুঝতে পারলেন এবং জবাব দিলেন ‘!’।

✴ মহাত্মা গান্ধী
মহাত্মা গান্ধী ইংল্যান্ডের রাজার সঙ্গে চা খেয়েছিলেন খালিগায়ে ও শুধুমাত্র ধুতি পরে। চা খেয়ে ফিরে এলে তাকে ব্রিটিশ সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, “রাজার সামনে বসে আপনার কী মনে হয়নি আপনার পোশাকের ঘাটতি ছিল? মহাত্মা গান্ধী উত্তর দিয়েছিলেন, “আপনাদের রাজা একাইতো আমাদের দুজনকে ঢাকার মতো যথেষ্ট পোশাক পরেছিলেন।”

✴ মার্ক টোয়েন
((((ক))))
অনেক বছর আগের কথা। সে সময় আমেরিকান ট্রেনগুলো বেশ ধীরগতিতে চলত। লেট করত ঘণ্টার পর ঘান্টা। সকাল ৯-টার ট্রেন রাত ৯-টায় আসবে কিনা সে বিষয়ে সবাই থাকত সন্দিহান। এমনই এক সময়ে বিখ্যাত রম্যসাহিত্যিক ‘মার্ক টোয়েন’ একবার কোথাও যাওয়ার জন্য ট্রেনে চেপে বসে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর কামরায় উঠল টিকিট চেকার। মার্ক টোয়েন গম্ভীর মুখে চেকারের দিকে একটা ‘হাফ টিকিট’ বাড়িয়ে দিলেন। বুড়ো মানুষের হাতে ‘হাফ টিকিট’ দেখে টিকিট চেকার অবাক! তাঁর প্রশ্ন, “কী মশাই, আপনি হাফ টিকিট কেটেছেন কেন? গোঁফ-মাথার চুল সবই তো সাদা। আপনি কি জানেন না চৌদ্দ বছরের বেশি হলে তার বেলায় আর হাফ টিকিট চলে না?” মার্ক টোয়েনের সোজা জবাব, “যখন ট্রেনে চড়েছিলাম, তখন তো বয়স চৌদ্দই ছিল। কে জানত, ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছতে এত লেট করবে!”
((((খ))))
মার্ক টোয়েনের ছেলেবেলার একটি কাহিনী। তখন স্কুলে ভর্তি হয়েছেন তিনি। স্কুলের নিয়ম ছিল কোনো ছাত্র যদি স্কুলের টেবিলে দাগ দেয়, তাহলে তাকে শাস্তি পেতে হবে অথবা পাঁচ ডলার জরিমানা দিতে হবে। যেকোনো এক রকম শাস্তি সে বেছে নিতে পারে। একদিন মার্ক টোয়েন একদিন টেবিলে দাগটাগ দিয়ে ফেললেন, ধরাও পড়লেন। মাস্টারমশাই বললেন, “কোন শাস্তি চাও - সবার সামনে বেত খাবে, নাকি পাঁচ ডলার জরিমানা দেবে? অথবা কাল এসে এর উত্তর দিতে পারবে।” বাড়িতে এসে বাবাকে সব কথা খুলে বললেন মার্ক টোয়েন। বাবা হয়তো সবার সামনে বাচ্চা ছেলের বেত খাওয়াটা পছন্দ করলেন না। তিনি মার্ক টোয়েনের হাতে পাঁচ ডলার দিলেন। সে সময়ে পাঁচ ডলারের অনেক দাম, কিন্তু সবার সামনে বেত খাওয়া এমন কিছু সাংঘাতিক ব্যাপার নয়। সুতরাং, জীবনে মার্ক টোয়েন সেই প্রথম রোজগার করলেন-পাঁচ ডলার!
((((গ))))
একবার এক ছাত্র মার্ক টোয়েনের কাছে এসে বলল, “আমি ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের উপকার করতে চাই।” মার্ক টোয়েন উত্তর দিলেন, “তুমি ডাক্তারী পড়া ছেড়ে দিয়ে এমনিতেই মানবজাতির অনেক উপকার করেছ। আর উপকার না করলেও চলবে!”
((((ঘ))))
মার্ক টোয়েন একবার উনার এক সাংবাদিক বন্ধুকে বললেন, “বছর দশেক লেখালেখি করার পর বুঝতে পারলাম, এ ব্যাপারে কোনও প্রতিভা আমার নেই।” “তাহলে এটা বুঝবার পরও তুমি কেন লেখালেখি চালিযে যাচ্ছ?” বন্ধু জানতে চাইল। মার্ক টোয়েন উত্তর দিলেন, “কি আর করব? ততদিনে আমি রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গেছি যে!”
((((ঙ))))
মার্ক টোয়েন তখন মিসৌরির এক খবরের কাগজের সম্পাদক। একদিন এক পাঠক ফোন করে বলল, “আপনার কাগজে একটি মাকড়সা ছিল। এটা খারাপ লক্ষণ নাকি ভালো লক্ষণ, বলবেন?” মার্ক টোয়েন উত্তর দিলেন, “কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলুন। বাস্তব দৃষ্টিতে দেখলেই বুঝবেন, আসলে মাকড়সাটা কাগজ পড়ছিল। দেখছিল কোন কোন কোম্পানি এই কাগজে বিজ্ঞাপন দেয়নি, যাতে সে নিশ্চিন্ত মনে তাদের গুদামে এবং অফিসে গিয়ে পরিপাটি করে জাল বিছাতে পারে।”
((((চ))))
এক ব্যাংকের কর্মকর্তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেলে তিনি একটি পাথরের চোখ লাগান। এবং চোখটি এত নিখুত ছিল কেউ ধরতে পারত না কোনটা নকল চোখ। মার্ক টোয়েন একবার ঐ ব্যাংকে টাকা উঠাতে গেলে ঐ কর্মকর্তা মজা করার জন্য মার্ক টোয়েনকে বলেন, “আপনি যদি বলতে পারেন আমার কোন চোখটা নকল তবে আমি আপনাকে টাকা দেব।” মার্ক টোয়েন কিছুক্ষণ লোকটির চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন, “আপনার বাম চোখটা নকল।” লোকটি বিস্মিত হয়ে জানতে চায় “কিভাবে বুঝলেন?” মার্ক টোয়েন উত্তর দেন, “কারণ আপনার বাম চোখের মাঝেই এখনও দয়া ও করুণার কিছু আভা দেখা যাচ্ছে!
((((ছ))))
সমাধিস্থলের চারদিকের দেয়ালের জন্য মার্ক টোয়েনের কাছে চাঁদা চাইতে গেলে তিনি উত্তর দেন, “সমাধিস্থলের চারদিকে দেয়াল দেওয়ার কোন প্রয়োজন দেখি না। কারণ, যারা ওখানে থাকে তাদের বাইরে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা নেই। আর যারা বাইরে থাকেন তাদের ওখানে যাবার কোন ইচ্ছে আছে বলে আমার মনে হয় না।”

✴ মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী
কিংবদন্তী মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে প্লেনে উড়বার আগে সিট বেল্ট বাঁধার কথা মনে করিয়ে দিলেন, বিমানবালা। আলী দুষ্টামীর ছলে উত্তর দিলেন, “সুপারম্যানের সিট বেল্ট বাঁধার প্রয়োজন হয়না।” বিমানবালাও চটপট উত্তর দিলেন, “সত্যিকার সুপারম্যানেরও প্লেনে চড়বার দরকার হয় না।”

✴ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
((((ক))))
মরিস সাহেব ছিলেন শান্তিনিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। একা থাকলে তিনি প্রায়ই গুনগুন করে গান গাইতেন। একদিন তিনি তৎকালীন ছাত্র ‘প্রমথনাথ বিশী’-কে বললেন, “জানো গুরুদেব (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) চিনির ওপর একটি গান লিখেছেন, গানটি বড়ই মিষ্টি।”
প্রমথনাথ বিশী বিস্মিত হয়ে বললেন, “কোন গানটা?”
তার আগে বলুন, “এই ব্যাখ্যা আপনি কোথায় পেলেন?”
উত্তরে মরিস সাহেব জানালেন, “কেন, স্বয়ং গুরুদেবই তো আমাকে এটা বলে দিয়েছেন।”
অতঃপর তিনি গানটি গাইতে লাগলেন, “আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে…।”
প্রমথনাথ বিশী মুচকি হেসে বললেন, “তা গুরুদেব কিন্তু ঠিকই বলেছেন, চিনির গান তো মিষ্টি হবেই।”
((((খ))))
শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক নেপাল রায়কে রবীন্দ্রনাথ একবার লিখে পাঠালেন, “আজকাল আপনি কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এজন্য কাল বিকেলে আমার এখানে এসে আপনাকে দণ্ড নিতে হবে।”
চিন্তিত, শঙ্কিত নেপালবাবু পরদিন শশব্যস্তে কবির কাছে উপস্থিত হলেন। আগের রাতে দুশ্চিন্তায় তিনি ঘুমাতে পারেননি। এখনো তাঁকে বেশ কিছুক্ষণ উত্কণ্ঠার মধ্যেই বসিয়ে রেখেছেন কবিগুরু। অবশেষে পাশের ঘর থেকে একটি মোটা লাঠি হাতে আবির্ভূত হলেন কবি। নেপালবাবুর তখন ভয়ে কাণ্ডজ্ঞান লুপ্তপ্রায়। তিনি ভাবলেন, সত্যি বুঝি লাঠি তাঁর মাথায় পড়বে। কবি সেটি বাড়িয়ে ধরে বললেন, “এই নিন আপনার দণ্ড! সেদিন যে এখানে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে গেছেন।”
((((গ))))
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্রদের অন্যতম ছিলেন কথাশিল্পী প্রমথনাথ বিশী। তো, একবার প্রমথনাথ বিশী কবিগুরুর সঙ্গে শান্তিনিকেতনের আশ্রমের একটি ইঁদারার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওখানে একটি গাবগাছ লাগানো ছিল। কবিগুরু হঠাৎ প্রমথনাথকে উদ্দেশ করে বলে উঠলেন, “জানিস, একসময়ে এই গাছের চারাটিকে আমি খুব যত্নসহকারে লাগিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, এটা অশোকগাছ; কিন্তু যখন গাছটি বড় হলো- দেখি, ওটা অশোক নয়, গাবগাছ।”
অতঃপর কবিগুরু প্রমথনাথের দিকে সরাসরি তাকিয়ে স্মিতহাস্যে যোগ করলেন, “তোকেও অশোকগাছ বলে লাগিয়েছি, বোধকরি তুইও গাবগাছ হবি।”
((((ঘ))))
একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। তো গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ (Porridge of Oats) খেতে দেওয়া হয়েছিল; আর রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি।
গান্ধীজি তাই না দেখে বলে উঠলেন, “গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ।”
উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “বিষই হবে; তবে এর এ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।”
((((ঙ))))
রবীন্দ্রনাথের একটা অভ্যাস ছিল - যখনই তিনি কোনো নাটক বা উপন্যাস লিখতেন, সেটা প্রথম দফা শান্তিনিকেতনে গুণীজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রায়ই এরূপ পাঠের আসরে যোগদান করতেন। তা, একবার আসরে যোগদানকালে বাইরে জুতা রেখে আসায় সেটা চুরি গেলে অতঃপর তিনি জুতা জোড়া কাগজে মুড়ে বগলদাবা করে আসরে আসতে শুরু করে দিলেন। রবীন্দ্রনাথ এটা টের পেয়ে গেলেন।
তাই একদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে এভাবে আসরে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বলে উঠলেন, “শরৎ, তোমার বগলে ওটা কী পাদুকা-পুরাণ?” এ নিয়ে সেদিন প্রচণ্ড হাসাহাসি হয়েছিল।
((((চ))))
একবার এক দোলপূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে। তো, পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথকে বেশ রঞ্জিত করে দিলেন। আবির দ্বারা রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ রাগ না করে বরং সহাস্যে বলে উঠলেন, “এত দিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও তিনি একজন ওস্তাদ।”
((((ছ))))
কবিগুরুর ৫০ বছর বয়সে পদার্পণ উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের একটি কক্ষে সভা বসেছিলেন, যেখানে তিনি স্বকণ্ঠে গান করছিলেন। তো, তিনি গাইলেন, “এখনো তারে চোখে দেখিনি, শুধু কাশি শুনেছি।” কবিগুরু এটা গেয়েছিলেন আচার্য যতীন্দ্রমোহন বাগচি উক্ত কক্ষে প্রবেশের পূর্বক্ষণে।
তাই বাগচি মহাশয় কক্ষে প্রবেশ করে বিস্ময়-বিস্ফোরিত নয়নে সকলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
“সিঁড়িতে তোমার কাশির শব্দ শুনেই গুরুদেব তোমাকে চিনেছেন”–একথা সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তখন বাগচি মহাশয়কে বুঝিয়ে দিলেন।
“তাইতো তাঁর গানের কলিতে বাঁশির স্থলে কাশি বসিয়ে তাঁর গানটি গেয়েছেন।”
((((জ))))
সাহিত্যিক ‘বনফুল’ তথা শ্রী বলাইচাঁদ ব্যানার্জির এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। অতএব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে রবীন্দ্রনাথ যখন বললেন, “কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি?”
তখন বলাইবাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, “আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।”
রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, “না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে শানাই।”
((((ঝ))))
একবার কালিদাস নাগ ও তাঁর স্ত্রী জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ মৃদুহাস্যে নাগ-দম্পতিকে প্রশ্ন করলেন, “শিশু নাগদের (সাপের বাচ্চাদের) কোথায় রেখে এলে?”
আরেকবার রবীন্দ্রনাথ তাঁর চাকর বনমালীকে তাড়াতাড়ি চা করে আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে কপট বিরক্তির ভাব দেখিয়ে বললেন, “চা-কর বটে, কিন্তু সু-কর নয়।”
আরও একবার কবিগুরুর দুই নাতনি এসেছেন শান্তিনিকেতনে, কলকাতা থেকে। একদিন সেই নাতনি দুজন কবিগুরুর পা টিপছিলেন; অমনি তিনি বলে উঠলেন, “পাণিপীড়ন, না পা-নিপীড়ন?”
প্রথমটায় তারা কিছুই বুঝতে না পারলেও পরে কথাটার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পেরে খুবই মজা পেয়েছিলেন।
((((ঞ))))
একবার এক মহিলা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য কিছু পিঠা বানিয়ে নিয়ে যান। কেমন লাগল পিঠা জানতে চাইলে কবি গুরু উত্তর দেন- “লৌহ কঠিন, প্রস্তর কঠিন, আর কঠিন ইষ্টক, তাহার অধিক কঠিন কন্যা তোমার হাতের পিষ্টক।”
((((ট))))
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিসর্জন’ নাটকের মহড়া হচ্ছিল। ‘জয়সিং’ সেজেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর ‘রঘুপতি’-র ভূমিকায় দীনেন্দ্র নাথ ঠাকুর। একটা দৃশ্য ছিল জয়সিংয়ের মৃত দেহের উপর শোকবিহ্বল রঘুপতি আছড়ে পড়বে। প্রতিদিন মহড়া হয়। সেই দৃশ্যে যথারীতি রঘুপতি জয়সিংহের উপর আছড়ে পড়েন। দীনেন্দ্র বাবু ছিলেন বিশালদেহী। তার ভার সহ্য করা রবীন্দ্রনাথের পক্ষে কষ্টদায়ক ছিল। একদিন দীনেন্দ্র বাবু রবীন্দ্রনাথের উপর একটু বেকায়দায় আছড়ে পড়লেন। রবীন্দ্রনাথ তখন বলে উঠলেন, “দিনু, মনে করিস না আমি আসলেই মরে গেছি।”

✴ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব
একবার রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কাছে এক সাধু এসে উত্তেজিত স্বরে বলল, “আমি ত্রিশ বছর সাধনা করে এখন হেঁটে নদী পার হতে পারি, আপনি কি সেটা পারেন? পারলে করে দেখান দেখি?” স্মিত হেসে রামকৃষ্ণ বললেন, “যেখানে এক পয়সা দিলেই মাঝি আমাকে নদী পার করে দেয় সেখানে এর জন্য ত্রিশ বছর নষ্ট করার পক্ষপাতি আমি নই।”

✴ রিচার্ড শেরিডন
রিচার্ড শেরিডন ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত আইরিশ নাট্যকার ও থিয়েটার ম্যানাজার। একবার তিনি নতুন একজোড়া বুটজুতা পায়ে দিয়ে বের হলেন। তা দেখে তার বন্ধু-বান্ধবেরা রীতিমতো অভিভূত। শেরিডন বন্ধদের উদ্দেশে বললেন, “বল দেখি, আমি এই বুটজোড়া কীভাবে পেয়েছি?” বন্ধুরা একেকজন একেক কথা বললেন। কোনোটাই ঠিক হলো না। শেষে শেরিডন নিজেই বললেন, “তোমাদের কারও অনুমানই ঠিক হয়নি। আমি বুটজোড়া কিনেছি, এবং দামও পরিশোধ করিছি।”

✴ রুডইয়ার্ড কিপলিং
ভারতে জন্মগ্রহণকারী নোবেল বিজয়ী ইংরেজ লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং যে পত্রিকাটির গ্রাহক ছিলেন সেখানে একবার ভুলবশত কিপলিং এর মৃত্যু সংবাদ ছাপা হয়। সংবাদটি পড়ে তৎক্ষণাৎ কিপলিং পত্রিকা সম্পাদককে চিঠি লিখলেন, “আপনার পত্রিকা মারফতে জানতে পারলাম যে আমার মৃত্যু হয়েছে। তাই দয়া করে আপনাদের গ্রাহক তালিকাটা থেকে আমার নামটি বাদ দিয়ে দিবেন।”

✴ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন গেছেন ময়মনসিংহে তাঁর গ্রামের বাড়ি বেড়াতে। গ্রামের এক মুরব্বি দেখা করতে এসে জয়নুলকে বললেন, “কিরে তুই নাকি বড় শিল্পী হইছস? দে-তো আমার ছাতিটায় নাম লেইখ্যা?” জয়নুল আবেদীন খুব যত্ন করে এবং সময় নিয়ে ছাতায় নাম লিখে দিলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এ ঘটনা রাষ্ট্র হয়ে গেল গ্রামময়। ব্যস, আর যায় কোথায়, গ্রামের প্রায় সবাই যার যার ছাতা নিয়ে হাজির। শিল্পাচার্য আর কি করবেন (‘?’), অসীম ধৈর্যের সাথে প্রায় সবার ছাতাতেই নাম লিখে দিয়েছিলেন সেবার।

✴ সৈয়দ মুজতবা আলী
সৈয়দ মুজতবা আলী তখন বেশ বিখ্যাত লেখক। প্রতিদিনই তাঁর দর্শন লাভ করতে ভক্তরা বাসায় এসে হাজির হয়। একদিন এক ভক্ত মুজতবা আলীর কাছে জানতে চাইলেন, “তিনি কোন বই কী অবস্থায় লিখেছেন।” মুজতবা আলী যতই এড়িয়ে যেতে চান, ততই তিনি নাছোড়বান্দা। শেষে মুজতবা আলী সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললেন, “দেখো, সুইস মনস্তত্ত্ববিদ কার্ল গুসতাফ জাং একদা তাঁর ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন, কিছু লোক আমাকে জিজ্ঞেস করে - আমি কীভাবে লিখি? এ ব্যাপারে আমাকে একটা কথা বলতেই হয়, কেউ চাইলে তাকে আমরা আমাদের সন্তানগুলো দেখাতে পারি, কিন্তু সন্তানগুলো উৎপাদনের পদ্ধতি দেখাতে পারি না।”

✴ স্বামী বিবেকানন্দ
স্বামী বিবেকানন্দের বাবা তার বৈঠকখানায় অনেকগুলি হুকো রাখতেন যেন এক জনের পান করা হুকো মুখে দিয়ে অন্যের জাত না যায়। একদিন বিবেকানন্দ সবগুলো হুকোয় একবার করে টান দিলেন। “এ তুমি কি করলে”- ক্ষেপে গিয়ে উনার বাবা জানতে চাইলেন। “দেখলাম জাত যায় কিনা”- বিবেকানন্দের উত্তর।

✴ স্যার আর্থার কোনান ডয়েল

((((ট্যাক্সি ড্রাইভার))))

শার্লক হোমসের অমর স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল প্যারিসে বেড়াতে গেছেন। একটা ট্যাক্সিতে উঠতেই ট্যাক্সি চালক তাঁকে প্রশ্ন করল, “কোথায় যাবেন? মিস্টার ডয়েল।” আর্থার কোনান ডয়েল অবাক হয়ে জানতে চাইলেন - “তুমি আমাকে চিনলে কি করে, আমি ডয়েল?” “কাগজে দেখেছিলাম লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল প্যারিসে এসেছেন। আর আপনার ডান হাতে আঙ্গুলে কালি লেগে আছে দেখে বুঝলাম যে আপনি লেখক। তাছাড়া আপনার চালচলন পোশাক দেখেই বুঝেছি যে আপনি নির্ঘাত ইংরেজ।” “বাহ! তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যে আমার শার্লক হোমসের চেয়েও বেশী। সামান্য কয়েকটা লক্ষণ দেখেই তুমি আমাকে চিনে ফেললে।” “অবশ্য আপনাকে চিনতে আরও একটা ব্যাপার সাহায্য করেছে।” “সেটা কি?” উৎসুক হয়ে কোনান ডয়েল জানতে চান। “আপনার হাতের ব্যাগের গায়ে বড় বড় করে আপনার নাম লেখা রয়েছে।”

((((চার্লি চ্যাপলিন))))

এক দ্বাদশবর্ষীয় বালক অসাধারণ অভিনয় করল। অভিনয় দেখে আর্থার কোনান ডয়েল মুগ্ধ। ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন, “তুমি লেগে থাকো, তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।” বালকটি বলল, “স্যার, আমি খুব গরিব। আপনার এক বছরের উপার্জন যদি এখন আমায় দেন তাহলে আমার আগামী পাঁচ বছরের উপার্জন আপনাকে দিতে রাজি আছি।” কোনান ডয়েল মুখে বিরক্তি প্রকাশ করলেন। ছেলেটি পরে আমেরিকায় গেল। এক বছর পর তার উপার্জন কোনান ডয়েলের উপার্জনকে ছাড়িয়ে গেল। ছেলেটি ‘চার্লি চ্যাপলিন’।

✴ স্যার উইন্সটন চার্চিল
এক জনসভায় চার্চিলের বক্তৃতা শুনে বিরোধী রাজনৈতিক দলের এক মহিলা বিরক্ত হয়ে বলে ফেললেন - “যদি আপনি আমার স্বামী হতেন, তাহলে আমি আপনাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতাম।” চার্চিল একথা শুনতে পেয়ে তার দিকে ফিরে হেঁসে বললেন, “ম্যাডাম, সেক্ষেত্রে আপনি আমার স্ত্রী হলে আমি নিজেই বিষ খেয়ে মরে যেতাম।”

✴ হাজী শরীয়তউল্লাহ্
ব্রিটিশদের বিপক্ষে ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়তউল্লাহ্ ২০ বছর মক্কায় কাটিয়ে ১৮১৮ সালে ফিরে আসেন ফরিদপুরে। যাত্রা পথে তার নৌকায় ডাকাতদল আক্রমণ করে এবং তার যথাসর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতেরা যে তাঁর টাকা পয়সা নিয়ে গেছে তা নিয়ে তাঁর তেমন দুঃখ ছিলোনা। কিন্তু ডাকাতরা তাঁর কিছু মূল্যবান বই নিয়ে যায়। তিনি বই গুলোর মমতা কিছুতেই ছাড়তে পাড়লেন না। ফলে বই এর মমতায় তিনি নিজেই মিশে গেলেন ঐ ডাকাতগুলোর সঙ্গে, হয়ে গেলেন ডাকাত। কিন্তু তারপরই ঘটালেন আশ্চর্য এক ঘটনা। ইসলামের বাণী প্রচার করলেন ডাকাতদের মাঝে। অশিক্ষিত ও মন্দ স্বভাবের ডাকাতগুলো শরীয়তউল্লাহর সংস্পর্শে এসে ধীরে ধীরে নিজেদের চরিত্র-ই বদলে ফেললো। তারা ছেড়ে দিলো ডাকাতি করা এবং শিষ্য হয়ে গেল হাজী শরীয়তউল্লাহ্‌-র। আর হাজী শরীয়তউল্লাহ্-ও ফিরে পেলেন তাঁর মহামূল্যবান বই।



সংগ্রহ ও সংকলকঃ “স্ফিঙ্গেল”

বিঃদ্রঃ প্রায় দুই বৎসর ধরে বিভিন্ন মাধ্যম হতে সংগৃহীত এই তথ্যবহুল অবস্থাটি। ভূল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আশা করি।

© Copyright and Reserved ®
Any person or people share that outward show then there are no contention about it. If he or she used it without quitclaim then it's automatic going to © and ® law, also be liable and publicly condemned people or person you should....!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৯

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: ভালো ।।অনেক ইতিহাস কাহিনী তুলে ধরেছেন ।।

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৩১

স্ফিঙ্গেল বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই, আপনার মূল্যবান মন্তব্যখানার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.